সুবর্ণচরে তরমুজের বাম্পার ফলন by নাসির উদ্দিন বাদল
নোয়াখালীর
সুবর্ণচর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এবার তরমুজ চাষে বাম্পার ফলন হয়েছে।
ইতিমধ্যে ক্ষেত থেকে তরমুজ তুলে বিক্রি শুরু করেছেন চাষিরা। নোয়াখালী জেলার
পাশাপাশি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে চালান হচ্ছে এসব তরমুজ। আবহাওয়া ভালো
থাকায় প্রচুর ফলন ও ন্যায্যমূল্য পাওয়ায় চাষিদের আনন্দের অন্ত নেই। উপজেলার
প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরজমিন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সুবর্ণচর উপজেলার
মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন ও চর ক্লার্ক ইউনিয়নের বিস্তৃত এলাকাজুড়ে তরমুজের বিশাল
ক্ষেত। উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের মেঘনা মার্কেটের পাশে চর আকরাম
গ্রামের চাষি আমির মিয়া তরমুজ তুলছেন। তোলা তরমুজের এক বিশাল স্তূপ সেখানে
দেখা যায়। আমির মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমরা এবার তিন মাস আগে
থেকেই ২২ কানি জমিতে আগাম তরমুজ চাষ করি। পরে ক্ষেতে পরিচর্যার পাশাপাশি
নিয়মিত সার, পানি বিভিন্ন ভিটামিন প্রয়োগ ও আবহাওয়া ভালো থাকায় এবার
তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। আমির মিয়া জানান, আমাদের এবার খরচ হয়েছে প্রায়
বিশ লাখ টাকা। আমরা ইতিমধ্যে পনের লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছি এবং মোট
পঞ্চাশ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারবো ইনশাআল্লাহ। পার্শ্ববর্তী আরেক
তরমুজ চাষি মো. নাছির জানান, সাড়ে তিন কানি জমিতে প্রায় খরচ হয়েছে তিন লাখ
টাকা। আমরা এবার ৯ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছি এবং আমরা প্রচুর লাভবান
হয়েছি। একই গ্রামের সিরাজ মিয়া জানান, আমরা নিজস্ব উদ্যোগে এবার দুই কানি
জমিতে তরমুজ চাষ করি। প্রথমে বীজ বপন করলে এতে কিছুদিন পরে একটা অসুখে
চারাগুলো মরে যায়, পরে আমরা আবার বীজ বপন করি এবং ফসল পাওয়া পর্যন্ত আমার
খরচ হয় এক লাখ চল্লিশ হাজার টাকা এবং আমি মোট তরমুজ বিক্রি করেছি তিন লাখ
পঞ্চাশ হাজার টাকার। উপজেলার চরক্লার্ক ইউনিয়নের তরমুজ চাষি মো. মোস্তফা
মিয়া জানান, আমি এবার চার কানি জমিতে তরমুজ চাষ করি। আমার মোট খরচ হয়েছে
প্রায় দুই লাখ টাকা। আমি এবার তরমুজ বিক্রি করেছি আট লাখ টাকার। প্রথম
বারেই আমি ভালো লাভবান হয়েছি বলেও জানান তিনি। তার পার্শ্ববর্তী চাষি মো.
বেলাল মিয়া জানান, আমিও প্রথমবারের মতো আড়াই কানি জমিতে তরমুজ চাষে এক লাখ
আশি হাজার টাকা বিনিয়োগ করি এবং আমার তরমুজ বিক্রি হয় প্রায় চার লাখ পঞ্চাশ
হাজার টাকা। এ ছাড়াও সুবর্ণচর উপজেলার চর ওয়াপদা, চরবাটা, চর আমান উল্যাহ ও
চর জব্বারসহ প্রতিটি ইউনিয়নেও আগাম তরমুজ চাষ করে কৃষকরা। এতে আবহাওয়া
অনুকূলে থাকায় ভালো ফলন ও ন্যায্য দাম পেয়ে কৃষকের মুখে আনন্দের অন্ত নেই।
কৃষকরা জানান, কৃষি কর্মকর্তার কোনো সহযোগিতা বা পরামর্শ আমরা পাইনি। আমদের
এবার সম্পূর্ণ নিজস্ব ধারণায় চাষাবাদ করতে হয়েছে। তবে, ভালো ফলন পাওয়ার
তেমন অভিযোগের চাপ ছিল না কৃষকদের মুখে। এদিকে সুবর্ণচর উপজেলার সহকারী
কৃষি কর্মকর্তা নুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি মানবজমিনকে বলেন, এবার
আমাদের লক্ষমাত্রা হলো ৩,০০০ হেক্টর। তবে, লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে তরমুজ চাষ
হয়েছে ৪.২৫০ হেক্টর জমিতে এবং ইতিমধ্যে কৃষকরা আগাম ফলন তুলছে প্রায় ২.০০০
হেক্টর জমি থেকে।
আর বাকি চাষিরা জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার অসম্ভব ফলন হবে এবং আমরাও এবার প্রচুর পরিমাণ লাভবান হতে পারবো বলে আশাবাদ করেন তারা। নোয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায় চলতি মৌসুমে জেলায় চার হাজার ৩৭৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সুবর্ণচর উপজেলায় চার হাজার ২শ’ হেক্টর, সদর উপজেলায় ১০৫ হেক্টর, হাতিয়া উপজেলায় ১১ হেক্টর, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ৩ হেক্টর, জমিতে কবিরহাট উপজেলায় ৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. আবুল হোসেন মানবজমিনকে জানান, তরমুজ এ বছর নোয়াখালীর চরাঞ্চলে অন্য বছরের চেয়ে ভালোই হয়েছে। কৃষি বিভাগ নিয়মিত নজর রাখছে। শুরুতে আবহাওয়ার কারণে চাষিদের কিছুটা অসুবিধা থাকলেও এখন তরমুজের ভালো ফলন হওয়ায় কৃষকরাও স্বস্তিতে আছেন।
আর বাকি চাষিরা জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার অসম্ভব ফলন হবে এবং আমরাও এবার প্রচুর পরিমাণ লাভবান হতে পারবো বলে আশাবাদ করেন তারা। নোয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায় চলতি মৌসুমে জেলায় চার হাজার ৩৭৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সুবর্ণচর উপজেলায় চার হাজার ২শ’ হেক্টর, সদর উপজেলায় ১০৫ হেক্টর, হাতিয়া উপজেলায় ১১ হেক্টর, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ৩ হেক্টর, জমিতে কবিরহাট উপজেলায় ৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. আবুল হোসেন মানবজমিনকে জানান, তরমুজ এ বছর নোয়াখালীর চরাঞ্চলে অন্য বছরের চেয়ে ভালোই হয়েছে। কৃষি বিভাগ নিয়মিত নজর রাখছে। শুরুতে আবহাওয়ার কারণে চাষিদের কিছুটা অসুবিধা থাকলেও এখন তরমুজের ভালো ফলন হওয়ায় কৃষকরাও স্বস্তিতে আছেন।
No comments