রানা প্লাজা ধসের ছয় বছর: স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চান আহত শ্রমিকরা by হাফিজ উদ্দিন
সাভারে
ভয়াবহ রানা প্লাজা ভবন ধসের ছয় বছর পূর্তি হলো। এখনো স্বাভাবিক জীবনে
ফিরতে পারেনি রানা প্লাজায় আহতরা। ২০১৩ সালের ২৪শে এপ্রিল সাভার বাজার
বাসস্ট্যান্ডে ধসে পড়ে ৯ তলাবিশিষ্ট বহুতল ভবন রানা প্লাজা। মুহূর্তের
মধ্যে পুরো ভবন দুমড়ে মুচড়ে এক হয়ে যায়। ধুলায় অন্ধকার হয়ে যায় পুরো এলাকা।
প্রথমে চারদিকে ছুটোছুটি, তার কিছুক্ষণ পরই শুরু হয় লাশের মিছিল। সরকারি
হিসাব অনুযায়ী ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে প্রাণ হারান তৈরি পোশাক
শ্রমিকসহ ১১শ’ ৩৬ মানুষ। আর আহত হয় আরো অন্তত ২ হাজার ৪ শ’ ৩৮ জন হতভাগা
শ্রমিক।
ভবন ধসের ৬ বছর পার হলেও এখনো অনেক নিহত শ্রমিকের স্বজন ও আহত শ্রমিকরা পায়নি প্রয়োজনীয় আর্থিক ক্ষতিপূরণ। ফলে অর্থাভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা নিতে না পারায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি তারা। এমনই হতভাগা শ্রমিকের নাম সালমা বেগম (৩৮), রানা প্লাজার ৮ম তলার নিউ ওয়েভ স্টাইল লিমিটেড কারখানার শ্রমিক।
অভাবের সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে স্বামীর সঙ্গে গ্রাম থেকে ঢাকায় এসে কাজ নেন তৈরি পোশাক কারখানায়। চাকরি করে নিজের সন্তানদের খাওয়ানোর পাশাপাশি তাদের লেখাপড়া করিয়ে মানুষ করার স্বপ্ন দেখেন সালমা। কিন্তু তার সে আশা বেশিদূর এগোতে পারেনি। ২০১৩ সালে ২৪শে এপ্রিল সকাল পৌনে ৯টায় হঠাৎ বিকট শব্দে ধসে পড়ে তার কর্মস্থল রানা প্লাজা। দীর্ঘ ৭ ঘণ্টা পর ধসে পড়া ভবনের ভেতর থেকে উদ্ধার হয়ে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিজেকে আবিস্কার করেন এই নারী শ্রমিক। সেখানে প্রায় এক মাস চিকিৎসা নেয়ার পর স্থানান্তর হন পক্ষাঘাতগ্রস্ত পুনর্বাসন কেন্দ্র সিআরপিতে। মেরুদণ্ডের হাড় থেকে জেলি বের হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে তার অবস্থা বেশি ভালো নেই। কোনো রকমে ওষুধ খেয়ে এবং থেরাপি দিয়ে কিছুটা ভালো থাকলেও এর কোনো স্থায়ী সমাধান নেই বলে জানিয়েছেন তার চিকিৎসক। এ সমস্যার কারণে তিনি বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন না এবং ঝুঁকেও কাজ করতে পারেন না। সমস্যা আর অভাবের সংসারে দু’সন্তানকে রেখে অন্যত্র বিয়ে করে তাদেরকে ছেড়ে গেছেন পাষণ্ড স্বামী বাক্কার মিয়া।
এখন দু’সন্তান নিয়ে নতুন করে বিপাকে পড়েছেন সালমা বেগম। এগারো বছরের মেয়ে জলি আক্তার স্থানীয় একটি স্কুলে ৫ শ্রেণিতে পড়লেও অর্থাভাবে তার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া দু’বছরের ছেলেকে দুধ খাওয়ানোর জন্য হাত পাততে হচ্ছে অন্যের কাছে। কোনো রকমে চেয়েচিন্তে একটি দুধের পট কিনে সপ্তাহখানেক খাওয়াতে পারেন ছেলেকে। সেটাও সব সময় সম্ভব না হলে না খেয়েই থাকতে হয় ওই শিশুটিকে। সবকিছু মিলিয়ে তিনি বলেন, নিজেই যেখানে অর্থের জন্য চিকিৎসা করাতে পারছি না সেখানে ছেলেমেয়ের যত্ন নেবো কীভাবে। সরকারিভাবে কোনো সহায়তা মিলেনি তার ভাগ্যে। বিভিন্ন জনের কাছ থেকে তিন লাখ টাকা অনুদান পেয়েছিলো যা অনেক আগেই চিকিৎসার পেছনে ব্যয় হয়ে গেছে। এখন দুটি শিশু সন্তানকে নিয়ে আমি কি করবো, আর কি খাবো? এদিকে আমার মাও অসুস্থ। তাকেও আমার দেখতে হয়। চিকিৎসক মোস্তফা কামাল বলেন, সালমা আক্তারের আঘাত শতভাগ ভালো হওয়া সম্ভব নয়। তবে নিয়মতান্ত্রিকভাবে চলাফেরা করলে এটাকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। অনেক সময় ব্যথা অসহনীয় মনে হলে অপারেশন করা হয়। কিন্তু সেখানেও ঝুঁকি থেকে যায়। তাই এ আঘাতের জন্য নিয়মিত ব্যথার ওষুধ সেবনের পাশাপাশি ফিজিও থেরাপি নিতে হবে। পারুল আক্তার (২৮), সে রানা প্লাজার ৫ম তলার প্যান্টম টেক্স লিমিটেড কারখানার সুইং অপারেটর ছিলেন।
ভবন ধসের সময় দৌড়ে বাঁচার চেষ্টা করেন তিনি। এরপর কি হয়েছে আর কিছুই বলতে পারেন না তিনি। মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর থানার ধামসোরা গ্রামের মো. ইয়াসিন মিয়ার স্ত্রী পারুল আক্তার। স্বামীর সঙ্গে সাভারে ভাড়া বাসায় থেকে সংসারে সচ্ছলতা আনতে রানা প্লাজায় কাজ করতো বলে সে জানায়। ৬ বছর পার হতে চললেও এখনো পুরো সুস্থ হয়ে উঠতে পারেনি পারুল আক্তার। বর্তমানে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত পারুল হঠাৎ ভালো হঠাৎ খারাপ। স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়ায় কিছুই মনে থাকে না তার। মাথা এবং মেরুদণ্ডের ব্যথার জন্য দীর্ঘদিন ধরে ওষুধ খেয়েও তার কোনো উন্নতি হয়নি। সর্বশেষ চিকিৎসকের পরামর্শে এক্সরে করে জানতে পারেন তার কিডনিতে পাথর হয়ে গেছে। সেগুলো এমন আকার ধারণ করেছে যে অপারেশনের মাধ্যমে পেট কেটে বের করতে হয়েছে। বর্তমানে তিনি কোনো কাজ করতে পারছেন না। তবুও অনেক কষ্ট করে সুস্থ হওয়ার আশায় চিকিৎসা নেয়ার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে বেড়ান।
পারুলের স্বামী মো. ইয়াছিনও রানা প্লাজা ধসে গুরুতর আহত হয়ে কানের পর্দা ফেটে যাওয়ায় এবং মাথায় আঘাত পেয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিছানায় পড়ে ছিলেন। কিন্তু জীবিকার তাগিদে বেঁচে থাকার জন্য ঘরে বসে না থেকে একটি পোশাক কারখানায় নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে কাজ করছেন। একজনের আয়ে কোনো রকমে একবেলা খেয়ে বেঁচে রয়েছেন তারা। ভবন ধসের ঘটনায় মাত্র এক লাখ ৪৫ হাজার টাকা আর্থিক অনুদান পেয়েছিলেন পারুল। যার পুরোটাই ব্যয় করেছে নিজের এবং স্বামীর চিকিৎসার পেছনে। সরকারিভাবে কোনো সহায়তা পাননি বলে দাবি করেন এ নারী শ্রমিক। বর্তমানে তিনি দু’বেলা দু’মুঠো খেয়ে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রধানমন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্টদের প্রতি সহায়তা কামনা করেন। আরেক শ্রমিক ধসে পড়া রানা প্লাজার ৮ম তলার নিউ ওয়েভ স্টাইল কারখানার লিপি আক্তার (৪০) ভবন ধসের ঘটনায় মেরুদণ্ডে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে এখনো সঠিক চিকিৎসার জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছেন বিভিন্ন হাসপাতালে। তবে টাকার অভাবে তিনি ওষুধ কিংবা পথ্য কিনে খেতে পারছেন না। লিপি আক্তার বলেন, মেরুদণ্ডে ব্যথার কারণে অনেক জ্বালাপোড়া করে। এজন্য ঠিকমতো হাঁটতেও পারি না, আবার বেশিক্ষণ বসেও থাকতে পারি না। অসুস্থতার কারণে মুখে রুচি না থাকায় খাইতেও পারি না। তবুও বাঁচার তাগিদে জোর করে কিছু খাওয়ার চেষ্টা করি। তাতেও রক্ষা নাই, খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বমি হয়ে যায়। সাভারের সিআরপি এলাকায় কথা হয় লিপি আক্তারের সঙ্গে। বর্তমানে সাভার পৌর এলাকার আড়াপাড়া রশিদ মেম্বারের মোড় এলাকায় রিকশাচালক স্বামীর সঙ্গে ভাড়া থাকেন তিনি। কষ্টের সঙ্গে বলেন, সংসারে একমাত্র উপার্জনকারী আমার স্বামী।
সারাদিন রিকশা চালিয়ে যা আয় করেন তা দিয়েই কোনোমতে সংসার চালাতে হয় তাদের। এর মধ্যে প্রতি মাসে শুধু ঘর ভাড়াই দিতে হয় তিন হাজার টাকা। এ ছাড়া দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে স্বামীর সামান্য আয়ে তার সংসার চলে না। এরপরও কোনো রকমে দু’মুঠো খেয়ে বাঁচার চেষ্টা করছেন। তাই দুঃখের সঙ্গে তিনি বলেন, টাকার অভাবে ঠিকমতো ওষুধই খেতে পারছি না। আবার পথ্য খাবো কীভাবে। শুধু ওষুধ খেলেই তো সুস্থ হওয়া যায় না। এর পাশাপাশি অন্য কিছু খাওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক। বর্তমানে আহত শ্রমিকদের একটাই চাওয়া, সুস্থ হয়ে কাজ করে হলেও দু’বেলা খেয়ে পড়ে বাঁচতে চান তারা। কিন্তু সঠিক চিকিৎসার অভাবে তাদের সে আশার কোনো ফল দেখতে পারছে না। তাই সরকারের কাছে তাদের একটাই দাবি চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহযোগিতার পাশাপাশি ভবন ধসের ঘটনায় জড়িতদের উপযুক্ত বিচারের দাবি করেছেন রানা প্লাজার আহত শ্রমিকরা।
ভবন ধসের ৬ বছর পার হলেও এখনো অনেক নিহত শ্রমিকের স্বজন ও আহত শ্রমিকরা পায়নি প্রয়োজনীয় আর্থিক ক্ষতিপূরণ। ফলে অর্থাভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা নিতে না পারায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি তারা। এমনই হতভাগা শ্রমিকের নাম সালমা বেগম (৩৮), রানা প্লাজার ৮ম তলার নিউ ওয়েভ স্টাইল লিমিটেড কারখানার শ্রমিক।
অভাবের সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে স্বামীর সঙ্গে গ্রাম থেকে ঢাকায় এসে কাজ নেন তৈরি পোশাক কারখানায়। চাকরি করে নিজের সন্তানদের খাওয়ানোর পাশাপাশি তাদের লেখাপড়া করিয়ে মানুষ করার স্বপ্ন দেখেন সালমা। কিন্তু তার সে আশা বেশিদূর এগোতে পারেনি। ২০১৩ সালে ২৪শে এপ্রিল সকাল পৌনে ৯টায় হঠাৎ বিকট শব্দে ধসে পড়ে তার কর্মস্থল রানা প্লাজা। দীর্ঘ ৭ ঘণ্টা পর ধসে পড়া ভবনের ভেতর থেকে উদ্ধার হয়ে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিজেকে আবিস্কার করেন এই নারী শ্রমিক। সেখানে প্রায় এক মাস চিকিৎসা নেয়ার পর স্থানান্তর হন পক্ষাঘাতগ্রস্ত পুনর্বাসন কেন্দ্র সিআরপিতে। মেরুদণ্ডের হাড় থেকে জেলি বের হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে তার অবস্থা বেশি ভালো নেই। কোনো রকমে ওষুধ খেয়ে এবং থেরাপি দিয়ে কিছুটা ভালো থাকলেও এর কোনো স্থায়ী সমাধান নেই বলে জানিয়েছেন তার চিকিৎসক। এ সমস্যার কারণে তিনি বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন না এবং ঝুঁকেও কাজ করতে পারেন না। সমস্যা আর অভাবের সংসারে দু’সন্তানকে রেখে অন্যত্র বিয়ে করে তাদেরকে ছেড়ে গেছেন পাষণ্ড স্বামী বাক্কার মিয়া।
এখন দু’সন্তান নিয়ে নতুন করে বিপাকে পড়েছেন সালমা বেগম। এগারো বছরের মেয়ে জলি আক্তার স্থানীয় একটি স্কুলে ৫ শ্রেণিতে পড়লেও অর্থাভাবে তার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া দু’বছরের ছেলেকে দুধ খাওয়ানোর জন্য হাত পাততে হচ্ছে অন্যের কাছে। কোনো রকমে চেয়েচিন্তে একটি দুধের পট কিনে সপ্তাহখানেক খাওয়াতে পারেন ছেলেকে। সেটাও সব সময় সম্ভব না হলে না খেয়েই থাকতে হয় ওই শিশুটিকে। সবকিছু মিলিয়ে তিনি বলেন, নিজেই যেখানে অর্থের জন্য চিকিৎসা করাতে পারছি না সেখানে ছেলেমেয়ের যত্ন নেবো কীভাবে। সরকারিভাবে কোনো সহায়তা মিলেনি তার ভাগ্যে। বিভিন্ন জনের কাছ থেকে তিন লাখ টাকা অনুদান পেয়েছিলো যা অনেক আগেই চিকিৎসার পেছনে ব্যয় হয়ে গেছে। এখন দুটি শিশু সন্তানকে নিয়ে আমি কি করবো, আর কি খাবো? এদিকে আমার মাও অসুস্থ। তাকেও আমার দেখতে হয়। চিকিৎসক মোস্তফা কামাল বলেন, সালমা আক্তারের আঘাত শতভাগ ভালো হওয়া সম্ভব নয়। তবে নিয়মতান্ত্রিকভাবে চলাফেরা করলে এটাকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। অনেক সময় ব্যথা অসহনীয় মনে হলে অপারেশন করা হয়। কিন্তু সেখানেও ঝুঁকি থেকে যায়। তাই এ আঘাতের জন্য নিয়মিত ব্যথার ওষুধ সেবনের পাশাপাশি ফিজিও থেরাপি নিতে হবে। পারুল আক্তার (২৮), সে রানা প্লাজার ৫ম তলার প্যান্টম টেক্স লিমিটেড কারখানার সুইং অপারেটর ছিলেন।
ভবন ধসের সময় দৌড়ে বাঁচার চেষ্টা করেন তিনি। এরপর কি হয়েছে আর কিছুই বলতে পারেন না তিনি। মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর থানার ধামসোরা গ্রামের মো. ইয়াসিন মিয়ার স্ত্রী পারুল আক্তার। স্বামীর সঙ্গে সাভারে ভাড়া বাসায় থেকে সংসারে সচ্ছলতা আনতে রানা প্লাজায় কাজ করতো বলে সে জানায়। ৬ বছর পার হতে চললেও এখনো পুরো সুস্থ হয়ে উঠতে পারেনি পারুল আক্তার। বর্তমানে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত পারুল হঠাৎ ভালো হঠাৎ খারাপ। স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়ায় কিছুই মনে থাকে না তার। মাথা এবং মেরুদণ্ডের ব্যথার জন্য দীর্ঘদিন ধরে ওষুধ খেয়েও তার কোনো উন্নতি হয়নি। সর্বশেষ চিকিৎসকের পরামর্শে এক্সরে করে জানতে পারেন তার কিডনিতে পাথর হয়ে গেছে। সেগুলো এমন আকার ধারণ করেছে যে অপারেশনের মাধ্যমে পেট কেটে বের করতে হয়েছে। বর্তমানে তিনি কোনো কাজ করতে পারছেন না। তবুও অনেক কষ্ট করে সুস্থ হওয়ার আশায় চিকিৎসা নেয়ার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে বেড়ান।
পারুলের স্বামী মো. ইয়াছিনও রানা প্লাজা ধসে গুরুতর আহত হয়ে কানের পর্দা ফেটে যাওয়ায় এবং মাথায় আঘাত পেয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিছানায় পড়ে ছিলেন। কিন্তু জীবিকার তাগিদে বেঁচে থাকার জন্য ঘরে বসে না থেকে একটি পোশাক কারখানায় নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে কাজ করছেন। একজনের আয়ে কোনো রকমে একবেলা খেয়ে বেঁচে রয়েছেন তারা। ভবন ধসের ঘটনায় মাত্র এক লাখ ৪৫ হাজার টাকা আর্থিক অনুদান পেয়েছিলেন পারুল। যার পুরোটাই ব্যয় করেছে নিজের এবং স্বামীর চিকিৎসার পেছনে। সরকারিভাবে কোনো সহায়তা পাননি বলে দাবি করেন এ নারী শ্রমিক। বর্তমানে তিনি দু’বেলা দু’মুঠো খেয়ে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রধানমন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্টদের প্রতি সহায়তা কামনা করেন। আরেক শ্রমিক ধসে পড়া রানা প্লাজার ৮ম তলার নিউ ওয়েভ স্টাইল কারখানার লিপি আক্তার (৪০) ভবন ধসের ঘটনায় মেরুদণ্ডে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে এখনো সঠিক চিকিৎসার জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছেন বিভিন্ন হাসপাতালে। তবে টাকার অভাবে তিনি ওষুধ কিংবা পথ্য কিনে খেতে পারছেন না। লিপি আক্তার বলেন, মেরুদণ্ডে ব্যথার কারণে অনেক জ্বালাপোড়া করে। এজন্য ঠিকমতো হাঁটতেও পারি না, আবার বেশিক্ষণ বসেও থাকতে পারি না। অসুস্থতার কারণে মুখে রুচি না থাকায় খাইতেও পারি না। তবুও বাঁচার তাগিদে জোর করে কিছু খাওয়ার চেষ্টা করি। তাতেও রক্ষা নাই, খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বমি হয়ে যায়। সাভারের সিআরপি এলাকায় কথা হয় লিপি আক্তারের সঙ্গে। বর্তমানে সাভার পৌর এলাকার আড়াপাড়া রশিদ মেম্বারের মোড় এলাকায় রিকশাচালক স্বামীর সঙ্গে ভাড়া থাকেন তিনি। কষ্টের সঙ্গে বলেন, সংসারে একমাত্র উপার্জনকারী আমার স্বামী।
সারাদিন রিকশা চালিয়ে যা আয় করেন তা দিয়েই কোনোমতে সংসার চালাতে হয় তাদের। এর মধ্যে প্রতি মাসে শুধু ঘর ভাড়াই দিতে হয় তিন হাজার টাকা। এ ছাড়া দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে স্বামীর সামান্য আয়ে তার সংসার চলে না। এরপরও কোনো রকমে দু’মুঠো খেয়ে বাঁচার চেষ্টা করছেন। তাই দুঃখের সঙ্গে তিনি বলেন, টাকার অভাবে ঠিকমতো ওষুধই খেতে পারছি না। আবার পথ্য খাবো কীভাবে। শুধু ওষুধ খেলেই তো সুস্থ হওয়া যায় না। এর পাশাপাশি অন্য কিছু খাওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক। বর্তমানে আহত শ্রমিকদের একটাই চাওয়া, সুস্থ হয়ে কাজ করে হলেও দু’বেলা খেয়ে পড়ে বাঁচতে চান তারা। কিন্তু সঠিক চিকিৎসার অভাবে তাদের সে আশার কোনো ফল দেখতে পারছে না। তাই সরকারের কাছে তাদের একটাই দাবি চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহযোগিতার পাশাপাশি ভবন ধসের ঘটনায় জড়িতদের উপযুক্ত বিচারের দাবি করেছেন রানা প্লাজার আহত শ্রমিকরা।
No comments