আহেদ তামিমি ও ফিলিস্তিনি নারীদের বীরত্ব by মিসবাহুল হক
ইসরাইলি
দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ও নিজেদের ভূ-খণ্ডের অধিকার ফিরে পাওয়ার দাবিতে
পশ্চিম তীরে আন্দোলনকারী ফিলিস্তিনিদের কাছে আলোচিত তরুণী আহেদ তামিমি
অনুকরণীয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন। নিজ বাড়িতে অভিযান পরিচালনাকারী
ইসরাইলের সেনাদের বিরুদ্ধে সরাসরি প্রতিবাদ জানানোর কারণে তাকে ৮ মাসের
কারাদণ্ড দেয়া হয়। ইসরাইলের কারাগারে ওই সাজা পূর্ণ করে সম্প্রতি তিনি
মুক্তি পেয়েছেন। কিন্তু মুক্তি পাওয়ার পর আহেদ তামিমি ফিলিস্তিনিদের শোচনীয়
অবস্থা ও তাদের ওপর চালানো নির্যাতনের বিষয়টি বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরার
শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। ইসরাইলের কারাগার থেকে মুক্তি
পেয়ে তিনি উপস্থিত শুভাকাঙ্ক্ষী ও সাংবাদিকদের বলেন, জনগণের কাছেই সব
ক্ষমতা। তারা চাইলেই নিজেদের ভবিষ্যৎ ভাগ্য নির্ধারণ করতে পারে। আর
ফিলিস্তিনের মানুষ এটাই করবে।
আহেদ তামিমির কারাভোগের ঘটনা অভাবনীয়ভাবে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। অথচ এসব গণমাধ্যমই বছরের পর বছর ইসরাইলি নির্যাতনের শিকার ফিলিস্তিনি নারীদের সীমাহীন দুর্ভোগ ও তাদের অসীম বীরত্বের কথা উপেক্ষা করে আসছে। আহেদের মাও এ বিষয়ে একমত প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, সত্যি কথা বলতে আহেদের ব্যক্তিত্বই বিশ্ববাসীর সহানুভূতি আদায় করেছে। এটা অবশ্যই বৈষম্যমূলক। কেননা ফিলিস্তিনের আরো অনেক শিশু আহেদের মতো অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু তাদের সঙ্গে এমন আচরণ করা হয়নি। আহেদের মায়ের মন্তব্যে ফিলিস্তিনের সত্যিকারের অবস্থা ফুটে উঠেছে। সাধারণত, পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোতে ফিলিস্তিনি নারীদের দুর্ভাগা ও করুণ পরিস্থিতির শিকার হিসেবে দেখানো হয়। যারা নিজ ভূখণ্ডে ইসরাইলি দখলদারিত্ব ও নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রতি মুহূর্তে প্রাণনাশের শঙ্কা নিয়ে দিনাতিপাত করছে। এছাড়া ফিলিস্তিনের পুরুষতান্ত্রিক সমাজের পশ্চাৎপদতাকেও বিশেষভাবে উল্লেখ করে পশ্চিমা গণমাধ্যম। তারা ফিলিস্তিনের অবস্থা পরিবর্তন করতে সেখানকার নারীদের প্রচেষ্টাকে খুব কম সময়ই প্রচার করে। বড়জোর তাদেরকে সংঘাতে আটকে পড়া জনগোষ্ঠী আখ্যা দেয়, সংকট উত্তরণে যারা কোনো ভূমিকা রাখে না।
পশ্চিমা মিডিয়ায় আরব নারীদের কথা প্রচার না করা, তাদের সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা দেয়া ও ভুলভাবে উপস্থাপন করার প্রবণতা ঔপনিবেশিক যুগ থেকে চলে আসছে। এই প্রবণতা ফিলিস্তিনি জনগণের, বিশেষ করে দুর্ভোগের শিকার নারীদের রাজনৈতিক ও মানবিক সহায়তার আবেদনকে দুর্বল করে দেয়। বাস্তবে, ইসরাইলি নির্যাতনের ক্ষেত্রে ফিলিস্তিনের নারীরা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে না বললেই চলে। ইসরাইলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি নারীদের নজিরবিহীন প্রতিবাদ প্রচারিত হওয়ার দাবি রাখে। কেননা এসব নারীরা পরিবারের দেখভাল করার পাশাপাশি গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের সীমান্ত বেড়ার কাছে নিয়মিত বিক্ষোভ করেছে, হতাহত হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে নিজেদের শরীরে আঘাত নিয়েও অন্য বিক্ষোভকারীদের সেবাযত্ন করেছে।
২৭শে জুলাই খান ইউনিস অঞ্চলে গাজী আবু মুস্তাফা নামের এক বিক্ষোভকারী নিহত হন। কৃষি খেতে কাজ করার সময় ইসরাইলি স্নাইপাররা তাকে গুলি করে হত্যা করে। তার ৩৭ বছর বয়সী স্ত্রী লামিয়া আহমেদও ভূমি দিবসের বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছেন। লামিয়া আহত বিক্ষোভকারীদের সেবাযত্ন করে বিক্ষোভ চালিয়ে যেতে সহায়তা করছেন। ২৭শে জুলাই সকালে গাজী মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। তিনি মারা যাওয়ার সময়েও স্ত্রী লামিয়া গুরুতর আহত আরেক বিক্ষোভকারী নাহিদ কাদেহ এর জীবন বাঁচাতে ব্যস্ত ছিলেন। স্বামীর মৃত্যুর খবরও তাকে মানসিকভাবে এতটুকু দুর্বল করতে পারেনি। লামিয়া বিধ্বস্ত ছিলেন, কিন্তু ভেঙে পড়েননি। এই বেদনা তাকে আরো শক্তি জুগিয়েছে। স্বামী হারানোর পরেও ভঙ্গুর শরীরে আবারো বিক্ষোভে যোগ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। উল্লেখ্য, গাজী আবু মুস্তাফা এর আগেও ইসরাইলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন। প্রথম ইন্তিফাদা হিসেবে পরিচিত ওই বিক্ষোভে তার এক চোখ নষ্ট হয়ে যায়। সে অবস্থাতেই আবারো বিক্ষোভে যোগ দেন তিনি। ৩০শে মার্চ ফিলিস্তিনের ‘ভূমি দিবস’ উপলক্ষে বিক্ষোভে যোগ দেয়ার সময় তিনি স্ত্রী লামিয়াকে বলেন, ‘মানুষের সেবায় যে নৌকা উৎসর্গ করা হয়েছে, তা কখনো ডোবে না।’ ফিলিস্তিনিদের মুক্তির নৌকা ভাসিয়ে রেখে তিনি নিজেই ডুবে গেলেন।
ফিলিস্তিনি তরুণী রিম আনবার দীর্ঘদিন ধরে তার সঙ্গীত দিয়ে ইসরাইলি হামলায় আতঙ্কিত জনগণকে ক্ষণিকের বিনোদন দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। দখলদার ইহুদিরা যখন নির্বিচারে ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা করে, তখন অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে গান গেয়ে শিশুদের আতঙ্ক কাটিয়ে তোলার চেষ্টা করেন। ইউরোপে সঙ্গীতের ওপর উচ্চতর শিক্ষা অর্জন করেও দেশের জনগণের স্বার্থে স্থায়ীভাবে ফিলিস্তিনে ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা তার। তিনি বলেন, তারা আমাদের গান গাওয়া বন্ধ করতে চায়। কিন্তু ঘটবে এর বিপরীত। ফিলিস্তিন সব সময়ই ইতিহাস ও শিল্পের চারণভূমি হয়ে থাকবে।’
ফিলিস্তিনি নারীদের আরেক অনুপ্রেরণা দাওলাত ফাউজি ইউনিস। পরিবারের উপার্জনক্ষম একমাত্র সদস্য হওয়ার পরেও তিনি বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন। ১৪ই মে যুক্তরাষ্ট্র যখন আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের দূতাবাস তেলআবিব থেকে জেরুজালেমে স্থানান্তর করে, তখন ইসরাইলের সীমান্ত বেড়ার কাছে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখায় ফিলিস্তিনিরা। এতে ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনী গুলি চালালে ৬০ ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারী নিহত হন। আহত হন আরো প্রায় ৩ হাজার বিক্ষোভকারী। এ সময় দাওলাতও আহত হন। উরুতে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। পরিস্থিতির এতই অবনতি ঘটে যে তিনি চলাফেরা করতে অক্ষম হয়ে পড়েন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি জেরুজালেমের আল মাকসিদ হাসপাতালে ভর্তির অনুমতি চেয়ে ইসরাইলের কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন। কিন্তু ইসরাইল তার এ আবেদনে সাড়া দেয়নি। শারীরিক অবস্থার ক্রমশ অবনতি হওয়ার সত্ত্বেও মানসিকভাবে একটুও দুর্বল না দাওলাত। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে যোগ দেয়ার জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি। ফিলিস্তিনি জনগণের মুক্তির জন্য কাজ করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ তিনি। এর আগেও ইসরাইলি বাহিনীর গুলিতে আহত হয়েছিলেন তিনি। ২০০৬ সালে বিক্ষোভ করার সময় গুলিবিদ্ধ হন তিনি। কয়েক মাসের চিকিৎসা ছেড়ে আবারো বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে যোগ দেন তিনি। সে যাত্রায় বেঁচে গেলেও এবারের আঘাত বেশ গুরুতর।
অবরুদ্ধ পশ্চিমতীর ও এর আশপাশের অঞ্চলে আহেদ, লামিয়া ও দাওলাতের মতো হাজারো নারী রয়েছেন যারা লাখো ফিলিস্তিনির জন্য জীবন্ত অনুপ্রেরণা। জীবনের মায়া ত্যাগ করে তারা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য ফিলিস্তিন রেখে যাওয়ার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তাদের এ অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বের কথা বিশ্ববাসী কমই জানতে পারে। পশ্চিমা আধিপত্যের কারণে মিডিয়াগুলোতেও তাদের এসব বীরত্ব উপেক্ষিত হয়।
আল জাজিরা ও বিবিসি অবলম্বনে
আহেদ তামিমির কারাভোগের ঘটনা অভাবনীয়ভাবে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। অথচ এসব গণমাধ্যমই বছরের পর বছর ইসরাইলি নির্যাতনের শিকার ফিলিস্তিনি নারীদের সীমাহীন দুর্ভোগ ও তাদের অসীম বীরত্বের কথা উপেক্ষা করে আসছে। আহেদের মাও এ বিষয়ে একমত প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, সত্যি কথা বলতে আহেদের ব্যক্তিত্বই বিশ্ববাসীর সহানুভূতি আদায় করেছে। এটা অবশ্যই বৈষম্যমূলক। কেননা ফিলিস্তিনের আরো অনেক শিশু আহেদের মতো অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু তাদের সঙ্গে এমন আচরণ করা হয়নি। আহেদের মায়ের মন্তব্যে ফিলিস্তিনের সত্যিকারের অবস্থা ফুটে উঠেছে। সাধারণত, পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোতে ফিলিস্তিনি নারীদের দুর্ভাগা ও করুণ পরিস্থিতির শিকার হিসেবে দেখানো হয়। যারা নিজ ভূখণ্ডে ইসরাইলি দখলদারিত্ব ও নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রতি মুহূর্তে প্রাণনাশের শঙ্কা নিয়ে দিনাতিপাত করছে। এছাড়া ফিলিস্তিনের পুরুষতান্ত্রিক সমাজের পশ্চাৎপদতাকেও বিশেষভাবে উল্লেখ করে পশ্চিমা গণমাধ্যম। তারা ফিলিস্তিনের অবস্থা পরিবর্তন করতে সেখানকার নারীদের প্রচেষ্টাকে খুব কম সময়ই প্রচার করে। বড়জোর তাদেরকে সংঘাতে আটকে পড়া জনগোষ্ঠী আখ্যা দেয়, সংকট উত্তরণে যারা কোনো ভূমিকা রাখে না।
পশ্চিমা মিডিয়ায় আরব নারীদের কথা প্রচার না করা, তাদের সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা দেয়া ও ভুলভাবে উপস্থাপন করার প্রবণতা ঔপনিবেশিক যুগ থেকে চলে আসছে। এই প্রবণতা ফিলিস্তিনি জনগণের, বিশেষ করে দুর্ভোগের শিকার নারীদের রাজনৈতিক ও মানবিক সহায়তার আবেদনকে দুর্বল করে দেয়। বাস্তবে, ইসরাইলি নির্যাতনের ক্ষেত্রে ফিলিস্তিনের নারীরা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে না বললেই চলে। ইসরাইলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি নারীদের নজিরবিহীন প্রতিবাদ প্রচারিত হওয়ার দাবি রাখে। কেননা এসব নারীরা পরিবারের দেখভাল করার পাশাপাশি গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের সীমান্ত বেড়ার কাছে নিয়মিত বিক্ষোভ করেছে, হতাহত হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে নিজেদের শরীরে আঘাত নিয়েও অন্য বিক্ষোভকারীদের সেবাযত্ন করেছে।
২৭শে জুলাই খান ইউনিস অঞ্চলে গাজী আবু মুস্তাফা নামের এক বিক্ষোভকারী নিহত হন। কৃষি খেতে কাজ করার সময় ইসরাইলি স্নাইপাররা তাকে গুলি করে হত্যা করে। তার ৩৭ বছর বয়সী স্ত্রী লামিয়া আহমেদও ভূমি দিবসের বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছেন। লামিয়া আহত বিক্ষোভকারীদের সেবাযত্ন করে বিক্ষোভ চালিয়ে যেতে সহায়তা করছেন। ২৭শে জুলাই সকালে গাজী মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। তিনি মারা যাওয়ার সময়েও স্ত্রী লামিয়া গুরুতর আহত আরেক বিক্ষোভকারী নাহিদ কাদেহ এর জীবন বাঁচাতে ব্যস্ত ছিলেন। স্বামীর মৃত্যুর খবরও তাকে মানসিকভাবে এতটুকু দুর্বল করতে পারেনি। লামিয়া বিধ্বস্ত ছিলেন, কিন্তু ভেঙে পড়েননি। এই বেদনা তাকে আরো শক্তি জুগিয়েছে। স্বামী হারানোর পরেও ভঙ্গুর শরীরে আবারো বিক্ষোভে যোগ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। উল্লেখ্য, গাজী আবু মুস্তাফা এর আগেও ইসরাইলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন। প্রথম ইন্তিফাদা হিসেবে পরিচিত ওই বিক্ষোভে তার এক চোখ নষ্ট হয়ে যায়। সে অবস্থাতেই আবারো বিক্ষোভে যোগ দেন তিনি। ৩০শে মার্চ ফিলিস্তিনের ‘ভূমি দিবস’ উপলক্ষে বিক্ষোভে যোগ দেয়ার সময় তিনি স্ত্রী লামিয়াকে বলেন, ‘মানুষের সেবায় যে নৌকা উৎসর্গ করা হয়েছে, তা কখনো ডোবে না।’ ফিলিস্তিনিদের মুক্তির নৌকা ভাসিয়ে রেখে তিনি নিজেই ডুবে গেলেন।
ফিলিস্তিনি তরুণী রিম আনবার দীর্ঘদিন ধরে তার সঙ্গীত দিয়ে ইসরাইলি হামলায় আতঙ্কিত জনগণকে ক্ষণিকের বিনোদন দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। দখলদার ইহুদিরা যখন নির্বিচারে ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা করে, তখন অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে গান গেয়ে শিশুদের আতঙ্ক কাটিয়ে তোলার চেষ্টা করেন। ইউরোপে সঙ্গীতের ওপর উচ্চতর শিক্ষা অর্জন করেও দেশের জনগণের স্বার্থে স্থায়ীভাবে ফিলিস্তিনে ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা তার। তিনি বলেন, তারা আমাদের গান গাওয়া বন্ধ করতে চায়। কিন্তু ঘটবে এর বিপরীত। ফিলিস্তিন সব সময়ই ইতিহাস ও শিল্পের চারণভূমি হয়ে থাকবে।’
ফিলিস্তিনি নারীদের আরেক অনুপ্রেরণা দাওলাত ফাউজি ইউনিস। পরিবারের উপার্জনক্ষম একমাত্র সদস্য হওয়ার পরেও তিনি বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন। ১৪ই মে যুক্তরাষ্ট্র যখন আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের দূতাবাস তেলআবিব থেকে জেরুজালেমে স্থানান্তর করে, তখন ইসরাইলের সীমান্ত বেড়ার কাছে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখায় ফিলিস্তিনিরা। এতে ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনী গুলি চালালে ৬০ ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারী নিহত হন। আহত হন আরো প্রায় ৩ হাজার বিক্ষোভকারী। এ সময় দাওলাতও আহত হন। উরুতে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। পরিস্থিতির এতই অবনতি ঘটে যে তিনি চলাফেরা করতে অক্ষম হয়ে পড়েন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি জেরুজালেমের আল মাকসিদ হাসপাতালে ভর্তির অনুমতি চেয়ে ইসরাইলের কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন। কিন্তু ইসরাইল তার এ আবেদনে সাড়া দেয়নি। শারীরিক অবস্থার ক্রমশ অবনতি হওয়ার সত্ত্বেও মানসিকভাবে একটুও দুর্বল না দাওলাত। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে যোগ দেয়ার জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি। ফিলিস্তিনি জনগণের মুক্তির জন্য কাজ করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ তিনি। এর আগেও ইসরাইলি বাহিনীর গুলিতে আহত হয়েছিলেন তিনি। ২০০৬ সালে বিক্ষোভ করার সময় গুলিবিদ্ধ হন তিনি। কয়েক মাসের চিকিৎসা ছেড়ে আবারো বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে যোগ দেন তিনি। সে যাত্রায় বেঁচে গেলেও এবারের আঘাত বেশ গুরুতর।
অবরুদ্ধ পশ্চিমতীর ও এর আশপাশের অঞ্চলে আহেদ, লামিয়া ও দাওলাতের মতো হাজারো নারী রয়েছেন যারা লাখো ফিলিস্তিনির জন্য জীবন্ত অনুপ্রেরণা। জীবনের মায়া ত্যাগ করে তারা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য ফিলিস্তিন রেখে যাওয়ার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তাদের এ অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বের কথা বিশ্ববাসী কমই জানতে পারে। পশ্চিমা আধিপত্যের কারণে মিডিয়াগুলোতেও তাদের এসব বীরত্ব উপেক্ষিত হয়।
আল জাজিরা ও বিবিসি অবলম্বনে
No comments