কার্গোর পরে কি
আশঙ্কা
ছিল আগে থেকেই। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে
উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল অনেক দেশই। সতর্ক করা হয়েছে বারবার। তবে অস্ট্রেলিয়ার
পর যুক্তরাজ্যও বাংলাদেশ থেকে কার্গো বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করায়
নতুন করে তৈরি হয়েছে উৎকণ্ঠা। পোশাক রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ
বলছে, এ নিষেধাজ্ঞা পোশাক রপ্তানির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। নিষেধাজ্ঞার
প্রভাব পড়তে পারে নিয়মিত যাত্রীবাহী ফ্লাইটেও। এমন আশঙ্কার আভাস রয়েছে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের
চিঠিতে। সেখানে স্পষ্টই ৩১শে মার্চের মধ্যে নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নয়নে
গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরুর তাগিদ দেয়া হয়েছে। কার্গো
নিষেধাজ্ঞার পর নতুন কোনো নিষেধাজ্ঞা আসে কি না তা নিয়ে চিন্তিত পররাষ্ট্র ও
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্টদের
ভাষ্য মতে, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে
উদ্বিগ্ন পশ্চিমা দুনিয়ার তরফে পুরো পরিস্থিতি মূল্যায়নের দায়িত্ব পেয়েছে
যুক্তরাজ্য। সেখানে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন
দেশ ও জোট রয়েছে। ওই দেশগুলোর সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে উদ্বেগ
রয়েছে। যার বহিঃপ্রকাশ বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর চিঠি। সরকারি কর্মকর্তাদের
আশঙ্কা বৃটেনের দেখানো পথে আরও অনেক দেশ হাঁটতে পারে। সেখানে মধ্যপ্রাচ্যের
বিভিন্ন দেশের বিমান পরিচালনাকারী সংস্থাগুলোও নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন
তুলতে পারে। কারণ হিসেবে যে বিষয়টি সরকারি কর্মকর্তাদের বিবেচনায় তা হলো-
গ্রাউন্ড ল্যান্ডলিংয়ের কাজটি বিমানের কাছে থাকায় বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর
ক্ষোভ রয়েছে। এ সুযোগে তারা পুঞ্জীভূত ক্ষোভের প্রকাশ ঘটাতে পারে। গ্রাউন্ড
হ্যান্ডেলিংয়ের কাজে বাংলাদেশ বিমান প্রায় ৩০০ কোটি টাকা আয় করে, যা দিয়ে
অন্য খাতে ভর্তুকি দেয়া হয় জানিয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, এ কাজটি পেতে বিভিন্ন
বিদেশি প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাব রয়েছে। দুই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল
কর্মকর্তারা গতকাল মানবজমিনকে বলেন, পুরো বিষয়টি ‘স্পর্শকাতর’ বিবেচনায়
বাংলাদেশও বসে নেই। এটি কেবল সন্ত্রাসবাদের হুমকি বা নিরাপত্তা সতর্কতা,
নাকি কোনো রাজনৈতিক চাপ? তা-ও পর্যালোচনা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সরকারের
সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে জানিয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, বৃটেনের
চাওয়া মতে, ৩১শে মার্চের মধ্যে গৃহীত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া
শুরুর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিষয়গুলো মনিটরিংয়ে এখন থেকে বিমানমন্ত্রী ও
সচিবের বিমানবন্দরে নিয়মিত অফিস করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিমানবন্দরের
নিরাপত্তা জোরদারে সরকার আগেই নতুন নিরাপত্তা বাহিনী গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে।
প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিসহ আনুষঙ্গিক কাজের জন্য বাড়তি অর্থও বরাদ্দ করা
হয়েছে। গত একনেক সভায় প্রায় ৯০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। এর
আওতায় উন্নতমানের স্ক্যানার, তরল ও বিস্ফোরক দ্রব্য শনাক্তকরণ ব্যবস্থা,
ব্যারিয়ার গেটসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি কেনার কথা রয়েছে। বৃটেন নির্ধারিত
(৩১শে মার্চে) সময়ের মধ্যে দেশটির একাধিক কর্মকর্তা বাংলাদেশ সফর করতে
পারেন জানিয়ে সরকারের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, নিরাপত্তা
নিয়ে কাজ করে যুক্তরাষ্ট্রের একটি টিমও চলতি মাসের শেষের দিকে ঢাকা সফর
করবে। ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া বার্নিকাট গতকাল সন্ধ্যায়
পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হকের সঙ্গে এ নিয়ে জরুরি বৈঠক করেছেন। সেখানে
বিমানবন্দরসহ সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।
রাষ্ট্রদূত ঢাকাকে জানিয়েছেন, নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা যুক্তরাষ্ট্রের
হোমল্যান্ড সিকিউরিটির প্রতিনিধিরা এখানে আসছেন। তারা শাহজালাল
বিমানবন্দরের নিরাপত্তার বিষয়ে আলোচনায় আগ্রহী। ঢাকার পক্ষ থেকে
প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানানো হয় বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। সরকারের অন্য
দায়িত্বশীল সূত্র মতে, ঢাকা থেকে সরাসরি পণ্য পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা
প্রত্যাহারে কয়েক মাস ধরে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক পর্যায়ে
আলোচনা চলছে। কিন্তু কাঙিক্ষত ফল পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় বৃটেনের
নিষেধাজ্ঞা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। অবস্থান পরিবর্তন না হলে ঢাকা
থেকে তৃতীয় দেশ হয়ে লন্ডনে যাওয়া কার্গো বিমানের ফ্লাইট পরিচালনায়ও বিঘ্ন
হতে পারে। তৃতীয় কোনো স্থানে ‘পুনরায় স্ক্যান’ করার শর্তে বৃটেন এখনও সেই
সুবিধাটি চালু রেখেছে।
একাধিকবার ঢাকা সফরের পর বৃটেন যে মূল্যায়ন রিপোর্ট দিয়েছে তার অধিকাংশ অভিযোগের সত্যতা রয়েছে বলে স্বীকার করেছেন পররাষ্ট্র ও বিমান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তাদের মতে, যে বিষয়ে বিদেশিরা সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন, তা হলো যথাযথভাবে স্ক্যান না হওয়া। বৃটেনের তরফে অনেক অগেই বিমানবন্দরে স্ক্যানিং মেশিন সরবরাহ করা হয়েছে জানিয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, মূল্যায়ন রিপোর্টে বৃটেন জানিয়েছে তারা সরজমিন দেখেছেন ওই স্ক্যানিং মেশিনও ঠিকমতো অপারেট করা হয় না। এজন্য দায়িত্বপ্রাপ্তদের দুর্নীতি এবং ঊর্ধ্বতনদের মনিটরিং না থাকাকে দায়ী করা হয়েছে। কার্গো ভিলেজে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের অবাধ প্রবেশের বিষয়টিকে নিরাপত্তার জন্য সবচয়ে বড় হুমকি বলে উল্লেখ করেছে বৃটেন। ঢাকার কর্মকর্তারাও এটি স্বীকার করেছেন। জানিয়েছেন, সেখানে যারা কাজ করেন তার ৬০-৬৫ ভাগ হচ্ছেন বহিরাগত। তারা কর্মকর্তাদের হয়ে সব কাজ করেন। যার জন্য চোরাচালানসহ অন্য অপকর্ম করেও তারা পার পেয়ে যান।
বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর চিঠিতে যা আছে: ১০ ডাউনিং স্ট্রিট, লন্ডন, এসডব্লিউ১এ২এএ মাস্টহেডে চিঠিটি লিখেছেন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। ৮ই মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর পাঠানো চিঠির শুরুতে ‘ডিয়ার প্রাইম মিনিস্টার’ বলে সম্বোধন করা হয়েছে। ওই চিঠির সূচনায় গত নভেম্বর থেকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদারের উদ্যোগে বৃটিশ কর্মকর্তাদের ধারাবাহিক বাংলাদেশ সফরের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানেন বলে উল্লেখ করা হয়। তাদের প্রাথমিক মূল্যায়নের পর নিরাপত্তা ঘাটতি চিহ্নিত করে তা দূর করার জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের কথাও সেখানে উল্লেখ করেন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী। চিঠির দ্বিতীয় প্যারায় তিনি লিখেন- এটি আমার কাছে স্পষ্ট যে সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে ন্যূনতম ছাড় না দেয়ার (জিরো টলারেন্স) নীতির ধারাবাহিকতায় আপনি এবং আপনার কর্মকর্তারা যুক্তরাজ্যের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। বিমানবন্দরের নিরাপত্তার সমস্যা দূর করতেও আপনি (শেখ হাসিনা) দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সর্বশেষ মূল্যায়নে যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞরা বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় ধারাবাহিকভাবে বড় ধরনের ঘাটতি থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। সমপ্রতি মিসর ও সোমালিয়ায় বিমানে হামলার পর এটি আমার কাছে অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। তৃতীয় প্যারায় তিনি লিখেন- এটি স্পষ্ট যে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তাজনিত সমস্যার মূলে প্রশিক্ষিত নিরাপত্তাকর্মী এবং যথাযথ নজরদারির ঘাটতি রয়েছে। তাই আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা পূরণের লক্ষ্যে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কার্যক্রমে প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনের জন্য আপনাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানাই। বিমানবন্দরের নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি দূর করার লক্ষ্যে দ্রুততার সঙ্গে একটি কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাজ করতে আমি নির্দেশনা দিয়েছি। যা আগামী ৩১শে মার্চের মধ্যে বাস্তবায়নে প্রক্রিয়া শুরুর কথা। ৩১শে মার্চের মধ্যে এটি হলে তা নতুন করে বৃটেনের আর কোনো পদক্ষেপ নেয়া এড়াতে সহায়তা করবে। এ ধরনের পদক্ষেপের মধ্যে থাকতে পারে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সরাসরি যুক্তরাজ্যে ফ্লাইট চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা। চতুর্থ প্যারায় বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই পরিকল্পনা কার্যকর হওয়ার আগে আমাদের অবশ্যই নিরাপত্তার সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলো কমাতে হবে। তাই বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে সরাসরি পণ্য পরিবহন সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা নিশ্চিত করতে আমাদের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি। যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তারা পণ্য নিরাপত্তায়ও ঘাটতি খুঁজে পেয়েছেন। পণ্য পরিবহনে নিষেধাজ্ঞার ফলে যুক্তরাজ্যগামী সরাসরি ফ্লাইটের অন্যান্য নিরাপত্তার ব্যাপারে বিমানবন্দরের কর্মীদের মনোযোগের সঙ্গে কাজ করতে সহায়ক হবে। বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং মূল্যবান অংশীদার বাংলাদেশের ওপর এই সিদ্ধান্তের সম্ভাব্য প্রভাবের ব্যাপারে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী সচেতন রয়েছেন জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়, বিমানবন্দরে বৃটেনের চলমান সহযোগিতার অংশ হিসেবে আগামী সপ্তাহ থেকে স্ক্যানার অপারেটরদের প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু হবে। এ মাসের শেষে বাড়তি আরও কী ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন, তা খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে দেশটির কর্মকর্তারা প্রস্তুত রয়েছেন জানিয়ে ক্যামেরন বলেন, আশা করি, দ্রুততার সঙ্গে চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেয়ার প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারটি আপনি বুঝতে পারছেন। আকাশপথে সত্যিকারের ঝুঁকি আছে এবং আমাদের নাগরিকদের সুরক্ষা দেয়া প্রয়োজন। আকাশপথে একটি নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাকাঠামো গড়ে তুলতে বিশ্বের সব দেশের অবশ্যই আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা পূরণ করা উচিত। এ ক্ষেত্রে যে কোনো সহযোগিতার জন্য বৃটেন প্রস্তুত রয়েছে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী।
রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাবের শঙ্কায় বিজিএমইএ
যুক্তরাজ্যে সরাসরি পণ্য পরিবহনে কার্গো চলাচলে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ বলছে, কার্গো চলাচলে নিষেধাজ্ঞার কারণে নিশ্চিতভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে পোশাক রপ্তানি কমারও আশঙ্কা করছেন তারা। গতকাল বিজিএমই কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান এমন শঙ্কার কথা জানান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সহসভাপতি মোহাম্মদ নাছির ও পরিচালক মিরান আলী।
সিদ্দিকুর রহমান বলেন, গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ থেকে ৩০০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়, যা ওই সময়ের মোট পোশাক রপ্তানির ১১.৩৯ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এ বাজারে প্রায় ২০০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৬.১০ শতাংশ বেশি। এ পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে যুক্তরাজ্যের বাজার বাংলাদেশের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এ বাজারে কোনো রকম নেতিবাচক প্রভাব পড়ুক তা কাম্য নয়।
বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, ক্রেতারা অনেক সময় দ্রুত পণ্য পাঠাতে বলেন। তখন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সমুদ্রপথে পণ্য পাঠানো সম্ভব হয় না। ফলে নিজেদের খরচে বিমানে পণ্য পাঠাতে হয়। যুক্তরাজ্যের এ নিষেধাজ্ঞার কারণে এখন আমাদের সিঙ্গাপুর, হংকং, থাইল্যান্ড ও দুবাই হয়ে পণ্য পাঠাতে হবে। এতে একদিকে খরচ বাড়বে, অন্যদিকে সময়ও বেশি লাগবে। এতে আমাদের প্রতিযোগী সক্ষমতাও কমে আসবে। রপ্তানি হ্রাস পাবে বলে জানান তিনি।
সভাপতি বলেন, মোট রপ্তানির প্রায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পণ্য প্রতি বছর উড়োজাহাজে পাঠাতে হয়। এ সময় সরকারকে দ্রুত হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অনুরোধ জানান তিনি। এ ছাড়া বিমানবন্দরে নিরাপত্তা জোরদারে কী কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তা যুক্তরাজ্য সরকারকে অবহিত করে ৩১শে মার্চ পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ জানান বিজিএমইএ সভাপতি।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, যুক্তরাজ্য আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বাজার। এ বাজারে কোনো রকম নেতিবাচক প্রভাব পড়ুক তা কাম্য নয়। যখনই আমরা নতুন নতুন বাজারে অনুপ্রবেশ করছি, তখনই একটি তৈরি হওয়া বাজার পেছনের দিকে হাঁটবে তা কখনই কাম্য নয়।
সরকারের প্রতি দাবি জানিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, যেহেতু যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসায়িক সম্পর্ক প্রতিনিয়ত বাড়ছে, তাই বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে গ্রহণ করে সরকারি পর্যায়ে আলোচনা করে দ্রুত সমাধান হওয়া জরুরি। যুক্তরাজ্য কোনো কারণ দেখিয়ে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা জানতে হবে এবং প্রয়োজনে একটি ক্র্যাশ প্রোগ্রাম গ্রহণ করে সমাধান করতে হবে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৯শে ডিসেম্বরের পর ঢাকা থেকে অস্ট্রেলিয়ায় সরাসরি বিমানযোগে পণ্য পাঠানোর ক্ষেত্রে অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হলো যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞা। পশ্চিমা দেশগুলোর পক্ষে যুক্তরাজ্যের বিমান নিরাপত্তাবিষয়ক দপ্তর বিশ্বের ২০টি দেশের ৩৮টি ঝুঁকিপূর্ণ বিমানবন্দরের তালিকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও রয়েছে।
একাধিকবার ঢাকা সফরের পর বৃটেন যে মূল্যায়ন রিপোর্ট দিয়েছে তার অধিকাংশ অভিযোগের সত্যতা রয়েছে বলে স্বীকার করেছেন পররাষ্ট্র ও বিমান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তাদের মতে, যে বিষয়ে বিদেশিরা সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন, তা হলো যথাযথভাবে স্ক্যান না হওয়া। বৃটেনের তরফে অনেক অগেই বিমানবন্দরে স্ক্যানিং মেশিন সরবরাহ করা হয়েছে জানিয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, মূল্যায়ন রিপোর্টে বৃটেন জানিয়েছে তারা সরজমিন দেখেছেন ওই স্ক্যানিং মেশিনও ঠিকমতো অপারেট করা হয় না। এজন্য দায়িত্বপ্রাপ্তদের দুর্নীতি এবং ঊর্ধ্বতনদের মনিটরিং না থাকাকে দায়ী করা হয়েছে। কার্গো ভিলেজে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের অবাধ প্রবেশের বিষয়টিকে নিরাপত্তার জন্য সবচয়ে বড় হুমকি বলে উল্লেখ করেছে বৃটেন। ঢাকার কর্মকর্তারাও এটি স্বীকার করেছেন। জানিয়েছেন, সেখানে যারা কাজ করেন তার ৬০-৬৫ ভাগ হচ্ছেন বহিরাগত। তারা কর্মকর্তাদের হয়ে সব কাজ করেন। যার জন্য চোরাচালানসহ অন্য অপকর্ম করেও তারা পার পেয়ে যান।
বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর চিঠিতে যা আছে: ১০ ডাউনিং স্ট্রিট, লন্ডন, এসডব্লিউ১এ২এএ মাস্টহেডে চিঠিটি লিখেছেন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। ৮ই মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর পাঠানো চিঠির শুরুতে ‘ডিয়ার প্রাইম মিনিস্টার’ বলে সম্বোধন করা হয়েছে। ওই চিঠির সূচনায় গত নভেম্বর থেকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদারের উদ্যোগে বৃটিশ কর্মকর্তাদের ধারাবাহিক বাংলাদেশ সফরের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানেন বলে উল্লেখ করা হয়। তাদের প্রাথমিক মূল্যায়নের পর নিরাপত্তা ঘাটতি চিহ্নিত করে তা দূর করার জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের কথাও সেখানে উল্লেখ করেন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী। চিঠির দ্বিতীয় প্যারায় তিনি লিখেন- এটি আমার কাছে স্পষ্ট যে সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে ন্যূনতম ছাড় না দেয়ার (জিরো টলারেন্স) নীতির ধারাবাহিকতায় আপনি এবং আপনার কর্মকর্তারা যুক্তরাজ্যের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। বিমানবন্দরের নিরাপত্তার সমস্যা দূর করতেও আপনি (শেখ হাসিনা) দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সর্বশেষ মূল্যায়নে যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞরা বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় ধারাবাহিকভাবে বড় ধরনের ঘাটতি থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। সমপ্রতি মিসর ও সোমালিয়ায় বিমানে হামলার পর এটি আমার কাছে অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। তৃতীয় প্যারায় তিনি লিখেন- এটি স্পষ্ট যে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তাজনিত সমস্যার মূলে প্রশিক্ষিত নিরাপত্তাকর্মী এবং যথাযথ নজরদারির ঘাটতি রয়েছে। তাই আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা পূরণের লক্ষ্যে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কার্যক্রমে প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনের জন্য আপনাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানাই। বিমানবন্দরের নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি দূর করার লক্ষ্যে দ্রুততার সঙ্গে একটি কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাজ করতে আমি নির্দেশনা দিয়েছি। যা আগামী ৩১শে মার্চের মধ্যে বাস্তবায়নে প্রক্রিয়া শুরুর কথা। ৩১শে মার্চের মধ্যে এটি হলে তা নতুন করে বৃটেনের আর কোনো পদক্ষেপ নেয়া এড়াতে সহায়তা করবে। এ ধরনের পদক্ষেপের মধ্যে থাকতে পারে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সরাসরি যুক্তরাজ্যে ফ্লাইট চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা। চতুর্থ প্যারায় বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই পরিকল্পনা কার্যকর হওয়ার আগে আমাদের অবশ্যই নিরাপত্তার সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলো কমাতে হবে। তাই বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে সরাসরি পণ্য পরিবহন সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা নিশ্চিত করতে আমাদের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি। যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তারা পণ্য নিরাপত্তায়ও ঘাটতি খুঁজে পেয়েছেন। পণ্য পরিবহনে নিষেধাজ্ঞার ফলে যুক্তরাজ্যগামী সরাসরি ফ্লাইটের অন্যান্য নিরাপত্তার ব্যাপারে বিমানবন্দরের কর্মীদের মনোযোগের সঙ্গে কাজ করতে সহায়ক হবে। বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং মূল্যবান অংশীদার বাংলাদেশের ওপর এই সিদ্ধান্তের সম্ভাব্য প্রভাবের ব্যাপারে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী সচেতন রয়েছেন জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়, বিমানবন্দরে বৃটেনের চলমান সহযোগিতার অংশ হিসেবে আগামী সপ্তাহ থেকে স্ক্যানার অপারেটরদের প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু হবে। এ মাসের শেষে বাড়তি আরও কী ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন, তা খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে দেশটির কর্মকর্তারা প্রস্তুত রয়েছেন জানিয়ে ক্যামেরন বলেন, আশা করি, দ্রুততার সঙ্গে চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেয়ার প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারটি আপনি বুঝতে পারছেন। আকাশপথে সত্যিকারের ঝুঁকি আছে এবং আমাদের নাগরিকদের সুরক্ষা দেয়া প্রয়োজন। আকাশপথে একটি নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাকাঠামো গড়ে তুলতে বিশ্বের সব দেশের অবশ্যই আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা পূরণ করা উচিত। এ ক্ষেত্রে যে কোনো সহযোগিতার জন্য বৃটেন প্রস্তুত রয়েছে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী।
রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাবের শঙ্কায় বিজিএমইএ
যুক্তরাজ্যে সরাসরি পণ্য পরিবহনে কার্গো চলাচলে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ বলছে, কার্গো চলাচলে নিষেধাজ্ঞার কারণে নিশ্চিতভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে পোশাক রপ্তানি কমারও আশঙ্কা করছেন তারা। গতকাল বিজিএমই কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান এমন শঙ্কার কথা জানান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সহসভাপতি মোহাম্মদ নাছির ও পরিচালক মিরান আলী।
সিদ্দিকুর রহমান বলেন, গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ থেকে ৩০০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়, যা ওই সময়ের মোট পোশাক রপ্তানির ১১.৩৯ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এ বাজারে প্রায় ২০০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৬.১০ শতাংশ বেশি। এ পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে যুক্তরাজ্যের বাজার বাংলাদেশের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এ বাজারে কোনো রকম নেতিবাচক প্রভাব পড়ুক তা কাম্য নয়।
বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, ক্রেতারা অনেক সময় দ্রুত পণ্য পাঠাতে বলেন। তখন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সমুদ্রপথে পণ্য পাঠানো সম্ভব হয় না। ফলে নিজেদের খরচে বিমানে পণ্য পাঠাতে হয়। যুক্তরাজ্যের এ নিষেধাজ্ঞার কারণে এখন আমাদের সিঙ্গাপুর, হংকং, থাইল্যান্ড ও দুবাই হয়ে পণ্য পাঠাতে হবে। এতে একদিকে খরচ বাড়বে, অন্যদিকে সময়ও বেশি লাগবে। এতে আমাদের প্রতিযোগী সক্ষমতাও কমে আসবে। রপ্তানি হ্রাস পাবে বলে জানান তিনি।
সভাপতি বলেন, মোট রপ্তানির প্রায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পণ্য প্রতি বছর উড়োজাহাজে পাঠাতে হয়। এ সময় সরকারকে দ্রুত হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অনুরোধ জানান তিনি। এ ছাড়া বিমানবন্দরে নিরাপত্তা জোরদারে কী কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তা যুক্তরাজ্য সরকারকে অবহিত করে ৩১শে মার্চ পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ জানান বিজিএমইএ সভাপতি।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, যুক্তরাজ্য আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বাজার। এ বাজারে কোনো রকম নেতিবাচক প্রভাব পড়ুক তা কাম্য নয়। যখনই আমরা নতুন নতুন বাজারে অনুপ্রবেশ করছি, তখনই একটি তৈরি হওয়া বাজার পেছনের দিকে হাঁটবে তা কখনই কাম্য নয়।
সরকারের প্রতি দাবি জানিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, যেহেতু যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসায়িক সম্পর্ক প্রতিনিয়ত বাড়ছে, তাই বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে গ্রহণ করে সরকারি পর্যায়ে আলোচনা করে দ্রুত সমাধান হওয়া জরুরি। যুক্তরাজ্য কোনো কারণ দেখিয়ে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা জানতে হবে এবং প্রয়োজনে একটি ক্র্যাশ প্রোগ্রাম গ্রহণ করে সমাধান করতে হবে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৯শে ডিসেম্বরের পর ঢাকা থেকে অস্ট্রেলিয়ায় সরাসরি বিমানযোগে পণ্য পাঠানোর ক্ষেত্রে অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হলো যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞা। পশ্চিমা দেশগুলোর পক্ষে যুক্তরাজ্যের বিমান নিরাপত্তাবিষয়ক দপ্তর বিশ্বের ২০টি দেশের ৩৮টি ঝুঁকিপূর্ণ বিমানবন্দরের তালিকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও রয়েছে।
No comments