দর্শকশূন্যতার বড় কারণ হলের বাজে পরিবেশ by কামরুজ্জামান মিলু
বিনোদনের
সবচেয়ে বড় মাধ্যম সিনেমা। আর এই সিনেমা দেখার জন্য চাই প্রেক্ষাগৃহ বা হল।
দেশে কেমন ছিল সিনেমা হলের সূচনাকাল? আর তারপর ক্রমে সিনেমা হলের সংখ্যা
বেড়ে চলা, এসবের উন্নয়ন, আধুনিকায়নের পথ পেরিয়ে দেশজুড়ে সিনেমা হলের
বর্তমান অবস্থা নিয়ে সাজানো হয়েছে ধারাবাহিক প্রতিবেদন বাংলাদেশের সিনেমা
হল। লিখেছেন কামরুজ্জামান মিলু। আজ প্রকাশ হচ্ছে এর চতুর্থ পর্ব ‘দর্শকশূন্যতার বড় কারণ হলের বাজে পরিবেশ’
শুরুতেই কয়েক দশক আগের কথা বলতে হয়। মানুষের বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম তখনও ছিল চলচ্চিত্র বা সিনেমা। তরুণ ছেলেদের একসঙ্গে হয়ে সিনেমা হলের সামনে আড্ডা দেয়া, সেখানকার দেয়ালে লাগানো নতুন ছবির পোস্টার দেখে নানারকম আলোচনা-সমালোচনায় মুখর হওয়া কিংবা সিনেমা দেখায় মেতে ওঠায় কতই না আনন্দ ছিল তখন। শুধু তরুণই নয়, সব বয়সের দর্শকই সিনেমা হলে গিয়ে এ কাজগুলো করতো নির্ভয়ে।
সে সময়টাতে সিনেমা হলে বিভিন্ন শোয়ের পাশাপাশি নাইট শো-ও হতো। ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও সানন্দচিত্তে সেসব শো দেখতে যেত।
সারা দেশের সিনেমা হলের পরিবেশ ভালো ছিল বলেই দারুণ আনন্দে এসব করা যেত। কিন্তু একটা সময়ে এসে হঠাৎই বদলে যায় দৃশ্যপট। সারা দেশেই ক্রমশ সিনেমা হলের পরিবেশ খারাপ হতে থাকে। একশ্রেণির দর্শককে দেখা যায় ভাসমান পতিতাদের নিয়ে সিনেমা হলে ঢুকতে। অনেক সিনেমা হলেরই টয়লেট ব্যবস্থা নোংরা হয়ে পড়ে। সে সঙ্গে সিনেমা হলের পর্দা, শব্দের মানও ক্রমশ নিম্নমুখী হতে থাকে।
এসব কারণে পরিবার নিয়ে সিনেমা হলে ছবি দেখতে আসা ছেড়ে দেন অনেক দর্শক। নারী দর্শক তো দূরে থাক অনেক পুরুষ দর্শকও একা সিনেমা হলে আসতে ভয় পেতে থাকেন তখন থেকে। এর ফলে ক্রমশ দর্শকশূন্য হতে থাকে সিনেমা হলগুলো। যে অবস্থা এ সময়ে সারা দেশের অনেক সিনেমা হলেই বিদ্যমান। এ প্রসঙ্গে দর্শকপ্রিয় নির্মাতা ইস্পাহানী আরিফ জাহান বলেন, সমাজ ব্যবস্থার কথা একবার চিন্তা করে দেখুন। আগে দিনের শোর পাশাপাশি নাইট শো দেখে দর্শকরা সিনেমা হল থেকে বের হতো। আর পরিবারের সকলে মিলে সিনেমা হলে ছবি দেখে আনন্দে বাড়ি ফিরতো।
মানুষ একটা ভালো সময় কাটাতেই সিনেমা হলে যেত। আর সেই সিনেমা হলের পরিবেশই যদি ভালো না থাকে তাহলে কেন মানুষ সেখানে যাবে? ছবির ব্যবসায়িক ব্যর্থতার অনেকগুলো কারণের মধ্যে সিনেমা হলের পরিবেশ খারাপ হয়ে যাওয়া অন্যতম। এখন গ্রামেও অনেক ঘরে ড্রইংরুমে সোফাসেট আছে, রঙিন টিভি এবং ডিশ লাইন সংযোগ আছে। যা আগের সময়ে ছিল না। তবে সময়ের সঙ্গে সবকিছু উন্নত হলেও সারা দেশেই সিনেমা হলের পরিবেশ খুব একটা ভালো হয়নি। হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া বেশিরভাগ সিনেমা হলে ভালো পরিবেশের অভাবে দর্শকরা যাচ্ছে না।
তাই প্রায়শই দর্শকশূন্য থাকছে সিনেমা হল। এর সমাধান জরুরি। এদিকে সরজমিন খবর নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে ঢাকা ও দেশের নানা জায়গায় অনেক সিনেমা হলেরই টয়লেটে যাওয়ার মতো পরিবেশ নেই, দুর্গন্ধে দর্শকরা অসুস্থ হয়ে যায়। এ ছাড়া অনেক সিনেমা হলে এখনো পুরনো অশ্লীল সিনেমা চালানো হয়। আর রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের বেশকিছু সিনেমা হলের সামনেই পতিতা, তাদের খদ্দের, হিজড়া এবং এমন বিভিন্ন ধরনের লোকজন দেখা যায়, যারা সিনেমা দেখতে আসা দর্শকদের জন্য নানা বিড়ম্বনাকর পরিস্থিতি তৈরি করে। এ ছাড়া সিনেমা হলের আশেপাশে বিচরণ করা ছিনতাইকারী এবং প্রতারকচক্র তো আছেই। এদের ভয়েও সিনেমা হলে যেতে চায় না অনেকেই।
কারণ অনেক সময়ই সিনেমা হলে ছবি দেখতে আসা সাধারণ দর্শকরা পড়ে যায় এসব নোংরা পরিবেশের ঝামেলায়। চলচ্চিত্র প্রযোজক ও প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির সাবেক আহ্বায়ক নাসিরউদ্দিন দিলু বলেন, দেশের বেশিরভাগ সিনেমা হলের পরিবেশ এখন ভালো না। অনেক সিনেমা হলে এখনো ছারপোকা মারতে হয়, সিট থেকে নারিকেলের ছোবড়া বেরিয়ে থাকে, সিট ভাঙ্গা পাওয়া যায়, ঠিকমতো ফ্যান চলে না, দর্শকদের ঘামে ভিজে সিনেমা দেখতে হয়। তাই এসব সিনেমা হল থেকেও লাভ নেই। হলের পরিবেশ যদি সুন্দর না হয় তাহলে দর্শকরা কখনোই সিনেমা হলে যাবে না।
মানুষের হাতে হাতে এখন স্মার্টফোন। স্বল্প টাকার ইন্টারনেট ব্যবহার করে যার মাধ্যমে সহজেই যে কোনো ভাষার সিনেমা পাওয়া যায় বোতাম টিপলেই। তাহলে মানুষ কেন টাকা খরচ করে বাজে পরিবেশের সিনেমা হলে যাবে তিক্ত অভিজ্ঞতা নিতে। তাই সিনেমা হলের পরিবেশ ঠিক করতে সংশ্লিষ্ট সকলের এগিয়ে আসতে হবে নিঃস্বার্থভাবে। আর হলের পরিবেশের পাশাপাশি সিনেমার মান ভালো হলেই সিনেমা হলে দর্শকরা আবার যাওয়া শুরু করবে বলে বিশ্বাস করি আমি।
শুরুতেই কয়েক দশক আগের কথা বলতে হয়। মানুষের বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম তখনও ছিল চলচ্চিত্র বা সিনেমা। তরুণ ছেলেদের একসঙ্গে হয়ে সিনেমা হলের সামনে আড্ডা দেয়া, সেখানকার দেয়ালে লাগানো নতুন ছবির পোস্টার দেখে নানারকম আলোচনা-সমালোচনায় মুখর হওয়া কিংবা সিনেমা দেখায় মেতে ওঠায় কতই না আনন্দ ছিল তখন। শুধু তরুণই নয়, সব বয়সের দর্শকই সিনেমা হলে গিয়ে এ কাজগুলো করতো নির্ভয়ে।
সে সময়টাতে সিনেমা হলে বিভিন্ন শোয়ের পাশাপাশি নাইট শো-ও হতো। ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও সানন্দচিত্তে সেসব শো দেখতে যেত।
সারা দেশের সিনেমা হলের পরিবেশ ভালো ছিল বলেই দারুণ আনন্দে এসব করা যেত। কিন্তু একটা সময়ে এসে হঠাৎই বদলে যায় দৃশ্যপট। সারা দেশেই ক্রমশ সিনেমা হলের পরিবেশ খারাপ হতে থাকে। একশ্রেণির দর্শককে দেখা যায় ভাসমান পতিতাদের নিয়ে সিনেমা হলে ঢুকতে। অনেক সিনেমা হলেরই টয়লেট ব্যবস্থা নোংরা হয়ে পড়ে। সে সঙ্গে সিনেমা হলের পর্দা, শব্দের মানও ক্রমশ নিম্নমুখী হতে থাকে।
এসব কারণে পরিবার নিয়ে সিনেমা হলে ছবি দেখতে আসা ছেড়ে দেন অনেক দর্শক। নারী দর্শক তো দূরে থাক অনেক পুরুষ দর্শকও একা সিনেমা হলে আসতে ভয় পেতে থাকেন তখন থেকে। এর ফলে ক্রমশ দর্শকশূন্য হতে থাকে সিনেমা হলগুলো। যে অবস্থা এ সময়ে সারা দেশের অনেক সিনেমা হলেই বিদ্যমান। এ প্রসঙ্গে দর্শকপ্রিয় নির্মাতা ইস্পাহানী আরিফ জাহান বলেন, সমাজ ব্যবস্থার কথা একবার চিন্তা করে দেখুন। আগে দিনের শোর পাশাপাশি নাইট শো দেখে দর্শকরা সিনেমা হল থেকে বের হতো। আর পরিবারের সকলে মিলে সিনেমা হলে ছবি দেখে আনন্দে বাড়ি ফিরতো।
মানুষ একটা ভালো সময় কাটাতেই সিনেমা হলে যেত। আর সেই সিনেমা হলের পরিবেশই যদি ভালো না থাকে তাহলে কেন মানুষ সেখানে যাবে? ছবির ব্যবসায়িক ব্যর্থতার অনেকগুলো কারণের মধ্যে সিনেমা হলের পরিবেশ খারাপ হয়ে যাওয়া অন্যতম। এখন গ্রামেও অনেক ঘরে ড্রইংরুমে সোফাসেট আছে, রঙিন টিভি এবং ডিশ লাইন সংযোগ আছে। যা আগের সময়ে ছিল না। তবে সময়ের সঙ্গে সবকিছু উন্নত হলেও সারা দেশেই সিনেমা হলের পরিবেশ খুব একটা ভালো হয়নি। হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া বেশিরভাগ সিনেমা হলে ভালো পরিবেশের অভাবে দর্শকরা যাচ্ছে না।
তাই প্রায়শই দর্শকশূন্য থাকছে সিনেমা হল। এর সমাধান জরুরি। এদিকে সরজমিন খবর নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে ঢাকা ও দেশের নানা জায়গায় অনেক সিনেমা হলেরই টয়লেটে যাওয়ার মতো পরিবেশ নেই, দুর্গন্ধে দর্শকরা অসুস্থ হয়ে যায়। এ ছাড়া অনেক সিনেমা হলে এখনো পুরনো অশ্লীল সিনেমা চালানো হয়। আর রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের বেশকিছু সিনেমা হলের সামনেই পতিতা, তাদের খদ্দের, হিজড়া এবং এমন বিভিন্ন ধরনের লোকজন দেখা যায়, যারা সিনেমা দেখতে আসা দর্শকদের জন্য নানা বিড়ম্বনাকর পরিস্থিতি তৈরি করে। এ ছাড়া সিনেমা হলের আশেপাশে বিচরণ করা ছিনতাইকারী এবং প্রতারকচক্র তো আছেই। এদের ভয়েও সিনেমা হলে যেতে চায় না অনেকেই।
কারণ অনেক সময়ই সিনেমা হলে ছবি দেখতে আসা সাধারণ দর্শকরা পড়ে যায় এসব নোংরা পরিবেশের ঝামেলায়। চলচ্চিত্র প্রযোজক ও প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির সাবেক আহ্বায়ক নাসিরউদ্দিন দিলু বলেন, দেশের বেশিরভাগ সিনেমা হলের পরিবেশ এখন ভালো না। অনেক সিনেমা হলে এখনো ছারপোকা মারতে হয়, সিট থেকে নারিকেলের ছোবড়া বেরিয়ে থাকে, সিট ভাঙ্গা পাওয়া যায়, ঠিকমতো ফ্যান চলে না, দর্শকদের ঘামে ভিজে সিনেমা দেখতে হয়। তাই এসব সিনেমা হল থেকেও লাভ নেই। হলের পরিবেশ যদি সুন্দর না হয় তাহলে দর্শকরা কখনোই সিনেমা হলে যাবে না।
মানুষের হাতে হাতে এখন স্মার্টফোন। স্বল্প টাকার ইন্টারনেট ব্যবহার করে যার মাধ্যমে সহজেই যে কোনো ভাষার সিনেমা পাওয়া যায় বোতাম টিপলেই। তাহলে মানুষ কেন টাকা খরচ করে বাজে পরিবেশের সিনেমা হলে যাবে তিক্ত অভিজ্ঞতা নিতে। তাই সিনেমা হলের পরিবেশ ঠিক করতে সংশ্লিষ্ট সকলের এগিয়ে আসতে হবে নিঃস্বার্থভাবে। আর হলের পরিবেশের পাশাপাশি সিনেমার মান ভালো হলেই সিনেমা হলে দর্শকরা আবার যাওয়া শুরু করবে বলে বিশ্বাস করি আমি।
No comments