ছিনতাই ও অজ্ঞান পার্টি ঠেকাতে তৎপর ডিএমপি, টিম গঠন by আল-আমিন

আসন্ন ঈদ উপলক্ষে অজ্ঞান ও মলম পার্টি ঠেকাতে তৎপর ঢাকা মহানগর পুলিশ। ডিবি পুলিশের একটি বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে। রোজা ও ঈদ উপলক্ষে মানুষ যেন স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত ও কেনাকাটা করতে পারে এজন্য ডিএমপির পক্ষ থেকে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ডিবির প্রত্যেকটি জোনাল টিমকে ভাগ ভাগ করে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও ছিনতাই ঠেকাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে ১০টি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যেসবস্থানে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে সেখানে যদি বিদ্যুতের লাইট না থাকলে ঢাকা সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে লাইট বসানোর জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ ছাড়াও কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান মোটা অঙ্কের টাকা একস্থান থেকে আরেক স্থানে নিয়ে গেলে পুলিশকে অবহিত করার জন্য ডিএমপির পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে। পুলিশ তার নিজস্ব জনবল দিয়ে এস্কট প্রদান করবে। তবে, ওই প্রতিষ্ঠানকে নিজস্ব গাড়ির ব্যবস্থা করতে হবে।
এ বিষয়ে ডিএমপির ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) কৃষ্ণপদ রায় মানবজমিনকে জানান, আসন্ন রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ডিএমপির পক্ষ থেকে বিশেষ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অজ্ঞান পার্টি ও ছিনতাইকারীর তৎপরতা ঠেকাতে পুলিশ সদা তৎপর থাকবে। ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চকে সক্রিয় থাকতে বলা হয়েছে। ঢাকার ৪টি গোয়েন্দা অঞ্চলের টিমগুলোকে ভাগ করে দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, রোজা ও ঈদ আসলে টাকার লেনদেন বাড়ে। বাড়তি টাকার নিরাপত্তার জন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পুলিশের এস্কট চান তাহলে পুলিশের সদস্যরা তাদের সহযোগিতা করবে।
ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, রোজা আসলে অজ্ঞান ও মলম পার্টির সদস্যরা সাধারণ মানুষদের যানবাহনে বা রাস্তায় বিভিন্ন খাদ্যের সঙ্গে নেশা জাতীয় ওষুধ কৌশলে সেবন করিয়ে টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র হাতিয়ে নেয়। দুর্বৃত্তরা বাসস্ট্যান্ড, লঞ্চ টার্মিনাল, রেল স্টেশন, বড় বিপণি বিতানসহ অন্যান্য জনবহুল এলাকায় ওই কর্মকাণ্ড করে থাকে। মলম বা রাসায়নিক পদার্থের বিষক্রিয়ার তীব্রতায় ভুক্তভোগীরা শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিশেষ করে বিভিন্ন উৎসব পার্বণে নগদ টাকা বহন এবং এর ব্যবহার বেড়ে যায়। এ সময় অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের তৎপরতা বেড়ে যায়।
সূত্র জানায়, রাজধানীতে অজ্ঞান ও মলম পার্টির প্রায় ১২টি চক্র আছে। এই চক্রের সঙ্গে প্রায় ৩শ’ সদস্য জড়িত। প্রত্যেক চক্রের সঙ্গে একজন করে দলনেতা থাকে। তারা দলনেতার পরামর্শক্রমে বিভিন্নস্থানে ওইসব অপকর্ম করে। ইতিমধ্যে ওই চক্রের সব নাম ঠিকানা ডিবি পুলিশ সংগ্রহ করছেন।
পুলিশ জানায়, অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা অধিকাংশই এখন হকারের বেশ ধারণ করে ওই কর্মকাণ্ড করছে। তারা হকারের বেশ ধারণ করে চা, সিগারেট, শসা, ও আচার বিক্রি করছে। কেউবা ভ্রামমাণ অবস্থায় ডাব বিক্রি করছে।
ডিবি পুলিশের সদস্যরা পোশাকে ও সাদা পোশাকে বিভিন্ন বাস টার্মিনাল, লঞ্চ টার্মিনাল, রেলস্টেশন, জনবহুল এলাকার মোড় ও অভিজাত মার্কেটের সামনে অবস্থান নিয়েছেন। অনেকেই ছদ্মবেশে অবস্থান নিয়েছেন। তারা ওই এলাকার পথচারীদের গতিবিধি নজরদারির মধ্যে রাখছেন। সূত্র আরো জানায়, যেসব অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা আগে
পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিল তারা অনেকেই জামিনে মুক্ত হয়ে কারাগার থেকে ছাড়া পেয়েছে। তারা অনেকেই আগের পেশায় ফিরে গেছে। ওইসব দুর্বৃত্তদের ধরার জন্য মাঠে কাজ করছে ডিবি পুলিশের বিশেষ টিম। এ ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন সোর্সকে কাজে লাগাচ্ছে ডিবি পুলিশ।
এদিকে, ছিনতাই রোধে ডিএমপির পক্ষ থেকে প্রত্যেকটি থানাকে ১০টি নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে, ছিনতাইকারীদের ধরতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন, ২৪ ঘণ্টা টহল বৃদ্ধি বিশেষ করে রাতের বেলায়, নতুনভাবে ছিনতাইকারীদের তালিকা করা, পুরোনো মামলাগুলোর হালনাগাদ করা, নতুনভাবে ছিনতাইকারীদের তালিকা করা, উঠতি ছিনতাইকারীদের শনাক্ত করা, গুরুত্বপূর্ণস্থানে পুলিশের ফাঁদ তৈরি করা, সাম্প্রতিক সময়ে যেসব ছিনতাইকারী জেল থেকে বের হয়েছেন সেইসব ছিনতাইকারীদের অবস্থান নির্ধারণ করা, এলাকাভিত্তিক ছিঁচকে চোরদের তালিকা করা ও ঢাকার যেসবস্থানে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে সেখানে যদি বিদ্যুতের লাইট না থাকে তাহলে সেখানে ঢাকা সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে লাইট বসানোর জন্য তাগাদা দেয়া।

No comments

Powered by Blogger.