বাংলাদেশের হাসির মায়ায় ফারহান by আদর রহমান
কেউ
ফারহান আখতারের গানের ভক্ত, কেউ অভিনয়ের, কেউ আবার নির্মাতা ফারহানকে বেশি
ভালোবাসেন। কিন্তু তরুণীদের মধ্যে ফারহানের কদরের আরেকটি বড় কারণ তাঁর
হাসি। গালে অত বড় টোল পড়ে না তাঁর, কিন্তু হাসলে দুই চোখের দুপাশে কেমন
যেন ভাঁজ পড়ে। প্রথম সাক্ষাতেই ফারহানের সেই হাসি। সে হাসিতে কোনো
প্রভাবই ফেলেনি আগের রাতের কনসার্টের ক্লান্তি কিংবা টি-টোয়েন্টি
বিশ্বকাপে ভারতের হার। ফারহানকে মনে হলো পর্দার মতোই উচ্ছল আর প্রাণবন্ত।
১ এপ্রিল সকালে বলিউড তারকা ফারহান আখতারের সঙ্গে দেখা হলো ঢাকার একটি
পাঁচ তারকা হোটেলের বিলাসবহুল কক্ষে। সেখানে বসে টিভিতে তিনি দেখছিলেন
আগের রাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ভারতের হেরে যাওয়া ম্যাচের অংশবিশেষ। কারণ,
আগের রাতে গান গেয়ে ঢাকার ভক্তদের মুগ্ধ করতে গিয়ে খেলাটা দেখা হয়নি তাঁর।
শুরুতেই ঢাকার ভক্তদের নিয়ে প্রশ্ন। কেমন ছিল ঢাকার শ্রোতা? এককথায় জবাব
দিলেন ফারহান, ‘অসাধারণ।’ এরপর ব্যাখ্যা দিয়ে বললেন, ‘তাঁদের চিৎকার, আমার
সঙ্গে গানে কণ্ঠ মেলানো, তাঁদের কথাগুলো—মনে হচ্ছে এখনো আমি শুনতে
পাচ্ছি। সবাই গানের সঙ্গে, আমার সঙ্গে এতটা মিলে যাবে ভাবিনি।’ ফারহান
আখতার বললেন গত ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত ‘ফারহান লাইভ ইন ঢাকা’ কনসার্টের কথা।
ব্লুজ কমিউনিকেশনসের আয়োজনে এই কনসার্টে অংশ নিতে ভারত থেকে তিনি এ দেশে
ছুটে আসেন। এ কনসার্টের শিল্পী ব্যবস্থাপনায় ছিলেন অনসূয়া ঘোষ। শুরুতেই
দিলেন কিছু চমকপ্রদ তথ্য। ডন থ্রি নিয়ে যে খবর ছড়িয়েছে মিডিয়ায়, তা নিয়ে
নির্মাতা ফারহান বললেন, ‘এসব খবরের কোনো ভিত্তি নেই। এখন আমার হাতে
অনেকগুলো স্ক্রিপ্ট জমে আছে। এগুলোই পড়ছি। ডন থ্রি আদৌ হবে কি না, জানি
না। যদি অন্য কোনো ছবির গল্প পছন্দ হয়ে যায়, তাহলে ডন থ্রির আগে সে
ছবিটাই তৈরি করব।’ আবার চোখের কোণে ভাঁজ পড়া সেই হাসি দিয়ে ফারহান বললেন,
‘মজার বিষয় কি জানেন? ডন থ্রি ছবির খবর আমার পেছনে এমন ভাবে ছুটছে, যেমন
করে ডনের পেছনে ছোটে ১১টি দেশের পুলিশ!’ ভারতের প্রখ্যাত গীতিকার ও কবি
জাভেদ আখতারের ছেলে ফারহান বলিউডের এ সময়ের মেধাবী ও জনপ্রিয় তারকাদের
একজন। পরিচালক, নায়ক, গায়ক ও লেখক ফারহানকে কোনো একটি পরিচয়ে বাঁধা বেশ
কঠিন। তাই বলিউডে ৪২ বছর বয়সী ফারহানকে অনেকে ‘সর্বগুণসম্পন্ন’ বা
‘অলরাউন্ডার’ বলে সম্বোধন করতে দ্বিধা করেন না। এই ভাগ মিলখা ভাগ অভিনেতার
কাছে তাই জানতে চাওয়া, ‘এত কিছুর ভিড়ে কখনো খেই হারিয়ে ফেলেননি?’ ফারহান
বললেন, ‘বিষয়গুলো আসলে ভালো লাগা থেকে এসেছে। যা-ই করেছি, ভালো লেগেছে
বলেই করেছি। কাছের মানুষদের অনুপ্রেরণা পেয়েছি বলে করেছি।’ কাছের মানুষের
কথা বলতেই ফারহান তাঁর বাঙালি স্ত্রী ভারতের নামী হেয়ারস্টাইলিস্ট অধুনা
ভবানির প্রসঙ্গ আনলেন। তাঁদের সম্পর্কে বিচ্ছেদের সিলমোহর পড়ে গেছে,
কিন্তু ১৬ বছরের সংসারজীবনে অধুনার যে প্রভাব, তা অস্বীকার করলেন না
ফারহান। বললেন, ‘বাঙালি মেয়েটি (অধুনা) আমার জীবনকে দারুণভাবে প্রভাবিত
করেছে। এমনকি এখনো যেকোনো পরামর্শ, আলোচনা, উপদেশ—আমি অধুনার কাছ থেকে
নিই। সে আমার ভালো বন্ধু। তা ছাড়া আমার সন্তানদের মাধ্যমে অধুনা তো সারা
জীবনই আমার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবে। তাই বলা যায়, অধুনা নামের এই বাঙালি নারী
সারা জীবন আমাকে প্রভাবিত করে যাবে।’ আর বাঙালি ভক্তদের প্রভাব? তা বলতে
গিয়ে ফারহান মুগ্ধতা প্রকাশ করলেন। বললেন, ‘এ নিয়ে তিনবার এলাম বাংলাদেশে।
আট বছর আগে একটা ছবির কাজে এসেছিলাম। এরপর গত এশিয়া কাপ ক্রিকেটের সময়। আর
এবার এসেছি গান গাইতে। প্রতিবারই অল্প সময়ের জন্য এসেছি। তাই এই দেশটাকে
ভালো করে দেখার সুযোগ হয়নি। তবে একটা বিষয় লক্ষ করেছি প্রতিবার। তা হলো,
এ দেশের মানুষের হাসিতে অদ্ভুত মায়া আছে। যখনই এসেছি তাদের হাসি আমাকে
মুগ্ধ করেছে। সুযোগ হলে এ হাসি দেখতে বারবার এখানে আসতে চাই। ভাষার
সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে পারলে বাংলাদেশে কাজও করা হতে পারে।’
No comments