দুর্ভোগ: মেট্রোরেলের অপেক্ষায় মানুষ by শাহ নেওয়াজ বাবলু
২০
কিলোমিটার সড়কজুড়ে চলছে কর্মযজ্ঞ। সড়কের মাঝ বরাবর স্থানে উঠছে
মেট্রোরেলের পিলার। নির্ধারিত স্টেশন এলাকায় সড়কের মাঝের স্থান ফাঁকা রেখে
দুই পাশে চলছে কাজ। প্রায় ২২ মিটার প্রস্থের সড়কের অর্ধেক বা কোথাও
অর্ধেকের বেশি ঘিরে রাখা হয়েছে হার্ড ব্যরিয়ার দিয়ে। চার লেনের সড়কে গাড়ি
চলছে দুই লেনেরও কম জায়গায়। সড়কে গাড়ি চলার জায়গা যেমন কমেছে তেমনি বেড়েছে
যাত্রার সময়। আগের এক ঘণ্টায় যে দূরুত্বে যাওয়া যেত এখন সময় লাগছে দুই
ঘণ্টা। উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সড়কের এখন এ অবস্থা।
দুর্ভোগ আর নানা ভোগান্তিতে প্রায় অর্ধেক ঢাকার মানুষ। সরজমিন ঘুরে প্রকল্প এলাকায় দেখা গেছে দুর্ভোগের নানা চিত্র। ভুক্তভোগীরা অবশ্য বলছেন, কর্তৃপক্ষ আরো সচেতন হলে দুর্ভোগ অনেকটা কমানো যেত। গত কয়েক দিন প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এর কাজের কারণে যানজট অনেকটাই বেড়েছে। সেই সঙ্গে আগারগাঁও থেকে মিরপুর-১২ পর্যন্ত তৈরি হয়েছে ছোট-বড় অনেক গর্ত। ছোট গর্তগুলো মেরামতের কোনো ব্যবস্থা না করা হলেও বড় গর্তগুলো কোথাও কোথাও ঢেকে দেয়া হয়েছে স্টিলের পাত দিয়ে। সামান্য বৃষ্টিতেই পানি জমে থাকে রাস্তায়। এখন কোনো বৃষ্টি নেই। কিন্তু পূর্ব শেওড়াপাড়া থেকে মণিপুর পর্যন্ত রাস্তার পশ্চিম পাশে অনেকটা জায়গাজুড়েই পানি জমে রয়েছে গত চার দিন ধরে। এই পানি কোথা থেকে আসল, সেটা কেউই বলতে পারছে না। এই কারণে ওই এলাকার মানুষ চরম ভোগান্তির মধ্যে রয়েছেন। এই দুর্ভোগ সত্ত্বেও মানুষ আশা করছেন, মেট্রোরেল চালু হলে মানুষ যানজটের ভোগান্তি থেকে রেহাই পাবেন। মিরপুর-১২ থেকে ওল্ড ডিওএইচএস পর্যন্ত মেট্রো রেলের প্রকল্পের কাজের কারণে রাস্তার তিন ভাগের দুই ভাগই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আর একদিক দিয়ে চলাচল করে দুই দিকের যানবাহন এবং সাধারণ মানুষ। এ কারণে ওই এলাকায় যানজট অনেকটাই বেশি দেখা যায়। বিশেষ করে সকাল বেলা। সেখানকার স্কুল কলেজগুলো শুরু এবং ছুটির সময় যানবাহনের লম্বা যানজট লেগে যায়।
রাজধানীর খামারবাড়ী এলাকায় মেট্রোরেলের কাজের জন্য সড়কের বড় অংশ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সড়কের বাকি সরু জায়গা দিয়ে পাশাপাশি দুটি গাড়িও যেতে পারছে না। তীব্র যানজটের কারণে খামারবাড়ী মোড় পার হতেই ঘণ্টা পেরিয়ে যাচ্ছে কোনো কোনো সময়।
মেট্রোরেল প্রকল্পের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের খামারবাড়ী, কাওরান বাজার, বাংলামোটর, শেরাটন ক্রসিং ও শাহবাগ এলাকায় খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয়েছে। ফলে এসব এলাকায় সড়কের পরিমাণ কমে গেছে। এই কারণে সড়ক দিয়ে ধীরগতিতে যানবাহন চলায় যানজট দীর্ঘ হচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা। সোমবার সকাল সোয়া নয়টার দিকে আড়ং মোড় পার হয়ে দেখা যায়, খামারবাড়ী মোড়ের যানজট পুরো মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে ছড়িয়ে পড়েছে।
শেওড়াপাড়ার একটি কনফেকশনারির মালিক মো. রাসেল মানবজমিনকে বলেন, শুকনোর সময় খুব ধুলোবালি হয় আর বর্ষায় কাদাপানি। বৃষ্টিতে রাস্তা তলিয়ে গেলে খোলা ম্যানহোল হয়ে ওঠে মরণফাঁদ। এ প্রকল্পের কাজের কারণে আমাদের বিক্রি আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। কাজীপাড়ার ফার্নিচার ব্যবসায়ী আবুল খায়ের বলেন, রাস্তার ধুলোবালির কারণে দোকানে বসা যায় না। আর কয়েকদিন পরে তো বর্ষা আসছে। বর্ষার সময় পানি সরার কোনো পথ না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই পানি জমে যায়। রাস্তা সরু হওয়ায় পানি এদিক-সেদিক যেতেও পারে না। দীর্ঘ সময় এ অবস্থায় থাকার কারণে আর ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে ছোট গর্তগুলোও আর ছোট থাকে না। বেশি বৃষ্টি হলে ফুটপাতসহ অনেক দোকানেও পানি উঠে যায়। মানুষ ভ্যানে চেপে, কোমর-পানিতে ভিজে, নৌকা দিয়ে চলাচল করে।
অনেক স্থানে ফুটপাত চলাচলের অযোগ্য। তাছাড়া যান চলাচল কমে যায়। পানি এত বেশি হয় যে, রাস্তার ভেতরই গাড়ি বন্ধ হয়ে যায়। এতে সবচেয়ে বেশি অসুবিধায় পড়ে স্কুলগামী শিশুরা। পুরুষরা কোনোভাবে চলাচল করলেও নারীদের চলাচলের অযোগ্য হয়ে ওঠে এই এলাকা। আর এই প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই তো আমাদের ব্যবসার অবস্থা একবারেই নাজেহাল। আগের তুলনায় কাস্টমার অনেক কম আসে। এর একমাত্র কারণ যানজট।
ডেফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ শেষ বর্ষের ছাত্র ফরহাদ সরকার মানবজমিনকে বলেন, আগে যেখানে ২০ থেকে ২৫ মিনিট সময় লাগত ভার্সিটিতে যেতে, একই পথ যেতে এখন লাগে প্রায় এক ঘণ্টা। এখন অনেক সময় অন্য রাস্তা দিয়ে ঘুরে আসি। মণিপুর স্কুলের শেওড়াপাড়া শাখার এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, সরু রাস্তা আর ফুটপাতের বেহাল অবস্থার কারণে বাচ্চাদের স্কুলে নিয়ে যেতে খুব সমস্যায় পড়তে হয়। আর পাবলিক বাসে উঠলে যানজটে চলে যায় অনেক সময়। মিরপুর-১১-এর বাসিন্দা মোহাম্মাদ হাবীব মানবজমিনকে বলেন, আমার অফিস মতিঝিলে। সেখানে যেতে আগে সময় লেগেছে ১ ঘণ্টারও কম, এখন প্রায় আড়াই ঘণ্টা লেগে যায়। মেট্রো রেল প্রকল্পের কারণে রাস্তার পরিমাণ অনেক কমে গেছে। তাছাড়া এ এলাকার রাস্তার দুই পাশ দিয়ে খোঁড়াখুঁড়ির পর তা ভালো করে মেরামত না করায় অল্প সময়েই নষ্ট হয়ে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
মেট্রো রেলের এ প্রকল্পকে সাধুবাদ জানালেও এর কারণে সৃষ্ট সমস্যাকে অসহনীয় মনে করছেন স্থানীয়রা। তারা বলছেন, প্রকল্প শেষ হতে সময় লাগলেও যাতে রাস্তার মেরামতের কাজ দ্রুত শুরু করা হয়।
মিরপুর পুরবী মার্কেটের সামনে গত ৬ বছর ধরে ছোটদের কাপড় বিক্রি করে আসছেন বাবুল মিয়া। প্রথম কয়েক বছর বেচাবিক্রি ভালো হলেও মেট্রো রেলের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে সেটা একবারেই কম। গতকাল তিনি মানবজমিনকে বলেন, আগে যেখানে প্রতিদিন ৬-৭ হাজার টাকা বিক্রি হতো। এখন দুই তিন হাজার টাকা বিক্রি করতেই অনেক কষ্ট হয়। এই ইনকামে খুব কষ্ট হচ্ছে পরিবার চালাতে। একই মার্কেটের মোবাইল দোকান ডায়না টেলিকমের মালিক আবু ইউসুফ মানবজমিনকে বলেন, বেচাবিক্রির অবস্থা খুবই খারাপ। অনেক মাসে দোকানের খরচ তুলতেই টানাটানি হয়ে যায়। আগের তুলনায় অর্ধেকও বিক্রি করতে পারি না। এই কাজের কারণে আমাদের মার্কেটের সামনে বড় দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। তাই অনেকেই মন চাইলে কিছু কিনতে আসতে পারে না। আর যারা আসেন তারা মার্কেটের পেছনের দিক দিয়ে ঘুরে আসেন।
পশ্চিম কাফরুলের মেসার্স সোবাহান অ্যান্ড সার্ভিস স্টেশনে কাজ করেন মুক্তল হোসেন। তিনি বলেন, আমি এই তেলের পাম্পে ১২ বছর ধরে চাকরি করি। গত দুই বছর ধরে মেট্রো রেলের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে কাস্টমার অনেক কম। কাজ শুরু হওয়ার আগে অনেকেই ঘুরে আসত তেল নেয়ার জন্য। এখন যানজটের কারণে কেউই আসতে চায় না।
পূর্ব মণিপুর এলাকায় ফার্নিচার ব্যবসা করেন আবুল হোসেন। তিনি বলেন, এই প্রকল্পের কাজের কারণে আমার দোকানের সামনে দেয়াল দেয়া হয়েছে। এর ফলে বাহির থেকে আমার দোকান প্রায় দেখাই যায় না। নতুন কাস্টমার আমার এখানে আসে না বললেই চলে। যারা আসে সবাই পুরনো কাস্টমার। আগে আমার দোকানে প্রতিদিন গড়ে ১ লাখ টাকার মতো বিক্রি হতো। কিন্তু এখন ২০ হাজার টাকা বিক্রি করতে কষ্ট হয়।
এদিকে পুরো প্রকল্প এলাকায় ধুলার কারণে সমস্যা হচ্ছে আশপাশের মানুষের। আদালতের নির্দেশের পর এখন নিয়মিত পানি ছিটানো হলেও তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হচ্ছে না। অন্যদিকে সড়কে রিকশা-ভ্যান নিয়ন্ত্রণ না করায় পুরো এলাকায় হ-য-ব-র-ল অবস্থা বিরাজ করে।
দুর্ভোগ আর নানা ভোগান্তিতে প্রায় অর্ধেক ঢাকার মানুষ। সরজমিন ঘুরে প্রকল্প এলাকায় দেখা গেছে দুর্ভোগের নানা চিত্র। ভুক্তভোগীরা অবশ্য বলছেন, কর্তৃপক্ষ আরো সচেতন হলে দুর্ভোগ অনেকটা কমানো যেত। গত কয়েক দিন প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এর কাজের কারণে যানজট অনেকটাই বেড়েছে। সেই সঙ্গে আগারগাঁও থেকে মিরপুর-১২ পর্যন্ত তৈরি হয়েছে ছোট-বড় অনেক গর্ত। ছোট গর্তগুলো মেরামতের কোনো ব্যবস্থা না করা হলেও বড় গর্তগুলো কোথাও কোথাও ঢেকে দেয়া হয়েছে স্টিলের পাত দিয়ে। সামান্য বৃষ্টিতেই পানি জমে থাকে রাস্তায়। এখন কোনো বৃষ্টি নেই। কিন্তু পূর্ব শেওড়াপাড়া থেকে মণিপুর পর্যন্ত রাস্তার পশ্চিম পাশে অনেকটা জায়গাজুড়েই পানি জমে রয়েছে গত চার দিন ধরে। এই পানি কোথা থেকে আসল, সেটা কেউই বলতে পারছে না। এই কারণে ওই এলাকার মানুষ চরম ভোগান্তির মধ্যে রয়েছেন। এই দুর্ভোগ সত্ত্বেও মানুষ আশা করছেন, মেট্রোরেল চালু হলে মানুষ যানজটের ভোগান্তি থেকে রেহাই পাবেন। মিরপুর-১২ থেকে ওল্ড ডিওএইচএস পর্যন্ত মেট্রো রেলের প্রকল্পের কাজের কারণে রাস্তার তিন ভাগের দুই ভাগই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আর একদিক দিয়ে চলাচল করে দুই দিকের যানবাহন এবং সাধারণ মানুষ। এ কারণে ওই এলাকায় যানজট অনেকটাই বেশি দেখা যায়। বিশেষ করে সকাল বেলা। সেখানকার স্কুল কলেজগুলো শুরু এবং ছুটির সময় যানবাহনের লম্বা যানজট লেগে যায়।
রাজধানীর খামারবাড়ী এলাকায় মেট্রোরেলের কাজের জন্য সড়কের বড় অংশ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সড়কের বাকি সরু জায়গা দিয়ে পাশাপাশি দুটি গাড়িও যেতে পারছে না। তীব্র যানজটের কারণে খামারবাড়ী মোড় পার হতেই ঘণ্টা পেরিয়ে যাচ্ছে কোনো কোনো সময়।
মেট্রোরেল প্রকল্পের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের খামারবাড়ী, কাওরান বাজার, বাংলামোটর, শেরাটন ক্রসিং ও শাহবাগ এলাকায় খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয়েছে। ফলে এসব এলাকায় সড়কের পরিমাণ কমে গেছে। এই কারণে সড়ক দিয়ে ধীরগতিতে যানবাহন চলায় যানজট দীর্ঘ হচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা। সোমবার সকাল সোয়া নয়টার দিকে আড়ং মোড় পার হয়ে দেখা যায়, খামারবাড়ী মোড়ের যানজট পুরো মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে ছড়িয়ে পড়েছে।
শেওড়াপাড়ার একটি কনফেকশনারির মালিক মো. রাসেল মানবজমিনকে বলেন, শুকনোর সময় খুব ধুলোবালি হয় আর বর্ষায় কাদাপানি। বৃষ্টিতে রাস্তা তলিয়ে গেলে খোলা ম্যানহোল হয়ে ওঠে মরণফাঁদ। এ প্রকল্পের কাজের কারণে আমাদের বিক্রি আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। কাজীপাড়ার ফার্নিচার ব্যবসায়ী আবুল খায়ের বলেন, রাস্তার ধুলোবালির কারণে দোকানে বসা যায় না। আর কয়েকদিন পরে তো বর্ষা আসছে। বর্ষার সময় পানি সরার কোনো পথ না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই পানি জমে যায়। রাস্তা সরু হওয়ায় পানি এদিক-সেদিক যেতেও পারে না। দীর্ঘ সময় এ অবস্থায় থাকার কারণে আর ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে ছোট গর্তগুলোও আর ছোট থাকে না। বেশি বৃষ্টি হলে ফুটপাতসহ অনেক দোকানেও পানি উঠে যায়। মানুষ ভ্যানে চেপে, কোমর-পানিতে ভিজে, নৌকা দিয়ে চলাচল করে।
অনেক স্থানে ফুটপাত চলাচলের অযোগ্য। তাছাড়া যান চলাচল কমে যায়। পানি এত বেশি হয় যে, রাস্তার ভেতরই গাড়ি বন্ধ হয়ে যায়। এতে সবচেয়ে বেশি অসুবিধায় পড়ে স্কুলগামী শিশুরা। পুরুষরা কোনোভাবে চলাচল করলেও নারীদের চলাচলের অযোগ্য হয়ে ওঠে এই এলাকা। আর এই প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই তো আমাদের ব্যবসার অবস্থা একবারেই নাজেহাল। আগের তুলনায় কাস্টমার অনেক কম আসে। এর একমাত্র কারণ যানজট।
ডেফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ শেষ বর্ষের ছাত্র ফরহাদ সরকার মানবজমিনকে বলেন, আগে যেখানে ২০ থেকে ২৫ মিনিট সময় লাগত ভার্সিটিতে যেতে, একই পথ যেতে এখন লাগে প্রায় এক ঘণ্টা। এখন অনেক সময় অন্য রাস্তা দিয়ে ঘুরে আসি। মণিপুর স্কুলের শেওড়াপাড়া শাখার এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, সরু রাস্তা আর ফুটপাতের বেহাল অবস্থার কারণে বাচ্চাদের স্কুলে নিয়ে যেতে খুব সমস্যায় পড়তে হয়। আর পাবলিক বাসে উঠলে যানজটে চলে যায় অনেক সময়। মিরপুর-১১-এর বাসিন্দা মোহাম্মাদ হাবীব মানবজমিনকে বলেন, আমার অফিস মতিঝিলে। সেখানে যেতে আগে সময় লেগেছে ১ ঘণ্টারও কম, এখন প্রায় আড়াই ঘণ্টা লেগে যায়। মেট্রো রেল প্রকল্পের কারণে রাস্তার পরিমাণ অনেক কমে গেছে। তাছাড়া এ এলাকার রাস্তার দুই পাশ দিয়ে খোঁড়াখুঁড়ির পর তা ভালো করে মেরামত না করায় অল্প সময়েই নষ্ট হয়ে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
মেট্রো রেলের এ প্রকল্পকে সাধুবাদ জানালেও এর কারণে সৃষ্ট সমস্যাকে অসহনীয় মনে করছেন স্থানীয়রা। তারা বলছেন, প্রকল্প শেষ হতে সময় লাগলেও যাতে রাস্তার মেরামতের কাজ দ্রুত শুরু করা হয়।
মিরপুর পুরবী মার্কেটের সামনে গত ৬ বছর ধরে ছোটদের কাপড় বিক্রি করে আসছেন বাবুল মিয়া। প্রথম কয়েক বছর বেচাবিক্রি ভালো হলেও মেট্রো রেলের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে সেটা একবারেই কম। গতকাল তিনি মানবজমিনকে বলেন, আগে যেখানে প্রতিদিন ৬-৭ হাজার টাকা বিক্রি হতো। এখন দুই তিন হাজার টাকা বিক্রি করতেই অনেক কষ্ট হয়। এই ইনকামে খুব কষ্ট হচ্ছে পরিবার চালাতে। একই মার্কেটের মোবাইল দোকান ডায়না টেলিকমের মালিক আবু ইউসুফ মানবজমিনকে বলেন, বেচাবিক্রির অবস্থা খুবই খারাপ। অনেক মাসে দোকানের খরচ তুলতেই টানাটানি হয়ে যায়। আগের তুলনায় অর্ধেকও বিক্রি করতে পারি না। এই কাজের কারণে আমাদের মার্কেটের সামনে বড় দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। তাই অনেকেই মন চাইলে কিছু কিনতে আসতে পারে না। আর যারা আসেন তারা মার্কেটের পেছনের দিক দিয়ে ঘুরে আসেন।
পশ্চিম কাফরুলের মেসার্স সোবাহান অ্যান্ড সার্ভিস স্টেশনে কাজ করেন মুক্তল হোসেন। তিনি বলেন, আমি এই তেলের পাম্পে ১২ বছর ধরে চাকরি করি। গত দুই বছর ধরে মেট্রো রেলের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে কাস্টমার অনেক কম। কাজ শুরু হওয়ার আগে অনেকেই ঘুরে আসত তেল নেয়ার জন্য। এখন যানজটের কারণে কেউই আসতে চায় না।
পূর্ব মণিপুর এলাকায় ফার্নিচার ব্যবসা করেন আবুল হোসেন। তিনি বলেন, এই প্রকল্পের কাজের কারণে আমার দোকানের সামনে দেয়াল দেয়া হয়েছে। এর ফলে বাহির থেকে আমার দোকান প্রায় দেখাই যায় না। নতুন কাস্টমার আমার এখানে আসে না বললেই চলে। যারা আসে সবাই পুরনো কাস্টমার। আগে আমার দোকানে প্রতিদিন গড়ে ১ লাখ টাকার মতো বিক্রি হতো। কিন্তু এখন ২০ হাজার টাকা বিক্রি করতে কষ্ট হয়।
এদিকে পুরো প্রকল্প এলাকায় ধুলার কারণে সমস্যা হচ্ছে আশপাশের মানুষের। আদালতের নির্দেশের পর এখন নিয়মিত পানি ছিটানো হলেও তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হচ্ছে না। অন্যদিকে সড়কে রিকশা-ভ্যান নিয়ন্ত্রণ না করায় পুরো এলাকায় হ-য-ব-র-ল অবস্থা বিরাজ করে।
No comments