ছোট প্রাণ, ছোট কথা by আদর রহমান
পোলাও
থেকে শুরু করে রুটি পর্যন্ত, আর বালকি তাঁর ছবিতে তুলে ধরেছেন সবকিছুর
স্বাদ। চিনি কম ছবিতে ‘বুড়ো’ অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে টাবুর প্রেমটা কিন্তু
হয় জাফরানি পোলাওয়ের জের ধরে। আর তাঁর সর্বশেষ ছবি কি অ্যান্ড কা-এর
গাঁথুনিটা শক্ত হয়েছে গোলগাল রুটির মধ্য দিয়ে! হ্যাঁ, পরিচালক আর বালকি
বরাবরই ছোট ছোট বিষয়ের মধ্য দিয়ে বড় বার্তা পৌঁছে দেন। তাই কারিনা কাপুর
খান কিংবা অর্জুন কাপুর যদি রুটি বানানো, কাপড় ধোঁয়া কিংবা ঘর মোছা
নিয়ে একটু বেশি মেতে ওঠেন, তাহলে ঘাবড়ে যাবেন না। এর মধ্য দিয়ে কিন্তু
ভিন্ন বার্তা দিচ্ছেন তাঁরা। বিজ্ঞাপন জগতের মানুষ আর বালকি। একটা সময়
বানাবেন বড় ছবি, সেই স্বপ্ন চোখে নিয়েই কয়েক সেকেন্ড ব্যাপ্তির ছোট ছোট
বিজ্ঞাপনচিত্র বানানো শুরু করেন। বড় স্বপ্ন চোখে নিয়ে ছোট ছোট গল্পে
প্রাণ দেওয়া যেন একটা সময় অভ্যাসে রূপ নেয়। বালকির প্রতিটি ছবিতেই সেই
অভ্যাসের ছাপটা স্পষ্ট। শুরু করা যাক তাঁর পরিচালিত প্রথম ছবি চিনি কম
দিয়ে। ২০০৭ সালে মুক্তি পাওয়া এ ছবিকে ওই সময় অনেক চলচ্চিত্রবোদ্ধাই
বলিউডের অন্যতম সেরা প্রেমের ছবি বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। ছোট ছোট ঘটনা
থেকে একটা অসম প্রেম কী করে অসাধারণ হয়ে ওঠে, সেই সঙ্গে সেই গল্পে সহজেই
মিলিয়ে দেওয়া যায় জীবনবোধের কঠিন বক্তব্য—তা বালকি তাঁর প্রথম ছবিতেই
দারুণভাবে দেখিয়েছিলেন। ছবিটি মুক্তির আগে নানাজন নানা কথা বলেছিল এ নিয়ে।
কিন্তু শেষমেশ সহজ উপস্থাপনের কাছে হার মেনেছিল সমালোচকদের কঠিন সব কথা।
জাফরানি পোলাওয়ের পাত থেকে শুরু হওয়া অমিতাভ ও টাবুর প্রেম ঝড় তোলে
বলিউডে। এরপর ২০০৯ সালে মুক্তি পায় আর বালকির দ্বিতীয় ছবি পা। এ ছবিতে খুব
সহজভাবে কিছু কঠিন বার্তা দিয়েছিলেন এই নির্মাতা। কঠিন বাস্তবতাকে কখনো
খিচুড়ি, কখনো বা মিলিয়েছেন হেঁচকির সঙ্গে। তাঁর সহজবোধ্য সেই গল্পে বাবা
অমিতাভ ছেলে অভিষেকের সন্তানের চরিত্রে অভিনয় করলেও তা কিন্তু কারও মাথার
ওপর দিয়ে যায়নি; বরং ঠিকই হৃদয় ভেদ করে সেখানেই স্থায়ী হয়। তামিল ছবির
তারকা ধানুশ ও অমিতাভ বচ্চনকে নিয়েই নিজের তৃতীয় ছবি শামিতাভ তৈরি করেন
বালকি, ২০১৫ সালে। প্রত্যাশিত সাফল্য পায়নি ছবিটি। তবে চলচ্চিত্রবোদ্ধারা
ছবির প্রশংসা করতে কার্পণ্য করেননি। তাঁরা বলেছিলেন, আবারও সহজভাবে কঠিন
বিষয়কে পর্দায় তুলে ধরলেন আর বালিক। ছবিটি যাঁদের দেখা হয়নি, তাঁদের জন্য
বলে রাখি শামিতাভ-এ দেখানো হয়, সিনেমার জগতে মেধাটাই মুখ্য, সৌন্দর্য
কিংবা সুকণ্ঠ নয়। ছবিতে বাক প্রতিবন্ধী ধানুশ তাঁর অভিনয়ের মেধা দিয়ে হয়ে
উঠেছিলেন মহাতারকা। তাঁর কণ্ঠ হিসেবে পর্দার আড়ালে থাকতেন অমিতাভ। কিন্তু
ধানুশের মৃত্যুর পর সেই সুকণ্ঠও হারিয়ে যায়। এবার আসা যাক বালকির সম্প্রতি
মুক্তি পাওয়া ছবি কি অ্যান্ড কা-তে। এই ছবিতেও আর বালকি নিজের সেই
‘সিগনেচার স্টাইল’ ঠিক রেখে নারী ও পুরুষের জীবনের কিছু ছকে বাঁধা বিষয়কে
ভেঙে দেখাতে চেয়েছেন। কারিনা কাপুরকে সুগৃহিণী হিসেবে পর্দায় তুলে না ধরে;
বরং তাঁকে দিয়েছেন সফল করপোরেট ব্যক্তিত্বের পরিচয়। অন্যদিকে সুদর্শন
অর্জুন কাপুরকে পরিচালক হেঁশেলঘরে ব্যস্ত থাকতে দেখিয়েছেন। কিন্তু এঁদের
মধ্যে কাউকেই কিন্তু পরিস্থিতির শিকার বলে দেখাননি বালকি। ‘কি’ (কিয়া,
কারিনার চরিত্রের নাম) এবং ‘কা’ (কবির, অর্জুনের চরিত্রের নাম) দুজনই
স্বাচ্ছন্দ্যে বেছে নিয়েছেন যাঁর যাঁর পছন্দের স্থানটি। রুটিরুজি জোগাড়
করেছেন কারিনা, তো রুটি বানিয়েছেন অর্জুন। তবে মজার বিষয় কি জানেন?
চলচ্চিত্রবোদ্ধা আর চলচ্চিত্র-বিষয়ক লেখকেরা নানাভাবে বালকির কাজ বিশ্লেষণ
করলেও, খোদ এই নির্মাতা কিন্তু নিজের কাজের ব্যাখ্যা দেন অদ্ভুতভাবে। সহজ
আর ছোট কথায় বালকি বলেন, ‘আমি কোনো কঠিন বার্তা দেওয়ার জন্য সিনেমা
বানাই না। আমি তো ছোট ছোট গল্প বলি, গল্প দেখাই। এই গল্প থেকে কেউ যদি
দারুণ কোনো বার্তা পেয়েই যান, তাহলে ধরে নেবেন এটা ছিল বোনাস!’
No comments