বাড়ছে হৃদরোগ, আক্রান্ত হচ্ছে যুবকরাও by ফরিদ উদ্দিন আহমেদ
দেশে
হৃদরোগে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বয়স্কদের পাশাপাশি যুবকরাও
হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছে। একটা সময় ছিল যখন বয়স্করাই শুধু হৃদরোগে আক্রান্ত
হতেন। এখন সময় বদলেছে। পরিবর্তন হয়েছে খাদ্যাভ্যাস ও জীবন চিত্র। তাই
বয়স্কদের পাশাপাশি অনেক যুবক হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা
বলছেন, মানুষের জীবনযাত্রার পরিবর্তন, জাঙ্কফুড খাওয়া, চর্বিযুক্ত খাদ্য
গ্রহণ, মাদকদ্রব্য গ্রহণ, এলকোহল পান, তামাক গ্রহণ, ভৌগোলিক অবস্থান ও
করনারি সরু থাকার কারণে বাংলাদেশের মানুষের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি
বেশি। এদিকে রোগটি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে প্রতি বছরই সারা বিশ্বে ২৯শে
সেপ্টেম্বর পালিত হয় বিশ্ব হৃদরোগ দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে
‘আমার হার্ট, তোমার হার্ট।’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের
কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এসএম মোস্তফা জামান মানবজমিনকে বলেন,
বিশ্বে সবচেয়ে বেশি লোক মারা যায় হৃদরোগে আক্রান্ত (৩১ শতাংশ) হয়ে। আগামী
২০৩০ সাল নাগাদ ২৩ মিলিয়ন লোক হৃদরোগে মারা যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর
মধ্যে বেশি মারা যাবে নিম্নআয়ের দেশগুলোতে। ভৌগোলিক অবস্থান, চর্বিযুক্ত
খাবার বেশি গ্রহণ, তামাক ব্যবহার ও জীবনযাত্রা পরিবর্তনের কারণে আমাদের
দেশের মানুষ এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। বাতজ্বরের কারণেও অনেকে হৃদরোগে
আক্রান্ত হন। এ ছাড়া উচ্চতাজনিত কারণে করনারি সরু থাকে, যা তাড়াতাড়ি বন্ধ
হয়ে যায়।
কারো করনারির ৭০ শতাংশ ব্লক হলে বুকে ব্যথা, চাপ অনুভব করা ও দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। তিনি বলেন, কারো যদি ১০০ শতাংশ ব্লক হয়ে যায়, তখনই হার্ট অ্যাটাক হয়। একটা সময় ছিল যখন বয়স্ক (৬০ থেকে ৭০ বছর) লোকদের হার্ট অ্যাটাক হতো। ইদানীংকালে ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সীদেরও হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে। অল্প বয়সী ছেলেমেয়েদের কেন এটি হচ্ছে তা নিয়ে গবেষণা করা দরকার। এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার পেছনে মূল কারণ জাঙ্কফুড গ্রহণ ও খেলাধুলা না করা। খেলার জায়গার অভাবে শিশুরা ঘরে বসে টিভি দেখছে। এতে তাদের স্থূলতা বাড়ছে। আর স্থূলতা বাড়ায় তারা হৃদরোগে আক্রান্তের ঝুঁকিতে পড়ছে। তাই হৃদরোগ কমাতে হলে চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার, তামাক বর্জন, কায়িক পরিশ্রম করা, ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখা দরকার। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ আরো বলেন, হার্ট অ্যাটাক একটি মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা, যেখানে জীবন ও মৃত্যু খুব কাছাকাছি চলে আসে। এটি সাধারণত বয়স্কদের রোগ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেখা গেছে, ৬০ থেকে ৭০ বছর বয়সী মানুষের এটি হয়ে থাকে। আমাদের এদেশে ৫০ থেকে ৬০ বছর বয়সীদের হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকে। বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে আমাদের দেশে ১০ বছর আগেই হার্ট অ্যাটাক হয়। এখন ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সী, এমনকি ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সীরাও হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হচ্ছে। যার অন্যতম কারণ হলো- স্বাস্থ্যসম্মত খাবার না খাওয়া, ধূমপান ও তামাক জাতীয় দ্রব্য সেবন, নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম না করা ও অ্যালকোহল পান করা।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৫ সালে বাংলাদেশে আট লাখ ৮৬ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৫৯ শতাংশ মানুষ মারা গেছে হার্ট, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন অসংক্রামক ব্যাধিতে। অর্থাৎ প্রতি বছর অসংক্রামক ব্যাধিতে মৃত্যু হয় পাঁচ লাখ ২২ হাজার ৭৪০ বাংলাদেশির। যার মধ্যে হৃদরোগে মারা যায় ৮৮ হাজার ৮৬৫ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ২০১৭ সালের হেলথ বুলেটিনে বলা হয়েছে, রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল (এনআইসিভিডি) প্রতি বছরই হৃদরোগ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির বহির্বিভাগে ২০১৬ সালে দুই লাখ ২৬ হাজার ১৩৮ রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন এবং ৬৪ হাজার ৯০৬ জন ভর্তি হয়েছেন। আর ২০১৫ সালে বহির্বিভাগে দিয়ে দুই লাখ ২২ হাজার ১৮৬ রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন এবং ৬৩ হাজার ৩৯০ জন ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালটি। এর আগের বছর ২০১৪ সালে দুই লাখ ৫৫৩ জন আউটডোরে এবং ৪৯ হাজার ২৮৩ রোগী ভর্তি হয়েছেন। তার আগের বছর এক লাখ ৭২ হাজার ২৬৯ রোগী আউটডোরে এবং ৪৩ হাজার ৩৪১ জন ভর্তি হয়েছেন। পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি বছরই হৃদরোগীর সংখ্যা বাড়ছে। দেশে অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি যেসব হাসপাতাল রয়েছে, সেখানকার হিসাবেও হৃদরোগে আক্রান্ত চিকিৎসা গ্রহণকারী লোকের সংখ্যা বাড়ছে।
এক প্রবন্ধে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের চিকিৎসক সোহেল রেজা চৌধুরী লেখেন, বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর ৫২ শতাংশেরও বেশি ঘটছে অসংক্রামক ব্যাধি থেকে। অসংক্রামক ব্যাধিগুলোর মধ্যে আবার শীর্ষে রয়েছে হৃদরোগ। হৃদরোগকে খাদ্যবাহিত রোগ বলা হয়। টিভি ও রেডিওতে ফাস্টফুড জাতীয় খাবারের বিজ্ঞাপন প্রচার নিয়ন্ত্রণ করা এবং স্থানীয়ভাবে ফলমূল ও শাকসবজি উৎপাদনে সহযোগিতা করায় নীতিনির্ধারকদের উদ্যোগ নেয়া দরকার বলে তিনি মন্তব্য করেন। এ ছাড়া তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন ও হৃদরোগের চিকিৎসা সহজলভ্য ও সুলভ করার আহ্বান জানান তিনি।
কারো করনারির ৭০ শতাংশ ব্লক হলে বুকে ব্যথা, চাপ অনুভব করা ও দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। তিনি বলেন, কারো যদি ১০০ শতাংশ ব্লক হয়ে যায়, তখনই হার্ট অ্যাটাক হয়। একটা সময় ছিল যখন বয়স্ক (৬০ থেকে ৭০ বছর) লোকদের হার্ট অ্যাটাক হতো। ইদানীংকালে ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সীদেরও হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে। অল্প বয়সী ছেলেমেয়েদের কেন এটি হচ্ছে তা নিয়ে গবেষণা করা দরকার। এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার পেছনে মূল কারণ জাঙ্কফুড গ্রহণ ও খেলাধুলা না করা। খেলার জায়গার অভাবে শিশুরা ঘরে বসে টিভি দেখছে। এতে তাদের স্থূলতা বাড়ছে। আর স্থূলতা বাড়ায় তারা হৃদরোগে আক্রান্তের ঝুঁকিতে পড়ছে। তাই হৃদরোগ কমাতে হলে চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার, তামাক বর্জন, কায়িক পরিশ্রম করা, ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখা দরকার। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ আরো বলেন, হার্ট অ্যাটাক একটি মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা, যেখানে জীবন ও মৃত্যু খুব কাছাকাছি চলে আসে। এটি সাধারণত বয়স্কদের রোগ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেখা গেছে, ৬০ থেকে ৭০ বছর বয়সী মানুষের এটি হয়ে থাকে। আমাদের এদেশে ৫০ থেকে ৬০ বছর বয়সীদের হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকে। বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে আমাদের দেশে ১০ বছর আগেই হার্ট অ্যাটাক হয়। এখন ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সী, এমনকি ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সীরাও হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হচ্ছে। যার অন্যতম কারণ হলো- স্বাস্থ্যসম্মত খাবার না খাওয়া, ধূমপান ও তামাক জাতীয় দ্রব্য সেবন, নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম না করা ও অ্যালকোহল পান করা।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৫ সালে বাংলাদেশে আট লাখ ৮৬ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৫৯ শতাংশ মানুষ মারা গেছে হার্ট, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন অসংক্রামক ব্যাধিতে। অর্থাৎ প্রতি বছর অসংক্রামক ব্যাধিতে মৃত্যু হয় পাঁচ লাখ ২২ হাজার ৭৪০ বাংলাদেশির। যার মধ্যে হৃদরোগে মারা যায় ৮৮ হাজার ৮৬৫ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ২০১৭ সালের হেলথ বুলেটিনে বলা হয়েছে, রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল (এনআইসিভিডি) প্রতি বছরই হৃদরোগ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির বহির্বিভাগে ২০১৬ সালে দুই লাখ ২৬ হাজার ১৩৮ রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন এবং ৬৪ হাজার ৯০৬ জন ভর্তি হয়েছেন। আর ২০১৫ সালে বহির্বিভাগে দিয়ে দুই লাখ ২২ হাজার ১৮৬ রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন এবং ৬৩ হাজার ৩৯০ জন ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালটি। এর আগের বছর ২০১৪ সালে দুই লাখ ৫৫৩ জন আউটডোরে এবং ৪৯ হাজার ২৮৩ রোগী ভর্তি হয়েছেন। তার আগের বছর এক লাখ ৭২ হাজার ২৬৯ রোগী আউটডোরে এবং ৪৩ হাজার ৩৪১ জন ভর্তি হয়েছেন। পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি বছরই হৃদরোগীর সংখ্যা বাড়ছে। দেশে অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি যেসব হাসপাতাল রয়েছে, সেখানকার হিসাবেও হৃদরোগে আক্রান্ত চিকিৎসা গ্রহণকারী লোকের সংখ্যা বাড়ছে।
এক প্রবন্ধে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের চিকিৎসক সোহেল রেজা চৌধুরী লেখেন, বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর ৫২ শতাংশেরও বেশি ঘটছে অসংক্রামক ব্যাধি থেকে। অসংক্রামক ব্যাধিগুলোর মধ্যে আবার শীর্ষে রয়েছে হৃদরোগ। হৃদরোগকে খাদ্যবাহিত রোগ বলা হয়। টিভি ও রেডিওতে ফাস্টফুড জাতীয় খাবারের বিজ্ঞাপন প্রচার নিয়ন্ত্রণ করা এবং স্থানীয়ভাবে ফলমূল ও শাকসবজি উৎপাদনে সহযোগিতা করায় নীতিনির্ধারকদের উদ্যোগ নেয়া দরকার বলে তিনি মন্তব্য করেন। এ ছাড়া তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন ও হৃদরোগের চিকিৎসা সহজলভ্য ও সুলভ করার আহ্বান জানান তিনি।
No comments