ট্রাম্পের 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' পরিকল্পনার লক্ষ্য ও প্রভাব: পর্ব-চার
মার্কিন
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে তার বিভিন্ন লক্ষ্য এগিয়ে
নিয়ে যাওয়ার জন্য বিশেষ করে ইসরাইলের অনুকূলে ফিলিস্তিন সংকট সমাধানের জন্য
'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামের কথিত শান্তি প্রস্তাব বা পরিকল্পনা
বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিয়েছেন।
গত তিন পর্বে আমরা এই পরিকল্পনার নানা দিক, এর লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, পরিকল্পনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ভূমিকা সম্পর্কে বিস্তারিত করেছি। এ সংক্রান্ত আলোচনার চতুর্থ ও শেষ পর্বে আমরা ট্রাম্পের এ পরিকল্পনার পরিণতির বিষয়ে বিবরণ তুল ধরব। 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামের কথিত শান্তি প্রস্তাব বা পরিকল্পনার বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য করলে দেখা যাবে দখলদার ইহুদিবাদী ইসরাইলের স্বার্থ রক্ষা ও তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রধান উদ্দেশ্য। ইসরাইলি দৈনিক হারেতয এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে লিখেছে, ইসরাইলের একটি জনমত জরিপ সংস্থা ট্রাম্পের 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামের পরিকল্পনার ওপর জরিপ চালিয়েছে। জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, ইসরাইলের ৭৪ শতাংশ নাগরিক বিশ্বাস করে ট্রাম্পের 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামক পরিকল্পনা ব্যর্থ হবে এবং মাত্র ৫ শতাংশ মানুষ মনে করে এটি সফল হবে। জরিপে আরো দেখা গেছে, ৭৭ শতাংশ ইসরাইলি মনে করেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে পদক্ষেপই নিয়ে থাকুন না কেন তা কেবল ইসরাইলের স্বার্থের অনুকূলে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, দখলদার ইসরাইলের স্বার্থে পরিকল্পনা প্রণয়নের অর্থই হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে আরো বেশি অপরাধযজ্ঞ চালানোর অনুমতি দেয়া। ট্রাম্পের এ পদক্ষেপের কারণে অবৈধ ইহুদি উপশহর নির্মাণের কাজও অব্যাহত থাকবে। কারণ ট্রাম্প উপশহর নির্মাণের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলেননি। ইসরাইল বিষয়ক জর্দানের গবেষক ও লেখক আইমান দেহাজ আল হানিথি লন্ডন থেকে প্রকাশিত দৈনিক রাই আল ইয়াওমে এক নিবন্ধে লিখেছেন, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লুউ বুশ ইসরাইলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল শ্যারনকে ইহুদি উপশহর নির্মাণ চালিয়ে যাওয়ার যে নির্দেশ দিয়েছিলেন সেটাকে অনুসরণ করেই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু আরো দ্রুত গতিতে ইহুদি উপশহর নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামক পরিকল্পনাও ইহুদি উপশহর নির্মাণে ইসরাইলকে আরো বেশি উৎসাহিত করবে।
ট্রাম্পের 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামক পরিকল্পনা শুধু যে মধ্যপ্রাচ্যের ভৌগোলিক চেহারা পাল্টে দেবে তাই নয় একই সঙ্গে এ অঞ্চলে মুসলিম ইতিহাস, ঐতিহ্য ও ধর্মীয় সংস্কৃতিকেও হুমকির মুখে ঠেলে দেবে। যে ভূখণ্ডে ইসরাইল নামে অবৈধ ইহুদিবাদী রাষ্ট্র গড়ে উঠেছে এক সময় তার মালিক ছিল ফিলিস্তিনিরা। সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশিক শক্তি ও সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের বিরাট অংশ ইসরাইলের হাতে তুলে দেয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার এ নতুন পরিকল্পনার মাধ্যমে এ অঞ্চলে ইসরাইলের দখলদারিত্বকে পূর্ণতা দেয়ার চেষ্টা করছেন। একই সঙ্গে এ অঞ্চলে মুসলমানদের ইতিহাস ঐতিহ্যও মুছে ফেলার পায়তারা করছেন। এ ছাড়া, বায়তুল মোকাদ্দাস হচ্ছে মুসলমানদের প্রথম কেবলা। ট্রাম্পের 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামক পরিকল্পনার মাধ্যমে বায়তুল মোকাদ্দাসের সঙ্গে মুসলমানদের এই সম্পর্ক ও পরিচিতিকেও ধ্বংস করার চক্রান্ত চলছে। এ অবস্থায় কোনো ধরণের প্রতিবাদ ও সহিংসতা ছাড়াই ট্রাম্পের এ ষড়যন্ত্রমূলক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন নির্বিঘ্ন হবে কিনা এবং আদৌ এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব কিনা সেটাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের যে চেষ্টা চলছে তার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব হচ্ছে এর ফলে ফিলিস্তিনের সব দলের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হবে। কারণ ফিলিস্তিনের কোনো পক্ষই এ প্রস্তাবকে সমর্থন করেনি। লেখক সালেহ হুল কুলাব সৌদি দৈনিক আশ্ শারকুল আওসাতে এক নিবন্ধে লিখেছেন, যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্টের 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামক প্রস্তাবের বিষয়ে বিশদ বিবরণ এখনো পাওয়া যায়নি তবে কোনো কোনো অনির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, এ প্রস্তাবের প্রতি ফিলিস্তিনের কোনো পক্ষেরই সমর্থন নেই। কারণ ফিলিস্তিনিদের জন্য যে পৃথক দেশ গঠনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে তাতে একটি অসম্পূর্ণ ও দুর্বল রাষ্ট্র গড়ে উঠবে। কারণ ১৯৬৭ সালে দখলিকৃত ভূমি ফিলিস্তিনিদের ফিরিয়ে দেয়া হবে না। এমনকি পূর্ব বায়তুল মোকাদ্দাসের পরিবর্তে অনেক দূরের আবুদিস নামে একটি উপশহরকে ফিলিস্তিনিদের রাজধানী করার প্রস্তাব দেয়া হবে। স্বাভাবিকভাবেই ফিলিস্তিনের স্বশাসন কর্তৃপক্ষ শুধু যে এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করবে তাই নয় একই সঙ্গে এটি যাতে বাস্তবায়ন না হয় সে চেষ্টাও তারা করবে। এ পরিকল্পনা মেনে নেয়ার অর্থ রাজনৈতিক আত্মহত্যা এবং ফিলিস্তিনিদের জন্য মহা বিপর্যয় ডেকে আনবে।
এদিকে, ফিলিস্তিনের বিভিন্ন সংগ্রামী দল জানিয়েছে, তারা কোনোভাবেই ট্রাম্পের 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামক পরিকল্পনা মেনে নেবে না। হামাসের রাজনৈতিক শাখার সাবেক প্রধান খালেদ মাশআল বলেছেন, ট্রাম্পের প্রস্তাবে যাই বলা হোক না কেন তা বাস্তবায়ন করতে দেয়া হবে না। ফিলিস্তিনের অন্য সংগ্রামী দলগুলোও ট্রাম্পের প্রস্তাবকে অনর্থক অভিহিত করে এর বিরোধিতা করেছে। মার্কিন দূতাবাস তেলআবিব থেকে বায়তুল মোকাদ্দাসে সরিয়ে আনার পর ফিলিস্তিন স্বশাসন কর্তৃপক্ষও আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। মোটকথা, ট্রাম্পের এ প্রস্তাবের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে এর ফলে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে যে অনৈক্য ছিল তার অবসান ঘটেছে। এ অবস্থায় মার্কিন সরকার ও তাদের কয়েকটি আরব মিত্র দেশ গাজার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে এবং তাদের পুনর্গঠনে আর্থিক সহায়তার প্রলোভন দেখিয়ে ফিলিস্তিনিদেরকে ট্রাম্পের ষড়যন্ত্রমূলক পরিকল্পনা মেনে নিতে উৎসাহিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
এদিকে, ফিলিস্তিন স্বশাসন কর্তৃপক্ষ ট্রাম্পের 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামক পরিকল্পনার বিরোধিতা করে আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার নীতিতে অটল থাকার কথা বললেও তাতে মুসলমানদের কোনো লাভ হবে না। কারণ ইসরাইল ও আমেরিকা তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী যেভাবে ফিলিস্তিন সংকট সমাধানের চেষ্টা করছে তাতে স্বশাসন কর্তৃপক্ষের এ কৌশল মুসলমানদের কোনো কাজে আসবে না। বর্তমান পরিস্থিতির দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় ফিলিস্তিনের সংগ্রামী দলগুলো ইসরাইলের মোকাবেলায় প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়াকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে। ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ এমন একটি বিষয় যা অব্যাহত থাকলে মধ্যপ্রাচ্যে তেলআবিব ও ওয়াশিংটনের অবস্থানকে দুর্বল করে দেবে এবং ইসরাইল তার নীতিতে পরিবর্তন আনতে বাধ্য হবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা হলে নতুন করে ফিলিস্তিনিদের গণজাগরণ শুরু হবে। এমনকি ইসরাইলের সঙ্গে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের যুদ্ধও বেধে যেতে পারে। তেলআবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস বায়তুল মোকাদ্দাসে স্থানান্তরের প্রতিবাদে ফিলিস্তিনিদের যে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে তা এখনো অব্যাহত রয়েছে এবং এটি অবসানের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ফিলিস্তিনিদের এই আন্দোলন-বিক্ষোভের একটি প্রভাব হচ্ছে ইসরাইলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক জনমত গঠন। ফিলিস্তিনিদের এ আন্দোলনের ফলে একদিকে ইসরাইল তার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে পারবে না অন্যদিকে এ আন্দোলন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ইসরাইলের জন্য ক্ষতি ডেকে আনবে। যেসব দেশ ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নিয়েছিল তারাও সরে দাঁড়াবে। ট্রাম্পের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করা হলে মধ্যপ্রাচ্য দীর্ঘ মেয়াদে নতুন করে সহিংসতার দিকে ধাবিত হবে।
ট্রাম্পের 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামক পরিকল্পনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুধু মুসলিম দেশগুলোতে বিক্ষোভের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না একই সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের সমস্ত প্রতিরোধ শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করবে। অন্যদিকে যেসব দেশে ইসরাইলের দূতাবাস রয়েছে সেগুলোও হুমকির মুখে পড়বে। মোটকথা, ট্রাম্পের এ পরিকল্পনা নতুন করে মধ্যপ্রাচ্যকে নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দেবে। এমনকি ইসরাইলও নিরাপদ থাকতে পারবে না।
গত তিন পর্বে আমরা এই পরিকল্পনার নানা দিক, এর লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, পরিকল্পনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ভূমিকা সম্পর্কে বিস্তারিত করেছি। এ সংক্রান্ত আলোচনার চতুর্থ ও শেষ পর্বে আমরা ট্রাম্পের এ পরিকল্পনার পরিণতির বিষয়ে বিবরণ তুল ধরব। 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামের কথিত শান্তি প্রস্তাব বা পরিকল্পনার বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য করলে দেখা যাবে দখলদার ইহুদিবাদী ইসরাইলের স্বার্থ রক্ষা ও তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রধান উদ্দেশ্য। ইসরাইলি দৈনিক হারেতয এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে লিখেছে, ইসরাইলের একটি জনমত জরিপ সংস্থা ট্রাম্পের 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামের পরিকল্পনার ওপর জরিপ চালিয়েছে। জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, ইসরাইলের ৭৪ শতাংশ নাগরিক বিশ্বাস করে ট্রাম্পের 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামক পরিকল্পনা ব্যর্থ হবে এবং মাত্র ৫ শতাংশ মানুষ মনে করে এটি সফল হবে। জরিপে আরো দেখা গেছে, ৭৭ শতাংশ ইসরাইলি মনে করেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে পদক্ষেপই নিয়ে থাকুন না কেন তা কেবল ইসরাইলের স্বার্থের অনুকূলে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, দখলদার ইসরাইলের স্বার্থে পরিকল্পনা প্রণয়নের অর্থই হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে আরো বেশি অপরাধযজ্ঞ চালানোর অনুমতি দেয়া। ট্রাম্পের এ পদক্ষেপের কারণে অবৈধ ইহুদি উপশহর নির্মাণের কাজও অব্যাহত থাকবে। কারণ ট্রাম্প উপশহর নির্মাণের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলেননি। ইসরাইল বিষয়ক জর্দানের গবেষক ও লেখক আইমান দেহাজ আল হানিথি লন্ডন থেকে প্রকাশিত দৈনিক রাই আল ইয়াওমে এক নিবন্ধে লিখেছেন, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লুউ বুশ ইসরাইলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল শ্যারনকে ইহুদি উপশহর নির্মাণ চালিয়ে যাওয়ার যে নির্দেশ দিয়েছিলেন সেটাকে অনুসরণ করেই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু আরো দ্রুত গতিতে ইহুদি উপশহর নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামক পরিকল্পনাও ইহুদি উপশহর নির্মাণে ইসরাইলকে আরো বেশি উৎসাহিত করবে।
ট্রাম্পের 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামক পরিকল্পনা শুধু যে মধ্যপ্রাচ্যের ভৌগোলিক চেহারা পাল্টে দেবে তাই নয় একই সঙ্গে এ অঞ্চলে মুসলিম ইতিহাস, ঐতিহ্য ও ধর্মীয় সংস্কৃতিকেও হুমকির মুখে ঠেলে দেবে। যে ভূখণ্ডে ইসরাইল নামে অবৈধ ইহুদিবাদী রাষ্ট্র গড়ে উঠেছে এক সময় তার মালিক ছিল ফিলিস্তিনিরা। সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশিক শক্তি ও সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের বিরাট অংশ ইসরাইলের হাতে তুলে দেয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার এ নতুন পরিকল্পনার মাধ্যমে এ অঞ্চলে ইসরাইলের দখলদারিত্বকে পূর্ণতা দেয়ার চেষ্টা করছেন। একই সঙ্গে এ অঞ্চলে মুসলমানদের ইতিহাস ঐতিহ্যও মুছে ফেলার পায়তারা করছেন। এ ছাড়া, বায়তুল মোকাদ্দাস হচ্ছে মুসলমানদের প্রথম কেবলা। ট্রাম্পের 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামক পরিকল্পনার মাধ্যমে বায়তুল মোকাদ্দাসের সঙ্গে মুসলমানদের এই সম্পর্ক ও পরিচিতিকেও ধ্বংস করার চক্রান্ত চলছে। এ অবস্থায় কোনো ধরণের প্রতিবাদ ও সহিংসতা ছাড়াই ট্রাম্পের এ ষড়যন্ত্রমূলক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন নির্বিঘ্ন হবে কিনা এবং আদৌ এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব কিনা সেটাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের যে চেষ্টা চলছে তার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব হচ্ছে এর ফলে ফিলিস্তিনের সব দলের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হবে। কারণ ফিলিস্তিনের কোনো পক্ষই এ প্রস্তাবকে সমর্থন করেনি। লেখক সালেহ হুল কুলাব সৌদি দৈনিক আশ্ শারকুল আওসাতে এক নিবন্ধে লিখেছেন, যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্টের 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামক প্রস্তাবের বিষয়ে বিশদ বিবরণ এখনো পাওয়া যায়নি তবে কোনো কোনো অনির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, এ প্রস্তাবের প্রতি ফিলিস্তিনের কোনো পক্ষেরই সমর্থন নেই। কারণ ফিলিস্তিনিদের জন্য যে পৃথক দেশ গঠনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে তাতে একটি অসম্পূর্ণ ও দুর্বল রাষ্ট্র গড়ে উঠবে। কারণ ১৯৬৭ সালে দখলিকৃত ভূমি ফিলিস্তিনিদের ফিরিয়ে দেয়া হবে না। এমনকি পূর্ব বায়তুল মোকাদ্দাসের পরিবর্তে অনেক দূরের আবুদিস নামে একটি উপশহরকে ফিলিস্তিনিদের রাজধানী করার প্রস্তাব দেয়া হবে। স্বাভাবিকভাবেই ফিলিস্তিনের স্বশাসন কর্তৃপক্ষ শুধু যে এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করবে তাই নয় একই সঙ্গে এটি যাতে বাস্তবায়ন না হয় সে চেষ্টাও তারা করবে। এ পরিকল্পনা মেনে নেয়ার অর্থ রাজনৈতিক আত্মহত্যা এবং ফিলিস্তিনিদের জন্য মহা বিপর্যয় ডেকে আনবে।
এদিকে, ফিলিস্তিনের বিভিন্ন সংগ্রামী দল জানিয়েছে, তারা কোনোভাবেই ট্রাম্পের 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামক পরিকল্পনা মেনে নেবে না। হামাসের রাজনৈতিক শাখার সাবেক প্রধান খালেদ মাশআল বলেছেন, ট্রাম্পের প্রস্তাবে যাই বলা হোক না কেন তা বাস্তবায়ন করতে দেয়া হবে না। ফিলিস্তিনের অন্য সংগ্রামী দলগুলোও ট্রাম্পের প্রস্তাবকে অনর্থক অভিহিত করে এর বিরোধিতা করেছে। মার্কিন দূতাবাস তেলআবিব থেকে বায়তুল মোকাদ্দাসে সরিয়ে আনার পর ফিলিস্তিন স্বশাসন কর্তৃপক্ষও আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। মোটকথা, ট্রাম্পের এ প্রস্তাবের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে এর ফলে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে যে অনৈক্য ছিল তার অবসান ঘটেছে। এ অবস্থায় মার্কিন সরকার ও তাদের কয়েকটি আরব মিত্র দেশ গাজার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে এবং তাদের পুনর্গঠনে আর্থিক সহায়তার প্রলোভন দেখিয়ে ফিলিস্তিনিদেরকে ট্রাম্পের ষড়যন্ত্রমূলক পরিকল্পনা মেনে নিতে উৎসাহিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
এদিকে, ফিলিস্তিন স্বশাসন কর্তৃপক্ষ ট্রাম্পের 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামক পরিকল্পনার বিরোধিতা করে আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার নীতিতে অটল থাকার কথা বললেও তাতে মুসলমানদের কোনো লাভ হবে না। কারণ ইসরাইল ও আমেরিকা তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী যেভাবে ফিলিস্তিন সংকট সমাধানের চেষ্টা করছে তাতে স্বশাসন কর্তৃপক্ষের এ কৌশল মুসলমানদের কোনো কাজে আসবে না। বর্তমান পরিস্থিতির দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় ফিলিস্তিনের সংগ্রামী দলগুলো ইসরাইলের মোকাবেলায় প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়াকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে। ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ এমন একটি বিষয় যা অব্যাহত থাকলে মধ্যপ্রাচ্যে তেলআবিব ও ওয়াশিংটনের অবস্থানকে দুর্বল করে দেবে এবং ইসরাইল তার নীতিতে পরিবর্তন আনতে বাধ্য হবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা হলে নতুন করে ফিলিস্তিনিদের গণজাগরণ শুরু হবে। এমনকি ইসরাইলের সঙ্গে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের যুদ্ধও বেধে যেতে পারে। তেলআবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস বায়তুল মোকাদ্দাসে স্থানান্তরের প্রতিবাদে ফিলিস্তিনিদের যে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে তা এখনো অব্যাহত রয়েছে এবং এটি অবসানের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ফিলিস্তিনিদের এই আন্দোলন-বিক্ষোভের একটি প্রভাব হচ্ছে ইসরাইলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক জনমত গঠন। ফিলিস্তিনিদের এ আন্দোলনের ফলে একদিকে ইসরাইল তার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে পারবে না অন্যদিকে এ আন্দোলন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ইসরাইলের জন্য ক্ষতি ডেকে আনবে। যেসব দেশ ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নিয়েছিল তারাও সরে দাঁড়াবে। ট্রাম্পের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করা হলে মধ্যপ্রাচ্য দীর্ঘ মেয়াদে নতুন করে সহিংসতার দিকে ধাবিত হবে।
ট্রাম্পের 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামক পরিকল্পনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুধু মুসলিম দেশগুলোতে বিক্ষোভের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না একই সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের সমস্ত প্রতিরোধ শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করবে। অন্যদিকে যেসব দেশে ইসরাইলের দূতাবাস রয়েছে সেগুলোও হুমকির মুখে পড়বে। মোটকথা, ট্রাম্পের এ পরিকল্পনা নতুন করে মধ্যপ্রাচ্যকে নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দেবে। এমনকি ইসরাইলও নিরাপদ থাকতে পারবে না।
No comments