সড়কে বাজার বসিয়ে চাঁদাবাজি
মিরপুর ১৫ নম্বর সেকশনের পূর্ব বাইশটেকি এলাকায় ফুটপাত ও সড়ক দখল করে গড়ে উঠেছে অবৈধ বাজার। বাজারে কয়েক শ দোকান। প্রতিটি দোকান থেকে স্থানীয় যুবলীগের নামে দৈনিক ১৫০-১৬০ টাকা চাঁদা তোলা হয় বলে দোকানদারেরা অভিযোগ করেছেন। তবে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর বলছেন, সিটি করপোরেশনের স্থায়ী বাজার না থাকায় বাজারটি বসতে দেওয়া হয়েছে। গতকাল শুক্রবার দেখা যায়, মিরপুর ১৫ নম্বর সেকশনের ডি-ব্লকের ২ নম্বর সড়কে ওজিএসবি হাসপাতালের প্রধান ফটক থেকেই সড়কে বাজার বসেছে। সেখান থেকে পূর্ব বাইশটেকি বালুর মাঠ পর্যন্ত সড়ক ও ফুটপাত দখল করে গড়ে উঠেছে এই বাজার।
পরিচিতি পেয়েছে ‘১৩ নম্বর নতুন বাজার’ নামে। ফুটপাত ও সড়কে গড়ে ওঠা স্থায়ী দোকানে বিক্রি হচ্ছে কাঁচা সবজি, আছে মাছ ও মুরগির দোকান। ফুটপাত ছাপিয়ে রাস্তায় চলে আসা ভাসমান দোকানে বিক্রি হচ্ছে মাছ, ফলমূল। দেখে মনে হয়, মহাসড়কের পাশে গড়ে ওঠা কোনো গ্রামীণ হাট। ফুটপাত ও সড়ক দখল হয়ে যাওয়ায় পথচারী ও যান চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বাঁশ-কাঠ দিয়ে ফুটপাতে এসব দোকান তোলা হয়েছে। ওপরে ত্রিপলের ছাউনি। কাঁচা সবজি, ফলমূল, আদা, পেঁয়াজ, রসুন, মাছ, মুরগি বিক্রি হচ্ছে। কয়েকজন ফুটপাতে বসে মাছ কাটছেন। লোকজন বাজার থেকে মাছ কিনে নিয়ে ফুটপাতে মাছ কাটাচ্ছেন। বাজারটির শেষ মাথায় বাঁশ-টিন দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে কাফরুল থানার পূর্ব বাইশটেকি ইউনিট যুবলীগের কার্যালয়। দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগে ফুটপাতের ওপরে কয়েকটি মাত্র দোকান ছিল। ক্রেতাদের ভিড় বাড়ায় কেনাবেচাও বেড়েছে, সেই সঙ্গে বেড়েছে দোকানের সংখ্যা। এখন এখানে স্থায়ী ও ভ্রাম্যমাণ মিলিয়ে তিন শর মতো দোকান। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সকালে ভ্রাম্যমাণ দোকান আরও বেড়ে যায়। তাতে প্রায় পুরো সড়ক দখল হয়ে যায়। দোকানদারেরা অভিযোগ করেন, প্রতিদিন তাঁদের দোকানের জন্য ৯০ টাকা, পানির খরচ ৩০ টাকা, বাতিপ্রতি ১৫ টাকা বিদ্যুৎ ও জেনারেটর খরচ এবং পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য ১০ টাকা দিতে হয়। সব মিলিয়ে প্রতিদিন একটি দোকানের জন্য ১৫০-১৬০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়,
প্রতিদিন দোকান থেকে টাকা তোলেন মুকুল নামের এক ব্যক্তি। তবে বাজারটি বসিয়েছেন পূর্ব বাইশটেকি ইউনিয়ন যুবলীগের নেতা কাশেম হাওলাদার। গতকাল বেলা ১১টার দিকে লুঙ্গি ও শার্ট পরা এক ব্যক্তিকে দোকান থেকে টাকা সংগ্রহ করতে দেখা যায়। দোকানদারেরা বলেন, ওই ব্যক্তির নামই মুকুল। টাকা তোলা শেষে মুকুল বাজারের শেষ মাথার যুবলীগের ইউনিট কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। কিছুক্ষণ পর কার্যালয় থেকে বেরিয়ে এলে কথা হয় মুকুলের সঙ্গে। বাজার বসানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দোকান বসানোর ক্ষমতা আমার নাই। আমি দৈনিক ৫০০ টাকা মজুরিতে টাকা তোলার কাজ করি। বাজার কারা বসায় তা কাউন্সিলরকে জিজ্ঞেস করেন।’ রাতে কাশেম হাওলাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে ওয়ার্ড কাউন্সিলর জামাল মোস্তফার সঙ্গে কথা বলতে বলেন। যোগাযোগ করা হলে জামাল মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, বাজারটি আগে কলোনির ভেতরে ছিল। এখন যেখানে বাজার বসছে সেটির সামনে আর সড়ক নেই। পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য সমিতির মাধ্যমে কিছু টাকা তোলা হয়। চাঁদা তোলার বিষয়টি সঠিক নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। কাউন্সিলর বলেন, ওয়ার্ডে সিটি করপোরেশনের কাঁচাবাজার নেই। তাই কোথাও থেকে দোকানপাট তুলে দিলে বাসিন্দারা আপত্তি করেন। একটি কাঁচাবাজারের দাবি দীর্ঘদিনের। বাজারের জন্য ফাঁকা জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না।
No comments