বায়তুল মোকাররমে অন্যরকম ইফতার by হাফিজ মুহাম্মদ
বায়তুল
মোকাররম জাতীয় মসজিদ। মাহে রমজানের আগমন মানেই সেখানে এক ভিন্ন আবহের
সৃষ্টি হয়। ইফতারকে লক্ষ্য করে জাতীয় মসজিদ এ সময় পরিণত হয় ধনী-গরিবের
মিলনমেলায়। ইফতারের আগে সমবেত হন কয়েক হাজার রোজাদার। সারিবদ্ধভাবে বসে
পড়েন ইফতারকে সামনে নিয়ে। প্রতি রমজানেই রোজাদারের জন্য এখানে সরকারিভাবে
ইফতারের আয়োজন করে ইসলামিক ফাউন্ডেশন (ইফা)। বিগত বছরগুলোর ন্যায় এ বছরও
প্রতিদিন চার হাজার রোজাদারকে একসঙ্গে ইফতার করানোর ব্যবস্থা করেছেন তারা। এ
মসজিদের ইফতারে ধনী-গরিব, ফকির, মিসকিন, ছিন্নমূল ও প্রতিবন্ধী রোজাদার
মুসল্লিরা এক কাতারে বসে ইফতার করেন। গতকাল সোমবার
ছিলো তৃতীয় রমজান।
এদিন বায়তুল মেকাররম জাতীয় মসজিদে ঘুরে দেখা যায়, আসরের নামাজ শেষ হতেই রোজাদাররা মসজিদের পূর্ব পাশের ফাঁকা স্থানে (শাহানে) বসতে শুরু করেন। এক রোজাদার অন্য রোজাদারকে বসার জন্য ডাকছেন। মঞ্চে চলছে রোজার তাৎপর্যের বিষয়ে আলোচনা, খত্মে বোখারী পাঠ, ইসলামী সংগীত। সবাই গুরুত্ব সহকারে ইসলামিক এ আলোচনা শুনছেন। ঘড়ির কাঁটা ইফতারের সময়ে গড়াতে শাহানের স্থান পর্পিূর্ণ হয়ে যায়।
ইফতারের কয়েক মিনিট পূর্বে মসজিদের স্বেচ্ছাসেবকরা ঘোষণা দিলেন সবাইকে সারিবদ্ধভাবে বসার জন্য। একদিকে শাহানের মূল মঞ্চে চলছে কুরআন তিলাওয়াত। তিলাওয়াত শেষ হতেই প্রভুর পানে দু’হাত তুলছেন মুসল্লিরা। চলছে দোয়ার অনুষ্ঠান। এরই মধ্যে প্রত্যেক রোজাদার মুসল্লির সামনে ইফতার থালা এবং শরবতের গ্লাস পৌঁছে গেছে। এদিন ইফতার আয়োজনে ছিলো ছোলা, মুড়ি, আলুর চপ, কলা, বেগুনি, খেজুর, শরবত, জিলাপিসহ ১০ রকমের খাবার।
প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও রমজানের শুরুর দিন থেকে রোজাদার মুসল্লিদের ইফতার করানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ইফা। এ বছর মোট ১ লাখ ২০ হাজার রোজাদারের জন্য ২৬ লাখ টাকা ইফতারে বরাদ্ধ রয়েছে। এ হিসেবে প্রতিদিন চারহাজার রোজাদার মুসল্লিকে তারা ইফতার করাবেন। গতবছর থেকে ইফতারকারীর সংখ্যা এবছর প্রায় ১ হাজার বাড়ানো হয়েছে। গত বছর ইফার পক্ষ থেকে তিন হাজার মানুষের ইফতারের আয়োজন ছিল।
ইফতার করতে আসেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। মানুষে মানুষে নেই কোনো ভেদাভেদ। তাদের মুখে লেগে থাকে ক্লান্তি জড়ানো অমিয় হাসি। এত মানুষের সঙ্গে বসে ইফতার করতে পেরে যেন তাদের আনন্দের কোন শেষ নেই। সবাই বসেছেন এক সঙ্গে, ইফতার করছেন মুখোমুখি হয়ে এক প্লেটে। নেই কোনো বৈষম্য বা হিংসা-বিদ্বেষ।
নাসির উদ্দিন। পেশায় একজন রিকশাচালক। তিনি বলেন, সারাদিন রিকশা চালিয়ে এখানে ইফতার করতে আসি। যে আয় হয় তা থেকে কোন মতে সংসার চলে যায়। ইফতার কিনে খাবার সামর্থ্য নেই। তাই প্রতি রোজায় বায়তুল মোকাররম মসজিদে আসি বিনামূল্যে ইফতার করতে। শুধু জামিল একা নয়। তার মতো অনেক পথচারী, রিকশাচালক, ফেরিওয়ালা এসেছেন এখানে ইফতার করতে।
চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধা জামাল উদ্দিন। ঢাকায় এসছেন চিকিৎসার জন্য। হাসপাতালে ডাক্তার দেখানো শেষে তিনিও এখানে এসছেন ইফতার করতে। ৭১ বছর বয়সী এ বৃদ্ধ বলেন, রাতের ট্রেনে বাড়িতে যাবো। তাই বায়তুল মোকাররম মসজিদে এসেছি নামাজ আদায় করতে। সঙ্গে এখানে ইফতারের বিশাল আয়োজন দেখে বসে পড়লাম। আল্লাহ্র রহমতে যদি তিনি আমাকে কবুল করে নেন।
হুন্দাই কোম্পানির এডমিন বিভাগের কর্মকর্তা শাখাওয়াত হোসেন। মিরপুরের কালসি থেকে তিনি এখানে এসেছেন ইফতার করতে। তিনি বলেন, এখানে ধনী-ফকির নেই, সবাই মুসল্লি। আমার এখানে ইফতার করতে অনেক ভালো লাগে। আমার বোনের বাসা পল্টনে, তা সত্ত্বেও এ মসজিদে এসেছি। বড় ইফতারে বড় সওয়াব বলে মনে করি। তাই দুইদিন যাবত এখানে ইফতার করছি। তিনি বলেন, বিনামূল্যে ইফতার এটা কেউ দেখেন না। সবাই মিলে ইফতার করতে পারছি এটাই বড় বিষয়।
প্রতি রমজানে ইফতার আয়োজনের দায়িত্ব থাকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদ ও মার্কেট বিভাগের ওপর। তারাই ইফতারের আয়োজন ও সুষ্ঠুভাবে বণ্টন এবং শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করে থাকেন। ২০০৯ সাল থেকে মূলত তারা বৃহৎ পরিসরে ইফতারির আয়োজন শুরু করেন। তখন ১ হাজার থেকে ১২শ’ রোজাদার মুসল্লির ইফতারির সংকুলান হত। কিন্তু রোজাদারের সঙ্গে সঙ্গে তাদের জন্য বরাদ্দও বেড়েছে। বর্তমানে ইফতারকারীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে চার হাজার।
এ বিষয়ে জাতীয় মসজিদ ও মার্কেট বিভাগের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিবছর মুসল্লিদের ইফতার করানোর জন্য একটা বাজেট রাখে। এবারও রেখেছে। সেখান থেকেই ইফতার বাবদ খরচ করা হয়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইফতার আয়োজনের বাইরেও তাবলীগ জামাতের পক্ষ থেকে মসজিদের শাহানের উত্তর পাশে প্রায় ৩০০ মানুষের ইফতারের আয়োজন করা হয়। আর হাবিবুর রহমান নামে এক মধু বিক্রেতা প্রায় ৫০ জন রোজাদারকে নিজ অর্থে ইফতার করান। এ ছাড়া মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে সাধারণ মুসল্লিদের জন্য আলাদা ইফতারির আয়োজন করে বায়তুল মোকাররম ব্যবসায়ী সমিতি। সমিতির পক্ষ থেকে প্রতিদিন এখানে ইফতার সামগ্রী পাঠিয়ে দেয়া হয়।
রোজা উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন (ইফা) নানা উদ্যোগ নিয়েছে। ইফতার ছাড়াও তাদের আয়োজনের মধ্যে আছে- কুরআন তেলাওয়াত, বিনামূল্যে কুরআন বিতরণ, কুরআন শিক্ষা দেয়া, মহিলাদের জন্য কুরআন শিক্ষার বিশেষ ব্যবস্থা, ইসলামিক প্রদর্শনী, মাসব্যাপী ইসলামিক বইমেলা, আলোচনা সভা ইত্যাদি।
ছিলো তৃতীয় রমজান।
এদিন বায়তুল মেকাররম জাতীয় মসজিদে ঘুরে দেখা যায়, আসরের নামাজ শেষ হতেই রোজাদাররা মসজিদের পূর্ব পাশের ফাঁকা স্থানে (শাহানে) বসতে শুরু করেন। এক রোজাদার অন্য রোজাদারকে বসার জন্য ডাকছেন। মঞ্চে চলছে রোজার তাৎপর্যের বিষয়ে আলোচনা, খত্মে বোখারী পাঠ, ইসলামী সংগীত। সবাই গুরুত্ব সহকারে ইসলামিক এ আলোচনা শুনছেন। ঘড়ির কাঁটা ইফতারের সময়ে গড়াতে শাহানের স্থান পর্পিূর্ণ হয়ে যায়।
ইফতারের কয়েক মিনিট পূর্বে মসজিদের স্বেচ্ছাসেবকরা ঘোষণা দিলেন সবাইকে সারিবদ্ধভাবে বসার জন্য। একদিকে শাহানের মূল মঞ্চে চলছে কুরআন তিলাওয়াত। তিলাওয়াত শেষ হতেই প্রভুর পানে দু’হাত তুলছেন মুসল্লিরা। চলছে দোয়ার অনুষ্ঠান। এরই মধ্যে প্রত্যেক রোজাদার মুসল্লির সামনে ইফতার থালা এবং শরবতের গ্লাস পৌঁছে গেছে। এদিন ইফতার আয়োজনে ছিলো ছোলা, মুড়ি, আলুর চপ, কলা, বেগুনি, খেজুর, শরবত, জিলাপিসহ ১০ রকমের খাবার।
প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও রমজানের শুরুর দিন থেকে রোজাদার মুসল্লিদের ইফতার করানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ইফা। এ বছর মোট ১ লাখ ২০ হাজার রোজাদারের জন্য ২৬ লাখ টাকা ইফতারে বরাদ্ধ রয়েছে। এ হিসেবে প্রতিদিন চারহাজার রোজাদার মুসল্লিকে তারা ইফতার করাবেন। গতবছর থেকে ইফতারকারীর সংখ্যা এবছর প্রায় ১ হাজার বাড়ানো হয়েছে। গত বছর ইফার পক্ষ থেকে তিন হাজার মানুষের ইফতারের আয়োজন ছিল।
ইফতার করতে আসেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। মানুষে মানুষে নেই কোনো ভেদাভেদ। তাদের মুখে লেগে থাকে ক্লান্তি জড়ানো অমিয় হাসি। এত মানুষের সঙ্গে বসে ইফতার করতে পেরে যেন তাদের আনন্দের কোন শেষ নেই। সবাই বসেছেন এক সঙ্গে, ইফতার করছেন মুখোমুখি হয়ে এক প্লেটে। নেই কোনো বৈষম্য বা হিংসা-বিদ্বেষ।
নাসির উদ্দিন। পেশায় একজন রিকশাচালক। তিনি বলেন, সারাদিন রিকশা চালিয়ে এখানে ইফতার করতে আসি। যে আয় হয় তা থেকে কোন মতে সংসার চলে যায়। ইফতার কিনে খাবার সামর্থ্য নেই। তাই প্রতি রোজায় বায়তুল মোকাররম মসজিদে আসি বিনামূল্যে ইফতার করতে। শুধু জামিল একা নয়। তার মতো অনেক পথচারী, রিকশাচালক, ফেরিওয়ালা এসেছেন এখানে ইফতার করতে।
চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধা জামাল উদ্দিন। ঢাকায় এসছেন চিকিৎসার জন্য। হাসপাতালে ডাক্তার দেখানো শেষে তিনিও এখানে এসছেন ইফতার করতে। ৭১ বছর বয়সী এ বৃদ্ধ বলেন, রাতের ট্রেনে বাড়িতে যাবো। তাই বায়তুল মোকাররম মসজিদে এসেছি নামাজ আদায় করতে। সঙ্গে এখানে ইফতারের বিশাল আয়োজন দেখে বসে পড়লাম। আল্লাহ্র রহমতে যদি তিনি আমাকে কবুল করে নেন।
হুন্দাই কোম্পানির এডমিন বিভাগের কর্মকর্তা শাখাওয়াত হোসেন। মিরপুরের কালসি থেকে তিনি এখানে এসেছেন ইফতার করতে। তিনি বলেন, এখানে ধনী-ফকির নেই, সবাই মুসল্লি। আমার এখানে ইফতার করতে অনেক ভালো লাগে। আমার বোনের বাসা পল্টনে, তা সত্ত্বেও এ মসজিদে এসেছি। বড় ইফতারে বড় সওয়াব বলে মনে করি। তাই দুইদিন যাবত এখানে ইফতার করছি। তিনি বলেন, বিনামূল্যে ইফতার এটা কেউ দেখেন না। সবাই মিলে ইফতার করতে পারছি এটাই বড় বিষয়।
প্রতি রমজানে ইফতার আয়োজনের দায়িত্ব থাকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদ ও মার্কেট বিভাগের ওপর। তারাই ইফতারের আয়োজন ও সুষ্ঠুভাবে বণ্টন এবং শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করে থাকেন। ২০০৯ সাল থেকে মূলত তারা বৃহৎ পরিসরে ইফতারির আয়োজন শুরু করেন। তখন ১ হাজার থেকে ১২শ’ রোজাদার মুসল্লির ইফতারির সংকুলান হত। কিন্তু রোজাদারের সঙ্গে সঙ্গে তাদের জন্য বরাদ্দও বেড়েছে। বর্তমানে ইফতারকারীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে চার হাজার।
এ বিষয়ে জাতীয় মসজিদ ও মার্কেট বিভাগের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিবছর মুসল্লিদের ইফতার করানোর জন্য একটা বাজেট রাখে। এবারও রেখেছে। সেখান থেকেই ইফতার বাবদ খরচ করা হয়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইফতার আয়োজনের বাইরেও তাবলীগ জামাতের পক্ষ থেকে মসজিদের শাহানের উত্তর পাশে প্রায় ৩০০ মানুষের ইফতারের আয়োজন করা হয়। আর হাবিবুর রহমান নামে এক মধু বিক্রেতা প্রায় ৫০ জন রোজাদারকে নিজ অর্থে ইফতার করান। এ ছাড়া মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে সাধারণ মুসল্লিদের জন্য আলাদা ইফতারির আয়োজন করে বায়তুল মোকাররম ব্যবসায়ী সমিতি। সমিতির পক্ষ থেকে প্রতিদিন এখানে ইফতার সামগ্রী পাঠিয়ে দেয়া হয়।
রোজা উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন (ইফা) নানা উদ্যোগ নিয়েছে। ইফতার ছাড়াও তাদের আয়োজনের মধ্যে আছে- কুরআন তেলাওয়াত, বিনামূল্যে কুরআন বিতরণ, কুরআন শিক্ষা দেয়া, মহিলাদের জন্য কুরআন শিক্ষার বিশেষ ব্যবস্থা, ইসলামিক প্রদর্শনী, মাসব্যাপী ইসলামিক বইমেলা, আলোচনা সভা ইত্যাদি।
No comments