রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে ঐশ্বরিক কাজ করেছে বাংলাদেশ by মিজানুর রহমান
পাঁচদিন
ধরে জাতিসংঘের ৭৩তম অধিবেশন চলছে। হার্ট অব দি নিউ ইয়র্ক ম্যানহাটন এখন
সরগরম। পুরো এলাকা ঢেকে দেয়া হয়েছে নিরাপত্তার চাদরে । এমন অবস্থা পিন
পড়লেও তার আওয়াজ পাচ্ছেন সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যরা। বিশ্ব নেতারা আসতে
শুরু করেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পও আসছেন। কাল পৌঁছাচ্ছেন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ট্রাম্পের আগমন আগামী মঙ্গলবার থেকে শুরু হতে
যাওয়া উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা বা হাই লেভেল সেগমেন্টে বাড়তি মাত্রা যুক্ত
করছে- এমনটাই জানিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী প্রতিনিধি
নিকি হ্যালি। মার্কিন প্রেসিডেন্টের জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগদানের প্রস্তুতি ও
কর্মসূচির বিস্তারিত জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নিকি হ্যালি এ নিয়ে
উচ্ছাসও প্রকাশ করেন। তিনি বিশ্ব নেতৃবৃন্দের এ মিলনমেলাকে ‘স্পিড ডেটিং’
বলে আখ্যা দিয়েছেন।
মার্কিন দূত জানিয়েছেন, এবারে যুক্তরাষ্ট্রের তরফে এমন সব বিষয় সাধারণ পরিষদের আলোচনার টেবিলে আনা হবে, যা এ ধরণীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিকি হ্যালির সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত মানবজমিনের ওই রিপোর্টার জানতে চেয়েছিলেন- জাতিসংঘ অধিবেশনে আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকার যে প্রায়োরিটি লিস্ট বা অগ্রাধিকার তালিকা করেছে তার মধ্যে এই মুহূর্তে বাংলাদেশ তথা বিশ্ব সমপ্রদায়ের গভীর উদ্বেগের বিষয় রোহিঙ্গা ইস্যুুতে আর স্পষ্ট করে বললে বিদ্যমান এ সংকটের টেকসই সমাধান প্রশ্নে সুনির্দিষ্ট আলোচনার কোনো চিন্তা বা পরিকল্পনা আছে কি-না? জবাবে মার্কিন দূত মিজ হ্যালি কেবল হ্যাঁ বোধক জবাবই দেননি, এ নিয়ে আলোচনা যে কতটা জরুরি সেটি সবিস্তারে তুলে ধরেন। বরাবরের মতো রোহিঙ্গাদের ওপর বর্মীদের বর্বর আক্রমণের তীব্র নিন্দা এবং এ নিয়ে বাংলাদেশের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি। বলেন, নির্যাতনের মুখে প্রাণে বাঁচতে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় সীমান্ত এবং হৃদয় খুলে দিয়ে বাংলাদেশ ঐশ্বরিক কাজ করেছে।
নিকি হ্যালি রোহিঙ্গা তথা মানবতার প্রতি বাংলাদেশ সরকার এবং গোটা দেশবাসীর মহানুভবতাকে গর্ডস ওয়ার্ক বা ‘স্রষ্টার কাজ’ বলে মন্তব্য করেন। সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন দূত অং সান সুচির নাম উল্লেখ করেই মিয়ানমারের সরকারের কর্মকাণ্ডের কড়া সমালোচনা করেন। বলেন, এই মুহূর্তে (চলমান জাতিসংঘ অধিবেশনে) হাই টপিক বা অগ্রাধিকারে থাকা বিষয় হচ্ছে- বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের কোন পথে বা কীভাবে নিরাপদে বার্মায় ফেরানো যাবে? সেটি খোঁজা। কিন্তু এ নিয়ে যে বার্মা সরকার কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছে না তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে তিনি তার নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। বলেন- এ নিয়ে বার্মা সরকার তেমন কিছুই করছে না।
রোহিঙ্গা সমপ্রদায়ের ওপর যে বর্বর অত্যাচার করা হয়েছে তার দায় এখনো নেয়নি বর্মী সেনাবাহিনী। আর অং সান সুচি, তিনি সেদিন বললেন, রয়টার্সের দুজন রিপোর্টারের কারাদণ্ড সেটিও নাকি সঠিক! বর্মী নেতৃত্বের দায়িত্বহীন ওই সব বক্তব্য এবং আচরণে খেদোক্তি করে মার্কিন দূত বলেন, এটাই প্রকৃত সমস্যা। গত বছর রোহিঙ্গা সংকট ভয়াবহ রূপ ধারণ করায় অর্থাৎ রোহিঙ্গা ঢলের সূচনা থেকে সংকটটির সমাধানে সোচ্চার জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক নিকি হ্যালি বর্মী নেতৃত্বের প্রতি খোঁচা মেরে বলেন, আমার মনে হয় এখানে কমিউনিকেশনেরও ঘাটতি রয়েছে।
কারণ তারা (বার্মা সরকার) কি বলে এটা কেউ বুঝে না। আর আমরা তথা বিশ্ববাসী যা বলি এতে তারা (বর্মীরা) কর্ণপাত করে না বা শুনে না। মার্কিন দূত বার্মা বা মিয়ানমারের বন্ধু যারা কূটনৈতিকভাবে বিশেষত জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ, হিউম্যান রাইটস কাউন্সিল এবং থার্ড কমিটির মতো গুরুত্বপূর্ণ ফোরামেও তাদের পাশে থেকে রক্ষার চেষ্টা চালায় তাদের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এ সংকটের সমাধানে আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের জন্য জরুরি হচ্ছে এক সুরে অভিন্ন ভাষায় কথা বলা। মার্কিন দূত বলেন, বৃটেনের আয়োজনে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে মন্ত্রী পর্যায়ের একটি বৈঠক হবে জাতিসংঘ অধিবেশনের সাইড লাইনে। আমি তাতে অংশ নেবো এবং সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান তুলে ধরবো।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে একটি রেজুলেশন আনা হবে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন। প্রধানমন্ত্রীর সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশগ্রহণ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই তথ্য জানান। এ অধিবেশন চলাকালীন প্রধানমন্ত্রী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও’র সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে জানান। রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে এবারের অধিবেশনে গতবারের মতো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন অর্জনে বাংলাদেশের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, রোহিঙ্গা বিষয়ে আমাদের সর্বাত্মক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে যা দৃশ্যমান। জাতিসংঘে আমরা সর্বোচ্চ রাজনৈতিক পর্যায়ে এ বিষয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের আরো জোর সমর্থন অর্জনের চেষ্টা করবো।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রী নিউ ইয়র্ক পৌঁছাবেন ২৩শে সেপ্টেম্বর দুপুরে। এদিন সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি কম্যুনিটি আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তিনি। পরের দিন ২৪শে সেপ্টেম্বর বিকালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে লেনসন ম্যান্ডেলা পিস সামিটে ভাষণ দেবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। এর আগে সকালে বিশ্ব মাদক সমস্যা বিষয়ে বৈশ্বিক আহ্বান সংক্রান্ত একটি উচ্চ পর্যায়ের সভায় যোগ দেবেন। ইভেন্টটির আয়োজক যুক্তরাষ্ট্র। অন্যান্য ২৯টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশ এর সহ-আয়োজক। উপস্থিত থাকবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও জাতিসংঘ মহাসচিব। একই দিনে শরণার্থী বিষয়ক বৈশ্বিক কম্প্যাক্ট ও শিক্ষা বিষয়ক দুটি উচ্চ পর্যায়ের হাই-লেভেল ইভেন্টে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী।
এ ছাড়া দুপুরে ইউএস চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত একটি রাউন্ড টেবিল আলোচনায় তিনি অংশগ্রহণ করবেন। প্রধানমন্ত্রী ২৫শে সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ক কার্যালয়ের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত সাইবার সিকিউরিটি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক একটি উচ্চ পর্যায়ের সভায় বক্তব্য রাখবেন। এতে জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, এস্তোনিয়া ও সিঙ্গাপুর কো-স্পন্সর করছে। জাতিসংঘ মহাসচিবের আয়োজনে অ্যাকশন ফর পিস কিপিং বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের সভায় অংশগ্রহণ করবেন। পিস কিপিং বিষয়ক এই ইভেন্টে প্রদেয় বক্তব্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের শান্তিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ক্রমাগত উন্নতির বিষয়গুলো তুলে ধরবেন।
এ ছাড়া তিনি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের চতুর্থ শিল্প বিপ্লব সম্পর্কিত একটি প্যানেলে যোগ দেবেন। জাতিসংঘ মহাসচিবের আমন্ত্রণে ২৬শে সেপ্টেম্বর জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের সভায় যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। ২৭শে সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী সাধারণ পরিষদের জেনারেল ডিবেট অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। প্রতিবারের মতো এবারও প্রধানমন্ত্রী বাংলায় ভাষণ দেবেন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে গতবারের উত্থাপিত পাঁচ দফা সুপারিশমালার ধারাবাহিকতায় এবারেও প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য রাখবেন। এর আগে লিথুনিয়ার প্রেসিডেন্ট আয়োজিত ‘নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন’ বিষয়ক সাইড ইভেন্টে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। শিক্ষা ও নারী অধিকার বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের ইভেন্টগুলোতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নারীর শিক্ষা ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অর্জনসমূহ তুলে ধরবেন তিনি।
এসব ইভেন্টগুলোতে উপস্থিত থাকবেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী, লিথুয়ানিয়ার প্রেসিডেন্ট, জাতিসংঘ মহাসচিবের বৈশ্বিক শিক্ষা বিষয়ক বিশেষ দূত গর্ডন ব্রাউন। ২৮শে সেপ্টেম্বর সকালে প্রধানমন্ত্রী তার এই সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করবেন। এর পাশাপাশি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কয়েকটি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান, জাতিসংঘ মহাসচিব, কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নিয়ে পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করবেন।
জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে আলোচনায় রোহিঙ্গা বিষয়টি প্রাধান্য পাবে। প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আয়োজিত একটি রিসেপশন এবং জাতিসংঘ মহাসচিব আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। এ ছাড়া প্রতিবারের মতো এবারো প্রধানমন্ত্রী কয়েকটি অ্যাওয়ার্ড পেতে যাচ্ছেন বলে মাসুদ বিন মোমেন জানান।
উল্লেখ্য, ২৩-২৯শে সেপ্টেম্বর ২০১৮ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনে অংশগ্রহণ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউ ইয়র্ক আসছেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এবারের অধিবেশনে তিনি ৯০ সদস্যবিশিষ্ট বাংলাদেশ সরকারি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হবেন।
মার্কিন দূত জানিয়েছেন, এবারে যুক্তরাষ্ট্রের তরফে এমন সব বিষয় সাধারণ পরিষদের আলোচনার টেবিলে আনা হবে, যা এ ধরণীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিকি হ্যালির সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত মানবজমিনের ওই রিপোর্টার জানতে চেয়েছিলেন- জাতিসংঘ অধিবেশনে আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকার যে প্রায়োরিটি লিস্ট বা অগ্রাধিকার তালিকা করেছে তার মধ্যে এই মুহূর্তে বাংলাদেশ তথা বিশ্ব সমপ্রদায়ের গভীর উদ্বেগের বিষয় রোহিঙ্গা ইস্যুুতে আর স্পষ্ট করে বললে বিদ্যমান এ সংকটের টেকসই সমাধান প্রশ্নে সুনির্দিষ্ট আলোচনার কোনো চিন্তা বা পরিকল্পনা আছে কি-না? জবাবে মার্কিন দূত মিজ হ্যালি কেবল হ্যাঁ বোধক জবাবই দেননি, এ নিয়ে আলোচনা যে কতটা জরুরি সেটি সবিস্তারে তুলে ধরেন। বরাবরের মতো রোহিঙ্গাদের ওপর বর্মীদের বর্বর আক্রমণের তীব্র নিন্দা এবং এ নিয়ে বাংলাদেশের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি। বলেন, নির্যাতনের মুখে প্রাণে বাঁচতে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় সীমান্ত এবং হৃদয় খুলে দিয়ে বাংলাদেশ ঐশ্বরিক কাজ করেছে।
নিকি হ্যালি রোহিঙ্গা তথা মানবতার প্রতি বাংলাদেশ সরকার এবং গোটা দেশবাসীর মহানুভবতাকে গর্ডস ওয়ার্ক বা ‘স্রষ্টার কাজ’ বলে মন্তব্য করেন। সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন দূত অং সান সুচির নাম উল্লেখ করেই মিয়ানমারের সরকারের কর্মকাণ্ডের কড়া সমালোচনা করেন। বলেন, এই মুহূর্তে (চলমান জাতিসংঘ অধিবেশনে) হাই টপিক বা অগ্রাধিকারে থাকা বিষয় হচ্ছে- বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের কোন পথে বা কীভাবে নিরাপদে বার্মায় ফেরানো যাবে? সেটি খোঁজা। কিন্তু এ নিয়ে যে বার্মা সরকার কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছে না তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে তিনি তার নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। বলেন- এ নিয়ে বার্মা সরকার তেমন কিছুই করছে না।
রোহিঙ্গা সমপ্রদায়ের ওপর যে বর্বর অত্যাচার করা হয়েছে তার দায় এখনো নেয়নি বর্মী সেনাবাহিনী। আর অং সান সুচি, তিনি সেদিন বললেন, রয়টার্সের দুজন রিপোর্টারের কারাদণ্ড সেটিও নাকি সঠিক! বর্মী নেতৃত্বের দায়িত্বহীন ওই সব বক্তব্য এবং আচরণে খেদোক্তি করে মার্কিন দূত বলেন, এটাই প্রকৃত সমস্যা। গত বছর রোহিঙ্গা সংকট ভয়াবহ রূপ ধারণ করায় অর্থাৎ রোহিঙ্গা ঢলের সূচনা থেকে সংকটটির সমাধানে সোচ্চার জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক নিকি হ্যালি বর্মী নেতৃত্বের প্রতি খোঁচা মেরে বলেন, আমার মনে হয় এখানে কমিউনিকেশনেরও ঘাটতি রয়েছে।
কারণ তারা (বার্মা সরকার) কি বলে এটা কেউ বুঝে না। আর আমরা তথা বিশ্ববাসী যা বলি এতে তারা (বর্মীরা) কর্ণপাত করে না বা শুনে না। মার্কিন দূত বার্মা বা মিয়ানমারের বন্ধু যারা কূটনৈতিকভাবে বিশেষত জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ, হিউম্যান রাইটস কাউন্সিল এবং থার্ড কমিটির মতো গুরুত্বপূর্ণ ফোরামেও তাদের পাশে থেকে রক্ষার চেষ্টা চালায় তাদের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এ সংকটের সমাধানে আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের জন্য জরুরি হচ্ছে এক সুরে অভিন্ন ভাষায় কথা বলা। মার্কিন দূত বলেন, বৃটেনের আয়োজনে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে মন্ত্রী পর্যায়ের একটি বৈঠক হবে জাতিসংঘ অধিবেশনের সাইড লাইনে। আমি তাতে অংশ নেবো এবং সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান তুলে ধরবো।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে একটি রেজুলেশন আনা হবে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন। প্রধানমন্ত্রীর সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশগ্রহণ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই তথ্য জানান। এ অধিবেশন চলাকালীন প্রধানমন্ত্রী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও’র সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে জানান। রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে এবারের অধিবেশনে গতবারের মতো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন অর্জনে বাংলাদেশের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, রোহিঙ্গা বিষয়ে আমাদের সর্বাত্মক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে যা দৃশ্যমান। জাতিসংঘে আমরা সর্বোচ্চ রাজনৈতিক পর্যায়ে এ বিষয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের আরো জোর সমর্থন অর্জনের চেষ্টা করবো।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রী নিউ ইয়র্ক পৌঁছাবেন ২৩শে সেপ্টেম্বর দুপুরে। এদিন সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি কম্যুনিটি আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তিনি। পরের দিন ২৪শে সেপ্টেম্বর বিকালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে লেনসন ম্যান্ডেলা পিস সামিটে ভাষণ দেবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। এর আগে সকালে বিশ্ব মাদক সমস্যা বিষয়ে বৈশ্বিক আহ্বান সংক্রান্ত একটি উচ্চ পর্যায়ের সভায় যোগ দেবেন। ইভেন্টটির আয়োজক যুক্তরাষ্ট্র। অন্যান্য ২৯টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশ এর সহ-আয়োজক। উপস্থিত থাকবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও জাতিসংঘ মহাসচিব। একই দিনে শরণার্থী বিষয়ক বৈশ্বিক কম্প্যাক্ট ও শিক্ষা বিষয়ক দুটি উচ্চ পর্যায়ের হাই-লেভেল ইভেন্টে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী।
এ ছাড়া দুপুরে ইউএস চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত একটি রাউন্ড টেবিল আলোচনায় তিনি অংশগ্রহণ করবেন। প্রধানমন্ত্রী ২৫শে সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ক কার্যালয়ের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত সাইবার সিকিউরিটি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক একটি উচ্চ পর্যায়ের সভায় বক্তব্য রাখবেন। এতে জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, এস্তোনিয়া ও সিঙ্গাপুর কো-স্পন্সর করছে। জাতিসংঘ মহাসচিবের আয়োজনে অ্যাকশন ফর পিস কিপিং বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের সভায় অংশগ্রহণ করবেন। পিস কিপিং বিষয়ক এই ইভেন্টে প্রদেয় বক্তব্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের শান্তিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ক্রমাগত উন্নতির বিষয়গুলো তুলে ধরবেন।
এ ছাড়া তিনি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের চতুর্থ শিল্প বিপ্লব সম্পর্কিত একটি প্যানেলে যোগ দেবেন। জাতিসংঘ মহাসচিবের আমন্ত্রণে ২৬শে সেপ্টেম্বর জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের সভায় যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। ২৭শে সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী সাধারণ পরিষদের জেনারেল ডিবেট অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। প্রতিবারের মতো এবারও প্রধানমন্ত্রী বাংলায় ভাষণ দেবেন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে গতবারের উত্থাপিত পাঁচ দফা সুপারিশমালার ধারাবাহিকতায় এবারেও প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য রাখবেন। এর আগে লিথুনিয়ার প্রেসিডেন্ট আয়োজিত ‘নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন’ বিষয়ক সাইড ইভেন্টে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। শিক্ষা ও নারী অধিকার বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের ইভেন্টগুলোতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নারীর শিক্ষা ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অর্জনসমূহ তুলে ধরবেন তিনি।
এসব ইভেন্টগুলোতে উপস্থিত থাকবেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী, লিথুয়ানিয়ার প্রেসিডেন্ট, জাতিসংঘ মহাসচিবের বৈশ্বিক শিক্ষা বিষয়ক বিশেষ দূত গর্ডন ব্রাউন। ২৮শে সেপ্টেম্বর সকালে প্রধানমন্ত্রী তার এই সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করবেন। এর পাশাপাশি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কয়েকটি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান, জাতিসংঘ মহাসচিব, কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নিয়ে পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করবেন।
জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে আলোচনায় রোহিঙ্গা বিষয়টি প্রাধান্য পাবে। প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আয়োজিত একটি রিসেপশন এবং জাতিসংঘ মহাসচিব আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। এ ছাড়া প্রতিবারের মতো এবারো প্রধানমন্ত্রী কয়েকটি অ্যাওয়ার্ড পেতে যাচ্ছেন বলে মাসুদ বিন মোমেন জানান।
উল্লেখ্য, ২৩-২৯শে সেপ্টেম্বর ২০১৮ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনে অংশগ্রহণ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউ ইয়র্ক আসছেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এবারের অধিবেশনে তিনি ৯০ সদস্যবিশিষ্ট বাংলাদেশ সরকারি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হবেন।
No comments