আহ্, চায়ের কত স্বাদ
এক
কাপ গরম পানির মধ্যে কিছু চা–পাতা। এ পানীয়ের কত রকমের স্বাদ হতে পারে?
বাংলাদেশেই অন্তত ১৫ রকম স্বাদের চা উৎপাদিত হচ্ছে। এই চা বিশ্ববাজারে
রপ্তানি করছে এ দেশেরই প্রতিষ্ঠানগুলো। আবার দেশের বাজারেও বিপণন করা হচ্ছে
বৈচিত্র্যপূর্ণ স্বাদের চা। নানা রকম চায়ের স্বাদ নেওয়া যাবে ঢাকার চা
প্রদর্শনীতে। আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় তিন দিনের এ প্রদর্শনীর
আয়োজন করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ চা বোর্ড। প্রদর্শনীটি আজ
মঙ্গলবার শেষ হবে। মেলায় বিভিন্ন ধরনের চায়ের স্বাদ নেওয়া যাচ্ছে বিনা
মূল্যে। মেলার দ্বিতীয় দিনে গতকাল সোমবার মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়,
দর্শনার্থীদের বেশ ভিড়। বিভিন্ন স্টলে ঘুরে ঘুরে অনেকে চায়ের স্বাদ
নিচ্ছেন। কোম্পানিগুলোর বিশেষ ছাড়ে চা কিনে নিচ্ছেন অনেকে। মেলায়
অংশগ্রহণকারীরা জানান, নতুন নতুন চায়ের প্রতিই মানুষের আগ্রহ বেশি।
প্রদর্শনীতে ফিনলে টি ১২ রকমের চা প্রদর্শন করছে। এর মধ্যে রয়েছে মসলা চা,
আদা চা, তুলসী চা, গ্রিন টি, বিভিন্ন ধরনের ব্ল্যাক টি, ন্যাচারাল গ্রিন টি
ইত্যাদি। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কিউ আই চৌধুরী প্রথম আলোকে
বলেন, চায়ের স্বাদে এ পরিবর্তনের শুরু তিন-চার বছর আগে থেকে। মানুষের
পছন্দে পরিবর্তন আসছে। বাজার ধরতে নতুন নতুন স্বাদের চা আনা হচ্ছে। তিনি
বলেন, ‘আগামী দিনগুলোতে আরও ১৯ রকমের চা আসবে। প্রতিবছর আমরা চার–পাঁচ রকম
স্বাদের চা নিয়ে আসব।’ চায়ের ধরনে শুধু স্বাদের পরিবর্তন নয়, এর নানা রকমের
গুণাবলি আছে। কী রকম, জানতে চাইলে এ কিউ আই চৌধুরী বলেন, যাদের
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে, যকৃৎ পরিষ্কার রাখা দরকার, তাদের জন্য আদা চা
খুবই উপকারী। গোল্ড ব্ল্যাক টি সবচেয়ে ভালো লিকার দেয়। ইংলিশ ব্রেকফাস্ট টি
সকালে খাওয়ার জন্য খুব ভালো।
তিনি জানান, ফিনলে মিডোরো নামের একটি চা
এনেছে জাপানে রপ্তানির জন্য। এ চা বেশ দামি, প্রতি কেজি ১৮ ডলার দরে
রপ্তানি করতে চায় ফিনলে। বিভিন্ন ধরনের চা উৎপাদন ও রপ্তানি করার ক্ষেত্রে
শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান কাজী অ্যান্ড কাজী টি। চা প্রদর্শনীতে কাজী টির
স্টলে ১৩ রকমের চা বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে গ্রিন টি, ব্ল্যাক টি,
গ্রিন লেমনগ্রাস টি, তুলসী চা, আদা চা, জেসমিন গ্রিন টি, লেমন গ্রাস হারবাল
ইনফিউশন, ওলং টি ইত্যাদি। কাজী টির কর্মকর্তারা বলেন, জেসমিন গ্রিন টিয়ে
জুঁই ফুলের সুবাস রয়েছে। মেডলি টিতে চার ধরনের স্বাদের চা মিলবে। তুলসী টি
কাশির ক্ষেত্রে উপকারী। হালদা ভ্যালি নামের একটি প্রতিষ্ঠান নিয়ে এসেছে
হোয়াইট টি। এ চায়ের প্রতি ৫৫ গ্রামের প্যাকেটের দাম ৫৯৫ টাকা। হোয়াইট টি
তৈরি হয় চা–গাছের কুঁড়ি থেকে, এর দামই সবচেয়ে বেশি। হালদার কর্মকর্তারা
জানান, তাঁরা হোয়াইট টি চীনে রপ্তানি করছেন। টি বোর্ডের স্টলে নানা স্বাদের
পাশাপাশি হোয়াইট টি ও রোজ টি চেখে দেখা যায়, যা থেকে গোলাপ ফুলের সুবাস
পাওয়া যায়। এ ছাড়া কাঠের সুদৃশ্য বাক্সে মেলে হাইকু টি, যার মূল্য ৮৫০
টাকা। এ চা কয়েক স্তরে পরিশোধন করে তৈরি করা হয় বলে জানান স্টলের কর্মীরা।
চা বোর্ডের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, সাধারণ
চায়ের চেয়ে গ্রিন টিয়ে চার গুণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে। হোয়াইট টিতে
গ্রিন টির চেয়েও তিন গুণ অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট আছে। চা বাগান মালিকদের সংগঠন
বাংলাদেশীয় চা সংসদের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮০ সালে দেশে ৪ কোটি কেজি চা
উৎপাদিত হয়। ২০১৭ সালে তা বেড়ে ৭ কোটি ৯০ লাখ কেজিতে উন্নীত হয়েছে। দেশে
চায়ের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এখন রপ্তানি কমে গেছে।
No comments