৫৫ বছরে পূর্ণিমা স্ন্যাকস
গরম স্বচ্ছ তেলে হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ছাড়া হচ্ছে ময়দা-বেসনের মিশ্রণ। তেলে পড়তেই জিলাপি হয়ে ভেসে উঠছে সেগুলো। তেল ঝরিয়ে চিনির শিরায় কয়েক মুহূর্ত, তারপর সরাসরি প্লেট থেকে মুখে চালান। সোনালি-বাদামি জিলাপিগুলো বাইরে মচমচে আর ভেতরে রসে টসটসে। নিউ পূর্ণিমা স্ন্যাকস বারে এই জিলাপির কদর ক্রেতাদের কাছে সবচেয়ে বেশি। আঙুলের মতো চওড়া বলে মুখে মুখে নাম হয়ে গেছে ‘মোটা জিলাপি’। দোকানটির মালিকদের একজন শেখ মঈনউদ্দিন বললেন, ১৯৬২ সালে তাঁর বাবা শেখ আমিনউদ্দিন দোকানটি চালু করেন। তখন ঢাকায় জিলাপি তেমন পাওয়া যেত না।
ভারতের নাগপুরে ছেলেবেলা কাটানো তাঁর বাবা সেখানকার হালুইকরদের মতো করে মোটা জিলাপি বিক্রি শুরু করেন। অল্প সময়েই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে সেই জিলাপি। এখনো মোটা জিলাপি বলতে লোকে পূর্ণিমার জিলাপিকেই বোঝে। ৫৫ বছর ধরে ১৮ নম্বর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের ঠিকানায় টিকে আছে নিউ পূর্ণিমা স্ন্যাকস বার। ৮৬ বছর বয়সী শেখ আমিনউদ্দিন এখনো প্রতিদিন দোকানে আসেন। তবে তাঁর তিন ছেলে মিলে এখন বেচাবিক্রি সামলান। মেজ ছেলে মঈনউদ্দিন বলেন, শুরু থেকেই তাঁদের কলিজা শিঙাড়া, ডিম চপ, শামি কাবাব বন, চিকেন ফ্রাই, সমুচা, প্যাটিস ঢাকাবাসীর পছন্দের তালিকায় চলে আসে। বললেন, ‘তখন তো বার্গারটার্গার কেউ চিনত না। এখানকার শামি বনই তখন ছিল আধুনিক। খুব বিক্রি হতো।’ এত বছরেও তাঁদের খাবারের তালিকায় তেমন রদবদল হয়নি।
শুরুর দিকের পদগুলোই এখনো বিক্রি হচ্ছে। এক বিক্রেতা বললেন, এখানকার জিনিসপত্রের দাম কম, স্বাদও মন্দ নয়। এ কারণে সবাই পূর্ণিমাতে আসেন। এই দোকানের উল্টো দিকেই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়। এ কারণে সারা দিন সেখানে লোকজন থাকে। এসব লোকজনও পূর্ণিমার ক্রেতা। তবে আশপাশের অফিসগুলোর কর্মীরা এখানকার খাবারের মূল খদ্দের। সারা দিনই ভিড় লেগে থাকে তাঁদের। ব্যাংকার আবদুল হালিম প্রতিদিন মধ্যদুপুরের নাশতা সারতে এখানে আসেন। বললেন, ‘এদের কলিজার শিঙাড়া আর জিলাপি খুব ভালো। দামেও সস্তা। ১০ টাকায় নাশতা হয়ে যায়।’ প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত দোকান খোলা থাকে। খাবারের তালিকায় আছে ১৪-১৫ ধরনের নাশতা। দাম ৫ থেকে ৮০ টাকা। আর পূর্ণিমার জিলাপি প্রতি কেজি ১৪০ টাকা। জিলাপি, শিঙাড়া, সমুচা, চিকেন ফ্রাই—এই চার পদ সারা দিনই পাওয়া যায়।
No comments