ঢাকা মেডিকেল থেকে বকুল যখন ভারতের হাসপাতালে

মাসের পর মাস অজ্ঞাত এক বুকব্যথা রোগে ভুগছিলেন বাংলাদেশি ৩৭ বছরের নারী বকুল আক্তার। বাংলাদেশে তার রোগ ধরা পড়েনি। আর সেটাই কিনা মাত্র ১৫ মিনিটে তিনি আরোগ্য হলেন ভারতের লক্ষ্ণৌতে। গতকাল এ খবর দিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া। সঞ্জয় গান্ধী পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস (এসজিপিজিআই)-এ গত ১৯শে এপ্রিল চিকিৎসা হয় তার। এশিয়ার সাধারণ একটি রোগের নাম হলো হৃদরোগ। শনাক্ত হলো যে, বকুল এমন এক ধরনের হৃদরোগে ভুগছিলেন, তা বিরল। ডাক্তারি পরিভাষায় তিনি করোনারি আর্টারি ডিজিজ (ক্যাড)-এর খুবই অপ্রচলিত ঘরানার এক রোগের শিকার হয়েছেন। এর ফলে তার প্রধান ধমনীর মুখ আক্রান্ত হয়। ক্যাড  রোগীদের মধ্যে মাত্র ৫ ভাগ রোগীর  দেহে এটা শনাক্ত হয়। বকুল বলেন, এতদিন চিকিৎসকরা তার গ্যাস্ট্রিক হয়েছে বলে সন্দেহ করে আসছিলেন। যদিও তিনি অসহ্য ব্যথায় মরে যাওয়ার মতো অনুভূতি বহন করে চলছিলেন।
বকুলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ এসজিপিজিআই-এর গ্যাস্ট্রোঅ্যান্টারোলজি বিভাগে রেফার করেছিল। কিন্তু ওই বিভাগের প্রফেসর উদয় ঘোষাল বকুলকে তার বুকের পরীক্ষার জন্য কার্ডিওলজি বিভাগে  প্রেরণ করেন। কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান প্রফেসর পিকে গোয়েল বলেন, বকুল হেঁটে আসার সময় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন। তার ব্যথাতুর মুখে স্পষ্টতই অ্যাঞ্জাইনায় আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ ফুটে উঠেছিল। অ্যাঞ্জাইনা  রোগীরা একধরনের যন্ত্রণা সহ্য করেন, যখন রোগের কারণে তাদের বুকের  পেশি পর্যাপ্ত অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত লাভ করে না। বকুলকে দ্রুত অ্যানজিওপ্লাস্টি করানো হয়। আর তার রিপোর্টেই এ ক্যাড শনাক্ত হয়।
বাংলাদেশে কেন বকুলের রোগ শনাক্ত হয়নি, সেই বিষয়ে প্রফেসর গোয়েল সাংবাদিকদের বলেন, তার শরীরের প্রধান ধমনীর আগার সরু প্রান্ত আক্রান্ত হয়েছিল। এটা সচরাচর দেখা যায় না। আর রোগ শনাক্ত করার বিষয়টি বিশেষজ্ঞ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার বিষয়, যা আমাদের রয়েছে।’ তিনি আরো বলেন,  রোগীকে নিরাময় করতে তারা একটি অপ্রচলিত উপায় অবলম্বন করেন। বকুলকে তারা কোনো কার্ডিয়াক সার্জেন্টের কাছে প্রেরণ করেননি। কারণ সেখানে তাকে লম্বা লাইনে থাকতে হবে। সে কারণে আমরা তার অ্যানজিওপ্লাস্টি করাই এবং ১৫ মিনিট সময় ন্যূনতম ব্যথা পেতে পারেন, এমন একটি প্রক্রিয়া অবলম্বন করে আমরা তার উপশম নিশ্চিত করতে সক্ষম হই।
বকুল সমাজের একটি অনগ্রসর অংশ  থেকে উঠে এসেছেন। তার কথায়, আমি ধরেই নিয়েছিলাম, এই ব্যথা সহ্য করাই হবে আমার নিয়তি। আমি ভাবতাম এই ব্যথা নিয়েই আমাকে মরতে হবে। কিন্তু এই চিকিৎসকরা আমার জন্য একধরনের ম্যাজিকই  দেখালেন। এই চিকিৎসা আমার জীবনে আরো কয়েকটি বছর যুক্ত করেছে। প্রতি নিঃশ্বাসে আমি তাদের জন্য দোয়া করবো।

No comments

Powered by Blogger.