যেসব কারণে আমেরিকার সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি নন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা
ইরানের
সর্বোচ্চ নেতা আয়তুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী সম্প্রতি এক সমাবেশে ইরানের
সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য আমেরিকার প্রস্তাব ও তাদের অশুভ লক্ষ্য উদ্দেশ্য
সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য তুলে ধরেছেন।
তিনি আমেরিকার আলোচনার প্রস্তাবকে সেকেলে ও পুরানো কৌশল অভিহিত করে বলেন এর কোনো রাজনৈতিক মূল্য নেই। কারণ আমেরিকার একজন কর্মকর্তা বলছেন তারা বিনাশর্তে ইরানের সঙ্গে সংলাপে বসবে আবার আরেকজন পূর্বশর্ত আরোপের কথা বলছেন। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা প্রথম থেকেই আমেরিকার সঙ্গে আলোচনায় না বসার বিভিন্ন কারণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আলোচনার ব্যাপারে আমেরিকা বিশেষ চালাকি ও কূটকৌশল অবলম্বন করে থাকে এবং তা ধরতে পারাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ অবস্থায় কোনো বুদ্ধিমান ব্যক্তি এমন একটি দেশের সঙ্গে সংলাপে বসতে পারে কিনা এমন এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, সত্যিকারের আলোচনা হতে হবে উভয়পক্ষের স্বার্থ রক্ষার ভিত্তিতে। অর্থাৎ একতরফা হলে চলবে না। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, "আমেরিকা সবসময়ই আলোচনার টেবিলে তার নিজস্ব সামরিক, প্রচার ও অর্থনৈতিক ক্ষমতাকে চাপ সৃষ্টির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে এবং এভাবে তারা অন্য দেশের প্রতিরোধকে ব্যর্থ করে দেয়া ও আলোচনায় সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করে।" আলোচনার টেবিলে আমেরিকাকে বিশ্বাস না করার বহু কারণ রয়েছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা উদাহরণ হিসেবে পরমাণ সমঝোতা কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, "দীর্ঘ ও শ্বাসরুদ্ধকর আলোচনার পর পরমাণু সমঝোতা অর্জিত হলেও এবং এর প্রতি আন্তর্জাতিক সমাজ ও জাতিসংঘের সমর্থন থাকলেও আমেরিকা এ চুক্তি থেকে বেরিয়ে গিয়ে খুবই খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।"
এ থেকে বোঝা যায়, আমেরিকাকে কখনো বিশ্বাস করা যায় না এবং তারা কেবল নিজেদের স্বার্থ রক্ষার বিষয়টিকেই প্রাধান্য দেয়। আমেরিকার বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক হ্যালি ড্যাগার্স মনে করেন, "ইরানিরা পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে আলোচনায় বিশ্বাসী। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বহু কষ্টে অর্জিত পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে গিয়ে প্রমাণ করেছেন আমেরিকার প্রতি আস্থা রাখা যায় না।"
এ ছাড়া, সম্প্রতি উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনার ক্ষেত্রেও আমেরিকার ছলচাতুরী ও কূটকৌশল প্রয়োগের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। মার্কিন কর্মকর্তারা সবসময়ই প্রত্যাশা করেন প্রতিপক্ষ দ্রুত তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করুক যা কিনা সংলাপের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। এ ব্যাপারে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেছেন, "আলোচনার টেবিলে আমেরিকা কেবল মুখে প্রতিশ্রুতি দেয় কিন্তু তারা প্রতিপক্ষের প্রতিশ্রুতি মানতে রাজি নয় বরং নগদ সুবিধা নিতে চায়।"
আলোচনার সময় আমেরিকা যে কৌশল অবলম্বন করে থাকে তা হচ্ছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব ও শক্তিমত্ত্বাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে এবং নিজের আসল লক্ষ্য উদ্দেশ্যের বিষয়টি পুরো গোপন রাখে। এমন কি আমেরিকা দরকষাকষি করতে কিংবা এককদম পিছু হটতেও রাজি নয়। প্রতিপক্ষরা অনেক সময় আলোচনার সময় কিছুটা ছাড় দিয়ে হলেও চেষ্টা করে যাতে আলোচনা থেকে ইতিবাচক ফল পাওয়া যায়। ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের পরমাণু সমঝোতা এ ক্ষেত্রে বড় উদাহরণ হয়ে আছে। পরমাণু আলোচনার সময় আমেরিকা যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তার একটিও আজ পর্যন্ত পালন করেনি। এমনকি ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর তিনি নতুন নতুন এমন কিছু দাবি উত্থাপন করেছেন যার সঙ্গে পরমাণু আলোচনার কোনো সম্পর্ক নেই। এ থেকে বোঝা যায়, আমেরিকা আলোচনার সময় তাদের উদ্দেশ্যের বিষয়টি গোপন রাখে এবং চুক্তি সইয়ের পরও সুযোগ মতো চুক্তি লঙ্ঘন করে তাদের গোপন উদ্দেশ্যের বিষয়টি প্রকাশ করে। আমেরিকার এসব আচরণ আলোচনার নিয়ম নীতির সঙ্গে মোটেও সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতা ছিল কেবলমাত্র ইরানের পরমাণু কার্যক্রম সম্পর্কিত। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি কিংবা মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের তৎপরতার সঙ্গে ওই চুক্তির কোনো সম্পর্ক নেই। তারপরও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পরপরই অপ্রাসঙ্গিক এসব ইস্যু উত্থাপন করেন। কিন্তু ইরান পরমাণু বহির্ভূত এসব অযৌক্তিক দাবি মানতে অস্বীকৃতি জানানোয় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দ্রুত পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। আমেরিকা যে আন্তর্জাতিক চুক্তির প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয় এ থেকেই তা প্রমাণিত হয়।
প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে হুমকি ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ মার্কিন পররাষ্ট্র নীতির একটি অন্যতম কৌশল। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উত্তর কোরিয়া ও ইরানের সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে এ কৌশল ব্যবহার করেছেন। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রতিপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করা, তাদেরকে পিছু হটতে বাধ্য করা এবং সর্বশেষ আমেরিকার ইচ্ছা অনুযায়ী আলোচনা চালিয়ে যাওয়া ও চুক্তি সইয়ে বাধ্য করা। আমেরিকা সম্প্রতি উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে হুমকি ও নিষেধাজ্ঞার কৌশল প্রয়োগ করেছে। তবে উত্তর কোরিয়া ও আমেরিকার শীর্ষ নেতারা সিঙ্গাপুরে বৈঠকে মিলিত হলেও পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের ব্যাপারে ওয়াশিংটনের অনুরোধের বিরোধিতা করেছে পিয়ংইয়ং। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও জানিয়েছেন, "উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কমিয়ে আনার যে প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল পিয়ংইয়ং তার বিরোধিতা করেছে।" পম্পেরও এ বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, আমেরিকার সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার আলোচনা ছিল একতরফা অর্থাৎ এতে কোনো ভারসাম্য ছিল না। কারণ আমেরিকা উত্তর কোরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কোনো প্রতিশ্রুতি না দিয়েই পরমাণু অস্ত্র ধ্বংসের জন্য উত্তর কোরিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল।
উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আমেরিকা যে অন্যায্য আচরণ করেছে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা ঠিক এ বিষয়ের উপরই ইঙ্গিত করে বলেছেন, "আমেরিকার কৌশল হচ্ছে নগদ সুবিধা আদায় করা।"
যাইহোক, আমেরিকার সঙ্গে আলোচনার প্রথম দিকে উত্তর কোরিয়া কিছুটা আশাবাদী হয়ে উঠলেও এখন তারা এটা বুঝতে পেরেছে আলোচনার মাধ্যমে আমেরিকা কেবল নিজের স্বার্থই রক্ষার চেষ্টা করে। উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে ওয়াশিংটনকে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে অভিহিত করে বলেছে, বর্তমান অবস্থায় আমেরিকার সঙ্গে আলোচনায় ফল পাওয়ার প্রত্যাশা করা বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুমকি ও নিষেধাজ্ঞার কৌশল প্রয়োগ করে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনায় তার রাজনৈতিক বিজয় হয়েছে বলে মনে করছেন। এরপর তিনি ইরানের সঙ্গে বিনা শর্তে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দেন। কিন্তু এ প্রস্তাবের মাত্র কয়েক ঘন্টা পরই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইরানের সঙ্গে আলোচনার জন্য শর্ত বেধে দেন। তিনি মধ্যপ্রাচ্যের ব্যাপারে ইরানের নীতিতে পরিবর্তন আনার এবং ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি বন্ধের দাবি জানান। অর্থাৎ এই পরস্পরবিরোধী অবস্থান থেকে বোঝা যায় ইরানের ব্যাপারে মার্কিন কর্মকর্তারা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে। মার্কিন কর্মকর্তারা ভালো করেই জানেন ইরান উত্তর কোরিয়ার মতো নয় এবং ইরান আমেরিকার ফাঁদে পা দেবে না। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইরানের সঙ্গে আলোচনার ব্যাপারে মার্কিন কর্মকর্তাদের পরস্পর বিরোধী অবস্থান থেকে বোঝা যায়, তাদের প্রতি কোনো আস্থা রাখা যায় না। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেছেন, "বর্তমান ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে কোনো ধরণের আলোচনা হবে না।"
তিনি আমেরিকার আলোচনার প্রস্তাবকে সেকেলে ও পুরানো কৌশল অভিহিত করে বলেন এর কোনো রাজনৈতিক মূল্য নেই। কারণ আমেরিকার একজন কর্মকর্তা বলছেন তারা বিনাশর্তে ইরানের সঙ্গে সংলাপে বসবে আবার আরেকজন পূর্বশর্ত আরোপের কথা বলছেন। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা প্রথম থেকেই আমেরিকার সঙ্গে আলোচনায় না বসার বিভিন্ন কারণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আলোচনার ব্যাপারে আমেরিকা বিশেষ চালাকি ও কূটকৌশল অবলম্বন করে থাকে এবং তা ধরতে পারাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ অবস্থায় কোনো বুদ্ধিমান ব্যক্তি এমন একটি দেশের সঙ্গে সংলাপে বসতে পারে কিনা এমন এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, সত্যিকারের আলোচনা হতে হবে উভয়পক্ষের স্বার্থ রক্ষার ভিত্তিতে। অর্থাৎ একতরফা হলে চলবে না। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, "আমেরিকা সবসময়ই আলোচনার টেবিলে তার নিজস্ব সামরিক, প্রচার ও অর্থনৈতিক ক্ষমতাকে চাপ সৃষ্টির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে এবং এভাবে তারা অন্য দেশের প্রতিরোধকে ব্যর্থ করে দেয়া ও আলোচনায় সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করে।" আলোচনার টেবিলে আমেরিকাকে বিশ্বাস না করার বহু কারণ রয়েছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা উদাহরণ হিসেবে পরমাণ সমঝোতা কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, "দীর্ঘ ও শ্বাসরুদ্ধকর আলোচনার পর পরমাণু সমঝোতা অর্জিত হলেও এবং এর প্রতি আন্তর্জাতিক সমাজ ও জাতিসংঘের সমর্থন থাকলেও আমেরিকা এ চুক্তি থেকে বেরিয়ে গিয়ে খুবই খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।"
এ থেকে বোঝা যায়, আমেরিকাকে কখনো বিশ্বাস করা যায় না এবং তারা কেবল নিজেদের স্বার্থ রক্ষার বিষয়টিকেই প্রাধান্য দেয়। আমেরিকার বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক হ্যালি ড্যাগার্স মনে করেন, "ইরানিরা পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে আলোচনায় বিশ্বাসী। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বহু কষ্টে অর্জিত পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে গিয়ে প্রমাণ করেছেন আমেরিকার প্রতি আস্থা রাখা যায় না।"
এ ছাড়া, সম্প্রতি উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনার ক্ষেত্রেও আমেরিকার ছলচাতুরী ও কূটকৌশল প্রয়োগের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। মার্কিন কর্মকর্তারা সবসময়ই প্রত্যাশা করেন প্রতিপক্ষ দ্রুত তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করুক যা কিনা সংলাপের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। এ ব্যাপারে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেছেন, "আলোচনার টেবিলে আমেরিকা কেবল মুখে প্রতিশ্রুতি দেয় কিন্তু তারা প্রতিপক্ষের প্রতিশ্রুতি মানতে রাজি নয় বরং নগদ সুবিধা নিতে চায়।"
আলোচনার সময় আমেরিকা যে কৌশল অবলম্বন করে থাকে তা হচ্ছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব ও শক্তিমত্ত্বাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে এবং নিজের আসল লক্ষ্য উদ্দেশ্যের বিষয়টি পুরো গোপন রাখে। এমন কি আমেরিকা দরকষাকষি করতে কিংবা এককদম পিছু হটতেও রাজি নয়। প্রতিপক্ষরা অনেক সময় আলোচনার সময় কিছুটা ছাড় দিয়ে হলেও চেষ্টা করে যাতে আলোচনা থেকে ইতিবাচক ফল পাওয়া যায়। ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের পরমাণু সমঝোতা এ ক্ষেত্রে বড় উদাহরণ হয়ে আছে। পরমাণু আলোচনার সময় আমেরিকা যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তার একটিও আজ পর্যন্ত পালন করেনি। এমনকি ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর তিনি নতুন নতুন এমন কিছু দাবি উত্থাপন করেছেন যার সঙ্গে পরমাণু আলোচনার কোনো সম্পর্ক নেই। এ থেকে বোঝা যায়, আমেরিকা আলোচনার সময় তাদের উদ্দেশ্যের বিষয়টি গোপন রাখে এবং চুক্তি সইয়ের পরও সুযোগ মতো চুক্তি লঙ্ঘন করে তাদের গোপন উদ্দেশ্যের বিষয়টি প্রকাশ করে। আমেরিকার এসব আচরণ আলোচনার নিয়ম নীতির সঙ্গে মোটেও সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতা ছিল কেবলমাত্র ইরানের পরমাণু কার্যক্রম সম্পর্কিত। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি কিংবা মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের তৎপরতার সঙ্গে ওই চুক্তির কোনো সম্পর্ক নেই। তারপরও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পরপরই অপ্রাসঙ্গিক এসব ইস্যু উত্থাপন করেন। কিন্তু ইরান পরমাণু বহির্ভূত এসব অযৌক্তিক দাবি মানতে অস্বীকৃতি জানানোয় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দ্রুত পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। আমেরিকা যে আন্তর্জাতিক চুক্তির প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয় এ থেকেই তা প্রমাণিত হয়।
প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে হুমকি ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ মার্কিন পররাষ্ট্র নীতির একটি অন্যতম কৌশল। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উত্তর কোরিয়া ও ইরানের সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে এ কৌশল ব্যবহার করেছেন। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রতিপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করা, তাদেরকে পিছু হটতে বাধ্য করা এবং সর্বশেষ আমেরিকার ইচ্ছা অনুযায়ী আলোচনা চালিয়ে যাওয়া ও চুক্তি সইয়ে বাধ্য করা। আমেরিকা সম্প্রতি উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে হুমকি ও নিষেধাজ্ঞার কৌশল প্রয়োগ করেছে। তবে উত্তর কোরিয়া ও আমেরিকার শীর্ষ নেতারা সিঙ্গাপুরে বৈঠকে মিলিত হলেও পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের ব্যাপারে ওয়াশিংটনের অনুরোধের বিরোধিতা করেছে পিয়ংইয়ং। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও জানিয়েছেন, "উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কমিয়ে আনার যে প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল পিয়ংইয়ং তার বিরোধিতা করেছে।" পম্পেরও এ বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, আমেরিকার সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার আলোচনা ছিল একতরফা অর্থাৎ এতে কোনো ভারসাম্য ছিল না। কারণ আমেরিকা উত্তর কোরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কোনো প্রতিশ্রুতি না দিয়েই পরমাণু অস্ত্র ধ্বংসের জন্য উত্তর কোরিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল।
উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আমেরিকা যে অন্যায্য আচরণ করেছে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা ঠিক এ বিষয়ের উপরই ইঙ্গিত করে বলেছেন, "আমেরিকার কৌশল হচ্ছে নগদ সুবিধা আদায় করা।"
যাইহোক, আমেরিকার সঙ্গে আলোচনার প্রথম দিকে উত্তর কোরিয়া কিছুটা আশাবাদী হয়ে উঠলেও এখন তারা এটা বুঝতে পেরেছে আলোচনার মাধ্যমে আমেরিকা কেবল নিজের স্বার্থই রক্ষার চেষ্টা করে। উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে ওয়াশিংটনকে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে অভিহিত করে বলেছে, বর্তমান অবস্থায় আমেরিকার সঙ্গে আলোচনায় ফল পাওয়ার প্রত্যাশা করা বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুমকি ও নিষেধাজ্ঞার কৌশল প্রয়োগ করে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনায় তার রাজনৈতিক বিজয় হয়েছে বলে মনে করছেন। এরপর তিনি ইরানের সঙ্গে বিনা শর্তে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দেন। কিন্তু এ প্রস্তাবের মাত্র কয়েক ঘন্টা পরই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইরানের সঙ্গে আলোচনার জন্য শর্ত বেধে দেন। তিনি মধ্যপ্রাচ্যের ব্যাপারে ইরানের নীতিতে পরিবর্তন আনার এবং ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি বন্ধের দাবি জানান। অর্থাৎ এই পরস্পরবিরোধী অবস্থান থেকে বোঝা যায় ইরানের ব্যাপারে মার্কিন কর্মকর্তারা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে। মার্কিন কর্মকর্তারা ভালো করেই জানেন ইরান উত্তর কোরিয়ার মতো নয় এবং ইরান আমেরিকার ফাঁদে পা দেবে না। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইরানের সঙ্গে আলোচনার ব্যাপারে মার্কিন কর্মকর্তাদের পরস্পর বিরোধী অবস্থান থেকে বোঝা যায়, তাদের প্রতি কোনো আস্থা রাখা যায় না। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেছেন, "বর্তমান ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে কোনো ধরণের আলোচনা হবে না।"
No comments