বিনা সুতায় নেটওয়ার্ক
ব্যক্তিগত
উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক উন্নয়নে নজর দেয়া প্রত্যেকের একটা মানবিক
দায়। যদিও গতিশীল জীবনের মারপ্যাঁচে অনেকেই ছোটেন আত্মোন্নয়নের পেছনে। তবে
ব্যতিক্রম যে নেই তা কিন্তু নয়। যারা এই দায়বোধের কথা ভোলেন না। সামাজিক
উন্নয়নের ব্রতকেই তারা জীবনের লক্ষ্যে পরিণত করেন। সেসব আলোকিত দেশপ্রেমী
মানুষের আত্মনিয়োগের ফলেই সমাজে পরিবর্তন আসে। দেশ এগিয়ে যায়। তেমনই একজন
আবদুস ছাত্তার খান বাবু। তিনি স্বপ্ন দেখেন দেশজুড়ে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে
দেয়ার। তা থেকেই সূচনা করেছেন গ্রাম-পাঠাগার আন্দোলন। বর্তমানে
গ্রাম-পাঠাগার আন্দোলনের পৃষ্ঠপোষকতায় দেশজুড়ে গড়ে উঠেছে ৫২টি লাইব্রেরি।
তবে প্রতিটি লাইব্রেরি কিন্তু ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে তোলা। গ্রাম-পাঠাগারের
নিজস্ব নয়। গ্রাম-পাঠাগার এসব লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠায় পরামর্শ প্রদানসহ
কার্যক্রম পরিচালনায় নানা রকমের সহযোগিতা দেয়। আবদুস ছাত্তার খানের সঙ্গে
গ্রাম-পাঠাগার আন্দোলন নিয়ে কথা বলেছেন মানবজমিন ‘তারুণ্য’ প্রতিবেদক
নাজমুস সাদাত পারভেজ। প্রশ্ন ছিল গ্রাম-পাঠাগার আন্দোলনের সারবস্তু কী?
আবদুস ছাত্তার খান বলেন, গ্রাম-পাঠাগার আন্দোলন কোনো সংগঠন কিংবা এনজিও নয়।
এটি একটি আদর্শ বা দর্শন। যে দর্শনে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানুষ সামাজিক সমস্যা
সমাধানে উদ্যোগী হবেন। সমস্যা হলে তা অন্য কেউ এসে সমাধান করে দিয়ে যাবেন,
গ্রাম-পাঠাগার আন্দোলনের দৃষ্টিভঙ্গি তা নয়। অনেকেই ভাবেন প্রসঙ্গ যেহেতু
পাঠাগার আন্দোলন সেহেতু মূল বিষয়বস্তু নিশ্চয়ই বইপড়া। তবে গ্রাম-পাঠাগার
আন্দোলন শুধু বইপড়াকে মুখ্য মনে করে না। বিশ্বাস করে, বই পাঠের পাশাপাশি
সামাজিক সমস্যা সমাধানের সূতিকাগার হয়ে উঠবে পাঠাগার। তাই গ্রাম-পাঠাগার
আন্দোলনের সদস্যরা দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা পাঠাগারগুলোয় শুধু বই-ই পড়েন না,
ব্যাপকভাবে যুক্ত থাকেন সামাজিক কর্মকাণ্ডেও। কখনো গ্রামের পাশের বন্যা
নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সংরক্ষণ করছেন, কখনো রাস্তা মেরামত করছেন; যাত্রী ছাউনি
তৈরি করছেন; আয়োজন করছেন বিজ্ঞান মেলার; সাহায্য করছেন বন্যা দুর্গতদের।
কীভাবে মাথায় এলো গ্রাম-পাঠাগার আন্দোলনের চিন্তা? আবদুস ছাত্তার খান বলেন, ২০০৬ সালে সাতজন মিলে শুরু করি অর্জুনা অন্বেষা পাঠাগারের কার্যক্রম। পরে যোগ দেন আরো অনেকে। এরই মাঝে আসে বর্ষা মৌসুম। শুরু হয় যমুনার ভাঙন। নদীভাঙনে তলিয়ে যায় অনেকের জমিজমা ও সহায়সম্বল। আমরা তাদের সহায়তার উদ্যোগ নেই। পাঠাগারের সদস্যরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে তালিকা করেন। সংগৃহীত সাহায্য টাকার পরিমাণে ছিল পঞ্চান্ন হাজার। আমরা ভেবে বের করি যদি প্রতি পরিবারকে ৫০০ টাকা করে দিই তাহলে ১১০টি পরিবারকে সহযোগিতা করতে পারবো এবং এ টাকা তাদের কাজেও আসবে। যেমন তখন বাজারদর অনুযায়ী ৩০০ টাকায় ৫ কেজি জালা (ধানের চারা) পাওয়া যেত। যা থেকে ৮-১০ মণ ধান পাওয়া যাবে। চার সদস্যের একটি পরিবার- যা দিয়ে অনায়াসে এক মাস চালিয়ে নিতে পারবে। বাকি ২০০ টাকা সার ও জমি পরিচর্যার কাজে লাগবে। আমাদের কঠিন শর্ত ছিল এ টাকা দিয়ে অবশ্যই কৃষিকাজ করতে হবে। ফসল ওঠার পরে কৃষক নিজেরাই জানান, তারা গড়ে ১০ মণ করে ধান পেয়েছেন। ধান থেকে যে খড় হয়েছিল তার মূল্যই হবে প্রায় ৫০০ টাকা। ২০০৭ সালে সিডর আঘাত হানে বিস্তীর্ণ দক্ষিণ অঞ্চলে। এ সময় ত্রাণ সংগ্রহ করে বিতরণ করতে গিয়ে অনুধাবন করি যে, যদি ওই এলাকায় আমাদের পাঠাগারের মতো একটা সংগঠন থাকতো আর তাদের সঙ্গে যদি আমাদের যোগাযোগ থাকতো তাহলে এই সামান্য কটা জিনিসই এই বিপদের দিনে কত না কাজে আসতো। আমাদের এই ভাবনা শেয়ার করি ঢাকার র্যামন পাবলিকেশনের রাজন ভাইয়ের সঙ্গে। তিনি আমাদের আশ্বাস দেন। বলেন, পাঠাগার করতে যত বই লাগবে নিয়ে যাবেন। লজ্জা করবেন না। পরে আমরা লেগে যাই নানা জায়গায় পাঠাগার দেয়ার কাজে। কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, চাঁদপুর, নাটোর, বদলগাছী, মধুপুর, সখিপুর, ভূঞাপুরসহ নানা জায়গায় আমাদের প্রচেষ্টায় গড়ে উঠতে থাকে পাঠাগার। বিছিন্নভাবে যে পাঠাগারগুলো গড়ে উঠছে, আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকি। যূথবদ্ধভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য একটি নাম নিই ‘গ্রাম-পাঠাগার আন্দোলন’। গ্রাম-পাঠাগার আন্দোলনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? উত্তরে বলেন, আমরা স্বপ্ন দেখি গ্রামে গ্রামে পাঠাগার স্থাপনের মধ্যদিয়ে বিনা সুতায় একটা নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে, আপদে-বিপদে একজন আরেকজনের পাশে দাঁড়াতে, নিজেদের ইতিহাস-সংস্কৃতি রক্ষায় ভূমিকা রাখতে। ২০২১ সালের মধ্যে প্রতিটি উপজেলার কোনো না কোনো গ্রামে আর ২০২৬ সালের মধ্যে প্রতিটি ইউনিয়নের কোনো না কোনো গ্রামে একটি করে পাঠাগার স্থাপিত হবে।
কীভাবে মাথায় এলো গ্রাম-পাঠাগার আন্দোলনের চিন্তা? আবদুস ছাত্তার খান বলেন, ২০০৬ সালে সাতজন মিলে শুরু করি অর্জুনা অন্বেষা পাঠাগারের কার্যক্রম। পরে যোগ দেন আরো অনেকে। এরই মাঝে আসে বর্ষা মৌসুম। শুরু হয় যমুনার ভাঙন। নদীভাঙনে তলিয়ে যায় অনেকের জমিজমা ও সহায়সম্বল। আমরা তাদের সহায়তার উদ্যোগ নেই। পাঠাগারের সদস্যরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে তালিকা করেন। সংগৃহীত সাহায্য টাকার পরিমাণে ছিল পঞ্চান্ন হাজার। আমরা ভেবে বের করি যদি প্রতি পরিবারকে ৫০০ টাকা করে দিই তাহলে ১১০টি পরিবারকে সহযোগিতা করতে পারবো এবং এ টাকা তাদের কাজেও আসবে। যেমন তখন বাজারদর অনুযায়ী ৩০০ টাকায় ৫ কেজি জালা (ধানের চারা) পাওয়া যেত। যা থেকে ৮-১০ মণ ধান পাওয়া যাবে। চার সদস্যের একটি পরিবার- যা দিয়ে অনায়াসে এক মাস চালিয়ে নিতে পারবে। বাকি ২০০ টাকা সার ও জমি পরিচর্যার কাজে লাগবে। আমাদের কঠিন শর্ত ছিল এ টাকা দিয়ে অবশ্যই কৃষিকাজ করতে হবে। ফসল ওঠার পরে কৃষক নিজেরাই জানান, তারা গড়ে ১০ মণ করে ধান পেয়েছেন। ধান থেকে যে খড় হয়েছিল তার মূল্যই হবে প্রায় ৫০০ টাকা। ২০০৭ সালে সিডর আঘাত হানে বিস্তীর্ণ দক্ষিণ অঞ্চলে। এ সময় ত্রাণ সংগ্রহ করে বিতরণ করতে গিয়ে অনুধাবন করি যে, যদি ওই এলাকায় আমাদের পাঠাগারের মতো একটা সংগঠন থাকতো আর তাদের সঙ্গে যদি আমাদের যোগাযোগ থাকতো তাহলে এই সামান্য কটা জিনিসই এই বিপদের দিনে কত না কাজে আসতো। আমাদের এই ভাবনা শেয়ার করি ঢাকার র্যামন পাবলিকেশনের রাজন ভাইয়ের সঙ্গে। তিনি আমাদের আশ্বাস দেন। বলেন, পাঠাগার করতে যত বই লাগবে নিয়ে যাবেন। লজ্জা করবেন না। পরে আমরা লেগে যাই নানা জায়গায় পাঠাগার দেয়ার কাজে। কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, চাঁদপুর, নাটোর, বদলগাছী, মধুপুর, সখিপুর, ভূঞাপুরসহ নানা জায়গায় আমাদের প্রচেষ্টায় গড়ে উঠতে থাকে পাঠাগার। বিছিন্নভাবে যে পাঠাগারগুলো গড়ে উঠছে, আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকি। যূথবদ্ধভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য একটি নাম নিই ‘গ্রাম-পাঠাগার আন্দোলন’। গ্রাম-পাঠাগার আন্দোলনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? উত্তরে বলেন, আমরা স্বপ্ন দেখি গ্রামে গ্রামে পাঠাগার স্থাপনের মধ্যদিয়ে বিনা সুতায় একটা নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে, আপদে-বিপদে একজন আরেকজনের পাশে দাঁড়াতে, নিজেদের ইতিহাস-সংস্কৃতি রক্ষায় ভূমিকা রাখতে। ২০২১ সালের মধ্যে প্রতিটি উপজেলার কোনো না কোনো গ্রামে আর ২০২৬ সালের মধ্যে প্রতিটি ইউনিয়নের কোনো না কোনো গ্রামে একটি করে পাঠাগার স্থাপিত হবে।
No comments