ঢাকায় ভিক্ষুক সিন্ডিকেট সক্রিয় ২০-২৫ চক্র by শুভ্র দেব
বয়স ৫০ ছুঁই ছুঁই। মাথায় কাঁচা পাকা অগোছালো চুল। পরনে পুরাতন ময়লা কাপড়। জন্ম থেকেই অচল দুটি পা। কাঠ আর বিয়ারিং দিয়ে তৈরি ট্রলি দিয়েই পথ চলেন। তিনি হলেন নাটোরের হালিমা বিবি।
স্বামী হারিয়েছেন আরো ১৫ বছর আগে। দুই মেয়েকে নিয়ে ছিল সংসার। রাজধানীর অলিগলিতে ভিক্ষা করে মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। এখন তিনি নগরীর হাইকোর্ট এলাকার ফুটপাথেই থাকেন। সকাল হলেই ভিক্ষার উদ্দেশ্যে বের হন। সঙ্গে গাড়ি ঠেলার জন্য রাখেন ৮/১০ বছর বয়সী কোনো শিশুকে। সারাদিন ভিক্ষা করে যা আয় হয় সেখান থেকে ওই শিশুকে দুপুরের খাবার ও আরো ৫০ টাকা তাদের দিতে হয়। মানবজমিনের সঙ্গে আলাপকালে হালিমা বলেন, এখন আর আগের মতো আয় হয় না। সারাদিন ঘুরলে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় হয়। কারণ এখন প্রতিবন্ধী ভিক্ষুকের চেয়ে সুস্থ ভিক্ষুকই বেশি। সুস্থ ভিক্ষুকের পেছনে সিন্ডিকেট জড়িত। তাদেরকে ভাড়া করে নিয়ে আসা হয়। তাই সিন্ডিকেটের ভিক্ষুকের দাপটে আমরা ভিক্ষা করতে পারি না।
রাজধানী ঢাকায় এখন ভিক্ষুক নিয়ে সিন্ডিকেট চলছে। মাসিক বা রোজ চুক্তিতে সিন্ডিকেটরা ভিক্ষুক সংগ্রহ করে। আর এই সিন্ডিকেট চক্রে ২০-২৫টি চক্র সক্রিয় রয়েছে। এই চক্রের সদস্যরা প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় কাজ করে থাকে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব সিন্ডিকেট চক্রের অনেকেরই ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি পর্যন্ত রয়েছে। এমনকি রাজধানীর বুকে দাপিয়ে বেড়িয়ে আরো নানান অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, অনেকেই দিনে ভিক্ষাবৃত্তি আর রাতে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ভিক্ষুকের ছদ্মবেশেই তারা মাদকের কারবার করে থাকে। নগরীর ফার্মগেট, বিজয় সরণি, শাহবাগ, হাইকোর্ট এলাকা, মালিবাগ-মৌচাক-শান্তিনগর, মতিঝিল, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী-সায়েদাবাদ, বিমানবন্দর এলাকা, পুরান ঢাকা, গাবতলী পোস্তগোলাসহ আরো কিছু এলাকায় এসব চক্র সক্রিয়। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অসহায়, গরিব, কর্মহীন পুরুষ মহিলাকে এনে ভিক্ষুকের রূপ ধারণ করিয়ে রাস্তায় নামানো হয়। সারাদিন যা আয় হয় তার পুরোটাই তুলে দেয়া হয় সিন্ডিকেট চক্রের সদস্যদের হাতে। সেখান থেকেই কিছু টাকা ভিক্ষুকদের দেয়া হয়। সিন্ডিকেটের চক্রে ভিক্ষা করেন এমনই একজন নেত্রকোনার আলী হোসেন। অভাবের সংসারে যখন টানাপড়েন চলছিল তখনই প্রতিবেশী হারুন মিয়ার হাত ধরে ঢাকায় আসেন। সেখানে আসার পর তাকে বিশেষভাবে ট্রেনিং দিয়েই রাস্তায় নামানো হয়। আলী হোসেন মানবজমিনকে বলেন, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে অনেক কষ্টে দিন পার করছিলাম। কোনো উপায় না পেয়ে এই পথেই নেমেছি। গুলশান এলাকায় ভিক্ষা করে মাসে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় করতে পারি। তবে আয়ের বেশির ভাগ টাকাই হারুন ভাই নিয়ে যায়। আমি ছাড়া আরো ১০ জন ভিক্ষুক হারুন ভাইয়ের নেতৃত্বে কাজ করে। সবাই রাতের বেলা তার হাতে সব টাকা তুলে দেই।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শুধু হারুন মিয়া নন। রাজধানীর ভিন্ন ভিন্ন এলাকার দায়িত্বে আছে আলাদা আলাদা চক্র। নির্দিষ্ট এলাকায় মধ্যে তাদেরই নির্ধারিত লোকেরা ভিক্ষা করে। এর বাইরে যারা ভিক্ষা করে তারা তেমন একটা সুবিধা করতে পারে না। শুধু ভিক্ষার ক্ষেত্রেই নয় স্থানীয় কোনো অনুষ্ঠানে খাবার গ্রহণ, শীতবস্ত্র গ্রহণ, ফুটপাথে থাকার স্থান পেতে সর্বত্রই সিন্ডিকেটের কবলে থাকা ভিক্ষুকদের দাপট বিরাজ করে। শুধু তাই নয়, এই সিন্ডিকেট চক্র সুস্থ মানুষকে প্রতিবন্ধী করেও ভিক্ষুক হিসাবে তৈরি করে। জন্মের কয়েক বছর পর অভাবী সংসারের ছেলে মেয়েকে কিছু টাকা দিয়ে তারা কিনে আনে। হাড়ির ভেতরে দীর্ঘদিন রেখে শরীরের হাড় বাঁকা করে প্রতিবন্ধীর মতো তৈরি করা হয়। পরে শহরের বিভিন্ন স্থানে রেখে এদেরকে দিয়ে ভিক্ষা করানো হয়। ছোট ও প্রতিবন্ধী দেখে মানুষও তাদেরকে বেশি বেশি ভিক্ষা দেয়।
ভিক্ষুক নিয়ে দেশে তেমন কোনো জরিপ হয় না। সমাজসেবা অধিদপ্তর সর্বশেষ ২০১১ সালে ভিক্ষুক নিয়ে একটি জরিপ চালিয়েছে। সেখানে তারা মাত্র ১০ হাজার ভিক্ষুকের তালিকা করেছিল। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে রাজধানীতে ভিক্ষুকের সংখ্যা লাখেরও বেশি। ভিক্ষা কোনো পেশা না থাকলেও অনেকেই এই ভিক্ষাবৃত্তিকে পেশা হিসাবে নিয়েছে। বিভিন্ন সময় দেশের ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিলেও তা আর আলোর মুখ দেখেনি। বেশ কিছুদিন আগে সমাজসেবার পক্ষ থেকে বিভিন্ন ভিক্ষুককে রিকশা, ভ্যান, সেলাই মেশিন কিনে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ভিক্ষুকরা এগুলো বিক্রি করে দিয়ে পুনরায় ভিক্ষায় নেমে পড়ে। ফলে ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া বেশি দূর এগিয়ে নেয়া যায়নি। তবে এখন আবার নতুন করে ভিক্ষুকদের নিয়ে চিন্তা করছেন বলে জানিয়েছেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ভিক্ষুকমুক্ত এলাকা হিসাবে সাইনবোর্ড ঝুলানো হয়েছে। এর মানে হল এসব এলাকায় কেউ ভিক্ষা করতে পারবে না। কিন্তু খোদ এসব এলাকায়ই ভিক্ষুকরা দেদার ভিক্ষা করছে। রাজধানীর সার্কিট হাউস রোড, মিন্টু রোড, হেয়ার রোড, বনানী, গুলশানে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। বনানী এলাকায় ভিক্ষুক ফরমান আলী মানবজমিনকে বলেন, বনানী কাঁচা বাজার এলাকায় আমরা ৮/১০ জন ভিক্ষুক এক সঙ্গে থাকি। আমাদের একজন দলনেতা আছেন। তার নেতৃত্বেই আমরা বনানী এলাকায় ভিক্ষা করি। কারণ অভিজাত এলাকা থাকার কারণে এখানে বেশি আয় হয়। ফরমান বলেন, ঢাকায় আমার প্রতি মাসে বিভিন্ন খরচ বাবদ ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা লাগে। এর বাইরে বাড়িতে আমার দুই ছেলে এক মেয়ের ও স্ত্রী আছে। তাদের খরচের জন্য মাসে ৮/১০ হাজার টাকা পাঠাতে হয়। এই সব টাকাই আমাকে ভিক্ষা করে উপার্জন করতে হয়। তবে যদি কারো নেতৃত্বে ভিক্ষা না করতাম তবে আরো বেশি আয় হত। বিজয়সরণি মোড়ে ময়মনসিংহের শফিকুল ইসলাম নামের এক ভিক্ষুক জানান, আমার বড় ছেলে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে। মেয়েও এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। স্ত্রী সন্তানের খরচ ও আমার ঢাকায় থাকার সব খরচ মিলিয়ে সবই আমি ভিক্ষা করে উপার্জন করি। কিন্তু দিনদিনই ভিক্ষুকের সংখ্যা বাড়ছে। শফিক বলেন, শুধু বিজয়সরণি মোড়ে অন্তত ১০০ জনের মত ভিক্ষুক আছে। এদিকে নিয়মিত ভিক্ষুকের পাশাপাশি রাজধানীতে কিছু মৌসুমি ভিক্ষুকও আছে। যারা শুধু শুক্রবার ও শনিবার ভিক্ষা করে। সরজমিন দেখা যায়, প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজের সময় মসজিদের সামনে দল বেঁধে লাইন ধরে তারা দাঁড়িয়ে থাকে। মুসল্লিরা নামাজ পড়ে বের হওয়ার সময় তারা ভিক্ষা চায়। এতে করে ভিক্ষুকের যন্ত্রণায় অনেক সময় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন মুসল্লিরা।
সমাজবিজ্ঞানী ড. সাদেকা হালিম মানবজমিনকে বলেন, এটা রাষ্ট্রের একটা দায়িত্ব। কারণ রাস্তেঘাটে চলাচল করলে ভিক্ষুকরা নানাভাবে হেনস্তা করে। এমনকি গাড়িতে বসে থাকলেও কাচে থাপড়ানো হয়। এই বিষয়গুলো একটু অন্যরকম দেখায়। যদি তাদের পুনর্বাসন, কাজের ব্যবস্থা করা হত তবে আর এমন হতো না। তাই সমাজসেবা অধিদপ্তর ও এর সঙ্গে জড়িত অন্যান্য মন্ত্রণালয়ও এর দায়িত্ব নিতে হবে। তিনি বলেন, ভিক্ষুকদের নিয়ে যে সিন্ডিকেট রয়েছে। তাদের বিষয়টিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দেখা উচিত। ভিক্ষুক নিয়ে বাণিজ্য করছে- এই বিষয়টি নতুন কিছু না। তবে এগুলো বন্ধ হওয়া দরকার।
স্বামী হারিয়েছেন আরো ১৫ বছর আগে। দুই মেয়েকে নিয়ে ছিল সংসার। রাজধানীর অলিগলিতে ভিক্ষা করে মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। এখন তিনি নগরীর হাইকোর্ট এলাকার ফুটপাথেই থাকেন। সকাল হলেই ভিক্ষার উদ্দেশ্যে বের হন। সঙ্গে গাড়ি ঠেলার জন্য রাখেন ৮/১০ বছর বয়সী কোনো শিশুকে। সারাদিন ভিক্ষা করে যা আয় হয় সেখান থেকে ওই শিশুকে দুপুরের খাবার ও আরো ৫০ টাকা তাদের দিতে হয়। মানবজমিনের সঙ্গে আলাপকালে হালিমা বলেন, এখন আর আগের মতো আয় হয় না। সারাদিন ঘুরলে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় হয়। কারণ এখন প্রতিবন্ধী ভিক্ষুকের চেয়ে সুস্থ ভিক্ষুকই বেশি। সুস্থ ভিক্ষুকের পেছনে সিন্ডিকেট জড়িত। তাদেরকে ভাড়া করে নিয়ে আসা হয়। তাই সিন্ডিকেটের ভিক্ষুকের দাপটে আমরা ভিক্ষা করতে পারি না।
রাজধানী ঢাকায় এখন ভিক্ষুক নিয়ে সিন্ডিকেট চলছে। মাসিক বা রোজ চুক্তিতে সিন্ডিকেটরা ভিক্ষুক সংগ্রহ করে। আর এই সিন্ডিকেট চক্রে ২০-২৫টি চক্র সক্রিয় রয়েছে। এই চক্রের সদস্যরা প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় কাজ করে থাকে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব সিন্ডিকেট চক্রের অনেকেরই ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি পর্যন্ত রয়েছে। এমনকি রাজধানীর বুকে দাপিয়ে বেড়িয়ে আরো নানান অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, অনেকেই দিনে ভিক্ষাবৃত্তি আর রাতে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ভিক্ষুকের ছদ্মবেশেই তারা মাদকের কারবার করে থাকে। নগরীর ফার্মগেট, বিজয় সরণি, শাহবাগ, হাইকোর্ট এলাকা, মালিবাগ-মৌচাক-শান্তিনগর, মতিঝিল, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী-সায়েদাবাদ, বিমানবন্দর এলাকা, পুরান ঢাকা, গাবতলী পোস্তগোলাসহ আরো কিছু এলাকায় এসব চক্র সক্রিয়। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অসহায়, গরিব, কর্মহীন পুরুষ মহিলাকে এনে ভিক্ষুকের রূপ ধারণ করিয়ে রাস্তায় নামানো হয়। সারাদিন যা আয় হয় তার পুরোটাই তুলে দেয়া হয় সিন্ডিকেট চক্রের সদস্যদের হাতে। সেখান থেকেই কিছু টাকা ভিক্ষুকদের দেয়া হয়। সিন্ডিকেটের চক্রে ভিক্ষা করেন এমনই একজন নেত্রকোনার আলী হোসেন। অভাবের সংসারে যখন টানাপড়েন চলছিল তখনই প্রতিবেশী হারুন মিয়ার হাত ধরে ঢাকায় আসেন। সেখানে আসার পর তাকে বিশেষভাবে ট্রেনিং দিয়েই রাস্তায় নামানো হয়। আলী হোসেন মানবজমিনকে বলেন, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে অনেক কষ্টে দিন পার করছিলাম। কোনো উপায় না পেয়ে এই পথেই নেমেছি। গুলশান এলাকায় ভিক্ষা করে মাসে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় করতে পারি। তবে আয়ের বেশির ভাগ টাকাই হারুন ভাই নিয়ে যায়। আমি ছাড়া আরো ১০ জন ভিক্ষুক হারুন ভাইয়ের নেতৃত্বে কাজ করে। সবাই রাতের বেলা তার হাতে সব টাকা তুলে দেই।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শুধু হারুন মিয়া নন। রাজধানীর ভিন্ন ভিন্ন এলাকার দায়িত্বে আছে আলাদা আলাদা চক্র। নির্দিষ্ট এলাকায় মধ্যে তাদেরই নির্ধারিত লোকেরা ভিক্ষা করে। এর বাইরে যারা ভিক্ষা করে তারা তেমন একটা সুবিধা করতে পারে না। শুধু ভিক্ষার ক্ষেত্রেই নয় স্থানীয় কোনো অনুষ্ঠানে খাবার গ্রহণ, শীতবস্ত্র গ্রহণ, ফুটপাথে থাকার স্থান পেতে সর্বত্রই সিন্ডিকেটের কবলে থাকা ভিক্ষুকদের দাপট বিরাজ করে। শুধু তাই নয়, এই সিন্ডিকেট চক্র সুস্থ মানুষকে প্রতিবন্ধী করেও ভিক্ষুক হিসাবে তৈরি করে। জন্মের কয়েক বছর পর অভাবী সংসারের ছেলে মেয়েকে কিছু টাকা দিয়ে তারা কিনে আনে। হাড়ির ভেতরে দীর্ঘদিন রেখে শরীরের হাড় বাঁকা করে প্রতিবন্ধীর মতো তৈরি করা হয়। পরে শহরের বিভিন্ন স্থানে রেখে এদেরকে দিয়ে ভিক্ষা করানো হয়। ছোট ও প্রতিবন্ধী দেখে মানুষও তাদেরকে বেশি বেশি ভিক্ষা দেয়।
ভিক্ষুক নিয়ে দেশে তেমন কোনো জরিপ হয় না। সমাজসেবা অধিদপ্তর সর্বশেষ ২০১১ সালে ভিক্ষুক নিয়ে একটি জরিপ চালিয়েছে। সেখানে তারা মাত্র ১০ হাজার ভিক্ষুকের তালিকা করেছিল। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে রাজধানীতে ভিক্ষুকের সংখ্যা লাখেরও বেশি। ভিক্ষা কোনো পেশা না থাকলেও অনেকেই এই ভিক্ষাবৃত্তিকে পেশা হিসাবে নিয়েছে। বিভিন্ন সময় দেশের ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিলেও তা আর আলোর মুখ দেখেনি। বেশ কিছুদিন আগে সমাজসেবার পক্ষ থেকে বিভিন্ন ভিক্ষুককে রিকশা, ভ্যান, সেলাই মেশিন কিনে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ভিক্ষুকরা এগুলো বিক্রি করে দিয়ে পুনরায় ভিক্ষায় নেমে পড়ে। ফলে ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া বেশি দূর এগিয়ে নেয়া যায়নি। তবে এখন আবার নতুন করে ভিক্ষুকদের নিয়ে চিন্তা করছেন বলে জানিয়েছেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ভিক্ষুকমুক্ত এলাকা হিসাবে সাইনবোর্ড ঝুলানো হয়েছে। এর মানে হল এসব এলাকায় কেউ ভিক্ষা করতে পারবে না। কিন্তু খোদ এসব এলাকায়ই ভিক্ষুকরা দেদার ভিক্ষা করছে। রাজধানীর সার্কিট হাউস রোড, মিন্টু রোড, হেয়ার রোড, বনানী, গুলশানে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। বনানী এলাকায় ভিক্ষুক ফরমান আলী মানবজমিনকে বলেন, বনানী কাঁচা বাজার এলাকায় আমরা ৮/১০ জন ভিক্ষুক এক সঙ্গে থাকি। আমাদের একজন দলনেতা আছেন। তার নেতৃত্বেই আমরা বনানী এলাকায় ভিক্ষা করি। কারণ অভিজাত এলাকা থাকার কারণে এখানে বেশি আয় হয়। ফরমান বলেন, ঢাকায় আমার প্রতি মাসে বিভিন্ন খরচ বাবদ ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা লাগে। এর বাইরে বাড়িতে আমার দুই ছেলে এক মেয়ের ও স্ত্রী আছে। তাদের খরচের জন্য মাসে ৮/১০ হাজার টাকা পাঠাতে হয়। এই সব টাকাই আমাকে ভিক্ষা করে উপার্জন করতে হয়। তবে যদি কারো নেতৃত্বে ভিক্ষা না করতাম তবে আরো বেশি আয় হত। বিজয়সরণি মোড়ে ময়মনসিংহের শফিকুল ইসলাম নামের এক ভিক্ষুক জানান, আমার বড় ছেলে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে। মেয়েও এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। স্ত্রী সন্তানের খরচ ও আমার ঢাকায় থাকার সব খরচ মিলিয়ে সবই আমি ভিক্ষা করে উপার্জন করি। কিন্তু দিনদিনই ভিক্ষুকের সংখ্যা বাড়ছে। শফিক বলেন, শুধু বিজয়সরণি মোড়ে অন্তত ১০০ জনের মত ভিক্ষুক আছে। এদিকে নিয়মিত ভিক্ষুকের পাশাপাশি রাজধানীতে কিছু মৌসুমি ভিক্ষুকও আছে। যারা শুধু শুক্রবার ও শনিবার ভিক্ষা করে। সরজমিন দেখা যায়, প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজের সময় মসজিদের সামনে দল বেঁধে লাইন ধরে তারা দাঁড়িয়ে থাকে। মুসল্লিরা নামাজ পড়ে বের হওয়ার সময় তারা ভিক্ষা চায়। এতে করে ভিক্ষুকের যন্ত্রণায় অনেক সময় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন মুসল্লিরা।
সমাজবিজ্ঞানী ড. সাদেকা হালিম মানবজমিনকে বলেন, এটা রাষ্ট্রের একটা দায়িত্ব। কারণ রাস্তেঘাটে চলাচল করলে ভিক্ষুকরা নানাভাবে হেনস্তা করে। এমনকি গাড়িতে বসে থাকলেও কাচে থাপড়ানো হয়। এই বিষয়গুলো একটু অন্যরকম দেখায়। যদি তাদের পুনর্বাসন, কাজের ব্যবস্থা করা হত তবে আর এমন হতো না। তাই সমাজসেবা অধিদপ্তর ও এর সঙ্গে জড়িত অন্যান্য মন্ত্রণালয়ও এর দায়িত্ব নিতে হবে। তিনি বলেন, ভিক্ষুকদের নিয়ে যে সিন্ডিকেট রয়েছে। তাদের বিষয়টিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দেখা উচিত। ভিক্ষুক নিয়ে বাণিজ্য করছে- এই বিষয়টি নতুন কিছু না। তবে এগুলো বন্ধ হওয়া দরকার।
No comments