জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা: বিচারকের প্রতি দুই আসামির অনাস্থা
ন্যায়
বিচার পাবেন না- এমন আশঙ্কার কথা জানিয়ে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার
বিচারকের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছেন এই মামলার দুই আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্না
ও মনিরুল ইসলাম খান। গতকাল নাজিমউদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কারাগারের বিশেষ
আদালতে তাদের পক্ষে আইনজীবীরা এ অনাস্থার কথা জানান। অনাস্থা জানানোর পরপরই
আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্নার অন্তর্বর্তীকালীন জামিন নাকচ করে তাকে
কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. মো.
আখতারুজ্জামান। আদালতে জিয়াউল ইসলাম মুন্নার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো.
আমিনুল ইসলাম। মনিরুল ইসলাম খানের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. আখতারুজ্জামান।
এদিকে এ মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিচারকার্যক্রম চলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে আবেদন করা হবে জানিয়ে শুনানি মুলতবির আবেদন করেন খালেদার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া। তবে, এ আবেদনে সাড়া দেননি আদালত। একই সঙ্গে খালেদা জিয়ার জামিন বর্ধিতকরণ ও তাকে বিশেষায়িত কোনো হাসপাতালে চিকিৎসার আবেদন জানান আইনজীবীরা। আদালত তার আদেশে জামিন বর্ধিতকরণের আবেদন মঞ্জুর করে কারাবিধি অনুযায়ী খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার আদেশ দিয়ে মঙ্গলবার (আজ) ধার্য দিনে এই মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের আদেশ দেন।
এদিকে নাজিমউদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কারাগারে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার বিচারকার্যক্রম নিয়ে সম্প্রতি খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া ও বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবী ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মোবাইল কথোপকথনের বিষয়টি নিয়ে গতকাল আদালতে একাধিকবার উভয়পক্ষের আইনজীবীরা তর্কে জড়ান। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘আদালতের ভেতরে-বাইরে অনেক সংকট তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। ষড়যন্ত্র হচ্ছে। একজন বুদ্ধিজীবী ও সিনিয়র মানুষ কখনো আদালতে না যাওয়ার জন্য এভাবে কোনো আইনজীবীকে পরামর্শ দিতে পারেন না।’ খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, ‘একজন ‘অর্ডিনারি’ ব্যক্তি পরামর্শ দিলেই আমরা সেই পরামর্শ শুনতে বাধ্য নই। আমরা তার কথায় কিছু করি না।’
এর আগে গত ২০শে সেপ্টেম্বর এক আদেশে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতেই জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার বিচারকাজ চলবে বলে আদেশ দিয়ে ২৪, ২৫ ও ২৬শে সেপ্টেম্বর অসমাপ্ত যুক্তিতর্কের শুনানির জন্য দিন ধার্য রাখেন আদালতের বিচারক। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার বিচারকাজ নাজিমউদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কারাগারের ভেতরে প্রশাসনিক ভবনের একটি কক্ষে স্থাপিত বিশেষ আদালতে চলছে। গত ৮ই ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ৫ বছরের কারাদণ্ডের রায় হওয়ার পর থেকে খালেদা জিয়াকে রাখা হয়েছে পরিত্যক্ত এই কারাগারে। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ই আগস্ট রাজধানীর তেজগাঁও থানায় এ মামলাটি দায়ের করে দুদক। এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন- খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক পুলিশের সাবেক ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার সাবেক একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
গতকাল ১১টা ১০ মিনিটে আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া খালেদা জিয়ার জামিন বর্ধিতকরণ ও তাকে বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করেন। শুনানিতে আদালতের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘কারাগারে থাকা কোনো আসামি অসুস্থ হলে জেল কোড অনুযায়ী তাকে দ্রুত চিকিৎসা দেয়ার নিয়ম। আগে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। এরপরই তিনি বিচার কার্যক্রমে অংশ নেবেন।’ তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার কাস্টডিয়ান আপনি। তার অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। সরকারও কোনো দায়িত্ব নিচ্ছে না। এখন আপনি যদি জেল কোডের দোহাই দিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান তাহলে আমরা যাবো কোথায়? আপনি দ্রুত কোনো স্পেশালিস্ট হাসপাতালে তার চিকিৎসার আদেশ দিন। উনি সুস্থ হয়েই আদালতে আসবেন।’
খালেদা জিয়ার অন্য আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার আদালতের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪০ (এ) ধারা অনুযায়ী তার অনুপস্থিতিতে বিচারের যে আদেশ দিয়েছেন এর বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে আজই (গতকাল) আবেদন করবো।’ খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং আদালতের কার্যক্রম মুলতবি চেয়ে মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, ‘একজন অসুস্থ মানুষের বিচার করার জন্য প্রসিকিউশনের এত তাড়াহুড়ো কেন?’
শুনানিতে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘আসামিপক্ষ বলছে তারা উচ্চ আদালতে যাবে। যদি উচ্চ আদালত থেকে তারা কোনো আদেশ আনতে পারে তখন না হয় বিষয়টি দেখা যাবে। যুক্তিতর্কের শুনানি শুরু হোক।’ আদালতের ভেতরে-বাইরে অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে উল্লেখ করে দুদকের আইনজীবী বলেন, ‘উনারা (আসামিপক্ষের আইনজীবী) বলছেন, খালেদা জিয়া যেদিন সুস্থ হবেন সেদিনই তিনি আদালতে আসবেন। কিন্তু এরকম তো কোনো আইন নেই।’
জিয়াউল ইসলাম মুন্নার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘বকশীবাজারে আদালতের যে অবস্থা ছিল, এখানেও সেই একই অবস্থা। গত তারিখে যে আদেশটি (খালেদার অনুপস্থিতিতে বিচারকাজ) দেয়া হয়েছে সেটি আইনসিদ্ধ হয়নি এবং আজকেও আদালতে কোরাম হয়নি। আমরা আজকেই (গতকাল) উচ্চ আদালতে যাবো।’ তিনি বলেন, ‘যেহেতু এই মামলার বিষয়বস্তু এক আদেশও একই দিচ্ছেন তাই ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪০ (এ) এর যে ব্যাখ্যা সেটির অপব্যাখ্যা হয়েছে বলে আমি মনে করি। উচ্চ আদালতে এটির যথার্থ বিশ্লেষণ করা দরকার।’
মনিরুল ইসলাম খানের আইনজীবী মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের কোনো কথা ওই আদেশে (খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিচার) নেই। শুধু পিপি’র বক্তব্য লেখা হয়েছে আদেশে। আর বিদেশি আদালতের যেসব উদাহরণ দেয়া হয়েছে সেটি আমাদের এখানকার আদালতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। আমরা আইনজীবী হিসেবে আসামিকে যদি কোনো সুবিধা দিতে না পারি তাহলে এখানে আমাদের করার কিছুই নেই।’
এ সময় দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘যদি ওনারা যুক্তিতর্ক না করেন, আর উচ্চ আদালত যদি কোনো স্থগিতাদেশ না দেন তাহলে রায়ের জন্য দিন ধার্য করা হোক।’ তিনি বলেন, ‘এটি আসামিপক্ষের আইনজীবীদের প্রতি বাইরের নির্দেশ মাত্র। এই আদালত ও বিচারকার্যক্রম নিয়ে ষড়যন্ত্রের প্রতিফলন হচ্ছে।’ একপর্যায়ে তর্কে জড়ান উভয়পক্ষের আইনজীবীরা।
আসামিপক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘বাইরের নির্দেশ পান তো আপনারা।’
মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘ষড়যন্ত্র কোথায় হচ্ছে তা আমরা যেমন জানি দেশের ১৬ কোটি মানুষও জানে। এভাবে একজন বুদ্ধিজীবী সিনিয়র মানুষ (ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী) সানাউল্লাহ মিয়াকে আদালত বর্জনের পরামর্শ দিতে পারেন না।’
মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, ‘একজন পরামর্শ দিয়েছে মাত্র। কিন্তু আমরা কি তার পরামর্শ মানতে বাধ্য? একজন ‘অর্ডিনারি’ মানুষের কথায় আমরা কিছু করি না।’
দুদকের আইনজীবী বলেন, ‘কোথা থেকে কি হচ্ছে আমরা তা জানি। আদালতকে নিয়ে ব্যঙ্গ করা হচ্ছে। আদালতকে নিয়ে এ ধরনের বুদ্ধিজীবীরা কথা বলেন। আমাদের লজ্জা হয়।’ বিচারকের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘যুক্তিতর্কের শুনানির জন্য ২৫ ও ২৬শে সেপ্টেম্বর ধার্য তারিখ আছে। আপনি অপেক্ষা করুন। যদি তারা শুনানিতে না আসে তাহলে রায়ের তারিখ ধার্য করুন।’
মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, ‘আদালতের পিপি রাজনীতির ভাষায় কথা বলতে পারেন না। এভাবে আমরা আইনজীবীরা বাইরের মানুষকে রাজনীতির ভাষায় কথা বলতে উৎসাহিত করছি। একপর্যায়ে বিচারক যুক্তিতর্কের শুনানির জন্য আদেশ দেন।’ এতে আপত্তি জানান আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। জিয়াউল ইসলাম মুন্নার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম আবেদন দাখিল করে বলেন, ‘এই আদালতের প্রতি আমার আস্থা নেই। আদালত ও বিচারক পরিবর্তনের জন্য উচ্চ আদালতে আবেদন করবো। সে জন্য ২০ দিন সময় চাই। পাশাপাশি মনিরুল ইসলামের আইনজীবী মো. আখতারুজ্জামানও তার অনাস্থার কথা আদালতকে জানান।’
এসময় দুদকের আইনজীবী বলেন, ‘উনারা আদালতের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করবেন আবার জামিন বর্ধিতকরণের আবেদনও করবেন। আদালতের প্রতি অনাস্থা থাকলে তো জামিনের কোনো অধিকার থাকে না।’
একপর্যায়ে আদালতের বিচারক জিয়াউল ইসলাম মুন্নার আইনজীবীর উদ্দেশ্যে বলেন, যদি এই পিটিশনই দেবেন তাহলে আপনারা শুনানি করলেন কেন?
আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আদালতের প্রতি অনাস্থা জানানো আসামির আইনগত অধিকার।’ শুনানি নিয়ে আদালতের বিচারক আদেশে জিয়াউল ইসলাম মুন্নার জামিন বাতিল করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। একই সঙ্গে খালেদা জিয়ার জামিন বর্ধিত করে তার চিকিৎসা বিষয়ে কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার আদেশ দিয়ে মঙ্গলবার (আজ) পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম মুলতবির আদেশ দেন বিচারক।
এদিকে এ মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিচারকার্যক্রম চলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে আবেদন করা হবে জানিয়ে শুনানি মুলতবির আবেদন করেন খালেদার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া। তবে, এ আবেদনে সাড়া দেননি আদালত। একই সঙ্গে খালেদা জিয়ার জামিন বর্ধিতকরণ ও তাকে বিশেষায়িত কোনো হাসপাতালে চিকিৎসার আবেদন জানান আইনজীবীরা। আদালত তার আদেশে জামিন বর্ধিতকরণের আবেদন মঞ্জুর করে কারাবিধি অনুযায়ী খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার আদেশ দিয়ে মঙ্গলবার (আজ) ধার্য দিনে এই মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের আদেশ দেন।
এদিকে নাজিমউদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কারাগারে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার বিচারকার্যক্রম নিয়ে সম্প্রতি খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া ও বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবী ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মোবাইল কথোপকথনের বিষয়টি নিয়ে গতকাল আদালতে একাধিকবার উভয়পক্ষের আইনজীবীরা তর্কে জড়ান। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘আদালতের ভেতরে-বাইরে অনেক সংকট তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। ষড়যন্ত্র হচ্ছে। একজন বুদ্ধিজীবী ও সিনিয়র মানুষ কখনো আদালতে না যাওয়ার জন্য এভাবে কোনো আইনজীবীকে পরামর্শ দিতে পারেন না।’ খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, ‘একজন ‘অর্ডিনারি’ ব্যক্তি পরামর্শ দিলেই আমরা সেই পরামর্শ শুনতে বাধ্য নই। আমরা তার কথায় কিছু করি না।’
এর আগে গত ২০শে সেপ্টেম্বর এক আদেশে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতেই জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার বিচারকাজ চলবে বলে আদেশ দিয়ে ২৪, ২৫ ও ২৬শে সেপ্টেম্বর অসমাপ্ত যুক্তিতর্কের শুনানির জন্য দিন ধার্য রাখেন আদালতের বিচারক। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার বিচারকাজ নাজিমউদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কারাগারের ভেতরে প্রশাসনিক ভবনের একটি কক্ষে স্থাপিত বিশেষ আদালতে চলছে। গত ৮ই ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ৫ বছরের কারাদণ্ডের রায় হওয়ার পর থেকে খালেদা জিয়াকে রাখা হয়েছে পরিত্যক্ত এই কারাগারে। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ই আগস্ট রাজধানীর তেজগাঁও থানায় এ মামলাটি দায়ের করে দুদক। এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন- খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক পুলিশের সাবেক ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার সাবেক একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
গতকাল ১১টা ১০ মিনিটে আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া খালেদা জিয়ার জামিন বর্ধিতকরণ ও তাকে বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করেন। শুনানিতে আদালতের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘কারাগারে থাকা কোনো আসামি অসুস্থ হলে জেল কোড অনুযায়ী তাকে দ্রুত চিকিৎসা দেয়ার নিয়ম। আগে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। এরপরই তিনি বিচার কার্যক্রমে অংশ নেবেন।’ তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার কাস্টডিয়ান আপনি। তার অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। সরকারও কোনো দায়িত্ব নিচ্ছে না। এখন আপনি যদি জেল কোডের দোহাই দিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান তাহলে আমরা যাবো কোথায়? আপনি দ্রুত কোনো স্পেশালিস্ট হাসপাতালে তার চিকিৎসার আদেশ দিন। উনি সুস্থ হয়েই আদালতে আসবেন।’
খালেদা জিয়ার অন্য আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার আদালতের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪০ (এ) ধারা অনুযায়ী তার অনুপস্থিতিতে বিচারের যে আদেশ দিয়েছেন এর বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে আজই (গতকাল) আবেদন করবো।’ খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং আদালতের কার্যক্রম মুলতবি চেয়ে মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, ‘একজন অসুস্থ মানুষের বিচার করার জন্য প্রসিকিউশনের এত তাড়াহুড়ো কেন?’
শুনানিতে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘আসামিপক্ষ বলছে তারা উচ্চ আদালতে যাবে। যদি উচ্চ আদালত থেকে তারা কোনো আদেশ আনতে পারে তখন না হয় বিষয়টি দেখা যাবে। যুক্তিতর্কের শুনানি শুরু হোক।’ আদালতের ভেতরে-বাইরে অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে উল্লেখ করে দুদকের আইনজীবী বলেন, ‘উনারা (আসামিপক্ষের আইনজীবী) বলছেন, খালেদা জিয়া যেদিন সুস্থ হবেন সেদিনই তিনি আদালতে আসবেন। কিন্তু এরকম তো কোনো আইন নেই।’
জিয়াউল ইসলাম মুন্নার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘বকশীবাজারে আদালতের যে অবস্থা ছিল, এখানেও সেই একই অবস্থা। গত তারিখে যে আদেশটি (খালেদার অনুপস্থিতিতে বিচারকাজ) দেয়া হয়েছে সেটি আইনসিদ্ধ হয়নি এবং আজকেও আদালতে কোরাম হয়নি। আমরা আজকেই (গতকাল) উচ্চ আদালতে যাবো।’ তিনি বলেন, ‘যেহেতু এই মামলার বিষয়বস্তু এক আদেশও একই দিচ্ছেন তাই ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪০ (এ) এর যে ব্যাখ্যা সেটির অপব্যাখ্যা হয়েছে বলে আমি মনে করি। উচ্চ আদালতে এটির যথার্থ বিশ্লেষণ করা দরকার।’
মনিরুল ইসলাম খানের আইনজীবী মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের কোনো কথা ওই আদেশে (খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিচার) নেই। শুধু পিপি’র বক্তব্য লেখা হয়েছে আদেশে। আর বিদেশি আদালতের যেসব উদাহরণ দেয়া হয়েছে সেটি আমাদের এখানকার আদালতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। আমরা আইনজীবী হিসেবে আসামিকে যদি কোনো সুবিধা দিতে না পারি তাহলে এখানে আমাদের করার কিছুই নেই।’
এ সময় দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘যদি ওনারা যুক্তিতর্ক না করেন, আর উচ্চ আদালত যদি কোনো স্থগিতাদেশ না দেন তাহলে রায়ের জন্য দিন ধার্য করা হোক।’ তিনি বলেন, ‘এটি আসামিপক্ষের আইনজীবীদের প্রতি বাইরের নির্দেশ মাত্র। এই আদালত ও বিচারকার্যক্রম নিয়ে ষড়যন্ত্রের প্রতিফলন হচ্ছে।’ একপর্যায়ে তর্কে জড়ান উভয়পক্ষের আইনজীবীরা।
আসামিপক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘বাইরের নির্দেশ পান তো আপনারা।’
মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘ষড়যন্ত্র কোথায় হচ্ছে তা আমরা যেমন জানি দেশের ১৬ কোটি মানুষও জানে। এভাবে একজন বুদ্ধিজীবী সিনিয়র মানুষ (ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী) সানাউল্লাহ মিয়াকে আদালত বর্জনের পরামর্শ দিতে পারেন না।’
মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, ‘একজন পরামর্শ দিয়েছে মাত্র। কিন্তু আমরা কি তার পরামর্শ মানতে বাধ্য? একজন ‘অর্ডিনারি’ মানুষের কথায় আমরা কিছু করি না।’
দুদকের আইনজীবী বলেন, ‘কোথা থেকে কি হচ্ছে আমরা তা জানি। আদালতকে নিয়ে ব্যঙ্গ করা হচ্ছে। আদালতকে নিয়ে এ ধরনের বুদ্ধিজীবীরা কথা বলেন। আমাদের লজ্জা হয়।’ বিচারকের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘যুক্তিতর্কের শুনানির জন্য ২৫ ও ২৬শে সেপ্টেম্বর ধার্য তারিখ আছে। আপনি অপেক্ষা করুন। যদি তারা শুনানিতে না আসে তাহলে রায়ের তারিখ ধার্য করুন।’
মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, ‘আদালতের পিপি রাজনীতির ভাষায় কথা বলতে পারেন না। এভাবে আমরা আইনজীবীরা বাইরের মানুষকে রাজনীতির ভাষায় কথা বলতে উৎসাহিত করছি। একপর্যায়ে বিচারক যুক্তিতর্কের শুনানির জন্য আদেশ দেন।’ এতে আপত্তি জানান আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। জিয়াউল ইসলাম মুন্নার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম আবেদন দাখিল করে বলেন, ‘এই আদালতের প্রতি আমার আস্থা নেই। আদালত ও বিচারক পরিবর্তনের জন্য উচ্চ আদালতে আবেদন করবো। সে জন্য ২০ দিন সময় চাই। পাশাপাশি মনিরুল ইসলামের আইনজীবী মো. আখতারুজ্জামানও তার অনাস্থার কথা আদালতকে জানান।’
এসময় দুদকের আইনজীবী বলেন, ‘উনারা আদালতের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করবেন আবার জামিন বর্ধিতকরণের আবেদনও করবেন। আদালতের প্রতি অনাস্থা থাকলে তো জামিনের কোনো অধিকার থাকে না।’
একপর্যায়ে আদালতের বিচারক জিয়াউল ইসলাম মুন্নার আইনজীবীর উদ্দেশ্যে বলেন, যদি এই পিটিশনই দেবেন তাহলে আপনারা শুনানি করলেন কেন?
আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আদালতের প্রতি অনাস্থা জানানো আসামির আইনগত অধিকার।’ শুনানি নিয়ে আদালতের বিচারক আদেশে জিয়াউল ইসলাম মুন্নার জামিন বাতিল করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। একই সঙ্গে খালেদা জিয়ার জামিন বর্ধিত করে তার চিকিৎসা বিষয়ে কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার আদেশ দিয়ে মঙ্গলবার (আজ) পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম মুলতবির আদেশ দেন বিচারক।
No comments