প্রধানমন্ত্রীর হাতে জাদুর কাঠি আছে
ন্যায়
বিচার নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বিচার
প্রক্রিয়া নিয়ে তিনি বলেছেন, আমার বিরুদ্ধে মামলাগুলো পেয়েছে রকেটের গতি।
যেন কেউ পেছন থেকে তাড়া করছে, শিগগিরই শেষ করো। তড়িঘড়ি করে একটা রায় দিয়ে
দাও বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে। ফলে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে কি-না সে
ব্যাপারে দেশবাসীর ঘোরতর সন্দেহ রয়েছে। আমরাও শঙ্কিত।
কারণ এই মামলাসহ আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা বিভিন্ন মামলার তদন্ত ও বিচারকাজ চলার সময় প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রিসভার অনেক সদস্য এবং শাসক দলের কোনো কোনো নেতা আমাকে দোষী সাব্যস্ত করে বক্তব্য দিয়েছেন। আমাকে অভিযুক্ত করে বিরূপ প্রচারণা চালিয়েছেন। যেন তারা মামলার রায় কি হবে তা আগাম জানেন। খালেদা জিয়া বলেন, আমার মাঝে মধ্যে মনে হয় শেখ হাসিনার হাতে কোনো এক জাদুর কাঠি আছে। সেই জাদুর কাঠির ছোঁয়ায় তার বিরুদ্ধে দায়ের করা দুর্নীতি, অনিয়ম ও চাঁদাবাজিসহ সকল মামলা তিনি সরকারে আসার পর একে একে উঠে গেল বা খারিজ হয়ে গেল। তবে আমাদের হাতে জাদুর কাঠি থাকলেও বলতাম না মামলা প্রত্যাহার করেন। আমরা ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করতাম। ঢাকার বকশীবাজারে আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতে ৩৪২ ধারায় দেয়া জবানবন্দিতে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া আত্মপক্ষ সমর্থন করে তৃতীয় দিনের বক্তব্যে এসব কথা বলেন। এর আগে ১৯শে অক্টোবর ও ২৬শে অক্টোবর দুইদিন আদালতে জবানবন্দি দেন তিনি। জবানবন্দিতে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, জনগণের মৌলিক ও মানবিক অধিকার এবং বিচার বিভাগ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছি। দেশকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করার নিরলস প্রয়াসে কখনো বিরতি দেইনি। আমি বিরোধীদলীয় নেত্রীর দায়িত্বও পালন করেছি। আত্মপ্রচারের উদ্দেশ্যে আমি এসব কথা বলছি না। আমার এই অবস্থান, ভূমিকা ও অবদানের বিনিময়ে বাড়তি কোনো সুবিধা বা মর্যাদা দাবি করার কোনো অভিপ্রায়ও আমার নেই। আমি নিজেকে আইন ও বিচারের ঊর্ধ্বেও মনে করি না। আমি শুধু এটুকু বলতে চাই যে, একই ধরনের মামলায় অভিযুক্ত হয়েও আরেকজন নেত্রী যে সব সুবিধা ভোগ করেছেন, আমি কখনো আদালতের কাছে তেমন সুবিধা দাবি করিনি। আমি দেশের একজন সাধারণ সিনিয়র সিটিজেনের প্রাপ্য অধিকারটুকু পেলেই খুশি। আইনসম্মতভাবে ন্যায়বিচার ছাড়া মাননীয় আদালতের কাছে আমার চাইবার আর কিছু নেই। আজ আমার প্রতি যে ধরনের আচরণ করা হচ্ছে তা আমার অবস্থান ও ভূমিকার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা এবং এর মাধ্যমে আমার প্রতি কোনো বৈষম্য করা হচ্ছে কিনা- সেটাও আদালতের বিবেচনার বিষয় বলে আমি মনে করি। খালেদা জিয়া বলেন, মাননীয় আদালত- আমার মাঝে মধ্যে মনে হয় শেখ হাসিনার হাতে কোনো এক জাদুর কাঠি আছে। সেই জাদুর কাঠির ছোঁয়ায় তার বিরুদ্ধে দায়ের করা দুর্নীতি, অনিয়ম ও চাঁদাবাজিসহ সকল মামলা তিনি সরকারে আসার পর একে একে উঠে গেল বা খারিজ হয়ে গেল। আমাদের আর কারো হাতে তেমন কোনো জাদুর কাঠি নেই। কাজেই একই সময়ে আমাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো একের পর এক সচল হয়েছে ও গতি পেয়েছে। হয়েছে নতুন নতুন আরো মামলা। দেশে কতো গুরুত্বপূর্ণ মামলা বছরের পর বছর ধরে চলছে। কতো মামলা ঝুলে আছে। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে মামলাগুলো পেয়েছে রকেটের গতি। যেন কেউ পেছন থেকে তাড়া করছে, শিগগিরই শেষ করো। তড়িঘড়ি করে একটা রায় দিয়ে দাও বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে। বিএনপি চেয়ারপারসন প্রশ্ন রেখে বলেন, কেন? কোন্ উদ্দেশ্যে এবং কিসের জন্য এতো তাড়াহুড়ো? এই তাড়াহুড়োয় কি ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে? নাকি ন্যায় বিচারের কবর রচিত হবে? আমাদের হাতে জাদুর কাঠি থাকলেও আমরা বলতাম না, মামলা প্রত্যাহার করেন। আমরা ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করতাম। এখনো আদালতের কাছে কেবল ন্যায়বিচারই প্রত্যাশা করছি। আশা করি সকল প্রভাবের ঊর্ধ্বে উঠে আমাদের প্রতি আইন অনুযায়ী ন্যায়বিচার করা হবে। ন্যায়বিচারের কথা জোর দিয়ে আমি বারবার বলছি, এর কারণ আছে। কারণ, ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে কি-না সে ব্যাপারে দেশবাসীর ঘোরতর সন্দেহ রয়েছে। আমরাও শঙ্কিত। খালেদা জিয়া বলেন, আপনি জানেন- এই মামলাসহ আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা বিভিন্ন মামলার তদন্ত ও বিচারকাজ চলার সময় প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রিসভার অনেক সদস্য এবং শাসক দলের কোনো কোনো নেতা আমাকে দোষী সাব্যস্ত করে বক্তব্য দিয়েছেন। আমাকে অভিযুক্ত করে বিরূপ প্রচারণা চালিয়েছেন। যেন তারা মামলার রায় কি হবে তা আগাম জানেন। অথবা তারা তাদের বক্তব্যে মাননীয় আদালতকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছেন। তদন্ত ও বিচারাধীন বিষয়ে ক্ষমতাসীনদের এহেন অপপ্রচার শুধু ন্যয়বিচারকেই প্রভাবিত করে না, বরং তা আদালত অবমাননার শামিল। এখানেই শেষ নয়, মামলার রায়ে আমার সাজা হবে এবং আমাকে কাশিমপুর কারাগারে রাখা হবে বলেও ইতিমধ্যে কোনো কোনো মন্ত্রী প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছেন। কোনো কোনো মন্ত্রী এবং শাসক দলের কোনো কোনো নেতা প্রায় নিয়মিত হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন, আমাকে রাজনীতির অঙ্গন থেকে বিদায় করে দেয়া হবে। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, রাজনৈতিক অসৎ উদ্দেশ্যে আমাকে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে সরাতে এবং নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে ক্ষমতাসীনরা একটি নীলনকশা প্রণয়ন করেছে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সে বিষয়ে ইতিমধ্যেই রিপোর্ট, মতামত ও বিশ্লেষণ প্রকাশিত হয়েছে। সরকারের উচ্চ মহলের কার্যকলাপ, তৎপরতা এবং বক্তব্য-বিবৃতি থেকে তা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়। আর এসব কারণেই দেশবাসীর মনে ঘোরতর সন্দেহ রয়েছে, আমার বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে ন্যায়বিচার হবে না।
এর আগে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে গতকাল সকাল সোয়া এগারটার দিকে আদালতে যান খালেদা জিয়া। পরে ১২টা ৫০ মিনিট থেকে ১টা ২০ মিনিট পর্যন্ত আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দেন তিনি। আদালতের কার্যক্রম শেষে দুপুর দেড়টার দিকে আদালত প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। সকালে আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে খালেদা জিয়ার পক্ষে স্থায়ী জামিনের আবেদন করেন তার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। আদালতকে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া অন্তর্বর্তীকালীন জামিনে রয়েছেন। ধার্য তারিখ পর্যন্ত তাকে জামিন দেয়া হয়েছে। এই মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হলেও তিনি আদালতের প্রতি সম্মান জানিয়ে আদালতে উপস্থিত হন। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তিনবার ক্ষমতায় ছিলেন। তিনি পালিয়ে যাওয়ার লোক নন। জামিনের কোনো অপব্যবহার করেননি। তিনি বয়স্ক ও অসুস্থ। চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে গিয়েছিলেন, এটি আদালতকে আমরা অবহিত করেছি। জয়নুল আবেদীন বলেন, বিদেশে তিনি (খালেদা জিয়া) পূর্ণ চিকিৎসা করতে পারেননি। চিকিৎসা সম্পন্ন না করেই আদালতের প্রতি সম্মান রেখে দেশে এসেছেন। খালেদার আইনজীবী বলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) কক্সবাজার সফরে গিয়েছিলেন। মঙ্গলবার ঢাকায় এসেছেন। তিনি অসুস্থ। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৭ ধারাতেও অসুস্থ নারীদের ক্ষেত্রে কিছু সুবিধার কথা বলা আছে। সবকিছু বিবেচনায় আমরা তার স্থায়ী জামিনের আবেদন করছি। এসময় আদালতের বিচারক বলেন, তিনি যে বিদেশে থেকে চিকিৎসা নিয়ে আসলেন এ সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র আপনারা আদালতে দাখিল করেননি। দিয়েছেন কি? এ সময় খালেদার আইনজীবী আবদুর রেজাক খান বলেন, লন্ডন থেকে চিকিৎসার কোনো সনদ আনা কঠিন। সেখানে এ ধরনের সনদ কেউ পায় না। আদালতকে তিনি বলেন, মামলায় দুটি আবেদন (১১ সাক্ষীকে রিকল করে জেরা ও মামলা বাতিলের আবেদন হাইকোর্টে খারিজ) আপিল বিভাগে বিচারাধীন আছে। আগামী রোববার তা শুনানি হতে পারে। সেই সময় পর্যন্ত আত্মপক্ষ সমর্থনের বক্তব্য মুলতবি করার আবেদন করেন তিনি। খালেদা জিয়ার স্থায়ী জামিনের বিরোধিতা করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, এর আগেও তাকে স্থায়ী জামিন দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি এর অপব্যবহার করেছেন। উনারা (খালেদা জিয়ার আইনজীবী) দুটি ইস্যুতে উচ্চ আদালতে গিয়েছেন। কিন্তু কোনো রুল আনতে পারেননি। শুনানি শেষে আদালতের বিচারক মো. আখতারুজ্জামান খালেদা জিয়ার স্থায়ী জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেন। উল্লেখ্য, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে আসা দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে খালেদা জিয়া, তার ছেলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান (লন্ডনে অবস্থানরত) সহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩রা জুলাই রমনা থানায় মামলা দায়ের করে দুদক। এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন- মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ। এরা দুজন বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। অন্য দুই আসামি সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামালউদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান এখনো পলাতক। অন্যদিকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধভাবে লেনদেনের অভিযোগে ২০১০ সালের ৮ই আগস্ট রাজধানীর তেজগাঁও থানায় খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। খালেদা জিয়া ছাড়া এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন- তার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। ২০১৪ সালের ১৯শে মার্চ অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে মামলার বিচারকাজ শুরু হয়।
কারণ এই মামলাসহ আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা বিভিন্ন মামলার তদন্ত ও বিচারকাজ চলার সময় প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রিসভার অনেক সদস্য এবং শাসক দলের কোনো কোনো নেতা আমাকে দোষী সাব্যস্ত করে বক্তব্য দিয়েছেন। আমাকে অভিযুক্ত করে বিরূপ প্রচারণা চালিয়েছেন। যেন তারা মামলার রায় কি হবে তা আগাম জানেন। খালেদা জিয়া বলেন, আমার মাঝে মধ্যে মনে হয় শেখ হাসিনার হাতে কোনো এক জাদুর কাঠি আছে। সেই জাদুর কাঠির ছোঁয়ায় তার বিরুদ্ধে দায়ের করা দুর্নীতি, অনিয়ম ও চাঁদাবাজিসহ সকল মামলা তিনি সরকারে আসার পর একে একে উঠে গেল বা খারিজ হয়ে গেল। তবে আমাদের হাতে জাদুর কাঠি থাকলেও বলতাম না মামলা প্রত্যাহার করেন। আমরা ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করতাম। ঢাকার বকশীবাজারে আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতে ৩৪২ ধারায় দেয়া জবানবন্দিতে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া আত্মপক্ষ সমর্থন করে তৃতীয় দিনের বক্তব্যে এসব কথা বলেন। এর আগে ১৯শে অক্টোবর ও ২৬শে অক্টোবর দুইদিন আদালতে জবানবন্দি দেন তিনি। জবানবন্দিতে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, জনগণের মৌলিক ও মানবিক অধিকার এবং বিচার বিভাগ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছি। দেশকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করার নিরলস প্রয়াসে কখনো বিরতি দেইনি। আমি বিরোধীদলীয় নেত্রীর দায়িত্বও পালন করেছি। আত্মপ্রচারের উদ্দেশ্যে আমি এসব কথা বলছি না। আমার এই অবস্থান, ভূমিকা ও অবদানের বিনিময়ে বাড়তি কোনো সুবিধা বা মর্যাদা দাবি করার কোনো অভিপ্রায়ও আমার নেই। আমি নিজেকে আইন ও বিচারের ঊর্ধ্বেও মনে করি না। আমি শুধু এটুকু বলতে চাই যে, একই ধরনের মামলায় অভিযুক্ত হয়েও আরেকজন নেত্রী যে সব সুবিধা ভোগ করেছেন, আমি কখনো আদালতের কাছে তেমন সুবিধা দাবি করিনি। আমি দেশের একজন সাধারণ সিনিয়র সিটিজেনের প্রাপ্য অধিকারটুকু পেলেই খুশি। আইনসম্মতভাবে ন্যায়বিচার ছাড়া মাননীয় আদালতের কাছে আমার চাইবার আর কিছু নেই। আজ আমার প্রতি যে ধরনের আচরণ করা হচ্ছে তা আমার অবস্থান ও ভূমিকার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা এবং এর মাধ্যমে আমার প্রতি কোনো বৈষম্য করা হচ্ছে কিনা- সেটাও আদালতের বিবেচনার বিষয় বলে আমি মনে করি। খালেদা জিয়া বলেন, মাননীয় আদালত- আমার মাঝে মধ্যে মনে হয় শেখ হাসিনার হাতে কোনো এক জাদুর কাঠি আছে। সেই জাদুর কাঠির ছোঁয়ায় তার বিরুদ্ধে দায়ের করা দুর্নীতি, অনিয়ম ও চাঁদাবাজিসহ সকল মামলা তিনি সরকারে আসার পর একে একে উঠে গেল বা খারিজ হয়ে গেল। আমাদের আর কারো হাতে তেমন কোনো জাদুর কাঠি নেই। কাজেই একই সময়ে আমাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো একের পর এক সচল হয়েছে ও গতি পেয়েছে। হয়েছে নতুন নতুন আরো মামলা। দেশে কতো গুরুত্বপূর্ণ মামলা বছরের পর বছর ধরে চলছে। কতো মামলা ঝুলে আছে। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে মামলাগুলো পেয়েছে রকেটের গতি। যেন কেউ পেছন থেকে তাড়া করছে, শিগগিরই শেষ করো। তড়িঘড়ি করে একটা রায় দিয়ে দাও বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে। বিএনপি চেয়ারপারসন প্রশ্ন রেখে বলেন, কেন? কোন্ উদ্দেশ্যে এবং কিসের জন্য এতো তাড়াহুড়ো? এই তাড়াহুড়োয় কি ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে? নাকি ন্যায় বিচারের কবর রচিত হবে? আমাদের হাতে জাদুর কাঠি থাকলেও আমরা বলতাম না, মামলা প্রত্যাহার করেন। আমরা ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করতাম। এখনো আদালতের কাছে কেবল ন্যায়বিচারই প্রত্যাশা করছি। আশা করি সকল প্রভাবের ঊর্ধ্বে উঠে আমাদের প্রতি আইন অনুযায়ী ন্যায়বিচার করা হবে। ন্যায়বিচারের কথা জোর দিয়ে আমি বারবার বলছি, এর কারণ আছে। কারণ, ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে কি-না সে ব্যাপারে দেশবাসীর ঘোরতর সন্দেহ রয়েছে। আমরাও শঙ্কিত। খালেদা জিয়া বলেন, আপনি জানেন- এই মামলাসহ আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা বিভিন্ন মামলার তদন্ত ও বিচারকাজ চলার সময় প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রিসভার অনেক সদস্য এবং শাসক দলের কোনো কোনো নেতা আমাকে দোষী সাব্যস্ত করে বক্তব্য দিয়েছেন। আমাকে অভিযুক্ত করে বিরূপ প্রচারণা চালিয়েছেন। যেন তারা মামলার রায় কি হবে তা আগাম জানেন। অথবা তারা তাদের বক্তব্যে মাননীয় আদালতকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছেন। তদন্ত ও বিচারাধীন বিষয়ে ক্ষমতাসীনদের এহেন অপপ্রচার শুধু ন্যয়বিচারকেই প্রভাবিত করে না, বরং তা আদালত অবমাননার শামিল। এখানেই শেষ নয়, মামলার রায়ে আমার সাজা হবে এবং আমাকে কাশিমপুর কারাগারে রাখা হবে বলেও ইতিমধ্যে কোনো কোনো মন্ত্রী প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছেন। কোনো কোনো মন্ত্রী এবং শাসক দলের কোনো কোনো নেতা প্রায় নিয়মিত হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন, আমাকে রাজনীতির অঙ্গন থেকে বিদায় করে দেয়া হবে। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, রাজনৈতিক অসৎ উদ্দেশ্যে আমাকে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে সরাতে এবং নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে ক্ষমতাসীনরা একটি নীলনকশা প্রণয়ন করেছে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সে বিষয়ে ইতিমধ্যেই রিপোর্ট, মতামত ও বিশ্লেষণ প্রকাশিত হয়েছে। সরকারের উচ্চ মহলের কার্যকলাপ, তৎপরতা এবং বক্তব্য-বিবৃতি থেকে তা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়। আর এসব কারণেই দেশবাসীর মনে ঘোরতর সন্দেহ রয়েছে, আমার বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে ন্যায়বিচার হবে না।
এর আগে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে গতকাল সকাল সোয়া এগারটার দিকে আদালতে যান খালেদা জিয়া। পরে ১২টা ৫০ মিনিট থেকে ১টা ২০ মিনিট পর্যন্ত আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দেন তিনি। আদালতের কার্যক্রম শেষে দুপুর দেড়টার দিকে আদালত প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। সকালে আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে খালেদা জিয়ার পক্ষে স্থায়ী জামিনের আবেদন করেন তার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। আদালতকে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া অন্তর্বর্তীকালীন জামিনে রয়েছেন। ধার্য তারিখ পর্যন্ত তাকে জামিন দেয়া হয়েছে। এই মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হলেও তিনি আদালতের প্রতি সম্মান জানিয়ে আদালতে উপস্থিত হন। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তিনবার ক্ষমতায় ছিলেন। তিনি পালিয়ে যাওয়ার লোক নন। জামিনের কোনো অপব্যবহার করেননি। তিনি বয়স্ক ও অসুস্থ। চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে গিয়েছিলেন, এটি আদালতকে আমরা অবহিত করেছি। জয়নুল আবেদীন বলেন, বিদেশে তিনি (খালেদা জিয়া) পূর্ণ চিকিৎসা করতে পারেননি। চিকিৎসা সম্পন্ন না করেই আদালতের প্রতি সম্মান রেখে দেশে এসেছেন। খালেদার আইনজীবী বলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) কক্সবাজার সফরে গিয়েছিলেন। মঙ্গলবার ঢাকায় এসেছেন। তিনি অসুস্থ। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৭ ধারাতেও অসুস্থ নারীদের ক্ষেত্রে কিছু সুবিধার কথা বলা আছে। সবকিছু বিবেচনায় আমরা তার স্থায়ী জামিনের আবেদন করছি। এসময় আদালতের বিচারক বলেন, তিনি যে বিদেশে থেকে চিকিৎসা নিয়ে আসলেন এ সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র আপনারা আদালতে দাখিল করেননি। দিয়েছেন কি? এ সময় খালেদার আইনজীবী আবদুর রেজাক খান বলেন, লন্ডন থেকে চিকিৎসার কোনো সনদ আনা কঠিন। সেখানে এ ধরনের সনদ কেউ পায় না। আদালতকে তিনি বলেন, মামলায় দুটি আবেদন (১১ সাক্ষীকে রিকল করে জেরা ও মামলা বাতিলের আবেদন হাইকোর্টে খারিজ) আপিল বিভাগে বিচারাধীন আছে। আগামী রোববার তা শুনানি হতে পারে। সেই সময় পর্যন্ত আত্মপক্ষ সমর্থনের বক্তব্য মুলতবি করার আবেদন করেন তিনি। খালেদা জিয়ার স্থায়ী জামিনের বিরোধিতা করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, এর আগেও তাকে স্থায়ী জামিন দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি এর অপব্যবহার করেছেন। উনারা (খালেদা জিয়ার আইনজীবী) দুটি ইস্যুতে উচ্চ আদালতে গিয়েছেন। কিন্তু কোনো রুল আনতে পারেননি। শুনানি শেষে আদালতের বিচারক মো. আখতারুজ্জামান খালেদা জিয়ার স্থায়ী জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেন। উল্লেখ্য, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে আসা দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে খালেদা জিয়া, তার ছেলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান (লন্ডনে অবস্থানরত) সহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩রা জুলাই রমনা থানায় মামলা দায়ের করে দুদক। এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন- মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ। এরা দুজন বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। অন্য দুই আসামি সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামালউদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান এখনো পলাতক। অন্যদিকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধভাবে লেনদেনের অভিযোগে ২০১০ সালের ৮ই আগস্ট রাজধানীর তেজগাঁও থানায় খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। খালেদা জিয়া ছাড়া এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন- তার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। ২০১৪ সালের ১৯শে মার্চ অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে মামলার বিচারকাজ শুরু হয়।
No comments