৩ পার্বত্য জেলায় ম্যালেরিয়ার ঝুঁকি বেশি by ফরিদ উদ্দিন আহমেদ
তিন
পার্বত্য জেলা বান্দরবান, রাঙ্গামাটি এবং খাগড়াছড়িতে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ
বেশি। সীমান্তবর্তী, পাহাড় ও বনাঞ্চলবেষ্টিত হওয়ায় এখানে ম্যালেরিয়ার
আক্রান্তের সংখ্যা অধিক। আয়তনের দিক থেকে বড় জেলা রাঙ্গামাটিতে ম্যালেরিয়া
রোগে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সদস্যদের আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি। কিন্তু
মৃত্যুহার বাঙালিদের মধ্যে বেশি। আক্রান্তের দিক থেকে নারীদের চেয়ে পুরুষের
সংখ্যাই বেশি। এছাড়া অধিক পরিমাণ ম্যালেরিয়ার ওষুধ (অ্যান্টিপ্যারাসাইটিক)
গ্রহণের ফলে রোগীরা সুস্থ হওয়ার পর হালকা করে হলেও মানসিক বিকৃতিসহ
অন্যান্য রোগ দেখা দেয়। গত ১৯ ও ২০শে এপ্রিল রাঙ্গামাটি সদর ও কাপ্তাই
উপজেলায় সরজমিন বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও এনজিও
কর্মীদের উপস্থিতিতে ম্যালেরিয়া সংক্রান্ত অ্যাডভোকেসি সভায় এসব তথ্য জানান
সংশিষ্টরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচি এ সভার আয়োজন করে।
ম্যালেরিয়ায় রাঙ্গামাটির পরিস্থিতির বাস্তব চিত্র তুলে ধরেন রাঙ্গামাটির ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচির সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. এন্ড্র বিশ্বাস। তিনি বলেন, সবচেয়ে ম্যালেরিয়াপ্রবণ জেলা রাঙ্গামাটিতে গত ৩ বছরে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। ২০০২ সালে এই জেলায় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ১৪৩ জন মৃত্যুবরণ করে। ১০ বছর পর ২০১২ সালে মৃত্যু হয় এক জনের। ২০১৩ সালে ২ জন ও ২০১৬ সালে ১ জনের মৃত্যু হলেও ২০১৭ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত কোনো মৃতের ঘটনা ঘটেনি। ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচির তথ্য অনুযায়ী, রাঙামাটি জেলার ১০টি উপজেলায় ২০১৮ সালে ৩ হাজার ১৪ আক্রান্ত হন। এর মধ্যে বিলাইছড়ি উপজেলায় ৯২৬ জন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল। সবচেয়ে বেশি ৩১ শতাংশ বিলাইছড়িতে। এরপর বাঘাইছড়িতে ২৭ শতাংশ, জুরাছড়িতে ১৭ শতাংশ এবং বরকলে ৯ শতাংশ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়।
যেখানে ২০১৭ সালে আক্রান্ত হয়েছিল ৮ হাজার ২৮৭জন। অন্যদিকে ২০১৮ সালে আক্রান্তের দিক থেকে সবচেয়ে কম রয়েছে সদর উপজেলা। এখানে মাত্র ২৫ জন ম্যালেরিয়ার আক্রান্ত হয়েছে। ২০১৭ সালে এই সংখ্যা ছিল ৭৩ জনে। আক্রান্তের দিক থেকে নারীদের চেয়ে পুরুষের সংখ্যাই বেশি। ২০১৭ সালে রাঙামাটিতে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল ৪ হাজার ৯৫০ জন পুরুষ। একই সময়ে নারী আক্রান্তের সংখ্যা ৩ হাজার ৩৩৭। এছাড়া বয়সের দিক থেকে ১৫ বছরের ঊর্ধ্বদের আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি। ২০১৭ সালে এ বয়সীদের মধ্যে আক্রান্ত হয়েছিল ৪ হাজার ৫৯৩ জন। ২০১৮ সালে ১ হাজার ৮৭৯ জন। রাঙামাটি জেলায় ১ বছরের নিচে শিশুদের আক্রান্তের হার সবচেয়ে কম। ২০১৭ সালে আক্রান্ত হয়েছিল মাত্র ১৬ জন। ২০১৮ সালে ১৪ জনে নেমে এসেছিলো। ২০১৮ সালে পুরুষ আক্রান্ত হয় এক হাজার ৮৮০ জন, নারী আক্রান্ত হয়েছে এক হাজার ১১৩ জন। জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জেলার ১০টি উপজেলার ৪৯টি ইউনিয়নে এক হাজার ৫৫৫টি গ্রামে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের হার ক্রমান্বয়ে কমছে।
কাপ্তাই উপজেলার চেয়ারম্যান দিলদার হোসেন নিজের ম্যালেরিয়ার আক্রান্ত হওয়ার অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করে বলেন, আগে ম্যালেরিয়ার ওষুধ জনমনে একটা আতঙ্কের বিষয় ছিল। কেননা ৪টা ইনজেকশন শেষ করে আবার ২১টা ট্যাবলেট খাওয়া লাগতো। যা খেতে অনেক তেতো ছিল এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া অনেক বেশি ছিল। তাই জ্বর আসলেও চিকিৎসা নিতে চাইতো না। এমনকি মানুষ ম্যালেরিয়ার ফলে হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে মারা যেত। বর্তমানে যে ওষুধটা আছে সেটার তেমন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া না থাকলেও অনেকবার ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হবার কারণে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে।
তিনি নিজেও কমপক্ষে ১০ বার ম্যালেরিয়ার আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন। এখানে ম্যালেরিয়া হয়নি এমন লোক পাওয়া খুব দুষ্কর। ওষুধের ফলে মানুষের মস্তিষ্ক আগের মতো কাজ করে না। তাছাড়া আরো অন্যান্য রোগেও ভুগতে দেখা যায় তাদের। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পেলে এটাকে নির্মূল করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন। পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হওয়ার কারণে তাদের ম্যালেরিয়া কম হয় উল্লেখ করে দিলদার হোসেন বলেন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের শারীরিক গঠন অনুসারে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউন সিস্টেম বেশি শক্তিশালী। তাই তাদের ম্যালেরিয়া কম হয়। তারা পাহাড়ে থেকে অভ্যস্ত অনেক আগে থেকে। তাছাড়া পাহাড়ের উপরে পানি জমে থাকার সুযোগ কম। তাই মশার উৎপাদন সুযোগ কম। আবার তাদের খাবারের অভ্যাসটাও অনেক স্বাস্থ্যকর বা তারা মসলা কম খান। এদিকে বাঙালিরা সাধারণত তুলনামূলকভাবে সমতল এলাকায় বসবাস করেন। যেখানে পানি জমার সুযোগ বেশি ও মশা বেশি। মূলত এসব কারণেই ম্যালেরিয়ায় বাঙালিরা বেশি আক্রান্ত হন।
জাতীয় ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির তথ্যমতে, দেশে ২০১৬ সালে মোট ১৭ জন রোগী ম্যালেরিয়ায় মৃত্যুবরণ করেন। এর মধ্যে ৫ জন পাহাড়ি ও ১২ জন বাঙালি। এরপর ২০১৭ সালে ১৩ জন মৃত্যুবরণ করেন। যার মধ্যে মাত্র ১ পাহাড়ি ছিল, বাকি ১২ জন বাঙালি।
এদিকে,বাংলাদেশে এখনো ম্যালেরিয়ার রেজিস্ট্যান্স (প্রতিরোধক) উৎপন্ন হয়নি বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। যদিও ইতিমধ্যে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও মিয়ানমারে এ রোগের রেজিস্ট্যান্স উৎপন্ন হয়েছে। গত ১৯ই এপ্রিল রাঙামাটির পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সে এক মত বিনিময় সভায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, আমরা গবেষণা কার্যক্রমটি পরিচালনার লক্ষ্যে একসঙ্গে ৯০ জন করে এ পর্যন্ত ২৭০ জন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছি। বিভিন্ন ধাপে মোট ২৮ দিন এসব রোগীকে মনিটরিং করা হয়। এ ধরনের একটি ট্রায়াল শেষ করতে কমপক্ষে ৬ থেকে ৭ মাস সময় লাগে। সরকার ও বিভিন্ন বেসরকারি সহযোগি সংস্থাগুলোর মাধ্যমে এসব গবেষণা পরিচালিত হচ্ছে। তাছাড়া মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্যান্সের বিষয়টিও গবেষণার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ মশারি দেয়া হয়েছে। ম্যালেরিয়া বাহক মশা প্রতিরোধে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। বিশেষ পদ্ধতিতে বাহক মশা প্রতিরোধে পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এমনকি যে এলাকাগুলোতে ম্যালেরিয়া নেই সেখানেও পর্যবেক্ষণ চলছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যালেরিয়া নির্মূল কার্যক্রমের এপিডেমিওলজিস্ট ডা. মশিউর রহমান বিটুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাঙামাটির ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. নিহার রঞ্জন নন্দী এবং কাপ্তাই উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাসুদ আহমেদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অ্যাডভোকেসি সভায় উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. এম এম আখতারুজ্জামান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য কর্মকর্তা পরীক্ষিত চৌধুরী, জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচির বিশেষজ্ঞ মো. নজরুল ইসলাম, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব এম কে হাসান মোরশেদ প্রমুখ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচি এ সভার আয়োজন করে।
ম্যালেরিয়ায় রাঙ্গামাটির পরিস্থিতির বাস্তব চিত্র তুলে ধরেন রাঙ্গামাটির ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচির সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. এন্ড্র বিশ্বাস। তিনি বলেন, সবচেয়ে ম্যালেরিয়াপ্রবণ জেলা রাঙ্গামাটিতে গত ৩ বছরে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। ২০০২ সালে এই জেলায় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ১৪৩ জন মৃত্যুবরণ করে। ১০ বছর পর ২০১২ সালে মৃত্যু হয় এক জনের। ২০১৩ সালে ২ জন ও ২০১৬ সালে ১ জনের মৃত্যু হলেও ২০১৭ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত কোনো মৃতের ঘটনা ঘটেনি। ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচির তথ্য অনুযায়ী, রাঙামাটি জেলার ১০টি উপজেলায় ২০১৮ সালে ৩ হাজার ১৪ আক্রান্ত হন। এর মধ্যে বিলাইছড়ি উপজেলায় ৯২৬ জন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল। সবচেয়ে বেশি ৩১ শতাংশ বিলাইছড়িতে। এরপর বাঘাইছড়িতে ২৭ শতাংশ, জুরাছড়িতে ১৭ শতাংশ এবং বরকলে ৯ শতাংশ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়।
যেখানে ২০১৭ সালে আক্রান্ত হয়েছিল ৮ হাজার ২৮৭জন। অন্যদিকে ২০১৮ সালে আক্রান্তের দিক থেকে সবচেয়ে কম রয়েছে সদর উপজেলা। এখানে মাত্র ২৫ জন ম্যালেরিয়ার আক্রান্ত হয়েছে। ২০১৭ সালে এই সংখ্যা ছিল ৭৩ জনে। আক্রান্তের দিক থেকে নারীদের চেয়ে পুরুষের সংখ্যাই বেশি। ২০১৭ সালে রাঙামাটিতে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল ৪ হাজার ৯৫০ জন পুরুষ। একই সময়ে নারী আক্রান্তের সংখ্যা ৩ হাজার ৩৩৭। এছাড়া বয়সের দিক থেকে ১৫ বছরের ঊর্ধ্বদের আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি। ২০১৭ সালে এ বয়সীদের মধ্যে আক্রান্ত হয়েছিল ৪ হাজার ৫৯৩ জন। ২০১৮ সালে ১ হাজার ৮৭৯ জন। রাঙামাটি জেলায় ১ বছরের নিচে শিশুদের আক্রান্তের হার সবচেয়ে কম। ২০১৭ সালে আক্রান্ত হয়েছিল মাত্র ১৬ জন। ২০১৮ সালে ১৪ জনে নেমে এসেছিলো। ২০১৮ সালে পুরুষ আক্রান্ত হয় এক হাজার ৮৮০ জন, নারী আক্রান্ত হয়েছে এক হাজার ১১৩ জন। জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জেলার ১০টি উপজেলার ৪৯টি ইউনিয়নে এক হাজার ৫৫৫টি গ্রামে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের হার ক্রমান্বয়ে কমছে।
কাপ্তাই উপজেলার চেয়ারম্যান দিলদার হোসেন নিজের ম্যালেরিয়ার আক্রান্ত হওয়ার অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করে বলেন, আগে ম্যালেরিয়ার ওষুধ জনমনে একটা আতঙ্কের বিষয় ছিল। কেননা ৪টা ইনজেকশন শেষ করে আবার ২১টা ট্যাবলেট খাওয়া লাগতো। যা খেতে অনেক তেতো ছিল এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া অনেক বেশি ছিল। তাই জ্বর আসলেও চিকিৎসা নিতে চাইতো না। এমনকি মানুষ ম্যালেরিয়ার ফলে হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে মারা যেত। বর্তমানে যে ওষুধটা আছে সেটার তেমন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া না থাকলেও অনেকবার ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হবার কারণে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে।
তিনি নিজেও কমপক্ষে ১০ বার ম্যালেরিয়ার আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন। এখানে ম্যালেরিয়া হয়নি এমন লোক পাওয়া খুব দুষ্কর। ওষুধের ফলে মানুষের মস্তিষ্ক আগের মতো কাজ করে না। তাছাড়া আরো অন্যান্য রোগেও ভুগতে দেখা যায় তাদের। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পেলে এটাকে নির্মূল করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন। পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হওয়ার কারণে তাদের ম্যালেরিয়া কম হয় উল্লেখ করে দিলদার হোসেন বলেন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের শারীরিক গঠন অনুসারে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউন সিস্টেম বেশি শক্তিশালী। তাই তাদের ম্যালেরিয়া কম হয়। তারা পাহাড়ে থেকে অভ্যস্ত অনেক আগে থেকে। তাছাড়া পাহাড়ের উপরে পানি জমে থাকার সুযোগ কম। তাই মশার উৎপাদন সুযোগ কম। আবার তাদের খাবারের অভ্যাসটাও অনেক স্বাস্থ্যকর বা তারা মসলা কম খান। এদিকে বাঙালিরা সাধারণত তুলনামূলকভাবে সমতল এলাকায় বসবাস করেন। যেখানে পানি জমার সুযোগ বেশি ও মশা বেশি। মূলত এসব কারণেই ম্যালেরিয়ায় বাঙালিরা বেশি আক্রান্ত হন।
জাতীয় ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির তথ্যমতে, দেশে ২০১৬ সালে মোট ১৭ জন রোগী ম্যালেরিয়ায় মৃত্যুবরণ করেন। এর মধ্যে ৫ জন পাহাড়ি ও ১২ জন বাঙালি। এরপর ২০১৭ সালে ১৩ জন মৃত্যুবরণ করেন। যার মধ্যে মাত্র ১ পাহাড়ি ছিল, বাকি ১২ জন বাঙালি।
এদিকে,বাংলাদেশে এখনো ম্যালেরিয়ার রেজিস্ট্যান্স (প্রতিরোধক) উৎপন্ন হয়নি বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। যদিও ইতিমধ্যে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও মিয়ানমারে এ রোগের রেজিস্ট্যান্স উৎপন্ন হয়েছে। গত ১৯ই এপ্রিল রাঙামাটির পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সে এক মত বিনিময় সভায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, আমরা গবেষণা কার্যক্রমটি পরিচালনার লক্ষ্যে একসঙ্গে ৯০ জন করে এ পর্যন্ত ২৭০ জন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছি। বিভিন্ন ধাপে মোট ২৮ দিন এসব রোগীকে মনিটরিং করা হয়। এ ধরনের একটি ট্রায়াল শেষ করতে কমপক্ষে ৬ থেকে ৭ মাস সময় লাগে। সরকার ও বিভিন্ন বেসরকারি সহযোগি সংস্থাগুলোর মাধ্যমে এসব গবেষণা পরিচালিত হচ্ছে। তাছাড়া মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্যান্সের বিষয়টিও গবেষণার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ মশারি দেয়া হয়েছে। ম্যালেরিয়া বাহক মশা প্রতিরোধে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। বিশেষ পদ্ধতিতে বাহক মশা প্রতিরোধে পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এমনকি যে এলাকাগুলোতে ম্যালেরিয়া নেই সেখানেও পর্যবেক্ষণ চলছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যালেরিয়া নির্মূল কার্যক্রমের এপিডেমিওলজিস্ট ডা. মশিউর রহমান বিটুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাঙামাটির ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. নিহার রঞ্জন নন্দী এবং কাপ্তাই উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাসুদ আহমেদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অ্যাডভোকেসি সভায় উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. এম এম আখতারুজ্জামান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য কর্মকর্তা পরীক্ষিত চৌধুরী, জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচির বিশেষজ্ঞ মো. নজরুল ইসলাম, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব এম কে হাসান মোরশেদ প্রমুখ।
No comments