ইসলামপুরে ব্রহ্মপুত্রের চরাঞ্চলে ঘরে ঘরে টাকার গাছ!
জামালপুরের
ইসলামপুরে ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চলের বেগুন টালকে (ক্ষেত) টাকার গাছের
সাথে তুলনা করেছেন স্থানীয় কৃষকরা। তবে স্থানীয় কৃষিবিদরা বেগুন চাষকে
কৃষকদের আপতকালীন ফসল হিসেবেও উল্লেখ করেছেন। দু’দফা ভয়াবহ বন্যার পর
ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চলে উৎপাদিত বেগুন বন্যাকবলিত কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে
বিপদে বন্ধু হয়ে দাঁড়িয়েছে। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ইসলামপুরে উৎপাদিত
বেগুন সারাদেশের সবজির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বন্যার পর এ অঞ্চলের
অর্থনীতির চাকাকে সচল রেখেছে। প্রচলিত আছে ‘কাঁসা, বেগুন, গুড়- এই মিলে
ইসলামপুর’। এ অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী কাঁসা শিল্প ও আখের গুড়ের কদর এখন তেমন
একটা না থাকলেও এখানের উৎপাদিত বেগুন বিদেশে রফতানি হচ্ছে। উপজেলা কৃষি
অফিস সূত্র জানায়, উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চল গোয়ালের চর,
গাইবান্ধা, চরপুটিমারী, চর গোয়ালীনি ইউনিয়নে এক হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে
বেগুন চাষ হয়েছে। বেগুন চাষ করে চরাঞ্চলের অর্ধলক্ষাধিক কৃষক স্বাবলম্বী
হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ব্রহ্মপুত্র নদের চরগুলোতে এ
বছর ৭৫ হাজার মেট্রিক টন বেগুন উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নিয়ে এক হাজার ২৫০
হেক্টর একর জমিতে বিভিন্ন জাতের বেগুন চাষ হয়েছে। এর মধ্যে উফশী বারি(১),
বারি(২), বোতল বেগুন- স্থানীয় জাত সাদা ও জয়েন্ট গ্রীন জাতের বেগুন চাষ
হয়েছে। বাম্পার ফলন হওয়ায় লক্ষমাত্রার চেয়ে দ্বিগুণ বেশি বেগুন উৎপাদন
হয়েছে। চরাঞ্চলের কৃষকরা সকাল-বিকাল বেগুন ক্ষেত গেলেই পাচ্ছেন হাজার হাজার
টাকা। তাই তারা বেগুন টালকে টাকার গাছ হিসাবে উল্লেখ করেছেন। চাষিরা
জানান, এ বছর আবহাওয়া বেগুন চাষের জন্য এতোই ভালো ছিলো যে এক বিঘা জমিতে
লাখ টাকার বেগুন উৎপাদ সম্ভব হয়েছে। বেগুন চাষি করিম আলী জানান, এ বছর
বৃষ্টি ও ঠান্ডা কম হওয়ায় ক্ষেত অনেক ভালো হয়েছে। প্রথম দিকে ৮০ টাকা কেজি
দামে বেগুন বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে দাম কমলেও যা হচ্ছে সবই লাভ বলে জানান এ
কৃষক। অনুকুল আবহাওয়া ও ভালো দাম থাকায় বেগুন চাষে তাদের ভাগ্য বদলে গেছে।
ডিগ্রীর গ্রামের আব্দুল বাছেদ বলেন, রাস্তাঘাট ভালো হওয়ায় ট্রাক সরাসরি
ক্ষেতে ঢুকছে তাই বেগুন চাষিরা এবার তারা ভালো মূল্য পেয়েছেন। আগ্রখালী
গ্রামের রমজান আলী জানান, এ বছর বেগুনের বাম্পার ফলন ও দাম ভালো পেয়েছি।
তার তিন বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করে এ পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ টাকার বিক্রি
হয়েছে।
এখনো বিক্রি চলছে। মতিউর রহমান জানান, কৃষি কাজে অল্প ব্যয় ও স্বল্প
সময়ে বেশি আয় এক মাত্র বেগুন চাষেই সম্ভব। তিনি বলেন, এক বিঘা জমির বেগুন
চাষে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। বাম্পার ফলন ও ভালো দাম হলে
লক্ষাধিক টাকা বিক্রি করা যায়। ইসলামপুর বাজারের আড়ৎ মালিক সুলতান মিয়া
জানান, শুধু এ বাজার থেকেই প্রতিদিন এক থেকে দেড় হাজার মন বেগুন সিলেট,
ঢাকা, চট্রগ্রাম ও নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রফতানী হয়। ব্যবসায়ী
আকবর আলী জানান, এ বছর বেগুনের ব্যবসা করে প্রায় দুই লক্ষাধিক টাকা লাভ
হয়েছে। তিনি বলেন, এলাকার প্রায় পাঁচ শতাধিক ব্যবসায়ী বেগুনের ব্যবসা করে
বছরে লাখ লাখ টাকা আয় করে থাকেন। ব্যবসায়ী আলাল উদ্দিন জানান, ব্রহ্মপুত্র
চরের উৎপাদিত বেগুন ইসলামপুর, মেলান্দহ, বকশীগঞ্জ ও শ্রীবর্দী উপজেলার
প্রায় ২০টি স্পট থেকে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ হাজার মন করে দেশের বিভিন্ন
স্থানে রফতানী হচ্ছে। এতে চরের মানুষের প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা লেনদেন
হচ্ছে। মৃত্তিকা বিশেষজ্ঞরা জানান, ব্রহ্মপুত্র নদের পলি মাটি বেগুন চাষের
জন্য অত্যান্ত উপযোগী। তাই বেগুন চাষ করে চরাঞ্চলের কৃষকদের ভাগ্য বদলে
গেছে। ইসলামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মতিয়ার রহমান জানান, বেগুন চাষ
ইসলামপুরের কৃষকদেও বন্যার ক্ষয়ক্ষতি অনেকাংশে পুষিয়ে নিয়েছে। এক প্রশ্নের
উত্তরে তিনি বলেন, বেগুন সংরক্ষণের মতো কোনো প্রযুক্তি আবিষ্কার হয়েছে কিনা
আমার জানা নেই। সংরক্ষণের ব্যবস্থা যদি থাকতো সরকার অবশ্যই তা করতো। তবে এ
অঞ্চলের বেগুন বিদেশে রফতানি হচ্ছে। তিনি বলেন, বেগুন একটি শতভাগ
কীটনাশকমুক্ত সবজি। বেগুন চাষে শুধুমাত্র ছত্রাকনাশক ছাড়া কোনো কীটনাশক
ব্যবহার করা হয় না।
No comments