বাংলাদেশে ভয়াল যত ঝড়
অতিপ্রবল
ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ ঘনীভূত হয়ে বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে। গত শুক্রবার (৩ মে)
সন্ধ্যা নাগাদ ঝড়টি বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, গত ১০
বছরের মধ্যে শক্তিশালী ঝড় হবে এই ফণী। বর্তমানে এর গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ থেকে
১৮০ কিলোমিটার। তবে ভারতের ওপর দিয়ে আসার কারণে ও নিজেদের প্রস্তুতি থাকায়
বাংলাদেশে ক্ষয়ক্ষতি কম হবে বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
ফণীর আগে আরও বেশ কয়েকটি শক্তিশালী ঝড় বাংলাদেশে আঘাত হেনেছে। এর মধ্যে ১৯৭০ সালের গোর্কি ও ১৯৯১ সালের ম্যারিএন ঝড় অন্যতম। এই দুটি ঝড়ে প্রাণহানির সংখ্যা ছিল অনেক।
গোর্কি: ১৯৭০ সালের ১৩ নভেম্বর বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) দক্ষিণাঞ্চলে গোর্কি আঘাত হানে। এ পর্যন্ত হওয়া ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে গোর্কির ভয়াবহতা ছিল সবচেয়ে বেশি। ঝড়ের কারণে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়। এদের বেশিরভাগই জলোচ্ছ্বাসে ডুবে মারা যান। সিম্পসন স্কেলে ঝড়ের মাত্রা ছিল ‘ক্যাটাগরি ৩’। ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় প্রায় ২২২ কিলোমিটার এবং জলোচ্ছ্বাসের সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিল প্রায় ৩০ ফুট। ঝড়ে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তজুমদ্দিন উপজেলা। সেখানকার এক লাখ ৬৭ হাজার অধিবাসীর মধ্যে প্রায় ৭৭ হাজারই প্রাণ হারায়। ঝড়ে সম্পদ ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ১০ লাখের বেশি গবাদিপশু প্রাণ হারায়। চার লাখ ঘরবাড়ি ও সাড়ে তিন হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভয়ানকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
১৯৮৮ সালের ঘূর্ণিঝড়: ১৯৮৮ সালের ২৯ নভেম্বর বাংলাদেশ আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়টি ইতিহাসের অন্যতম বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়। এই ঝড়ের ফলে দেশে যে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তা বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম বন্যা হিসেবে পরিচিত। ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ের ফলে বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে প্রায় পাঁচ হাজার ৭০৮ জন প্রাণ হারান। ঝড়ে উপকূল এলাকায় প্রচুর অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং বাংলাদেশের প্রায় ৭০ ভাগ ফসল নষ্ট হয়ে যায়, এর পরিমাণ ছিল প্রায় দুই লাখ ২০ হাজার টন। ঝড়ে ৬৫ হাজার গবাদিপশু মারা যায়। এছাড়া ১৫ হাজার হরিণ ও ৯টি রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মৃত্যু হয়। ৯৪১ কোটি টাকা সমমূল্যের ফসল নষ্ট হয়।
ম্যারিএন: নিহতের সংখ্যা বিচারে এ ঘূর্ণিঝড়টিও খুবই ভয়াবহ। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার বেগে এটি আঘাত হানে। ঘূর্ণিঝড়ের ফলে ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হয়। এর ফলে প্রায় এক লাখ ৩৮ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। প্রায় ১ কোটি মানুষ সর্বস্ব হারায়। সিম্পসন স্কেলে ঝড়ের মাত্রা ছিল ‘ক্যাটাগরি-৫’। ঝড়ে সন্দ্বীপ, মহেশখালী, হাতিয়াসহ অন্য দ্বীপগুলোতে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটে। নিহতদের বেশিরভাগই ছিল শিশু ও বৃদ্ধ। ১৯৭০-এর ঘূর্ণিঝড়ের পর অনেক সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা হলেও সচেতনতা ও অজ্ঞতার কারণে অনেকেই সেখানে আশ্রয় না নেওয়ায় এ প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। ঝড়ে প্রায় ১.৫ বিলিয়ন ডলারের (১৯৯১ মার্কিন ডলার) ক্ষতি হয়। বন্দরে নোঙর করা বিভিন্ন ছোটবড় জাহাজ, লঞ্চ ও অন্যান্য জলযান নিখোঁজ ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রায় ১০ লাখ ঘড়বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এতে ১ কোটি মানুষ বাস্তুহারা হয়ে পড়ে।
সিডর: ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর রাতে ২৬০ কিলোমিটার বেগের বাতাসের সঙ্গে ১০ থেকে ১২ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস নিয়ে আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’। শ্রীলঙ্কান শব্দ সিডর বা ‘চোখ’-এর নামে ঝড়ের নামকরণ করা হয়। সিম্পসন স্কেল অনুযায়ী এ ঝড়ের মাত্রা ছিল ‘ক্যাটাগরি-৫’। সরকারি তথ্যমতে ঝড়ে দুই হাজার ২১৭ জন প্রাণ হারান। পানির চাপে পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর নদের পাড়ের বেড়িবাঁধ ভেঙে ভাসিয়ে নিয়ে যায় ৬৮ হাজার ৩৭৯টি ঘরবাড়ি। পানিতে তলিয়ে বিনষ্ট হয়ে যায় ৩৭ হাজার ৬৪ একর জমির ফসল।
আইলা: ২০০৯ সালে ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় ‘আইলা’ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশ ও ভারতের দক্ষিণ-পূর্বাংশে আঘাত হানে। মালদ্বীপের আবহাওয়াবিদরা এর নামকরণ করেন। এর অর্থ হলো ডলফিন বা শুশুকজাতীয় জলচর প্রাণী। ঝড়টির ব্যাস ছিল প্রায় ৩০০ কিলোমিটার, যা ঘূর্ণিঝড় সিডরের থেকে ৫০ কিলোমিটার বেশি। সিডরের মতোই আইলা প্রায় ১০ ঘণ্টা সময় নিয়ে উপকূল অতিক্রম করে। ঝড়ে ১৯৩ জনের মৃত্যু ও সাত হাজার মানুষ আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। দুই লাখ গবাদিপশু মারা যায়। উপকূলের ১১ জেলায় প্রায় ছয় লাখ ঘরবাড়ি ও আট হাজার ৮০০ কিলোমিটার রাস্তা বিধ্বস্ত হয়। খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলার ৭১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে প্রায় দেড় লাখ একর জমি লবণাক্ত পানিতে তলিয়ে যায়। এর ফলে এ দু’টি জেলার প্রায় এক লাখ ২৫ হাজার মানুষ স্থায়ীভাবে এবং প্রায় সাড়ে চার লাখ মানুষ অস্থায়ীভাবে বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়ে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা, উইকিপিডিয়া, বাংলাপিডিয়া
ফণীর আগে আরও বেশ কয়েকটি শক্তিশালী ঝড় বাংলাদেশে আঘাত হেনেছে। এর মধ্যে ১৯৭০ সালের গোর্কি ও ১৯৯১ সালের ম্যারিএন ঝড় অন্যতম। এই দুটি ঝড়ে প্রাণহানির সংখ্যা ছিল অনেক।
গোর্কি: ১৯৭০ সালের ১৩ নভেম্বর বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) দক্ষিণাঞ্চলে গোর্কি আঘাত হানে। এ পর্যন্ত হওয়া ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে গোর্কির ভয়াবহতা ছিল সবচেয়ে বেশি। ঝড়ের কারণে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়। এদের বেশিরভাগই জলোচ্ছ্বাসে ডুবে মারা যান। সিম্পসন স্কেলে ঝড়ের মাত্রা ছিল ‘ক্যাটাগরি ৩’। ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় প্রায় ২২২ কিলোমিটার এবং জলোচ্ছ্বাসের সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিল প্রায় ৩০ ফুট। ঝড়ে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তজুমদ্দিন উপজেলা। সেখানকার এক লাখ ৬৭ হাজার অধিবাসীর মধ্যে প্রায় ৭৭ হাজারই প্রাণ হারায়। ঝড়ে সম্পদ ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ১০ লাখের বেশি গবাদিপশু প্রাণ হারায়। চার লাখ ঘরবাড়ি ও সাড়ে তিন হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভয়ানকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
১৯৮৮ সালের ঘূর্ণিঝড়: ১৯৮৮ সালের ২৯ নভেম্বর বাংলাদেশ আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়টি ইতিহাসের অন্যতম বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়। এই ঝড়ের ফলে দেশে যে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তা বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম বন্যা হিসেবে পরিচিত। ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ের ফলে বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে প্রায় পাঁচ হাজার ৭০৮ জন প্রাণ হারান। ঝড়ে উপকূল এলাকায় প্রচুর অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং বাংলাদেশের প্রায় ৭০ ভাগ ফসল নষ্ট হয়ে যায়, এর পরিমাণ ছিল প্রায় দুই লাখ ২০ হাজার টন। ঝড়ে ৬৫ হাজার গবাদিপশু মারা যায়। এছাড়া ১৫ হাজার হরিণ ও ৯টি রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মৃত্যু হয়। ৯৪১ কোটি টাকা সমমূল্যের ফসল নষ্ট হয়।
ম্যারিএন: নিহতের সংখ্যা বিচারে এ ঘূর্ণিঝড়টিও খুবই ভয়াবহ। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার বেগে এটি আঘাত হানে। ঘূর্ণিঝড়ের ফলে ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হয়। এর ফলে প্রায় এক লাখ ৩৮ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। প্রায় ১ কোটি মানুষ সর্বস্ব হারায়। সিম্পসন স্কেলে ঝড়ের মাত্রা ছিল ‘ক্যাটাগরি-৫’। ঝড়ে সন্দ্বীপ, মহেশখালী, হাতিয়াসহ অন্য দ্বীপগুলোতে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটে। নিহতদের বেশিরভাগই ছিল শিশু ও বৃদ্ধ। ১৯৭০-এর ঘূর্ণিঝড়ের পর অনেক সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা হলেও সচেতনতা ও অজ্ঞতার কারণে অনেকেই সেখানে আশ্রয় না নেওয়ায় এ প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। ঝড়ে প্রায় ১.৫ বিলিয়ন ডলারের (১৯৯১ মার্কিন ডলার) ক্ষতি হয়। বন্দরে নোঙর করা বিভিন্ন ছোটবড় জাহাজ, লঞ্চ ও অন্যান্য জলযান নিখোঁজ ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রায় ১০ লাখ ঘড়বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এতে ১ কোটি মানুষ বাস্তুহারা হয়ে পড়ে।
সিডর: ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর রাতে ২৬০ কিলোমিটার বেগের বাতাসের সঙ্গে ১০ থেকে ১২ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস নিয়ে আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’। শ্রীলঙ্কান শব্দ সিডর বা ‘চোখ’-এর নামে ঝড়ের নামকরণ করা হয়। সিম্পসন স্কেল অনুযায়ী এ ঝড়ের মাত্রা ছিল ‘ক্যাটাগরি-৫’। সরকারি তথ্যমতে ঝড়ে দুই হাজার ২১৭ জন প্রাণ হারান। পানির চাপে পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর নদের পাড়ের বেড়িবাঁধ ভেঙে ভাসিয়ে নিয়ে যায় ৬৮ হাজার ৩৭৯টি ঘরবাড়ি। পানিতে তলিয়ে বিনষ্ট হয়ে যায় ৩৭ হাজার ৬৪ একর জমির ফসল।
আইলা: ২০০৯ সালে ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় ‘আইলা’ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশ ও ভারতের দক্ষিণ-পূর্বাংশে আঘাত হানে। মালদ্বীপের আবহাওয়াবিদরা এর নামকরণ করেন। এর অর্থ হলো ডলফিন বা শুশুকজাতীয় জলচর প্রাণী। ঝড়টির ব্যাস ছিল প্রায় ৩০০ কিলোমিটার, যা ঘূর্ণিঝড় সিডরের থেকে ৫০ কিলোমিটার বেশি। সিডরের মতোই আইলা প্রায় ১০ ঘণ্টা সময় নিয়ে উপকূল অতিক্রম করে। ঝড়ে ১৯৩ জনের মৃত্যু ও সাত হাজার মানুষ আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। দুই লাখ গবাদিপশু মারা যায়। উপকূলের ১১ জেলায় প্রায় ছয় লাখ ঘরবাড়ি ও আট হাজার ৮০০ কিলোমিটার রাস্তা বিধ্বস্ত হয়। খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলার ৭১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে প্রায় দেড় লাখ একর জমি লবণাক্ত পানিতে তলিয়ে যায়। এর ফলে এ দু’টি জেলার প্রায় এক লাখ ২৫ হাজার মানুষ স্থায়ীভাবে এবং প্রায় সাড়ে চার লাখ মানুষ অস্থায়ীভাবে বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়ে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা, উইকিপিডিয়া, বাংলাপিডিয়া
No comments