প্রিন্সেস যেভাবে অন্ধকারে by রুদ্র মিজান
ছিলেন
মা-বাবার আদরের মেয়ে। ‘আমার প্রিন্সেস’ বলেই সম্বোধন করতেন বাবা। কমতি ছিল
না কোনো কিছুর। চাওয়ার আগেই জুটতো অনেক কিছুই। পথ হারিয়ে সেই রাজকন্যা এখন
অন্য জগতের বাসিন্দা। এখন মা-বাবা থেকে আলাদা। স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক নেই।
একমাত্র সন্তান, তার সঙ্গে থাকতে পারছেন না তিনি। এ যেন স্বেচ্ছায় নিজেকে
নরকে সমর্পণ। তমা নামের এই তরুণী তার নিজের জীবনের কথা বলতে গিয়ে কান্নায়
ভেঙে পড়েন বারবার। ছিল অনুশোচনাও। মরণনেশায় আসক্ত হয়ে সুখী-সুন্দর জীবন
থেকে ছিটকে পড়েছেন অন্ধকারে। তমার মতোই সানজিদা, রুপালীসহ অনেকে জানান
তাদের জীবনের করুণ গল্প। তারা সবাই মাদকাসক্ত। চিকিৎসা নিচ্ছেন রাজধানীর
বিভিন্ন মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে।
তাদের মধ্যে একজন তমা। পুরান ঢাকার মেয়ে। ঢাকার বুকে নিজেদের কয়েকটা বাড়ি। বাবা ব্যবসায়ী। ইসলামপুরে দোকান আছে তাদের। মা-বাবার একমাত্র সন্তান তমা। তমা জানান, এসএসসি পরীক্ষার আগেই রিমন নামে দূর সম্পর্কের এক আত্মীয় যুবকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে তার। ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন বাবা। মা ব্যস্ত থাকতেন সংসারের কাজ নিয়ে। লেখাপড়ার কারণে তমার ছিলো স্বাধীনতা। যখন-তখন বাইরে যাওয়ার সুযোগ ছিলো তার। বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজে ভর্তি হওয়ার পর এই সুযোগ আরো বেড়ে যায়। বাসা থেকে বের হতেই গাড়ি নিয়ে হাজির রিমন। প্রায়ই ক্লাস ফাঁকি দিয়ে চলে যেতেন বিভিন্নস্থানে। রেস্টুরেন্টে, শপিংমলে। কখনো কখনো ঢাকার আশপাশে কোথাও। রিমন আত্মীয় হওয়ার সুবাধে সন্ধ্যার পরপরই তার সঙ্গে বের হতে পারতেন। মা-বাবার কোনো বাধা ছিলো না। লং ড্রাইভে যেতেন তারা। গাড়ি ড্রাইভ করতেন রিমন নিজে। পাশে বসে থাকতেন তমা। তিনশ’ ফিট, কখনো মাওয়া, কখনো গাজীপুর, কখনো সাভার..। এভাবে নানাস্থানে ঘুরে বেড়াতেন। গাড়িতে বসে বিয়ার পান করতেন রিমন। তমাকেও পান করতে দিতেন। পানের কাহিনী এখানেই শেষ না। বিয়ার থেকে আরো বিপজ্জনক দিকে এগুতে থাকেন তারা। গাড়িতে বসেই ফেনসিডিল সেবন করতেন রিমন। প্রথম দিন রিমনের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে বমি করেছিলেন তমা। তারপর দুজনেই ফেনসিডিল পান করেন সমান তালে। বাড়তে থাকে আসক্তি। ফেনসিডিল ছাড়া চলে না তাদের।
এরমধ্যেই তাদের প্রেমকাহিনী ছড়িয়ে যায় সর্বত্র। দুই পরিবারের আয়োজনে বিয়ে হয় তাদের। বিয়ের পর আরো বেপরোয়া এই মাদকাসক্ত দম্পতি। বাসায় বসেই ফেনসিডিল পান করতেন। তারপর ইয়াবা। এরমধ্যেই অন্তঃসত্ত্বা হন তমা। চিকিৎসকের কঠোর নির্দেশ মাদক থেকে দূরে থাকতে হবে। নতুবা সন্তান বিকলাঙ্গ হতে পারে। সন্তানের মায়ায় মাদক থেকে দূরে থাকতে আপ্রাণ চেষ্টা করেন। কিন্তু সহ্য করতে পারেন না। যৌথ পরিবারের এই বাসায় রিমনের ছোট ভাই ও তার স্ত্রীও মাদক সেবন করেন। শাশুড়ি সচেতনভাবে মাদক সেবনে বাধা দেন। মাদক সেবনের পরিমাণ কমালেও একদম ছাড়তে পারেননি। এভাবেই জন্ম হয় সন্তানের। তমা বলেন, ‘সন্তান জন্মদানের পর মনে হলো তাকে জন্ম দিয়ে ভুল করেছি। মা হিসেবে কোনো দায়িত্বই পালন করতে পারছিলাম না। ততদিনে মাদক আমাকে তিলে তিলে ধ্বংস করে দিয়েছে।’ অন্যদিকে স্বামী রিমনের ব্যবসা লাটে উঠে। দেখা দেয় পারিবারিক অশান্তি। অবহেলা-অযত্নের শিকার তমা। কথায় কথায় তমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে রিমন।
এ অবস্থায় ডিভোর্স হয় দু’জনের। তারপর আরো কঠিন সময়। বাবার বাড়িতে মাদক ছাড়া কিছুই বুঝেন না তমা। তমার সন্তান কখনো দাদীর কাছে, কখনো নানীর কাছে। মায়ের ভালোবাসা জুটে না শিশুটির। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়েই তমাকে ভর্তি করা হয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে। ঢাকা আহছানিয়া মিশন মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে কথা হয় তমার সঙ্গে। তমা বলেন, কোনো কিছুর কমতি ছিলো না। যাই চাইতাম তাই পেতাম। বাবা-মায়ের আদরের মেয়ে ছিলাম। আজ আমার কিছুই নেই। সন্তান জন্ম দিয়েও মা হতে পারিনি বলেই কাঁদতে থাকেন তিনি।
একইভাবে মরণ নেশা ইয়াবায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন মিরপুরের তরুণী সানজিদা। মা-বাবার তিন সন্তানের মধ্যে একমাত্র মেয়ে। মা-বাবা দুজনেই ব্যস্ত। রাজধানীর মিরপুরের একটি স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়তো মেয়েটি। আজ থেকে প্রায় সাত বছর আগের ঘটনা। ওই বয়সে একটি তুচ্ছ ঘটনায় সানজিদা হয়ে যায় মাদকসেবী। এক দুপুরে স্কুলে থাকাবস্থায় কৌতূহলী হয়ে সিগারেট কিনে তাতে টান দিয়েছিলো বন্ধুদের সঙ্গে। সেই দৃশ্যটি নজরে পড়ে শিক্ষকদের। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় এক প্যাকেট সিগারেট। শিক্ষকরা ধারণা করেন, মেয়েটি হয়তো মাদকাসক্ত। বিষয়টি জানানো হয় তার মা-বাবাকে। চাকরিজীবী মা ও ব্যবসায়ী বাবা তাদের মেয়েকে সুস্থ দেখতে চান। ব্যস কথা বলেন, একটি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে। রাজধানীর তেজগাঁও থানা এলাকার ওই মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করা হয় তাকে। এখানে ভর্তির পরই মূলত মাদকসেবীতে পরিণত হন সানিজদা। এ বিষয়ে তিনি মানবজমিনকে জানান, মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে সিগারেট দেয়া হতো। মূলত মাদকে আসক্তি কমানোর জন্য এটা করা হতো। এমনকি যারা দিনে একাধিকবার ইয়াবা সেবন করেন তাদের কয়েকদিন পরপর ইয়াবাও দেয়া হতো। ক্রমান্বয়ে এটি কমানো হতো। অন্য মাদকসেবীদের কাছ থেকে এখানেই শিখে নেন ইয়াবা সেবন। ইয়াবা আসক্ত মনে করেই সানজিদাকেও কিছুদিন পরপর ইয়াবা দেয়া হতো। নিরাময় কেন্দ্র থেকেই আসক্ত হন সানজিদা। তারপর এখান থেকে বের হয়ে টিএসসিতে আড্ডা দিতে গিয়ে পরিচয় হয় বড় ভাইদের সঙ্গে। নাজিমউদ্দিন রোডের একটি বাসায় তাদের আড্ডায় যান সানজিদা। সেখানেও ইয়াবা। মিশে যান ইয়াবার আড্ডায়। সানজিদা এখনো চিকিৎসা নিচ্ছেন। মরণনেশা থেকে এখন মুক্তি চান তিনি।
রাজশাহীর মেয়ে রুপালী। থাকতেন ঢাকার শ্যামলীতে। নায়িকা হতে চেয়েছিলেন। মঞ্চে কাজও করেছেন। কিন্তু ক্যামেরার সামনে, বড় পর্দায় কাজ করা হয়নি। চেষ্টা তদবির করছিলেন। কিন্তু পরিচালকরা জানান, তিনি সুন্দরী তবে মোটা। তাকে স্লিম হতে হবে। স্লিম হওয়ার সহজ উপায় খুঁজেন। এক ফ্যাশন মডেলের কন্যার কাছ থেকে উপায় পেয়ে যান। ইয়াবা। ইয়াবা সেবন করলে দ্রুত স্লিম হওয়া সম্ভব বলে জানান ওই মডেল। তারপরই শুরু হয় ইয়াবা সেবন। ফোনে অর্ডার করলেই টাকার বিনিময়ে বাসায় পৌঁছে দিতো ইয়াবা। তিন বছর আগের ঘটনা। রুপালী স্লিম হয়েছেন ঠিকই। কিন্তু রুপালী আর রুপালী নেই। চাপা ভেঙে গেছে। চেহারায় লাবণ্যতা নেই। শক্তি নেই। শরীরে বাসা বেঁধেছে রোগ। খবর পেয়ে মা-বাবা ছুটে এসেছেন ঢাকায়। রুপালীর স্থান হয়েছে এখন মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে। এরকম অনেক তমা, সানজিদা, রুপালীরা আসক্ত হচ্ছে মরণ নেশায়। হারিয়ে যাচ্ছে অন্ধকারে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা প্রায় ৫৬ লাখ। তাদের মধ্যে ১৩ লাখই নারী। তাদের একটা বড় অংশই শিক্ষার্থী। বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। এ বিষয়ে ডা. মোহিত কামাল বলেন, নারী মাদকসেবীর সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে তারা সিগারেট থেকে শুরু করে ইয়াবায় আসক্ত হচ্ছে। কেউ কেউ গাঁজা নিচ্ছে। তারা অনেকেই ভুল ধারণা থেকে, স্লিম হওয়ার জন্য আসক্ত হচ্ছে। কেউ কেউ বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে, কৌতূহলে মাদকে আসক্ত হচ্ছে। তারা বুঝতে পারে না এই রাসায়নিক পদার্থ তাদের জীবনকে ধ্বংস করে দেবে। এখন যারা মাদক সেবন করছে, এক সময়ে মাদক তাদের সেবন করবে। এজন্য অভিভাবককে সচেতন হতে হবে। সন্তানদের সময় দিতে হবে। কোথায় যাচ্ছে, কার সঙ্গে মিশছে, কি করছে এসব বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। সবাই সচেতনভাবে এগিয়ে এলে মাদক প্রতিরোধ সম্ভব বলে জানান তিনি।
তাদের মধ্যে একজন তমা। পুরান ঢাকার মেয়ে। ঢাকার বুকে নিজেদের কয়েকটা বাড়ি। বাবা ব্যবসায়ী। ইসলামপুরে দোকান আছে তাদের। মা-বাবার একমাত্র সন্তান তমা। তমা জানান, এসএসসি পরীক্ষার আগেই রিমন নামে দূর সম্পর্কের এক আত্মীয় যুবকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে তার। ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন বাবা। মা ব্যস্ত থাকতেন সংসারের কাজ নিয়ে। লেখাপড়ার কারণে তমার ছিলো স্বাধীনতা। যখন-তখন বাইরে যাওয়ার সুযোগ ছিলো তার। বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজে ভর্তি হওয়ার পর এই সুযোগ আরো বেড়ে যায়। বাসা থেকে বের হতেই গাড়ি নিয়ে হাজির রিমন। প্রায়ই ক্লাস ফাঁকি দিয়ে চলে যেতেন বিভিন্নস্থানে। রেস্টুরেন্টে, শপিংমলে। কখনো কখনো ঢাকার আশপাশে কোথাও। রিমন আত্মীয় হওয়ার সুবাধে সন্ধ্যার পরপরই তার সঙ্গে বের হতে পারতেন। মা-বাবার কোনো বাধা ছিলো না। লং ড্রাইভে যেতেন তারা। গাড়ি ড্রাইভ করতেন রিমন নিজে। পাশে বসে থাকতেন তমা। তিনশ’ ফিট, কখনো মাওয়া, কখনো গাজীপুর, কখনো সাভার..। এভাবে নানাস্থানে ঘুরে বেড়াতেন। গাড়িতে বসে বিয়ার পান করতেন রিমন। তমাকেও পান করতে দিতেন। পানের কাহিনী এখানেই শেষ না। বিয়ার থেকে আরো বিপজ্জনক দিকে এগুতে থাকেন তারা। গাড়িতে বসেই ফেনসিডিল সেবন করতেন রিমন। প্রথম দিন রিমনের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে বমি করেছিলেন তমা। তারপর দুজনেই ফেনসিডিল পান করেন সমান তালে। বাড়তে থাকে আসক্তি। ফেনসিডিল ছাড়া চলে না তাদের।
এরমধ্যেই তাদের প্রেমকাহিনী ছড়িয়ে যায় সর্বত্র। দুই পরিবারের আয়োজনে বিয়ে হয় তাদের। বিয়ের পর আরো বেপরোয়া এই মাদকাসক্ত দম্পতি। বাসায় বসেই ফেনসিডিল পান করতেন। তারপর ইয়াবা। এরমধ্যেই অন্তঃসত্ত্বা হন তমা। চিকিৎসকের কঠোর নির্দেশ মাদক থেকে দূরে থাকতে হবে। নতুবা সন্তান বিকলাঙ্গ হতে পারে। সন্তানের মায়ায় মাদক থেকে দূরে থাকতে আপ্রাণ চেষ্টা করেন। কিন্তু সহ্য করতে পারেন না। যৌথ পরিবারের এই বাসায় রিমনের ছোট ভাই ও তার স্ত্রীও মাদক সেবন করেন। শাশুড়ি সচেতনভাবে মাদক সেবনে বাধা দেন। মাদক সেবনের পরিমাণ কমালেও একদম ছাড়তে পারেননি। এভাবেই জন্ম হয় সন্তানের। তমা বলেন, ‘সন্তান জন্মদানের পর মনে হলো তাকে জন্ম দিয়ে ভুল করেছি। মা হিসেবে কোনো দায়িত্বই পালন করতে পারছিলাম না। ততদিনে মাদক আমাকে তিলে তিলে ধ্বংস করে দিয়েছে।’ অন্যদিকে স্বামী রিমনের ব্যবসা লাটে উঠে। দেখা দেয় পারিবারিক অশান্তি। অবহেলা-অযত্নের শিকার তমা। কথায় কথায় তমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে রিমন।
এ অবস্থায় ডিভোর্স হয় দু’জনের। তারপর আরো কঠিন সময়। বাবার বাড়িতে মাদক ছাড়া কিছুই বুঝেন না তমা। তমার সন্তান কখনো দাদীর কাছে, কখনো নানীর কাছে। মায়ের ভালোবাসা জুটে না শিশুটির। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়েই তমাকে ভর্তি করা হয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে। ঢাকা আহছানিয়া মিশন মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে কথা হয় তমার সঙ্গে। তমা বলেন, কোনো কিছুর কমতি ছিলো না। যাই চাইতাম তাই পেতাম। বাবা-মায়ের আদরের মেয়ে ছিলাম। আজ আমার কিছুই নেই। সন্তান জন্ম দিয়েও মা হতে পারিনি বলেই কাঁদতে থাকেন তিনি।
একইভাবে মরণ নেশা ইয়াবায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন মিরপুরের তরুণী সানজিদা। মা-বাবার তিন সন্তানের মধ্যে একমাত্র মেয়ে। মা-বাবা দুজনেই ব্যস্ত। রাজধানীর মিরপুরের একটি স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়তো মেয়েটি। আজ থেকে প্রায় সাত বছর আগের ঘটনা। ওই বয়সে একটি তুচ্ছ ঘটনায় সানজিদা হয়ে যায় মাদকসেবী। এক দুপুরে স্কুলে থাকাবস্থায় কৌতূহলী হয়ে সিগারেট কিনে তাতে টান দিয়েছিলো বন্ধুদের সঙ্গে। সেই দৃশ্যটি নজরে পড়ে শিক্ষকদের। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় এক প্যাকেট সিগারেট। শিক্ষকরা ধারণা করেন, মেয়েটি হয়তো মাদকাসক্ত। বিষয়টি জানানো হয় তার মা-বাবাকে। চাকরিজীবী মা ও ব্যবসায়ী বাবা তাদের মেয়েকে সুস্থ দেখতে চান। ব্যস কথা বলেন, একটি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে। রাজধানীর তেজগাঁও থানা এলাকার ওই মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করা হয় তাকে। এখানে ভর্তির পরই মূলত মাদকসেবীতে পরিণত হন সানিজদা। এ বিষয়ে তিনি মানবজমিনকে জানান, মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে সিগারেট দেয়া হতো। মূলত মাদকে আসক্তি কমানোর জন্য এটা করা হতো। এমনকি যারা দিনে একাধিকবার ইয়াবা সেবন করেন তাদের কয়েকদিন পরপর ইয়াবাও দেয়া হতো। ক্রমান্বয়ে এটি কমানো হতো। অন্য মাদকসেবীদের কাছ থেকে এখানেই শিখে নেন ইয়াবা সেবন। ইয়াবা আসক্ত মনে করেই সানজিদাকেও কিছুদিন পরপর ইয়াবা দেয়া হতো। নিরাময় কেন্দ্র থেকেই আসক্ত হন সানজিদা। তারপর এখান থেকে বের হয়ে টিএসসিতে আড্ডা দিতে গিয়ে পরিচয় হয় বড় ভাইদের সঙ্গে। নাজিমউদ্দিন রোডের একটি বাসায় তাদের আড্ডায় যান সানজিদা। সেখানেও ইয়াবা। মিশে যান ইয়াবার আড্ডায়। সানজিদা এখনো চিকিৎসা নিচ্ছেন। মরণনেশা থেকে এখন মুক্তি চান তিনি।
রাজশাহীর মেয়ে রুপালী। থাকতেন ঢাকার শ্যামলীতে। নায়িকা হতে চেয়েছিলেন। মঞ্চে কাজও করেছেন। কিন্তু ক্যামেরার সামনে, বড় পর্দায় কাজ করা হয়নি। চেষ্টা তদবির করছিলেন। কিন্তু পরিচালকরা জানান, তিনি সুন্দরী তবে মোটা। তাকে স্লিম হতে হবে। স্লিম হওয়ার সহজ উপায় খুঁজেন। এক ফ্যাশন মডেলের কন্যার কাছ থেকে উপায় পেয়ে যান। ইয়াবা। ইয়াবা সেবন করলে দ্রুত স্লিম হওয়া সম্ভব বলে জানান ওই মডেল। তারপরই শুরু হয় ইয়াবা সেবন। ফোনে অর্ডার করলেই টাকার বিনিময়ে বাসায় পৌঁছে দিতো ইয়াবা। তিন বছর আগের ঘটনা। রুপালী স্লিম হয়েছেন ঠিকই। কিন্তু রুপালী আর রুপালী নেই। চাপা ভেঙে গেছে। চেহারায় লাবণ্যতা নেই। শক্তি নেই। শরীরে বাসা বেঁধেছে রোগ। খবর পেয়ে মা-বাবা ছুটে এসেছেন ঢাকায়। রুপালীর স্থান হয়েছে এখন মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে। এরকম অনেক তমা, সানজিদা, রুপালীরা আসক্ত হচ্ছে মরণ নেশায়। হারিয়ে যাচ্ছে অন্ধকারে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা প্রায় ৫৬ লাখ। তাদের মধ্যে ১৩ লাখই নারী। তাদের একটা বড় অংশই শিক্ষার্থী। বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। এ বিষয়ে ডা. মোহিত কামাল বলেন, নারী মাদকসেবীর সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে তারা সিগারেট থেকে শুরু করে ইয়াবায় আসক্ত হচ্ছে। কেউ কেউ গাঁজা নিচ্ছে। তারা অনেকেই ভুল ধারণা থেকে, স্লিম হওয়ার জন্য আসক্ত হচ্ছে। কেউ কেউ বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে, কৌতূহলে মাদকে আসক্ত হচ্ছে। তারা বুঝতে পারে না এই রাসায়নিক পদার্থ তাদের জীবনকে ধ্বংস করে দেবে। এখন যারা মাদক সেবন করছে, এক সময়ে মাদক তাদের সেবন করবে। এজন্য অভিভাবককে সচেতন হতে হবে। সন্তানদের সময় দিতে হবে। কোথায় যাচ্ছে, কার সঙ্গে মিশছে, কি করছে এসব বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। সবাই সচেতনভাবে এগিয়ে এলে মাদক প্রতিরোধ সম্ভব বলে জানান তিনি।
No comments