ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালাল উত্তর কোরিয়া
উত্তর কোরিয়া গতকাল রোববার একটি ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শপথ নেওয়ার পর পিয়ংইয়ং এই প্রথম এমন কাজ করল। জবাবে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র ও উত্তর কোরিয়ার বৈরীভাবাপন্ন দেশ জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের প্রতি শতভাগ সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, পশ্চিমাঞ্চলীয় নর্থ পিয়ঙ্গান প্রদেশের বাঙ্গিয়ন বিমানঘাঁটি থেকে গতকাল সকালে জাপান সাগরের দিকে (পূর্ব সাগর) উত্তর কোরিয়া ওই ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে মারে। এটি প্রায় ৫০০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে সাগরেই আঘাত হানে। তবে ক্ষেপণাস্ত্রটির ধরন সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য মেলেনি।
পিয়ংইয়ং নিজেদের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র-সামর্থ্য বৃদ্ধির ব্যাপারে বৈশ্বিক মনোযোগ আকর্ষণের লক্ষ্যেই পরীক্ষাটি চালিয়েছে। পাশাপাশি তারা নতুন মার্কিন প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া যাচাইয়ের লক্ষ্যেই এই উসকানিমূলক পদক্ষেপ নিয়ে থাকতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র সফররত জাপানি প্রধানমন্ত্রী আবে উত্তর কোরিয়ার ওই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাকে ‘সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য’ আখ্যা দিয়ে নিন্দা জানিয়েছেন। তাঁকে আশ্বস্ত করে ট্রাম্প এশীয় মিত্র দেশটির নিরাপত্তা রক্ষার ব্যাপারে ওয়াশিংটনের অঙ্গীকারের উল্লেখ করেছেন। আর টোকিওর মুখপাত্র ইয়োশিহিদে সুগে বলেন, এটা জাপান ও আশপাশের অঞ্চলের প্রতি স্পষ্ট উসকানিমূলক পদক্ষেপ। জাতিসংঘের প্রস্তাব অনুযায়ী উত্তর কোরিয়ার যেকোনো ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু পিয়ংইয়ং ২০০৬ সালে প্রথম পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালানোর পর থেকে তাদের ওপর জাতিসংঘ ছয় দফা অবরোধ আরোপ করার পরও দেশটি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা বন্ধ করেনি। উত্তর কোরিয়ার যুক্তি, তারা প্রতিরক্ষার স্বার্থেই এ ধরনের অস্ত্রশস্ত্র নির্মাণ ও ব্যবহার করছে। উত্তর কোরিয়া গত বছরও বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলোর সংশয়, পিয়ংইয়ং নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্রের সামর্থ্য যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে আঘাত হানার সমপর্যায়ে নিয়ে যেতে চাইছে। প্রতিবেশী দক্ষিণ কোরিয়ার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হয়াং গিও-আন উত্তর কোরিয়ার সর্বশেষ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার ‘শাস্তি’ দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস চলতি মাসের শুরুর দিকে সিউল সফর করেছেন। তিনি পিয়ংইয়ংকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন,
যেকোনো পারমাণবিক হামলার ‘কার্যকর ও বিধ্বংসী’ জবাব দেওয়া হবে। উত্তর কোরিয়া আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির ‘শেষ ধাপে’ রয়েছে বলে দেশটির নেতা কিম জং-উন গত মাসে ঘোষণা দেন। প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প টুইটারে বলেছেন, ‘এটা হবে না।’ ওয়াশিংটন বারবার বলে এসেছে যে তারা উত্তর কোরিয়াকে কখনোই পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ হিসেবে মেনে নেবে না। এমন পরিস্থিতিতে দেশটির সর্বশেষ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার ট্রাম্পের জন্য একটি পরীক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পিয়ংইয়ংকে রুখতে হলে তাঁকে উত্তর কোরিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র চীনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে হবে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বেইজিংয়ের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্কে কিছুটা ভাটা পড়েছে। অবশ্য ট্রাম্প চীনের নেতা সি চিন পিংয়ের সঙ্গে সর্বশেষ ‘উষ্ণ’ ফোনালাপে ‘একক চীন’ নীতির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
No comments