বিচ্ছেদপ্রাপ্ত
মেগান মার্কেল। হলিউড থেকে সরাসরি বৃটিশ রাজবধু। বিশ্ব চমকানো এক কাহিনীর
জন্ম দিয়ে নতুন এক রেকর্ড গড়লেন তিনি। এর আগে তার মতো কেউ হলিউডের খোলামেলা
দুনিয়া ছেড়ে গণ্ডিবদ্ধ রাজকীয় জীবন বেছে নিয়েছেন কিনা তা অজানা। শুধু যে
হলিউড ছেড়ে তিনি রাজপরিবারে এসে পা ফেলেছেন তাই নয়। তিনি মার্কিন
অভিনেত্রী। সুদূর যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যানজেলেসে তার জন্ম। সেখানেই বেড়ে
উঠেছেন। পড়াশোনা করেছেন। তারপর হলিউড মাত করেছেন। বিশ্বজুড়ে তার অনেক ভক্ত।
তিনি বেড়াতে বের হলেই সেখানে ভক্তের ঢল নামতো। এখন তিনি সেই পরিচয় থেকে
বেরিয়ে এসে শুধুই বৃটিশ রাজপরিবারের একজন সদস্য। প্রিন্সেস ডায়ানা ও
প্রিন্স চার্লসের ছোট ছেলে প্রিন্স হ্যারির সঙ্গে ১৯ শে মে বিবাহ বন্ধনে
আবদ্ধ হন তিনি। মেগান মার্কেলের পুরো নাম র্যাচেল মেগান মার্কেল। ১৯৮১
সালের ৪ঠা আগস্ট তার জন্ম ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যানজেলেসে। তার মা ডোরিয়া
র্যাগল্যান্ড একজন সমাজকর্মী ও যোগব্যায়ামের পরিদর্শক। তিনি বসবাস করেন
ক্যালিফোর্নিয়ার ভিউ পার্ক-উইন্সর হিলসে। অন্যদিকে মেগান মার্কেলের পিতা
থমাস মার্কেল সিনিয়র। তিনি বসবাস করেন মেক্সিকোর রোসারিটোতে। তিনি একজন এমি
এওয়ার্ড বিজয়ী অবসরপ্রাপ্ত আলোকসজ্জা বিষয়ক পরিচালক। মেগান মার্কেলের বয়স
যখন ৬ বছর তখন তাদের বিচ্ছেদ হয়। মেগান মার্কেলের আছে পিতার দিক থেকে আরো
দুটি সৎভাই। তারা হলেন থমাস মার্কেল জুনিয়র ও সামান্থা গ্রান্ট। নিজের
পূর্বসূরি সম্পর্কে মেগান মার্কেল বলেন, আমার পিতা একজন ককেসিয়ান এবং মা
আফ্রিকান বংশোদ্ভুত মার্কিনি। আমি হাফ ব্লাক ও হাফ হোয়াইট। আমি কে সে কথা
বলতে আমি গর্ব বোধ করি। আমি শেয়ার করতে চাই আমি কে। কেথা থেকে এসেছি। মেগান
মার্কেল বড় হয়ে ওঠেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার হলিউডে। পড়াশোনা
করেছেন একটি বেসরকারি স্কুলে। শুরু করেছেন হলিউড লিটল রেড স্কুল হাউসে।
মাত্র ১১ বছর বয়সে তিনি সফলতার সঙ্গে একটি একটি জাতীয় টেলিভিশনের বাণিজ্যিক
পরিবর্তন বিষয়ে কাজ পান। এ সময় নিক নিউজের লিন্ডা এলারবি তাকে ওই সময়ের
সবচেয়ে আবেদনময়ী হিসেবে আখ্যায়িত করেন। মেগান মার্কেল লস অ্যানজেলেসে
ক্যাথোলিক মেয়েদের জন্য বেসরকরি স্কুল ইমাকুলেট হার্ট হাই স্কুলে যোগ দেন।
তবে তিনি নিজে ছিলেন প্রটেস্ট্যান্ট। এরপর তিনি পড়শোনা করেন নর্থওয়েস্টার্ন
ইউনিভার্সিটিতে। এরই এক পর্যায়ে যোগ দেন কাপ্পা কাপ্পা গামা ধর্মীয়
অনুষ্ঠানে। উপরন্তু তিনি আফ্রিকান-আমেরিকান নাট্যসংলাপ নিয়ে পড়াশোন করতে
থাকেন। এ নিয়ে মাঝে মাঝেই তিনি তার প্রফেসরের সঙ্গে কথা বলতেন। মেগান
মার্কেল ২০০৩ সালে নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন
করেন। অর্জন করেন ব্যাচেলরস ডিগ্রি। একটি ডিগ্রি অর্জন করেন থিয়েটারের ওপর।
পড়াশোনা করেছেন আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির ওপর। আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস
এয়ারসে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে তিনি করেছেন ইন্টার্নশিপ। স্পেনের মাদ্রিদে
একটি সেমিস্টারে পড়াশোনা করেছেন। প্রথম দিকে তিনি যখন অভিনয় শুরু করেন তখন
তাকে টিকে থাকার জন্য ফ্রিল্যান্ড ক্যালিগ্রাফার হিসেবে কাজ করতে হয়।
‘জেনারেল হসপিটাল’ নামে একটি দিনের বেলার একটি সোপ অপেরায় নার্সের ভূমিকায়
তিনি অভিনয় করেন। এটি ছিল একটি ছোট্ট চরিত্র। এটাই তার প্রথম পর্দায় আসা।
ক্যারিয়ারের শুরুতে মেগান মার্কেল টেলিভিশন শো ‘সেঞ্চুরি সিটি (২০০৪)’ ‘দ্য
ওয়ার এট হোম (২০০৬) এবং ‘সিএসআই: এনওয়াই (২০০৬)’ -এ অভিনয় করেন অতিথি
তারকা হিসেবে। এ ছাড়া তিনি অভিনয় ও মডেলিং হিসেবে বেশ কিছু চুক্তি স্বাক্ষর
করেন। ২০১১ সালের জুলাইতে তিনি ইউএসএ নেটওয়ার্কের শো ‘স্যুট’-এ
অন্তর্ভুক্ত হন। এ ছাড়া ২০১০ সালে তিনি দুটি ছবিতে কাজ করেন। এর একটি হলো
‘গেট হিম টু দ্য গ্রিক’। অন্যটি ‘রিমেমবার মি’। এমনিভাবে তিনি একের পর এক
ছবিতে কাজ করে গেছেন। রিমেমবার মি ছবিতে অভিনয়ের জন্য তিনি পেয়েছিলেন এক
লাখ ৮৭ হাজার ডলার। অন্যদিকে একটি শর্টফিল্ম ‘দ্য ক্যান্ডিডেট’-এ অভিনয়ের
জন্য আয় করেন ১ লাখ ৭১ হাজার ৪২৯ ডলার। ‘স্যুটে’ অভিনয়ের জন্য তাকে প্রতিটি
পর্বের জন্য দেয়া হয়েছে ৫০ হাজার ডলার করে। এ হিসাব ফরচুন ম্যাগাজিনের। এ
হিসেবে তার ওই এক ক্যারিয়ারে অভিনয় করে বছরে আয় হয়েছে ৪ লাখ ৫০ হাজার ডলার।
এ ছাড়া লাইফস্টাইল ব্লগার হিসেবে তিনি বছরে উপার্জন করেছেন ৮০ হাজার ডলার।
সব মিলিয়ে তার মোট আয়ের পরিমাণ ৫০ লাখ ডলার। চারদিকে যখন তার সুনাম তখন
অভিনেতা ও প্রয়োজক ট্রেভর এঙ্গেলসনের সঙ্গে ২০০৪ সালে একটি সম্পর্ক গড়ে ওঠে
তাদের। এর চূড়ান্ত পরিণতি ঘটে জ্যামাইকার ওকো রিওসে ২০১১ সালের ১০ই
সেপ্টেম্বর। এদিন তারা বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন। তবে সেই বিয়ে মাত্র দু’বছর
টিকে ছিল। ২০১৩ সালের আগস্টে তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। তারপর কেটে গেছে আরো তিন
বছরের মতো। ২০১৬ সালের জুনে তার দিকে দৃষ্টি পড়ে প্রিন্স হ্যারির। গড়ে ওঠে
এক প্রেমের সম্পর্ক। একজন ঘনিষ্ঠ বন।ধু একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
সেখানেই সাক্ষাত হয় প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কেলের। এ ঘটর মিডিয়া প্রকাশ
করেন ২০১৬ সালের অক্টোবরে। ২০১৬ সালের ৮ই নভেম্বর রাজপরিবারের যোগাযোগ
বিষয়ক সচিব একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন। তাতে মেগান মার্কেলের প্রতি সমালোচনা
করা হয়। এতে মেগান মার্কেলকে ‘সেক্সিজম, রেসিজম’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন
তিনি। তার অবমাননা হয় এমন কথা তুলে ধরেন। এ খবরগুলো জাতীয় সংবাদপত্রগুলোর
প্রথম পৃষ্ঠায় উঠে আসে। তবে এ নিয়ে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথম মুখ খোলেন
মেগান মার্কেল। তিনি কথা বলেন ভ্যানিটি ফেয়ার ম্যাগাজিনের কাছে।
প্রথমবারের মতো তিনি প্রকাশ্যে স্বীকার করেন। বলেন, প্রিন্স হ্যারির সঙ্গে
তিনি প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন। পরের মাসেই কানাডার টরোন্টোতে
ইনভিকটাস গেমসে প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে দেখা যায় প্রিন্স হ্যারি ও মেগান
মার্কেলকে। ২০১৮ সালের জানুয়ারি। এ মাসে সব রকম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম
থেকে একাউন্ট ডিলিট করে দেন মেগান মার্কেল। প্রিন্স হ্যারির সঙ্গে তার
এনগেজমেন্ট ঘোষণা দেয়া হয় ২০১৭ সালের ২৭ শে নভেম্বর। তারপর মার্কেল বেশ
কয়েকবার সাক্ষাত করেছেন দ্বিতীয় রাণী এলিজাবেথের সঙ্গে। অবশেষে এর
পরিসমাপ্তি ঘটে ১৯ শে মে। পর্দার রানী নেমে আসেন বৃটেনের রাজপরিবারে।
No comments