মায়েরই দেখা হয় না মুস্তাফিজের খেলা!
টিভিতে ছেলের খেলা প্রায়ই দেখতে পারেন না, তা না হলেও মুস্তাফিজের সঙ্গে মাঝেমধ্যেই ফোনে কথা হয় মায়ের l ছবি: বিসিসিআই ও প্রথম আলো |
প্রতিদিন
মুস্তাফিজ ভারত থেকে ফোনে খোঁজ নেন। ম্যাচের আগে দোয়া নেন মা-বাবার।
মায়ের সঙ্গেই প্রায় আধঘণ্টা-চল্লিশ মিনিট কথা বলেন বাংলাদেশের সব মানুষ
অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে দিনটির জন্য। কবে খেলা হবে হায়দরাবাদ
সানরাইজার্সের! অনেকের পুরো ম্যাচ নিয়ে আগ্রহও নেই। বেশির ভাগের চোখ থাকে
‘সেই ৪ ওভারের’ দিকে। সেই মায়াবী, জাদুকরি কিন্তু বিধ্বংসী ৪ ওভার! যাঁর
সুবাদে হালের ক্রিকেটে সবচেয়ে আলোচিত শব্দবন্ধ ‘সেই ৪ ওভার’, সেই
মুস্তাফিজুর রহমানের মায়েরই বেশির ভাগ সময় খেলা দেখার সৌভাগ্য হয় না।
কারণ বিদ্যুৎ-বিভ্রাট। গত শুক্রবার মুস্তাফিজের বাড়িতে বসে এই প্রতিবেদন
লেখার সময়ও লোডশেডিংয়ের কবলে পড়তে হলো। বাড়ির সবার টেনশন, কখন আসবে
‘কারেন্ট’। দেখা যাবে তো মুস্তাফিজের বোলিং? সবগুলো ওভার দেখার সুযোগ মিলবে
তো?
মুস্তাফিজের মা মাহমুদা খাতুনের জন্য শুধু ছেলের বোলিং দেখা নয়। বাড়ির ছয় সন্তানের সবচেয়ে ছোট, সবচেয়ে আদরের ছেলেটি অনেক দিন ধরে চোখের সামনে নেই। ভারতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, এর পরপরই শুরু হয়েছে আইপিএল। মাঝখানে বিশ্বকাপ থেকে তিন দিনের জন্য এসে চোখের পলকে ছেলে আবার কোলছাড়া হয়েছে। বাড়ি ছেড়ে কখনোই মুস্তাফিজ এত দিন বাইরে থাকেননি। মা ছেলের বোলিং যতটা না দেখেন, তার চেয়ে তাঁর চোখ বেশি জুড়ায় ছেলের মুখ দেখতে পেলে। ছেলেটা কি শুকিয়ে গেল! ঠিকমতো খায় তো? মুস্তাফিজের প্রতিটি বলের অলস সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে। মাকে কতটা গর্বিত করে ভাবুন! কিন্তু সেই মায়েরই বেশির ভাগ সময় দেখা হয় না ছেলের খেলা। বিদ্যুতের লুকোচুরি মুস্তাফিজের মাকেই কষ্ট দেয় সবচেয়ে বেশি। পরিবারের বাকি সদস্যদের কথা তো থাকলই। এমনিতে বাড়িতে আগে টিভির প্রবেশাধিকার ছিল না। কিন্তু ছেলের খেলা দেখার জন্য সেখানে ছাড় দিয়েছেন বাবা আবুল কাশেম গাজী। মাগরিবের নামাজ পড়তে যাওয়ার আগে তাঁকে দেখা গেল অস্থির পায়চারি করতে। পরশু আইপিএলে ছিল গুরুত্বপূর্ণ খেলা। হায়দরাবাদ মুখোমুখি হয়েছিল দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের। মুস্তাফিজের বাড়িতে পরিবারের সবাই মিলে একসঙ্গে খেলা দেখেন। আশপাশের প্রতিবেশীরাও হাজির হন। কদিন আগে বাজারে বড় পর্দায় খেলা দেখানোর আয়োজনও করতে হয়েছিল তেঁতুলিয়াবাসীর জন্য। মুস্তাফিজ এখন সারা বাংলাদেশের, তবে তেঁতুলিয়া গ্রামের দাবিই তো বেশি, নাকি! সাতক্ষীরায় অবশ্য কদিন ধরে বেশ বৃষ্টি হচ্ছে। খোলা মাঠের বড় পর্দার আয়োজনও বাদ পড়েছে কদিন আগে। তবু এলাকার মানুষ যে যাঁর মতো করে খেলা দেখেন। কিন্তু বারবার বাদ সাধে বিদ্যুৎ। মুস্তাফিজকে মোটরসাইকেলে করে ক্রিকেট-দুনিয়ায় নিয়ে যাওয়ার সেই বিখ্যাত গল্পের জন্ম দেওয়া পরিবারের সেজো ছেলে মোখলেছুর রহমান বললেন, ‘সারা দিনে পাঁচ থেকে ছয়বার কারেন্ট যাওয়া যেন স্বাভাবিক ঘটনা। একবার কারেন্ট গেলে কমপক্ষে এক ঘণ্টা থাকে না। সারা দিনে কারেন্ট না গেলেই বরং আমরা বেশি দুশ্চিন্তা করি, তাহলে মনে হয় রাতে থাকবে না।’ মুস্তাফিজের পুরো ৪ ওভার বোলিং দেখার সৌভাগ্য একবারও হয়নি এই বাড়ির। টস জিতে হায়দরাবাদ বোলিং নিলে শেষের তিনটি ওভার দেখার সুযোগ মেলে কখনো কখনো। স্থানীয় পল্লী বিদ্যুতের লোকদের জানানো হয়েছিল বিষয়টি। সেখানকার এক কর্মকর্তা মুস্তাফিজের বাবাকে জানিয়েছিলেন ‘বিষয়টি দেখবেন’। এরপর আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। মুস্তাফিজের বাড়িতে পরশু সারা দিন কাটিয়ে একটা জিনিস স্পষ্ট বোঝা গেল, এ নিয়ে দেনদরবার করার মতো লোক তাঁরা নন। কাউকে কিছু বলতে গিয়ে পাছে তাঁদের অসুবিধা হয়—এটাই যেন বেশি দুশ্চিন্তা এই পরিবারের!
কিন্তু মুস্তাফিজের বোলিং দেখতে এই পরিবারের ব্যাকুলতা, মায়ের ব্যাকুলতারও তো শেষ নেই! প্রতিদিন মুস্তাফিজ ভারত থেকে ফোনে খোঁজ নেন। ম্যাচের আগে দোয়া নেন মা-বাবার। মায়ের সঙ্গেই প্রায় আধঘণ্টা-চল্লিশ মিনিট কথা বলেন। সেখানেও সমস্যা। কোনো মোবাইল ফোনেরই নেটওয়ার্ক তেঁতুলিয়ার এই বাড়িতে ভালো নয়। থ্রিজি নেটওয়ার্ক পাওয়া তো আরও দুষ্কর। ভিডিও কলে কথা বলতে গেলে থ্রিজির বিকল্পও নেই। ছাদে গিয়ে অপেক্ষা করতে হয় নেটওয়ার্কের জন্য। সাধারণ নেটওয়ার্কও অনেক সময় মেলে না। মুস্তাফিজের মায়ের আকুতি; এই পরিবারের, এখানকার গ্রামবাসীর আবেদন—বিদ্যুৎ আর নেটওয়ার্ক সমস্যা দুটির যেন সমাধান হয়। সেই আবেদন সবার কাছে পৌঁছে দিতেই যখন চলছিল এই লেখা, টস হয়ে গিয়েছিল। ব্যাটিং নিয়েছিল হায়দরাবাদ। ভাগ্য ভালো, বেশ কবার লো ভোল্টেজ ভয় পাইয়ে দিলেও বিদ্যুৎ শেষ পর্যন্ত ছিল। কিন্তু এমন সৌভাগ্য পরেও থাকবে তো! মুস্তাফিজকে যতবার টিভিতে দেখায়, তাঁর মায়ের মুখে যেন আনন্দের ঝিলিক বয়ে যায়!
মুস্তাফিজের মা মাহমুদা খাতুনের জন্য শুধু ছেলের বোলিং দেখা নয়। বাড়ির ছয় সন্তানের সবচেয়ে ছোট, সবচেয়ে আদরের ছেলেটি অনেক দিন ধরে চোখের সামনে নেই। ভারতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, এর পরপরই শুরু হয়েছে আইপিএল। মাঝখানে বিশ্বকাপ থেকে তিন দিনের জন্য এসে চোখের পলকে ছেলে আবার কোলছাড়া হয়েছে। বাড়ি ছেড়ে কখনোই মুস্তাফিজ এত দিন বাইরে থাকেননি। মা ছেলের বোলিং যতটা না দেখেন, তার চেয়ে তাঁর চোখ বেশি জুড়ায় ছেলের মুখ দেখতে পেলে। ছেলেটা কি শুকিয়ে গেল! ঠিকমতো খায় তো? মুস্তাফিজের প্রতিটি বলের অলস সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে। মাকে কতটা গর্বিত করে ভাবুন! কিন্তু সেই মায়েরই বেশির ভাগ সময় দেখা হয় না ছেলের খেলা। বিদ্যুতের লুকোচুরি মুস্তাফিজের মাকেই কষ্ট দেয় সবচেয়ে বেশি। পরিবারের বাকি সদস্যদের কথা তো থাকলই। এমনিতে বাড়িতে আগে টিভির প্রবেশাধিকার ছিল না। কিন্তু ছেলের খেলা দেখার জন্য সেখানে ছাড় দিয়েছেন বাবা আবুল কাশেম গাজী। মাগরিবের নামাজ পড়তে যাওয়ার আগে তাঁকে দেখা গেল অস্থির পায়চারি করতে। পরশু আইপিএলে ছিল গুরুত্বপূর্ণ খেলা। হায়দরাবাদ মুখোমুখি হয়েছিল দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের। মুস্তাফিজের বাড়িতে পরিবারের সবাই মিলে একসঙ্গে খেলা দেখেন। আশপাশের প্রতিবেশীরাও হাজির হন। কদিন আগে বাজারে বড় পর্দায় খেলা দেখানোর আয়োজনও করতে হয়েছিল তেঁতুলিয়াবাসীর জন্য। মুস্তাফিজ এখন সারা বাংলাদেশের, তবে তেঁতুলিয়া গ্রামের দাবিই তো বেশি, নাকি! সাতক্ষীরায় অবশ্য কদিন ধরে বেশ বৃষ্টি হচ্ছে। খোলা মাঠের বড় পর্দার আয়োজনও বাদ পড়েছে কদিন আগে। তবু এলাকার মানুষ যে যাঁর মতো করে খেলা দেখেন। কিন্তু বারবার বাদ সাধে বিদ্যুৎ। মুস্তাফিজকে মোটরসাইকেলে করে ক্রিকেট-দুনিয়ায় নিয়ে যাওয়ার সেই বিখ্যাত গল্পের জন্ম দেওয়া পরিবারের সেজো ছেলে মোখলেছুর রহমান বললেন, ‘সারা দিনে পাঁচ থেকে ছয়বার কারেন্ট যাওয়া যেন স্বাভাবিক ঘটনা। একবার কারেন্ট গেলে কমপক্ষে এক ঘণ্টা থাকে না। সারা দিনে কারেন্ট না গেলেই বরং আমরা বেশি দুশ্চিন্তা করি, তাহলে মনে হয় রাতে থাকবে না।’ মুস্তাফিজের পুরো ৪ ওভার বোলিং দেখার সৌভাগ্য একবারও হয়নি এই বাড়ির। টস জিতে হায়দরাবাদ বোলিং নিলে শেষের তিনটি ওভার দেখার সুযোগ মেলে কখনো কখনো। স্থানীয় পল্লী বিদ্যুতের লোকদের জানানো হয়েছিল বিষয়টি। সেখানকার এক কর্মকর্তা মুস্তাফিজের বাবাকে জানিয়েছিলেন ‘বিষয়টি দেখবেন’। এরপর আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। মুস্তাফিজের বাড়িতে পরশু সারা দিন কাটিয়ে একটা জিনিস স্পষ্ট বোঝা গেল, এ নিয়ে দেনদরবার করার মতো লোক তাঁরা নন। কাউকে কিছু বলতে গিয়ে পাছে তাঁদের অসুবিধা হয়—এটাই যেন বেশি দুশ্চিন্তা এই পরিবারের!
কিন্তু মুস্তাফিজের বোলিং দেখতে এই পরিবারের ব্যাকুলতা, মায়ের ব্যাকুলতারও তো শেষ নেই! প্রতিদিন মুস্তাফিজ ভারত থেকে ফোনে খোঁজ নেন। ম্যাচের আগে দোয়া নেন মা-বাবার। মায়ের সঙ্গেই প্রায় আধঘণ্টা-চল্লিশ মিনিট কথা বলেন। সেখানেও সমস্যা। কোনো মোবাইল ফোনেরই নেটওয়ার্ক তেঁতুলিয়ার এই বাড়িতে ভালো নয়। থ্রিজি নেটওয়ার্ক পাওয়া তো আরও দুষ্কর। ভিডিও কলে কথা বলতে গেলে থ্রিজির বিকল্পও নেই। ছাদে গিয়ে অপেক্ষা করতে হয় নেটওয়ার্কের জন্য। সাধারণ নেটওয়ার্কও অনেক সময় মেলে না। মুস্তাফিজের মায়ের আকুতি; এই পরিবারের, এখানকার গ্রামবাসীর আবেদন—বিদ্যুৎ আর নেটওয়ার্ক সমস্যা দুটির যেন সমাধান হয়। সেই আবেদন সবার কাছে পৌঁছে দিতেই যখন চলছিল এই লেখা, টস হয়ে গিয়েছিল। ব্যাটিং নিয়েছিল হায়দরাবাদ। ভাগ্য ভালো, বেশ কবার লো ভোল্টেজ ভয় পাইয়ে দিলেও বিদ্যুৎ শেষ পর্যন্ত ছিল। কিন্তু এমন সৌভাগ্য পরেও থাকবে তো! মুস্তাফিজকে যতবার টিভিতে দেখায়, তাঁর মায়ের মুখে যেন আনন্দের ঝিলিক বয়ে যায়!
No comments