ঢামেকে বিনা বেতনে কর্মী চাঁদাবাজি by শুভ্র দেব
ওরা
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিনা বেতনের কর্মী। ভালো চিকিৎসার জন্য
দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ছুটে আসেন রোগীরা। চিকিৎসা সেবা যেমন হোক না
কেন ঢামেকে আসার পর জরুরি বিভাগ থেকে শুরু হয় রোগী ও রোগীর স্বজনদের
ভোগান্তি। জরুরি বিভাগে ভর্তি থেকে শুরু করে রোগীর ছাড়পত্র পাওয়া পর্যন্ত
সময়ে রোগীর স্বজনদের গুনতে হয় বিভিন্ন ঘাটে বকশিশের নামে টাকা। আর রোগী
জিম্মি করে বকশিশ নেয়ার কাজে বড় ধরনের সিন্ডিকেট কাজ করে। এই সিন্ডিকেটের
নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন হাসপাতালের কয়েকজন সরদার ও ওয়ার্ড মাস্টার। তাদের
সহযোগিতা করে আসছেন স্পেশাল বয় নামের একটি গ্রুপ। যাদের কর্তৃপক্ষ বিনা
বেতনে নিয়োগ দিয়েছেন। মূলত তারা রোগীকে ট্রলি-হুইল চেয়ার দিয়ে এক স্থান
থেকে অন্য স্থানে নিয়ে গিয়ে বকশিশ আদায় করে। এই বকশিশ ট্রলিতে ৩০০ থেকে ৫০০
টাকা। সুযোগ সুবিধা ও ব্যক্তি বিশেষে সেই বকশিশ ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা হয়ে
যায়। প্রতিদিন গড়ে ৭৭ জন স্পেশাল বয় এই বকশিশ আদায় করে। চাহিদামতো বকশিশ
দিতে না পারলে অনেক সময় রোগীর স্বজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। এর বাইরে
বহিরাগত ২৫ জন নারী হুইল চেয়ার দিয়ে রোগীকে বহন করে টাকা আদায় করছে। তারাও
রোগীদের জিম্মি করে টাকা নেয়। অভিযোগ আছে হাসপাতালের বাইরে থেকে হুইল চেয়ার
কিনে এনে তারা এই কাজ করছে। আর এই গ্রুপে কাজ করছে শান্তা, রীণা, শিলা,
রওশন, শারমিন, নাজমা, জেসমিন, লুৎফা, রহিমা ছাড়াও আরও কয়েকজন। তাদের
বিরুদ্ধে সরকারি হাসপাতালের রোগী প্রাইভেট হাসপাতালে ভাগানোর অভিযোগও
রয়েছে। প্রশাসনের সামনে এসব ঘটনা ঘটলে বেশির ভাগ সময় প্রশাসন দেখে না দেখার
ভান করে। বহিরাগতদের দিয়ে রোগী বহনের ব্যবস্থা করা; প্রয়োজনের তুলনায় কম
ট্রলি থাকা; এবং স্পেশাল বয়দের কোনো নিয়মনীতি ও মনিটরিং না করায় দিন দিন
রোগী হয়রানি বাড়ছে। কোনো নিয়মনীতি না থাকাতে স্পেশাল বয়রা নিজেদের মতো করে
কাজ করছে। মঙ্গলবারের ঘটনা। পেটে ব্যথা নিয়ে ঢামেক হাসপাতালে যান
সংবাদকর্মী আবু মূসা। নতুন ভবনের ছয়তলায় প্রাথমিক চিকিৎসার পর সেখানকার
চিকিৎসকরা তাকে পুরাতন ভবনের সার্জারি ২২০ নম্বর ওয়ার্ডে স্থানান্তর করেন।
অসুস্থ এই রোগীকে নিয়ে সার্জারি ওয়ার্ডে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন হয় ট্রলির।
কিন্তু প্রায় দেড় থেকে দুই ঘণ্টা খোঁজাখুঁজির পর তার স্বজনরা কোনো ট্রলি
খোঁজে পাচ্ছিলেন না। যে কয়টা ট্রলি পাওয়া যায় তার কোনোটাই এই রোগীকে নিয়ে
যেতে চায়নি। বেশি টাকা দিয়ে বুকিং করা রোগীদের বহন করতেই ব্যস্ত স্পেশাল
বয়রা। অবশেষে হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় ও অন্যদের সহযোগীতায় ৩০০ টাকা দিয়ে একটি
ট্রলি দিয়ে এই রোগীকে সার্জারি ওয়ার্ডে নেয়া হয়। এ চিত্র এখন ঢামেকে
হরহামেশাই দেখা যায়। চিকিৎসার চেয়ে রোগী স্থানান্তরের জন্য ট্রলি-হুইল
চেয়ার, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য সিরিয়াল, রোগীর জন্য একটি সিটের
ব্যবস্থা করা এখন বড় কাজ। যদিও চাহিদামতো টাকা দিতে পারলে সবকিছুই হাতের
নাগালে পাওয়া যায়। কিন্তু ঢামেকে চিকিৎসা নিতে আসা বেশির ভাগ রোগীই নিম্ন ও
মধ্যবিত্ত। চিকিৎসার খরচের বাইরে ঘাটে ঘাটে বকশিশ দেয়াটা অনেকের কাছে কঠিন
হয়ে পড়ে। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটেছে এরকমই আরেক ঘটনা। নতুন ভবনের মেডিসিন
বিভাগ থেকে আব্দুল মতিন নামের এক মুমূর্ষু রোগীকে তার স্বজনরা নিয়ে যাবে
প্রাইভেট হাসপাতালে। একটি ট্রলি করে দুজন স্পেশাল বয় তাকে নতুন ভবন থেকে
জরুরি বিভাগের সামনে নিয়ে এসে বকশিশ দাবি করে। রোগীর স্বজন তাদেরকে ১০০
টাকা দিলে তারা ক্ষেপে যায়। এসময় তারা ৫০০ টাকা দাবি করে। স্বজনরা এই টাকা
দিতে অপারগতা দেখান। পরে বাধ্য হয়ে রোগীর স্বজনরা ৩৫০ টাকা দিয়ে পার পান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে ঢামেক হাসপাতালে রোগীদের জিম্মি করে বকশিশ বাণিজ্যর সঙ্গে জড়িত ছিলেন চতুর্থ শ্রেণীর ক’জন প্রভাবশালী কর্মী। তারা হলেন, সরদার দেলোয়ার, সরদার ফুল মিয়া, সরদার আইয়ুব মিয়া, সরদার দেলোয়ার, সরদার আলী ও মোহাম্মদ আলম। এই ছয় সরদার ও স্পেশাল বয়দের যোগসাজশে রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে বকশিশের নামে চাঁদা তোলা হচ্ছে। মূলত তিন শিফটে ট্রলি বাণিজ্য হয়। প্রতি শিফটে দুজন করে সরদার দায়িত্ব পালন করতেন। জানা যায়, শুধু ট্রলির জন্য স্পেশাল বয়দের কাছ থেকে সরদাররা প্রতি মাসে ১ লাখ টাকা করে নিতেন। কাগজপত্রে স্পেশাল বয়দের কোনো পরিচয়ও খোঁজে পাওয়া যায় না। তবে সরদাররা কারণে-অকারণে তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করতেন। গত মাসে এই ছয় সর্দারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। পরে এই ছয় সর্দারকে অন্যত্র সরিয়ে দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সুষ্ঠু জবাব দিতে না পারায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নেয়। ২৯শে মার্চ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে তাদের অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এখন তাদের স্থানে নতুন করে আরো কয়েকজন সর্দার নিয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু এসব সরদারদের অন্যত্র সরিয়ে নিলেও তাদের প্রভাব এখনও রয়ে গেছে। যেসব অভিযোগের জন্য আগের সর্দারদের অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে বর্তমানে হাসপাতালের চিত্র প্রায় একই। জরুরি বিভাগসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জিম্মি করে টাকা নেয়ার সত্যতা পাওয়া যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্পেশাল বয় জানান, বিনা বেতনে তারা কাজ করে। হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে রোগীর স্বজনরা খুশি হয়ে যা দেয় তা নিতে। কিন্তু দাবি না করলে স্বজনরা কম টাকা দেয়। এছাড়া আমাদের তদারকি যারা করেন তাদের অনেক টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলে এখানে কাজ করার কোনো উপায় নেই। ছুটিতে থাকলেও টাকা দিতে হয়। এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন বলেন, কোনো অভিযোগ থাকলে তা অফিসিয়ালি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা ব্যবস্থা নেবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে ঢামেক হাসপাতালে রোগীদের জিম্মি করে বকশিশ বাণিজ্যর সঙ্গে জড়িত ছিলেন চতুর্থ শ্রেণীর ক’জন প্রভাবশালী কর্মী। তারা হলেন, সরদার দেলোয়ার, সরদার ফুল মিয়া, সরদার আইয়ুব মিয়া, সরদার দেলোয়ার, সরদার আলী ও মোহাম্মদ আলম। এই ছয় সরদার ও স্পেশাল বয়দের যোগসাজশে রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে বকশিশের নামে চাঁদা তোলা হচ্ছে। মূলত তিন শিফটে ট্রলি বাণিজ্য হয়। প্রতি শিফটে দুজন করে সরদার দায়িত্ব পালন করতেন। জানা যায়, শুধু ট্রলির জন্য স্পেশাল বয়দের কাছ থেকে সরদাররা প্রতি মাসে ১ লাখ টাকা করে নিতেন। কাগজপত্রে স্পেশাল বয়দের কোনো পরিচয়ও খোঁজে পাওয়া যায় না। তবে সরদাররা কারণে-অকারণে তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করতেন। গত মাসে এই ছয় সর্দারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। পরে এই ছয় সর্দারকে অন্যত্র সরিয়ে দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সুষ্ঠু জবাব দিতে না পারায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নেয়। ২৯শে মার্চ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে তাদের অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এখন তাদের স্থানে নতুন করে আরো কয়েকজন সর্দার নিয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু এসব সরদারদের অন্যত্র সরিয়ে নিলেও তাদের প্রভাব এখনও রয়ে গেছে। যেসব অভিযোগের জন্য আগের সর্দারদের অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে বর্তমানে হাসপাতালের চিত্র প্রায় একই। জরুরি বিভাগসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জিম্মি করে টাকা নেয়ার সত্যতা পাওয়া যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্পেশাল বয় জানান, বিনা বেতনে তারা কাজ করে। হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে রোগীর স্বজনরা খুশি হয়ে যা দেয় তা নিতে। কিন্তু দাবি না করলে স্বজনরা কম টাকা দেয়। এছাড়া আমাদের তদারকি যারা করেন তাদের অনেক টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলে এখানে কাজ করার কোনো উপায় নেই। ছুটিতে থাকলেও টাকা দিতে হয়। এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন বলেন, কোনো অভিযোগ থাকলে তা অফিসিয়ালি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা ব্যবস্থা নেবেন।
No comments