দ্রুত বেড়ে ওঠা অর্থনীতির শীর্ষ ৫-এ বাংলাদেশ
বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বেড়ে ওঠা অর্থনীতির
শীর্ষ ৫ দেশের একটি বাংলাদেশ। ক্রমবর্ধমান অর্থনীতিতে দ্রুতগতির উন্নয়নশীল
বাকি ৪ দেশ হলো- ইথিওপিয়া, রুয়ান্ডা, ভুটান এবং ভারত। জিবুতি, আইভরি কোস্ট ও
ঘানার সঙ্গে পঞ্চম স্থানে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার ‘বাংলাদেশ
ডেভেলপমেন্ট আপডেট ২০১৯: টুওয়ার্ডস রেগুলেটরি প্রেডিক্টিবিলিটি’ শীর্ষক
প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
সংস্থাটি বলছে, বাংলাদেশের এ বছর প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৭.৩ শতাংশ। সামষ্টিক অর্থনীতি ও রপ্তানি নির্ভর শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধির কারণে এই অর্জন হবে বলে মনে করে সংস্থাটি। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেন বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর (বাংলাদেশ ও ভুটান অঞ্চল) রবার্ট জে সম।
প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের লিড ইকোনমিস্ট জাহিদ হোসেন।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির ধারা শক্তিশালী ও স্থিতিশীল। বাংলাদেশ বাজেট ঘাটতি ৫ শতাংশের নিচে রাখতে পেরেছে এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদার কারণে উৎপাদন ও অবকাঠামো নির্মাণের হার বেড়েছে। অন্যদিকে ভোক্তা ও রপ্তানিও বেড়েছে। রপ্তানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহের কারণে গ্রামীণ অর্থনীতি দ্রুত বাড়ছে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ কৃষি উৎপাদনেও বাংলাদেশ অগ্রগতি দেখিয়েছে। এসব কারণে অর্থনীতির আকারও দ্রুত বাড়ছে।
বিশ্ব পরিস্থিতিতে ৭.৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধিও ‘অনেক’: প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বলছে, চলতি অর্থবছর শেষে জিডিপি প্রবৃদ্ধির ৭.৩ শতাংশ হতে পারে। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে ৭.৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধিও ‘অনেক’। এই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে দেশকে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ঝুঁকি মোকাবিলা করতে হবে। একদিকে, ডলারের অবমূল্যায়ন, অন্যদিকে, ব্রেক্সিট ইস্যু, চীনের অর্থনীতি, চীন-আমেরিকা সম্পর্ক ইত্যাদি। তবে যদি ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে যেতে হয়, তাহলে এখানে ভালো বিনিয়োগ থাকতে হবে। ব্যক্তি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। মানবসম্পদকে আরো শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি আর্থিক খাতে সংস্কার আনতে হবে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে ইথিওপিয়া (৮.৮%), রুয়ান্ডা (৭.৮%), ভুটান (৭.৬%) এবং ভারতের (৭.৫%) জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারই কেবল বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ এখনও কম।
প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বাড়লেও তা এখনও জিডিপির ১ শতাংশের কম। বস্ত্র, তৈরি পোশাক, ওষুধ বা প্যাকেজিংয়ের মতো শিল্প খাতগুলোতে যন্ত্রপাতি আমদানির হারও কমেছে। ভূমি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ বাড়ানো গেলে বাংলাদেশ শিল্প খাতের জন্য আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠতে পারে।
উদ্ভাবনী সংস্কার করতে হবে: প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্য আয় ও ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হতে হলে বাংলাদেশে প্রচুর বিনিয়োগ হতে হবে, প্রয়োজনীয় জনবল থাকতে হবে এবং আর্থিক খাত, ব্যবসায়িক নিয়ন্ত্রণ ও অবকাঠামো শূন্যতা পূরণের মতো খাতগুলোতে উদ্ভাবনী সংস্কার করতে হবে।
প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে জাহিদ হোসেন বলেন, দেশের মুদ্রানীতির প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো হলো ব্যাংকিং খাত, যার মাধ্যমে আমরা মুদ্রানীতি পরিচালনা করি। সেই খাতে বেশ কিছু দুর্বলতা আগে থেকেই ছিল। ইদানীং সেই দুর্বলতা আরো বেড়েছে। এটা কি শুধু আকাশের মেঘ, নাকি বজ্রপাত, এটা বুঝতে হবে। এটা বুঝার যে স্টেশন, তা হলো বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্ট। বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরের প্রতিবেদন বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, আমাদের দুর্বলতার প্রধান জায়গা হলো খেলাপি ঋণ।
৩ জন বড় ঋণগ্রহীতা বিপর্যয়ে পড়লে ২১টি ব্যাংক সংকটে পড়বে: জাহিদ হোসেন বলেন, ব্যাংকগুলোর আরেকটি দুর্বলতা হলো- আমরা বড় বড় যেসব ঋণগ্রহীতাকে ঋণ দিচ্ছি, তাদের ব্যবসায় যদি কোনো দুর্যোগ দেখা দেয়, তাহলে কী হবে? ব্যাংকিং খাতে তার কী প্রভাব হতে পারে? বিশ্লেষণ বলছে, দেশের ৩ জন বড় ঋণগ্রহীতা যদি ঋণখেলাপিতে পরিণত হন বা তাদের প্রতিষ্ঠান আর্থিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে, তাহলে ২১টি ব্যাংক মূলধন সংকটে পড়বে। এমন ঋণগ্রহীতা ৭ জন ঋণখেলাপি হলে ৩১টি এবং ১০ জন খেলাপি হলে ৩৫টি ব্যাংক মূলধনের সংকটে পড়বে।
ব্যাংকিং খাতে ঘূর্ণিঝড়-তুফানে পরিণত হতে পারে: জাহিদ হোসেন বলেন, ব্যাংকগুলো যে ঋণ দেয় তার বিপরীতে কিছু জামানত নেয়া হয়। এই বন্ধকি জামানত যদি বিক্রি করে খেলাপি ঋণ আদায় করা হয়, তাহলে কী হবে? তিনি বলেন, এই জামানতের যদি ১০, ২০ ও ৪০ শতাংশ মূল্য কমে যায় তাহলে ২, ৫ ও ৯টি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়বে। সব মিলিয়ে বলা যায়, ব্যাংকিং খাতে কালো ঘন মেঘ ঘূর্ণিঝড়-তুফানে পরিণত হতে পারে।
খেলাপি ঋণ ছোঁয়াচে রোগ: জাহিদ হোসেন বলেন, আমাদের ব্যাংকিং খাতে বড় বড় ঋণখেলাপি রয়েছে। তাদের ঋণ বারবার পুনঃতফসিল করা হচ্ছে। একেকজনকে তিন-চার বার করে ঋণ পুনঃতফসিল করতে দেয়ায় আর্থিক খাত, বিশেষ করে ব্যাংক দুর্বল হচ্ছে। এভাবে পুনঃতফসিলের কোনো যৌক্তিকতা নেই। খেলাপি ঋণ একটি ছোঁয়াচে রোগে পরিণত হয়েছে। ঋণ পুনঃতফসিল ছোঁয়াচে রোগটা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে।
সমপ্রতি ঋণখেলাপিদের ৯ শতাংশ সরল সুদে ঋণ পরিশোধের সুযোগ দিতে অর্থমন্ত্রীর ঘোষণার সমালোচনা করে জাহিদ হোসেন বলেন, এভাবে ঋণ পরিশোধের সুযোগ করে দেয়া হলে ব্যাংকগুলো দুর্বল হয়ে পড়বে। ববারবার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করার পরিবর্তে ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলেন তিনি।
খেলাপি ঋণকে অনিচ্ছাকৃত বলা যাবে না: ৯৫ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি প্রশ্ন রাখেন, এত ঋণের সবই কি অনিচ্ছাকৃত?’ সব খেলাপি ঋণকে অনিচ্ছাকৃত বলা যাবে না বলে মত দেন জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, গত ১০-১৫ বছরে দেশে এমন কিছু (বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা বড় ধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতা) ঘটেনি যে বারবার ঋণ পুনঃতফসিল করতে হবে। এভাবে পুনঃতফসিল করা হলে ব্যাংকগুলো লোকসানে পড়ে যাবে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাজে হস্তক্ষেপ না করা: আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করতে দেয়া উচিত উল্লেখ করে জাহিদ হোসেন বলেন, বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংক যেন ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের কাজে যেন হস্তক্ষেপ না করা হয়।
জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশে যে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি হচ্ছে তাতে শিল্প খাতের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি। তবে দুর্বলতার জায়গা হলো ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ। তবে এই খাতে যে বিনিয়োগ হচ্ছে না, তা নয়। তবে প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট পরিমাণ বিনিয়োগ এই খাতে হচ্ছে না। সামষ্টিক অর্থনীতি মোটামুটি স্থিতিশীল হলেও বেশ কিছু দুর্বল জায়গা রয়েছে। তার মধ্যে প্রধান হলো- ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ ও রাজস্ব খাতের আয়ের দুর্বলতা এবং আন্তর্জাতিক বাজারে আমরা প্রতিযোগিতার সক্ষমতা কিছুটা কমেছে। তবে আমাদের মতে, অগ্রাধিকারভিত্তিতে সংস্কারের ধারাবাহিকতা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আর্থিক খাত ও রাজস্ব খাত, অবকাঠামো, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং ব্যবসায়িক পুঁজি বিনিয়োগে।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের এবারের প্রতিবেদনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে আর্থিক খাতের রেগুলেটরের সংস্কারে। এ বছরের প্রবৃদ্ধিতে বেশকিছু পরিবর্তন দেখা গেছে, অতীতে প্রবৃদ্ধি বেশি হয়েছে দেশীয় বাজারভিত্তিক উৎপাদনে। তবে এবারের প্রবৃদ্ধি রপ্তানি খাতভিত্তিক হয়েছে। বিশেষ করে পোশাক খাত ও পোশাক বহির্ভূত খাতে প্রবৃদ্ধি গত বছরের তুলনায় অনেক বেড়েছে। শিল্প খাতে প্রতি মাসে ১ শতাংশ করে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। সে হিসাবে ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে শিল্প খাতে।
মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ে তিনি বলেন, মানবসম্পদ উন্নয়নে ১৫৭ দেশের মধ্যে আমরা ১০৬ নম্বর। আমাদের অক্ষমতা দূর হলে ৪৮ শতাংশ অগ্রগতি সম্ভব। এর মধ্য শিক্ষার প্রসার ঘটানো এবং শিশুর পুষ্টি নিশ্চিত করা।
সংস্থাটি বলছে, বাংলাদেশের এ বছর প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৭.৩ শতাংশ। সামষ্টিক অর্থনীতি ও রপ্তানি নির্ভর শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধির কারণে এই অর্জন হবে বলে মনে করে সংস্থাটি। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেন বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর (বাংলাদেশ ও ভুটান অঞ্চল) রবার্ট জে সম।
প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের লিড ইকোনমিস্ট জাহিদ হোসেন।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির ধারা শক্তিশালী ও স্থিতিশীল। বাংলাদেশ বাজেট ঘাটতি ৫ শতাংশের নিচে রাখতে পেরেছে এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদার কারণে উৎপাদন ও অবকাঠামো নির্মাণের হার বেড়েছে। অন্যদিকে ভোক্তা ও রপ্তানিও বেড়েছে। রপ্তানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহের কারণে গ্রামীণ অর্থনীতি দ্রুত বাড়ছে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ কৃষি উৎপাদনেও বাংলাদেশ অগ্রগতি দেখিয়েছে। এসব কারণে অর্থনীতির আকারও দ্রুত বাড়ছে।
বিশ্ব পরিস্থিতিতে ৭.৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধিও ‘অনেক’: প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বলছে, চলতি অর্থবছর শেষে জিডিপি প্রবৃদ্ধির ৭.৩ শতাংশ হতে পারে। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে ৭.৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধিও ‘অনেক’। এই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে দেশকে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ঝুঁকি মোকাবিলা করতে হবে। একদিকে, ডলারের অবমূল্যায়ন, অন্যদিকে, ব্রেক্সিট ইস্যু, চীনের অর্থনীতি, চীন-আমেরিকা সম্পর্ক ইত্যাদি। তবে যদি ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে যেতে হয়, তাহলে এখানে ভালো বিনিয়োগ থাকতে হবে। ব্যক্তি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। মানবসম্পদকে আরো শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি আর্থিক খাতে সংস্কার আনতে হবে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে ইথিওপিয়া (৮.৮%), রুয়ান্ডা (৭.৮%), ভুটান (৭.৬%) এবং ভারতের (৭.৫%) জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারই কেবল বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ এখনও কম।
প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বাড়লেও তা এখনও জিডিপির ১ শতাংশের কম। বস্ত্র, তৈরি পোশাক, ওষুধ বা প্যাকেজিংয়ের মতো শিল্প খাতগুলোতে যন্ত্রপাতি আমদানির হারও কমেছে। ভূমি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ বাড়ানো গেলে বাংলাদেশ শিল্প খাতের জন্য আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠতে পারে।
উদ্ভাবনী সংস্কার করতে হবে: প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্য আয় ও ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হতে হলে বাংলাদেশে প্রচুর বিনিয়োগ হতে হবে, প্রয়োজনীয় জনবল থাকতে হবে এবং আর্থিক খাত, ব্যবসায়িক নিয়ন্ত্রণ ও অবকাঠামো শূন্যতা পূরণের মতো খাতগুলোতে উদ্ভাবনী সংস্কার করতে হবে।
প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে জাহিদ হোসেন বলেন, দেশের মুদ্রানীতির প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো হলো ব্যাংকিং খাত, যার মাধ্যমে আমরা মুদ্রানীতি পরিচালনা করি। সেই খাতে বেশ কিছু দুর্বলতা আগে থেকেই ছিল। ইদানীং সেই দুর্বলতা আরো বেড়েছে। এটা কি শুধু আকাশের মেঘ, নাকি বজ্রপাত, এটা বুঝতে হবে। এটা বুঝার যে স্টেশন, তা হলো বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্ট। বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরের প্রতিবেদন বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, আমাদের দুর্বলতার প্রধান জায়গা হলো খেলাপি ঋণ।
৩ জন বড় ঋণগ্রহীতা বিপর্যয়ে পড়লে ২১টি ব্যাংক সংকটে পড়বে: জাহিদ হোসেন বলেন, ব্যাংকগুলোর আরেকটি দুর্বলতা হলো- আমরা বড় বড় যেসব ঋণগ্রহীতাকে ঋণ দিচ্ছি, তাদের ব্যবসায় যদি কোনো দুর্যোগ দেখা দেয়, তাহলে কী হবে? ব্যাংকিং খাতে তার কী প্রভাব হতে পারে? বিশ্লেষণ বলছে, দেশের ৩ জন বড় ঋণগ্রহীতা যদি ঋণখেলাপিতে পরিণত হন বা তাদের প্রতিষ্ঠান আর্থিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে, তাহলে ২১টি ব্যাংক মূলধন সংকটে পড়বে। এমন ঋণগ্রহীতা ৭ জন ঋণখেলাপি হলে ৩১টি এবং ১০ জন খেলাপি হলে ৩৫টি ব্যাংক মূলধনের সংকটে পড়বে।
ব্যাংকিং খাতে ঘূর্ণিঝড়-তুফানে পরিণত হতে পারে: জাহিদ হোসেন বলেন, ব্যাংকগুলো যে ঋণ দেয় তার বিপরীতে কিছু জামানত নেয়া হয়। এই বন্ধকি জামানত যদি বিক্রি করে খেলাপি ঋণ আদায় করা হয়, তাহলে কী হবে? তিনি বলেন, এই জামানতের যদি ১০, ২০ ও ৪০ শতাংশ মূল্য কমে যায় তাহলে ২, ৫ ও ৯টি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়বে। সব মিলিয়ে বলা যায়, ব্যাংকিং খাতে কালো ঘন মেঘ ঘূর্ণিঝড়-তুফানে পরিণত হতে পারে।
খেলাপি ঋণ ছোঁয়াচে রোগ: জাহিদ হোসেন বলেন, আমাদের ব্যাংকিং খাতে বড় বড় ঋণখেলাপি রয়েছে। তাদের ঋণ বারবার পুনঃতফসিল করা হচ্ছে। একেকজনকে তিন-চার বার করে ঋণ পুনঃতফসিল করতে দেয়ায় আর্থিক খাত, বিশেষ করে ব্যাংক দুর্বল হচ্ছে। এভাবে পুনঃতফসিলের কোনো যৌক্তিকতা নেই। খেলাপি ঋণ একটি ছোঁয়াচে রোগে পরিণত হয়েছে। ঋণ পুনঃতফসিল ছোঁয়াচে রোগটা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে।
সমপ্রতি ঋণখেলাপিদের ৯ শতাংশ সরল সুদে ঋণ পরিশোধের সুযোগ দিতে অর্থমন্ত্রীর ঘোষণার সমালোচনা করে জাহিদ হোসেন বলেন, এভাবে ঋণ পরিশোধের সুযোগ করে দেয়া হলে ব্যাংকগুলো দুর্বল হয়ে পড়বে। ববারবার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করার পরিবর্তে ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলেন তিনি।
খেলাপি ঋণকে অনিচ্ছাকৃত বলা যাবে না: ৯৫ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি প্রশ্ন রাখেন, এত ঋণের সবই কি অনিচ্ছাকৃত?’ সব খেলাপি ঋণকে অনিচ্ছাকৃত বলা যাবে না বলে মত দেন জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, গত ১০-১৫ বছরে দেশে এমন কিছু (বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা বড় ধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতা) ঘটেনি যে বারবার ঋণ পুনঃতফসিল করতে হবে। এভাবে পুনঃতফসিল করা হলে ব্যাংকগুলো লোকসানে পড়ে যাবে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাজে হস্তক্ষেপ না করা: আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করতে দেয়া উচিত উল্লেখ করে জাহিদ হোসেন বলেন, বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংক যেন ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের কাজে যেন হস্তক্ষেপ না করা হয়।
জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশে যে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি হচ্ছে তাতে শিল্প খাতের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি। তবে দুর্বলতার জায়গা হলো ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ। তবে এই খাতে যে বিনিয়োগ হচ্ছে না, তা নয়। তবে প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট পরিমাণ বিনিয়োগ এই খাতে হচ্ছে না। সামষ্টিক অর্থনীতি মোটামুটি স্থিতিশীল হলেও বেশ কিছু দুর্বল জায়গা রয়েছে। তার মধ্যে প্রধান হলো- ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ ও রাজস্ব খাতের আয়ের দুর্বলতা এবং আন্তর্জাতিক বাজারে আমরা প্রতিযোগিতার সক্ষমতা কিছুটা কমেছে। তবে আমাদের মতে, অগ্রাধিকারভিত্তিতে সংস্কারের ধারাবাহিকতা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আর্থিক খাত ও রাজস্ব খাত, অবকাঠামো, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং ব্যবসায়িক পুঁজি বিনিয়োগে।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের এবারের প্রতিবেদনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে আর্থিক খাতের রেগুলেটরের সংস্কারে। এ বছরের প্রবৃদ্ধিতে বেশকিছু পরিবর্তন দেখা গেছে, অতীতে প্রবৃদ্ধি বেশি হয়েছে দেশীয় বাজারভিত্তিক উৎপাদনে। তবে এবারের প্রবৃদ্ধি রপ্তানি খাতভিত্তিক হয়েছে। বিশেষ করে পোশাক খাত ও পোশাক বহির্ভূত খাতে প্রবৃদ্ধি গত বছরের তুলনায় অনেক বেড়েছে। শিল্প খাতে প্রতি মাসে ১ শতাংশ করে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। সে হিসাবে ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে শিল্প খাতে।
মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ে তিনি বলেন, মানবসম্পদ উন্নয়নে ১৫৭ দেশের মধ্যে আমরা ১০৬ নম্বর। আমাদের অক্ষমতা দূর হলে ৪৮ শতাংশ অগ্রগতি সম্ভব। এর মধ্য শিক্ষার প্রসার ঘটানো এবং শিশুর পুষ্টি নিশ্চিত করা।
No comments