হুদা কমিশনের গন্তব্য কোথায়? by সাজেদুল হক
বিশ্বাস
বাবু। মৃত এক চরিত্র। অন্তত বাংলাদেশের রাজনীতিতে। কখনো অস্তিত্ব ছিল
কি-না তা নিয়েও সংশয় আছে। রাজনীতিবিদদের অবিশ্বাসের পটভূমিতেই শেরেবাংলা
নগরের অপারেশন থিয়েটারে জন্ম নেয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা। মৃত্যুও
সেখানেই। যদিও এর সঙ্গে যুক্ত আছে নানা ইতিহাস। আরেকটি নির্বাচন কড়া নাড়ছে।
কাউন্ট ডাউন শুরু হয়ে গেছে। সময় ১২০ দিন। কিন্তু ভোটের আওয়াজ ক্ষীণ।
রাজনৈতিক দলগুলোর অফিসে ভিড় নেই। ক্ষমতাসীন দলের কথা আলাদা। ষড়যন্ত্র
তত্ত্ব অবশ্য উচ্চারিত হচ্ছে প্রতিদিনই। জোট-মহাজোটের রাজনীতিতেও কিছুটা
চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে।
অর্ধ শতাব্দী ধরে একই চিত্র। নির্বাচন মানেই এদেশে হানাহানি, রক্তপাত, কারচুপি, অবিশ্বাস। বিশ্বাসযোগ্য আর শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যবস্থা খোঁজা এখনো শেষ হয়নি। এই অবস্থায় রেফারিদের শক্ত আর নিরপেক্ষ ভূমিকা সব সময়ই আলোচিত হয়। কিন্তু রেফারির ভূমিকায় থাকা নির্বাচন কমিশন এখন উল্টো তৈরি করছে সংশয়। কী তাদের উদ্দেশ্য সে নিয়েও দেখা দিয়েছে বিতর্ক। তাদের গন্তব্যই বা কোথায় তা নিয়ে তৈরি হয়েছে কৌতূহল। বিতর্ক তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা। ক’দিন আগেই তার একটি বক্তব্য বিপুল বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল। সে সময় তিনি বলেছিলেন, বড় বড় নির্বাচনে অনিয়ম হবে না এমন নিশ্চয়তা দেয়া যায় না। অন্য চার নির্বাচন কমিশনার প্রকাশ্যেই তার বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছিলেন। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছিলেন, সিইসির এই ধরনের বক্তব্য যারা আগামী জাতীয় নির্বাচনে অনিয়ম করতে চায় তাদের উস্কে দেবে।
সমালোচনার মুখেও কেএম নুরুল হুদা তার অবস্থানে অনড় থাকেন। আরেকটি বিষয়ে অবশ্য তিনি অনড় থাকতে পারেননি। শুরুর দিক থেকেই তিনি বলে আসছিলেন, সব রাজনৈতিক দল একমত হলেই কেবল জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। সব রাজনৈতিক দল যে একমত হয়নি সেটা সবারই জানা। বিএনপিসহ বেশিসংখ্যক রাজনৈতিক দল অত্যন্ত জোরালো ভাষায় ইভিএমের বিরোধিতা করে আসছে। তারা বলছেন, এ যন্ত্রে কারচুপি সম্ভব। ষড়যন্ত্রের কথাও বলছেন তারা। আওয়ামী লীগসহ কয়েকটি দল এর আগে ইভিএমের পক্ষে মত দিয়েছিল। কিন্তু এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জোরালো কোনো দাবি কোনো দিনই উপস্থাপিত হয়নি। চলতি সপ্তাহে আরেকটি সংবাদও পর্যবেক্ষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ভারতের বিরোধীদলগুলো এক সুরে ইভিএমের বিরোধিতা করেছে। বিরোধী দলগুলো বলছে, এতে কারচুপির সুযোগ রয়েছে। তারা ব্যালটে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়েছেন।
এই যখন অবস্থা তখন অনেকটা আকস্মিকভাবেই কেএম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের জন্য আইন সংশোধনের প্রস্তাব করেছে। যদিও নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার এ সিদ্ধান্তের জোরালো প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি নির্বাচন কমিশনের সভা থেকেও ওয়াক আউট করেছেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন করেছে নির্বাচন কমিশন। এর সমর্থনে সিইসি যা বলেছেন তার বেশিরভাগই গোঁজামিল। ইসি সচিব এর আগে একশ’ আসনে ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন। সিইসি বলছেন, আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। অথচ ইভিএম কেনার প্রক্রিয়া এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে।
ইভিএম নিয়ে ইসির সিদ্ধান্তকে সরকারি দল যথারীতি স্বাগতই জানিয়েছে। সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচনে হেরে গিয়ে অনিয়ম ও কেন্দ্র দখলের অভিযোগ তুলতে পারবে না বলেই ইভিএম চাচ্ছে না বিএনপি। কেননা এতে অভিযোগ তোলার কোনো সুযোগ নেই। সরকারি দলের আরেক নেতা আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, আওয়ামী লীগ সব সময় জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছে, মেশিনের ওপর ভর করে নয়।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এর আগে বলেছিলেন, জনগণের ওপর আস্থা হারিয়ে আওয়ামী লীগ মেশিনের ওপর ভর করেছে। আর দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ গতকাল বলেছেন, যে দেশে ব্যাংকের টাকা হ্যাকিং করা যায় সে দেশে নির্বাচনে ভোট গ্রহণে মেশিন ব্যবহার করা নিয়ে কোনোভাবেই আস্থা নেই জনগণের। এই মেশিন কারা নিয়ন্ত্রণ করবে। এই নির্বাচন কমিশন। যাদের উপর আমাদের আস্থা নেই। এ জন্য নির্বাচনে ইভিএম মেশিন ব্যবহারের এই সিদ্ধান্ত আমরা প্রত্যাখ্যান করি। ব্যালটে ভোট হলে তাতে সমস্যা দেখা দিলে পুনরায় গণনা করা যাবে। কিন্তু ইভিএম-এ সমস্যা দেখা দিলে পুনরায় গণনার কোনো সুযোগ নেই। হ্যাকিং হলেও বোঝার উপায় নেই।
রাজনীতির ভবিষ্যৎ এমনিতেই অনিশ্চিত। নানা জটিলতায় অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে এমন নিশ্চয়তাও নেই। এই পরিস্থিতিতে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশন কেন নতুন সংকট তৈরি করলো তা নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। কেউ কেউ বলছেন, রাজনৈতিক সংকটের মূল ইস্যু আড়াল করার জন্যই নির্বাচন কমিশন এই নতুন উদ্যোগ নিয়েছে। জনগণের দৃষ্টি অন্যত্র সরিয়ে নিতে চায় তারা। এক্ষেত্রে অবশ্য হুদা কমিশন কিছুটা সফলতারও নজির রেখেছে। দেশে দেশে পরিত্যক্ত ইভিএম মেশিন নিয়ে দেশের রাজনীতিতে এরই মধ্যে তৈরি হয়েছে বিষাক্ত বাহাস। বর্তমান ইসি দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়- এমন কথাও বলছেন অনেকে। গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন এক টকশোতে বলেছেন, সিইসি নিজেই তো বলেছেন, তার দ্বারা সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
বাংলাদেশের ইতিহাসে বরাবরই প্রধান নির্বাচন কমিশনাররা আলোচিত চরিত্র। তাদের কেউ কেউ কলঙ্কজনক নির্বাচনের রেকর্ডও গড়েছেন। কেউ কেউ হয়েছেন প্রশংসিত। আবার এমএ আজিজ তো নির্বাচন আয়োজনেরই সুযোগ পাননি। আগেই চলে যেতে হয়েছে। সংবাদমাধ্যম অবশ্য সেক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা রেখেছিল। বলা নিষ্প্রোয়জন- মিডিয়ার সেই যুগ আর নেই। তবে কেএম নুরুল হুদা কমিশনের গন্তব্য পরিষ্কার হয়ে যাবে সহসাই।
অর্ধ শতাব্দী ধরে একই চিত্র। নির্বাচন মানেই এদেশে হানাহানি, রক্তপাত, কারচুপি, অবিশ্বাস। বিশ্বাসযোগ্য আর শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যবস্থা খোঁজা এখনো শেষ হয়নি। এই অবস্থায় রেফারিদের শক্ত আর নিরপেক্ষ ভূমিকা সব সময়ই আলোচিত হয়। কিন্তু রেফারির ভূমিকায় থাকা নির্বাচন কমিশন এখন উল্টো তৈরি করছে সংশয়। কী তাদের উদ্দেশ্য সে নিয়েও দেখা দিয়েছে বিতর্ক। তাদের গন্তব্যই বা কোথায় তা নিয়ে তৈরি হয়েছে কৌতূহল। বিতর্ক তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা। ক’দিন আগেই তার একটি বক্তব্য বিপুল বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল। সে সময় তিনি বলেছিলেন, বড় বড় নির্বাচনে অনিয়ম হবে না এমন নিশ্চয়তা দেয়া যায় না। অন্য চার নির্বাচন কমিশনার প্রকাশ্যেই তার বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছিলেন। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছিলেন, সিইসির এই ধরনের বক্তব্য যারা আগামী জাতীয় নির্বাচনে অনিয়ম করতে চায় তাদের উস্কে দেবে।
সমালোচনার মুখেও কেএম নুরুল হুদা তার অবস্থানে অনড় থাকেন। আরেকটি বিষয়ে অবশ্য তিনি অনড় থাকতে পারেননি। শুরুর দিক থেকেই তিনি বলে আসছিলেন, সব রাজনৈতিক দল একমত হলেই কেবল জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। সব রাজনৈতিক দল যে একমত হয়নি সেটা সবারই জানা। বিএনপিসহ বেশিসংখ্যক রাজনৈতিক দল অত্যন্ত জোরালো ভাষায় ইভিএমের বিরোধিতা করে আসছে। তারা বলছেন, এ যন্ত্রে কারচুপি সম্ভব। ষড়যন্ত্রের কথাও বলছেন তারা। আওয়ামী লীগসহ কয়েকটি দল এর আগে ইভিএমের পক্ষে মত দিয়েছিল। কিন্তু এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জোরালো কোনো দাবি কোনো দিনই উপস্থাপিত হয়নি। চলতি সপ্তাহে আরেকটি সংবাদও পর্যবেক্ষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ভারতের বিরোধীদলগুলো এক সুরে ইভিএমের বিরোধিতা করেছে। বিরোধী দলগুলো বলছে, এতে কারচুপির সুযোগ রয়েছে। তারা ব্যালটে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়েছেন।
এই যখন অবস্থা তখন অনেকটা আকস্মিকভাবেই কেএম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের জন্য আইন সংশোধনের প্রস্তাব করেছে। যদিও নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার এ সিদ্ধান্তের জোরালো প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি নির্বাচন কমিশনের সভা থেকেও ওয়াক আউট করেছেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন করেছে নির্বাচন কমিশন। এর সমর্থনে সিইসি যা বলেছেন তার বেশিরভাগই গোঁজামিল। ইসি সচিব এর আগে একশ’ আসনে ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন। সিইসি বলছেন, আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। অথচ ইভিএম কেনার প্রক্রিয়া এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে।
ইভিএম নিয়ে ইসির সিদ্ধান্তকে সরকারি দল যথারীতি স্বাগতই জানিয়েছে। সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচনে হেরে গিয়ে অনিয়ম ও কেন্দ্র দখলের অভিযোগ তুলতে পারবে না বলেই ইভিএম চাচ্ছে না বিএনপি। কেননা এতে অভিযোগ তোলার কোনো সুযোগ নেই। সরকারি দলের আরেক নেতা আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, আওয়ামী লীগ সব সময় জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছে, মেশিনের ওপর ভর করে নয়।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এর আগে বলেছিলেন, জনগণের ওপর আস্থা হারিয়ে আওয়ামী লীগ মেশিনের ওপর ভর করেছে। আর দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ গতকাল বলেছেন, যে দেশে ব্যাংকের টাকা হ্যাকিং করা যায় সে দেশে নির্বাচনে ভোট গ্রহণে মেশিন ব্যবহার করা নিয়ে কোনোভাবেই আস্থা নেই জনগণের। এই মেশিন কারা নিয়ন্ত্রণ করবে। এই নির্বাচন কমিশন। যাদের উপর আমাদের আস্থা নেই। এ জন্য নির্বাচনে ইভিএম মেশিন ব্যবহারের এই সিদ্ধান্ত আমরা প্রত্যাখ্যান করি। ব্যালটে ভোট হলে তাতে সমস্যা দেখা দিলে পুনরায় গণনা করা যাবে। কিন্তু ইভিএম-এ সমস্যা দেখা দিলে পুনরায় গণনার কোনো সুযোগ নেই। হ্যাকিং হলেও বোঝার উপায় নেই।
রাজনীতির ভবিষ্যৎ এমনিতেই অনিশ্চিত। নানা জটিলতায় অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে এমন নিশ্চয়তাও নেই। এই পরিস্থিতিতে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশন কেন নতুন সংকট তৈরি করলো তা নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। কেউ কেউ বলছেন, রাজনৈতিক সংকটের মূল ইস্যু আড়াল করার জন্যই নির্বাচন কমিশন এই নতুন উদ্যোগ নিয়েছে। জনগণের দৃষ্টি অন্যত্র সরিয়ে নিতে চায় তারা। এক্ষেত্রে অবশ্য হুদা কমিশন কিছুটা সফলতারও নজির রেখেছে। দেশে দেশে পরিত্যক্ত ইভিএম মেশিন নিয়ে দেশের রাজনীতিতে এরই মধ্যে তৈরি হয়েছে বিষাক্ত বাহাস। বর্তমান ইসি দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়- এমন কথাও বলছেন অনেকে। গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন এক টকশোতে বলেছেন, সিইসি নিজেই তো বলেছেন, তার দ্বারা সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
বাংলাদেশের ইতিহাসে বরাবরই প্রধান নির্বাচন কমিশনাররা আলোচিত চরিত্র। তাদের কেউ কেউ কলঙ্কজনক নির্বাচনের রেকর্ডও গড়েছেন। কেউ কেউ হয়েছেন প্রশংসিত। আবার এমএ আজিজ তো নির্বাচন আয়োজনেরই সুযোগ পাননি। আগেই চলে যেতে হয়েছে। সংবাদমাধ্যম অবশ্য সেক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা রেখেছিল। বলা নিষ্প্রোয়জন- মিডিয়ার সেই যুগ আর নেই। তবে কেএম নুরুল হুদা কমিশনের গন্তব্য পরিষ্কার হয়ে যাবে সহসাই।
No comments