সরজমিন: বিহারি ক্যাম্প by এনা হাসান
ছোট্ট
কক্ষ। আবছা আলো, স্যাঁতসেঁতে। রুমের এক কোণেই চলছে রান্না-বান্না।
গাদাগাদি করে রাখা অল্প কিছু আসবাবপত্র। পাঁচ-ছয় জনের পরিবারের বাস এখানেই।
সকালে টয়লেটের সিরিয়াল পেতে অপেক্ষা করতে হয় ঘণ্টা খানেক। কারণ চল্লিশ
হাজারের মতো মানুষের জন্য ১৫০টির মতো সাধারণ টয়লেট ও গোসলখানা। যার ৫০
শতাংশে নেই পানির ব্যবস্থা। মোহাম্মদপুরে অবস্থিত জেনেভা ক্যাম্পে এভাবেই
দিনপার করছে হাজারো আটকে পড়া পাকিস্তানি। তারা সাধারণত বিহারি হিসেবেই
পরিচিত। আটকে পড়া এই উর্দুভাষীদের অর্ধেকের জন্ম এ দেশেই। ১৯৯২ সালে সরকার ও
আইসিআরসির উদ্যোগে একটি জরিপ করা হয়েছিল। সে সময় বাংলাদেশের ১৩টি জেলায়
বসবাসরত ২ লাখ ৩৮ হাজার বিহারী পাকিস্তান যাবার সিদ্ধান্ত নেয়।
এসপিজিআরসি’র সাধারণ সমপাদক এম শাওকত আলী বলেন, পাকিস্তানে ফেরত যাওয়ার
সিদ্ধান্তের পেছনে প্রধানত দুইটা কারণ ছিল। আমাদের মুখের ভাষা যেহেতু উর্দু
ছিল এটা একটা কারণ। এ ছাড়া এখানকার মানুষদের সঙ্গে আমাদের কিছুটা ভেদাভেদও
ছিল। এই প্রস্তাব দেয়ার পর প্রথমে পাকিস্তান আমাদের ফেরত নেয়ার জন্য
আশ্বস্ত করে কিন্তু পরে তারা আমাদের ফিরিয়ে নেয়নি। পাকিস্তান সরকার আমাদের
সঙ্গে প্রতারণা করেছে। আমাদের নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। তারা আমাদের না ঘরের
করেছে না বাইরের রেখেছে। আমরা এই দেশের কাছে কৃতজ্ঞ। এই দেশ তো তবুও আমাদের
থাকার জায়গা দিয়েছে, পানি দিয়েছে, বিদ্যুৎ দিয়েছে কিন্তু পাকিস্তান তো
আমাদের স্বীকারই করেনি।
জেনেভা ক্যাম্পের সরু রাস্তা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলে চোখে পড়বে একটার সঙ্গে একটা লাগানো শ’ খানেক ঘর। যাতে বাস করছে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ। এদের মধ্যে ৫৫০০ পরিবারই বড় পরিবার। ক্যামেপর ভেতরে প্রবেশ পথে কিছুক্ষণ পরে পরেই ময়লা আবর্জনার স্তূপ। নোংরা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পরিবারের ছয়-আট জন মিলে এক রুমেই থাকছেন অনেকে। আবার অনেকে অপরিকল্পিতভাবেই আটফুট বাই আটফুটের এই জায়গাতে গড়ে তুলছে তৃতীয় চতুর্থ তলা। অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণভাবেই বসবাস করছে তারা। জাফর আহমেদ দীর্ঘদিন ধরে এই ক্যাম্পে বসবাসরত। তিনি বলেন, আমার পরিবারে আমরা আট জন আছি। আমি, আমার স্ত্রী, তিন ছেলে ও তাদের স্ত্রী। এই অবস্থায় একরুমে থাকা একেবারেই অসম্ভব। আমি কী পারবো বলেন আমার ছেলের বউয়ের সামনে আমার স্ত্রীকে নিয়ে ঘুমাতে? নিজেদের প্রাইভেসি বলে কিছু থাকে বলেন? তাই কিছুটা বাধ্য হয়েই উপরে দুইটা রুম উঠালাম।
মোহাম্মদপুরে অবস্থিত বিহারি ক্যামপগুলোর মধ্যে রয়েছে শুধুমাত্র একটি স্কুল। অবাট হেল্পারস দ্বারা পরিচালিত এই স্কুলটি সরকারি সহায়তার বাইরে। সরকারের কাছ থেকে শুধুমাত্র বই ছাড়া শিক্ষাক্ষেত্রে আর কোনো সহায়তা পাচ্ছে না তারা। ক্ষুদ্র পরিসরে পরিচালিত এই স্কুলের পাবলিক পরীক্ষায় পাসের হার ৭০ শতাংশ। এর পেছনে পারিপার্শ্বিক পরিবেশকে দায়ী করেছেন স্কুলটির প্রধান শিক্ষক এম শাওকত আলী। এ ছাড়া ক্যামেপর এই পরিবেশকে ঘিরে চলে নানা অবৈধ ব্যবসা। মাদক, ছিনতাই, চুরি-ডাকাতিসহ নানা অপকর্মে জড়াচ্ছে এখানকার বাসিন্দারা। তাদের একজন বলেন, আসলে আপা অভাবে স্বভাব নষ্ট হয়। এখন আমার হাতে টাকা নাই, কাজ নাই, আমাদের ক্যাম্পের বাইরে কাজের কোনো সুযোগ দেয়া হয় না। বউ বাচ্চা নিয়ে পরিবার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। এ অবস্থায় যদি কেউ আমাকে বলে যে তোমাকে দুইশ’ টাকা দেবো তার বদলে এই কাজটা করে দাও তখন বাধ্য হয়েই এসব অবৈধ কাজে জড়াতে হয়। বিহারী ক্যাম্পে বসবাসরতরা বেশিরভাগই কাজ করে দর্জির দোকানে, রেস্তোরাঁয়, দিন-মজুর কিংবা মেকানিক হিসেবে।
জেনেভা ক্যাম্পের সরু রাস্তা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলে চোখে পড়বে একটার সঙ্গে একটা লাগানো শ’ খানেক ঘর। যাতে বাস করছে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ। এদের মধ্যে ৫৫০০ পরিবারই বড় পরিবার। ক্যামেপর ভেতরে প্রবেশ পথে কিছুক্ষণ পরে পরেই ময়লা আবর্জনার স্তূপ। নোংরা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পরিবারের ছয়-আট জন মিলে এক রুমেই থাকছেন অনেকে। আবার অনেকে অপরিকল্পিতভাবেই আটফুট বাই আটফুটের এই জায়গাতে গড়ে তুলছে তৃতীয় চতুর্থ তলা। অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণভাবেই বসবাস করছে তারা। জাফর আহমেদ দীর্ঘদিন ধরে এই ক্যাম্পে বসবাসরত। তিনি বলেন, আমার পরিবারে আমরা আট জন আছি। আমি, আমার স্ত্রী, তিন ছেলে ও তাদের স্ত্রী। এই অবস্থায় একরুমে থাকা একেবারেই অসম্ভব। আমি কী পারবো বলেন আমার ছেলের বউয়ের সামনে আমার স্ত্রীকে নিয়ে ঘুমাতে? নিজেদের প্রাইভেসি বলে কিছু থাকে বলেন? তাই কিছুটা বাধ্য হয়েই উপরে দুইটা রুম উঠালাম।
মোহাম্মদপুরে অবস্থিত বিহারি ক্যামপগুলোর মধ্যে রয়েছে শুধুমাত্র একটি স্কুল। অবাট হেল্পারস দ্বারা পরিচালিত এই স্কুলটি সরকারি সহায়তার বাইরে। সরকারের কাছ থেকে শুধুমাত্র বই ছাড়া শিক্ষাক্ষেত্রে আর কোনো সহায়তা পাচ্ছে না তারা। ক্ষুদ্র পরিসরে পরিচালিত এই স্কুলের পাবলিক পরীক্ষায় পাসের হার ৭০ শতাংশ। এর পেছনে পারিপার্শ্বিক পরিবেশকে দায়ী করেছেন স্কুলটির প্রধান শিক্ষক এম শাওকত আলী। এ ছাড়া ক্যামেপর এই পরিবেশকে ঘিরে চলে নানা অবৈধ ব্যবসা। মাদক, ছিনতাই, চুরি-ডাকাতিসহ নানা অপকর্মে জড়াচ্ছে এখানকার বাসিন্দারা। তাদের একজন বলেন, আসলে আপা অভাবে স্বভাব নষ্ট হয়। এখন আমার হাতে টাকা নাই, কাজ নাই, আমাদের ক্যাম্পের বাইরে কাজের কোনো সুযোগ দেয়া হয় না। বউ বাচ্চা নিয়ে পরিবার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। এ অবস্থায় যদি কেউ আমাকে বলে যে তোমাকে দুইশ’ টাকা দেবো তার বদলে এই কাজটা করে দাও তখন বাধ্য হয়েই এসব অবৈধ কাজে জড়াতে হয়। বিহারী ক্যাম্পে বসবাসরতরা বেশিরভাগই কাজ করে দর্জির দোকানে, রেস্তোরাঁয়, দিন-মজুর কিংবা মেকানিক হিসেবে।
No comments