রাজনৈতিক সমস্যা প্রযুক্তির চমকে সমাধান হয় না by আলী রিয়াজ
বাংলাদেশ
নির্বাচন কমিশন গোটা দেশকে একটি অপ্রয়োজনীয় এবং অর্থহীন বিতর্কে লিপ্ত
করতে সক্ষম হয়েছে। তার নাম ইভিএম। যেখানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিজেই
বলেছেন ‘জাতীয় নির্বাচনে কোথাও কোনো অনিয়ম হবে না-এমন নিশ্চয়তা দেয়ার সুযোগ
নেই’ এবং তিনটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচন কার্যত তাদের ব্যর্থতার দলিলে
পরিণত হয়েছে সেখানে আসন্ন নির্বাচন এবং নির্বাচন ব্যবস্থার ব্যাপারে
ভোটারদের আস্থা ফিরিয়ে আনার চেষ্টার বদলে এই নতুন বিতর্ক দৃষ্টি অন্যদিকে
ফেরানোর চেষ্টা ছাড়া আর কোনোভাবে বিবেচনা করার কারণ দেখি না। নির্বাচনের
আগে আর গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন হবে না বলার পরও এখন এই নিয়ে
তড়িঘড়ি উদ্যোগ নিশ্চয় প্রশ্ন তৈরি করে। যেখানে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এবং
অংশীজন এর বিরোধিতা করেছে সেখানে এই প্রশ্ন এখন উত্থাপিত হচ্ছে কেন? ইভিএম
প্রযুক্তি একটি বিতর্কিত বিষয় এবং বিভিন্ন দেশে তা যে পরিত্যাজ্য হয়েছে
সেটা ইন্টারনেটে খোঁজাখুঁজি করলেই পাওয়া যায়, কমিশন চাইলেই যারা বাতিল
করেছেন সেই সব দেশের কাছে তথ্য চাইতে পারতেন। এমনকি বাংলাদেশের প্রশাসনিক
ঐতিহ্য অনুযায়ী কর্মকর্তারা ঐসব দেশে ‘শিক্ষা সফরে’ও যেতে পারতেন। কিন্তু
তার বদলে তারা এই নিয়ে বিতর্কের সূচনা করেছেন। বৃহস্পতিবারের সভার পরে
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা বলেছেন, আগামী ডিসেম্বরে
অনুষ্ঠেয় একাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত এখনো নেননি তারা।
নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়নি, কিন্তু ‘গত জুলাই থেকে ইভিএম
আমদানির প্রক্রিয়া শুরু হয়। এজন্য ঋণপত্র খুলতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ
অনুমোদন নিয়েছে ট্রাস্ট ব্যাংক। চীন, হংকংসহ আরো কয়েকটি দেশ থেকে ইভিএম ও
আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি এনে বিএমটিএফ তা নির্বাচন কমিশনকে সরবরাহ করবে বলে
নথিপত্রে উল্লেখ রয়েছে। ইতিমধ্যে ৭৯৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকার ঋণপত্র খোলা হয়েছে।
যন্ত্রপাতি আমদানিতে মোট ব্যয় হবে ২ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা (প্রথম আলো ওয়েব সাইট, ৩০শে আগস্ট ২০১৮, ১৮:৫৪)। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ভাষ্য অনুযায়ী তারা কেবল ‘প্রস্তুতি নিচ্ছেন’; কিন্তু যদি ব্যবহারই না হবে তবে এই অর্থনাশের দায়িত্ব কে নেবে? কিন্তু যে দেশে হাজার হাজার কোটি টাকা নিমিষে লোপাট হচ্ছে নিয়মিতভাবে সেখানে হয়তো ২ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা ‘কিছুই না’। কিন্তু আসল প্রশ্ন হচ্ছে, এখন এই প্রশ্ন কেন? সুষ্ঠু, অবাধ, গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পথে যখন পাহাড়-সমান সব বাধা উপস্থিত, নির্বাচন কমিশনের গ্রহণযোগ্যতা যেখানে প্রায় নেই-ই সেখানে ইভিএমের আলোচনা হচ্ছে আসল বিষয় নিয়ে আলোচনা না করা। যারা মনে করছেন বা বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে প্রযুক্তি হচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচনের গ্যারান্টি, ফলে ইভিএমের ব্যবস্থা করলেই সবাই সোৎসাহে রাজি হবেন তারা নিশ্চয় জানেন যে সমস্যা রাজনৈতিক তা প্রযুক্তির চমকে সমাধান হয় না। ইভিএম-বিষয়ক আপত্তিকে যারা আধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণ করা না করার বিষয় হিসেবে দেখেছেন, প্রগতির বিষয় বলে ভাবছেন তারা নিশ্চয় অন্য দেশের অভিজ্ঞতাগুলোর বিষয়ে অনুসন্ধান করবেন।
(লেখাটি ফেসবুক থেকে নেয়া। লেখক যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক)
যন্ত্রপাতি আমদানিতে মোট ব্যয় হবে ২ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা (প্রথম আলো ওয়েব সাইট, ৩০শে আগস্ট ২০১৮, ১৮:৫৪)। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ভাষ্য অনুযায়ী তারা কেবল ‘প্রস্তুতি নিচ্ছেন’; কিন্তু যদি ব্যবহারই না হবে তবে এই অর্থনাশের দায়িত্ব কে নেবে? কিন্তু যে দেশে হাজার হাজার কোটি টাকা নিমিষে লোপাট হচ্ছে নিয়মিতভাবে সেখানে হয়তো ২ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা ‘কিছুই না’। কিন্তু আসল প্রশ্ন হচ্ছে, এখন এই প্রশ্ন কেন? সুষ্ঠু, অবাধ, গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পথে যখন পাহাড়-সমান সব বাধা উপস্থিত, নির্বাচন কমিশনের গ্রহণযোগ্যতা যেখানে প্রায় নেই-ই সেখানে ইভিএমের আলোচনা হচ্ছে আসল বিষয় নিয়ে আলোচনা না করা। যারা মনে করছেন বা বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে প্রযুক্তি হচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচনের গ্যারান্টি, ফলে ইভিএমের ব্যবস্থা করলেই সবাই সোৎসাহে রাজি হবেন তারা নিশ্চয় জানেন যে সমস্যা রাজনৈতিক তা প্রযুক্তির চমকে সমাধান হয় না। ইভিএম-বিষয়ক আপত্তিকে যারা আধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণ করা না করার বিষয় হিসেবে দেখেছেন, প্রগতির বিষয় বলে ভাবছেন তারা নিশ্চয় অন্য দেশের অভিজ্ঞতাগুলোর বিষয়ে অনুসন্ধান করবেন।
(লেখাটি ফেসবুক থেকে নেয়া। লেখক যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক)
No comments