৪৯ অনুচ্ছেদ কী ট্রাইব্যুনালের জন্য প্রযোজ্য?
সালাউদ্দিন
কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের প্রাণভিক্ষার আবেদন নিয়ে
নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তবে সংবিধান বিশেষজ্ঞদের অনেকে গোড়াতে যুক্তি
দিয়েছিলেন যে, সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ কী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে
দণ্ডিতদের জন্য প্রযোজ্য হবে না। কারণ ১৯৭৩ সালেই সংবিধানের সংশোধনীর
মাধ্যমে তাদেরকে সংবিধানের সাধারণ স্কিম থেকে বের করে আনা হয়। ১৯৭৩ সালের
আইন এবং সংবিধানের ৪৬ ও ৪৭ ক অনুচ্ছেদ দিয়ে একটি বিশেষ আইনি পরিমণ্ডল গঠন
করা হয়েছিল। এর লক্ষ্য ছিল ১৯৭৩ সালের আইনে যে সুবিধা নির্দিষ্টভাবে দেয়া
থাকবে না সেই সুবিধা সাধারণভাবে কোন অভিযুক্তের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।
সুতরাং সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও মুজাহিদ ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী যদি আবেদন
করেও থাকেন তাহলেও প্রেসিডেন্টের সেটা বিবেচনা করার কোন সুযোগ ছিল কিনা।
উল্লেখ্য, ১৯৭৩ সালের আইনে কেবল পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর সহযোগী সংগঠনের
সদস্য হিসেবে স্বীকৃতদের বিচারের বিধান ছিল। সে কারণে সালাউদ্দিন কাদের
চৌধুরীর মতো ব্যক্তিদের বিচারের সুযোগ ছিল না। আওয়ামী লীগ সরকার সেকারণে
সংবিধানে সংশোধনী এনে ‘ব্যক্তির’ বিচারের বিধান করে।
সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদের আওতায় আবেদন করলেই আপনাআপনি দোষ স্বীকার করা হয় বলে যে আইনি ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে তা নিয়ে আইনজ্ঞরা যথেষ্ট সন্দিহান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রবীণ আইনবিদরা দাবি করেছেন, এধরনের যুক্তির স্বপক্ষে বাংলাদেশ কিংবা উপমহাদেশের কোন সুপ্রিম কোর্টের রায় দেখানো যাবে না। বাংলাদেশের ইতিহাসেও এধরনের বিতর্ক অবশ্য এই প্রথম। অবশ্য অন্য কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন যে, সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদের আওতায় কেউ ক্ষমা প্রার্থনা করলে প্রেসিডেন্ট তাকে নিঃশর্তভাবে মুক্তি দিতে পারেন। কিন্তু যেটা তিনি পারেন না সেটা হলো দোষী সাব্যস্ত হওয়া কোন ব্যক্তিকে নির্দোষ হিসেবে ঘোষণা করার। যখন কোন ব্যক্তিকে ক্ষমা করা হয় তার অর্থ হলো কেবলমাত্র তার দণ্ড মওকুফ করা। তাকে নির্দোষ বোঝায় না। সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘কোন আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত যে কোন দণ্ডের মার্জনা, বিলম্বন ও বিরাম মঞ্জুর করিবার এবং যে কোন দণ্ড মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস করিবার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকিবে।’ আইন ও বিচারমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ইংরেজিতে এবং আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ বাংলায় আবেদন করেছেন। তারা দুইজনই সংবিধানের ৪৯ অধ্যায়ের অধিকারের বলে এ আবেদন করেন। তাদের আবেদন নিয়ে কোন সন্দেহ বা বিভ্রান্তির কোন সুযোগ নেই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও এই যুক্তি দিয়েছেন।
কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলেন, আইনমন্ত্রীর যুক্তি মেনে নিলেও এই প্রশ্নের উত্তর পরিষ্কার নয় যে, ৪৯ অনুচ্ছেদে বর্ণিত ট্রাইব্যুনালের সংজ্ঞায় আপনাআপনি যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালকেও অন্তর্ভুক্ত হতেই হবে। সংবিধানের ১৫২ অনুচ্ছেদ নির্দিষ্টভাবে কেবল আদালতকে সংজ্ঞায়িত করেছে। এতে বলা আছে, ‘আদালত’ অর্থ সুপ্রিম কোর্টসহ যে কোন আদালত। এখানে ট্রাইব্যুনাল বলতে যে কোন ট্রাইব্যুনাল বোঝাবে না।
১৯৭৩ সালে সংবিধানের প্রথম সংশোধনীতে ৪৭ (৩) অনুচ্ছেদ আনা হয়। এতে বলা আছে, ‘এই সংবিধানে যাহা বলা হইয়াছে, তাহা সত্ত্বেও গণহত্যাজনিত অপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ বা যুদ্ধাপরাধ এবং আন্তর্জাতিক আইনের অধীন অন্যান্য অপরাধের জন্য কোন সশস্ত্র বাহিনী বা প্রতিরক্ষা বাহিনী বা সহায়ক বাহিনীর সদস্য (বা অন্য কোন ব্যক্তি, ব্যক্তি সমষ্টি বা সংগঠন, যা ১৫তম সংশোধনীতে যুক্ত) কিংবা যুদ্ধবন্দিকে আটক, ফৌজদারিতে সোপর্দ কিংবা দণ্ডদান করিবার বিধানসংবলিত কোন আইন বা আইনের বিধান এই সংবিধানের কোন বিধানের সহিত অসামঞ্জস্য বা তাহার পরিপন্থি, এই কারণে বাতিল বা বেআইনি বলিয়া গণ্য হইবে না কিংবা কখনও বাতিল বা বেআইনি হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে না।’ বিশেষজ্ঞরা বলেন, ১৯৭৩ সালের আইনটি বাহাত্তরের ৪ঠা নভেম্বরে প্রণীত সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে ওঠে। আর সেকারণে আইনটিকে বাঁচাতে উক্তরূপ রক্ষাকবচ সৃষ্টি করা হয়েছিল।
১৯৭৩ সালের আইনে ক্ষমা প্রদর্শন সম্পর্কে কোন কিছু বলা নেই। অবশ্য কেউ যুক্তি দিতে পারেন যে, দণ্ডিতদের এটা সাংবিধানিক অধিকার। আর সংবিধানের ৪৭ ক অনুচ্ছেদে নির্দিষ্ট যে কয়েকটি অনুচ্ছেদের আওতায় দণ্ডিত বা অভিযুক্তকে অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে তার মধ্যে ৪৯ অনুচ্ছেদটি নেই। সংবিধানের কতিপয় বিধানের অপ্রযোজ্যতা শীর্ষক ৪৭ ক অনুচ্ছেদ বলেছে, (১) যে ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদের (৩) দফায় বর্ণিত কোন আইন প্রযোজ্য হয়, সেই ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদ, ৩৫ অনুচ্ছেদের (১) ও (৩) দফা এবং ৪৪ অনুচ্ছেদের অধীন নিশ্চয়কৃত অধিকারসমূহ প্রযোজ্য হইবে না।
আইনমন্ত্রী বলেছেন, ‘আইন মেনে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। আদালতের রায় কার্যকরের মাধ্যমে সরকার তাদের সেই দায়িত্ব পালন করেছে।’ উল্লেখ্য যে, ৪৯ অনুচ্ছেদের আওতায় কখনও কোন গাইডলাইন বা বিধি তৈরি করা হয়নি। সেকারণে আইনমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ওনারা প্রেসিডেন্টের কাছে প্রাণভিক্ষা না চাইলেও সর্বোচ্চ আদালতের রায় কার্যকর করতে পারতাম। সুতরাং এটাকে ইস্যু বানানোর চেষ্টা করে কোন লাভ হবে না।’
কিন্তু অনেক বিশেষজ্ঞ বলেন, প্রেসিডেন্ট যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে দণ্ডিতদের বিষয়ে বিবেচনা করতে পারেন কিনা সেটা একাডেমিক অর্থে একটা কৌতূহল উদ্দীপক সাংবিধানিক ইস্যু। এর একটা ফয়সালা হওয়া দরকার। তাদের মতে প্রেসিডেন্ট ক্ষমা করে দিতেন তাহলে তার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ ছিল কিনা। কারণ ৪৯ অনুচ্ছেদে বর্ণিত ‘ট্রাইব্যুনাল’ আর ১৯৭৩ সালের আইনে গঠিত ‘ট্রাইব্যুনালের’ মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। কারণ সংবিধানের ৪৭ ক অনুচ্ছেদ নির্দিষ্টভাবে সংবিধানের অর্ধ ডজন উপ-দফা সংবলিত ৩৫ অনুচ্ছেদের মধ্য থেকে বাছাই করে দুটি উপ-অনুচ্ছেদ ‘অপ্রযোজ্য’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। এর ১ ও ৩ উপ-দফা প্রযোজ্য না হলে ৪৯ অনুচ্ছেদের ট্রাইব্যুনাল বলতে ১৯৭৩ সালের আইনের অধীনে গঠিত ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল’ প্রযোজ্য হওয়ার কথা নয়। এটা অযথাযথ হয়ে পড়ে। ৩৫ অনুচ্ছেদের ১ উপ-দফা বলেছে, অপরাধের দায়যুক্ত কার্যসংঘটনকালে বলবৎ ছিল, এইরূপ আইন ভঙ্গ করিবার অপরাধ ব্যতীত কোন ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করা যাইবে না এবং অপরাধ-সংঘটনকালে বলবৎ সেই আইনবলে যে দণ্ড দেয়া যাইতে পারিতো, তাঁহাকে তাহার অধিক বা তাহা হইতে ভিন্ন দণ্ড দেওয়া যাইবে না।’ কিন্তু ৩৫ অনুচ্ছেদের (৩) উপ-দফা বলেছে, ‘ফৌজদারী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তি আইনের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আদালত বা ট্রাইব্যুনালে দ্রুত ও প্রকাশ্য বিচার লাভের অধিকারী হইবেন।’ সংবিধান ঘোষণা দিয়েছে, যে ব্যক্তির ক্ষেত্রে ১৯৭৩ সালের আইন প্রযোজ্য হয় সেই ব্যক্তি বাংলাদেশের কোন ‘স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আদালত বা ট্রাইব্যুনালে দ্রুত ও প্রকাশ্য বিচারলাভের অধিকারী হবেন বলে গণ্য হবেন না।’ এই অধিকারের দাবি তুলে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর গোড়াতেই ১৯৭৩ সালের আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে জামায়াত রিট করেছিল। কিন্তু তা নাকচ হয়ে যায়। সুতরাং এই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে যে, যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে দণ্ডিতরা ক্ষমা চাইতে পারেন। সেই দরখাস্ত বিবেচনা করার এখতিয়ার প্রেসিডেন্ট রাখেন কিনা।
সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদের আওতায় আবেদন করলেই আপনাআপনি দোষ স্বীকার করা হয় বলে যে আইনি ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে তা নিয়ে আইনজ্ঞরা যথেষ্ট সন্দিহান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রবীণ আইনবিদরা দাবি করেছেন, এধরনের যুক্তির স্বপক্ষে বাংলাদেশ কিংবা উপমহাদেশের কোন সুপ্রিম কোর্টের রায় দেখানো যাবে না। বাংলাদেশের ইতিহাসেও এধরনের বিতর্ক অবশ্য এই প্রথম। অবশ্য অন্য কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন যে, সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদের আওতায় কেউ ক্ষমা প্রার্থনা করলে প্রেসিডেন্ট তাকে নিঃশর্তভাবে মুক্তি দিতে পারেন। কিন্তু যেটা তিনি পারেন না সেটা হলো দোষী সাব্যস্ত হওয়া কোন ব্যক্তিকে নির্দোষ হিসেবে ঘোষণা করার। যখন কোন ব্যক্তিকে ক্ষমা করা হয় তার অর্থ হলো কেবলমাত্র তার দণ্ড মওকুফ করা। তাকে নির্দোষ বোঝায় না। সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘কোন আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত যে কোন দণ্ডের মার্জনা, বিলম্বন ও বিরাম মঞ্জুর করিবার এবং যে কোন দণ্ড মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস করিবার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকিবে।’ আইন ও বিচারমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ইংরেজিতে এবং আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ বাংলায় আবেদন করেছেন। তারা দুইজনই সংবিধানের ৪৯ অধ্যায়ের অধিকারের বলে এ আবেদন করেন। তাদের আবেদন নিয়ে কোন সন্দেহ বা বিভ্রান্তির কোন সুযোগ নেই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও এই যুক্তি দিয়েছেন।
কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলেন, আইনমন্ত্রীর যুক্তি মেনে নিলেও এই প্রশ্নের উত্তর পরিষ্কার নয় যে, ৪৯ অনুচ্ছেদে বর্ণিত ট্রাইব্যুনালের সংজ্ঞায় আপনাআপনি যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালকেও অন্তর্ভুক্ত হতেই হবে। সংবিধানের ১৫২ অনুচ্ছেদ নির্দিষ্টভাবে কেবল আদালতকে সংজ্ঞায়িত করেছে। এতে বলা আছে, ‘আদালত’ অর্থ সুপ্রিম কোর্টসহ যে কোন আদালত। এখানে ট্রাইব্যুনাল বলতে যে কোন ট্রাইব্যুনাল বোঝাবে না।
১৯৭৩ সালে সংবিধানের প্রথম সংশোধনীতে ৪৭ (৩) অনুচ্ছেদ আনা হয়। এতে বলা আছে, ‘এই সংবিধানে যাহা বলা হইয়াছে, তাহা সত্ত্বেও গণহত্যাজনিত অপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ বা যুদ্ধাপরাধ এবং আন্তর্জাতিক আইনের অধীন অন্যান্য অপরাধের জন্য কোন সশস্ত্র বাহিনী বা প্রতিরক্ষা বাহিনী বা সহায়ক বাহিনীর সদস্য (বা অন্য কোন ব্যক্তি, ব্যক্তি সমষ্টি বা সংগঠন, যা ১৫তম সংশোধনীতে যুক্ত) কিংবা যুদ্ধবন্দিকে আটক, ফৌজদারিতে সোপর্দ কিংবা দণ্ডদান করিবার বিধানসংবলিত কোন আইন বা আইনের বিধান এই সংবিধানের কোন বিধানের সহিত অসামঞ্জস্য বা তাহার পরিপন্থি, এই কারণে বাতিল বা বেআইনি বলিয়া গণ্য হইবে না কিংবা কখনও বাতিল বা বেআইনি হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে না।’ বিশেষজ্ঞরা বলেন, ১৯৭৩ সালের আইনটি বাহাত্তরের ৪ঠা নভেম্বরে প্রণীত সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে ওঠে। আর সেকারণে আইনটিকে বাঁচাতে উক্তরূপ রক্ষাকবচ সৃষ্টি করা হয়েছিল।
১৯৭৩ সালের আইনে ক্ষমা প্রদর্শন সম্পর্কে কোন কিছু বলা নেই। অবশ্য কেউ যুক্তি দিতে পারেন যে, দণ্ডিতদের এটা সাংবিধানিক অধিকার। আর সংবিধানের ৪৭ ক অনুচ্ছেদে নির্দিষ্ট যে কয়েকটি অনুচ্ছেদের আওতায় দণ্ডিত বা অভিযুক্তকে অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে তার মধ্যে ৪৯ অনুচ্ছেদটি নেই। সংবিধানের কতিপয় বিধানের অপ্রযোজ্যতা শীর্ষক ৪৭ ক অনুচ্ছেদ বলেছে, (১) যে ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদের (৩) দফায় বর্ণিত কোন আইন প্রযোজ্য হয়, সেই ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদ, ৩৫ অনুচ্ছেদের (১) ও (৩) দফা এবং ৪৪ অনুচ্ছেদের অধীন নিশ্চয়কৃত অধিকারসমূহ প্রযোজ্য হইবে না।
আইনমন্ত্রী বলেছেন, ‘আইন মেনে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। আদালতের রায় কার্যকরের মাধ্যমে সরকার তাদের সেই দায়িত্ব পালন করেছে।’ উল্লেখ্য যে, ৪৯ অনুচ্ছেদের আওতায় কখনও কোন গাইডলাইন বা বিধি তৈরি করা হয়নি। সেকারণে আইনমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ওনারা প্রেসিডেন্টের কাছে প্রাণভিক্ষা না চাইলেও সর্বোচ্চ আদালতের রায় কার্যকর করতে পারতাম। সুতরাং এটাকে ইস্যু বানানোর চেষ্টা করে কোন লাভ হবে না।’
কিন্তু অনেক বিশেষজ্ঞ বলেন, প্রেসিডেন্ট যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে দণ্ডিতদের বিষয়ে বিবেচনা করতে পারেন কিনা সেটা একাডেমিক অর্থে একটা কৌতূহল উদ্দীপক সাংবিধানিক ইস্যু। এর একটা ফয়সালা হওয়া দরকার। তাদের মতে প্রেসিডেন্ট ক্ষমা করে দিতেন তাহলে তার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ ছিল কিনা। কারণ ৪৯ অনুচ্ছেদে বর্ণিত ‘ট্রাইব্যুনাল’ আর ১৯৭৩ সালের আইনে গঠিত ‘ট্রাইব্যুনালের’ মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। কারণ সংবিধানের ৪৭ ক অনুচ্ছেদ নির্দিষ্টভাবে সংবিধানের অর্ধ ডজন উপ-দফা সংবলিত ৩৫ অনুচ্ছেদের মধ্য থেকে বাছাই করে দুটি উপ-অনুচ্ছেদ ‘অপ্রযোজ্য’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। এর ১ ও ৩ উপ-দফা প্রযোজ্য না হলে ৪৯ অনুচ্ছেদের ট্রাইব্যুনাল বলতে ১৯৭৩ সালের আইনের অধীনে গঠিত ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল’ প্রযোজ্য হওয়ার কথা নয়। এটা অযথাযথ হয়ে পড়ে। ৩৫ অনুচ্ছেদের ১ উপ-দফা বলেছে, অপরাধের দায়যুক্ত কার্যসংঘটনকালে বলবৎ ছিল, এইরূপ আইন ভঙ্গ করিবার অপরাধ ব্যতীত কোন ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করা যাইবে না এবং অপরাধ-সংঘটনকালে বলবৎ সেই আইনবলে যে দণ্ড দেয়া যাইতে পারিতো, তাঁহাকে তাহার অধিক বা তাহা হইতে ভিন্ন দণ্ড দেওয়া যাইবে না।’ কিন্তু ৩৫ অনুচ্ছেদের (৩) উপ-দফা বলেছে, ‘ফৌজদারী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তি আইনের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আদালত বা ট্রাইব্যুনালে দ্রুত ও প্রকাশ্য বিচার লাভের অধিকারী হইবেন।’ সংবিধান ঘোষণা দিয়েছে, যে ব্যক্তির ক্ষেত্রে ১৯৭৩ সালের আইন প্রযোজ্য হয় সেই ব্যক্তি বাংলাদেশের কোন ‘স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আদালত বা ট্রাইব্যুনালে দ্রুত ও প্রকাশ্য বিচারলাভের অধিকারী হবেন বলে গণ্য হবেন না।’ এই অধিকারের দাবি তুলে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর গোড়াতেই ১৯৭৩ সালের আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে জামায়াত রিট করেছিল। কিন্তু তা নাকচ হয়ে যায়। সুতরাং এই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে যে, যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে দণ্ডিতরা ক্ষমা চাইতে পারেন। সেই দরখাস্ত বিবেচনা করার এখতিয়ার প্রেসিডেন্ট রাখেন কিনা।
উল্লেখ্য,
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী দাবি করেন, তার বাবা
প্রাণভিক্ষা চাননি। অন্যদিকে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ছেলে আলী আহমেদ
মাবরুর সাংবাদিকদের বলেছেন, তার বাবা কোন ধরনের প্রাণভিক্ষার আবেদন করেননি।
তিনি দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান
কামাল বলেছেন, কোন সংশয় নেই। তারা দুজনেই সংবিধানের আর্টিকেল ৪৯ অনুযায়ী
প্রেসিডেন্টের কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছে। সেই আবেদনের লিখিত ডকুমেন্ট
আমাদের কাছে আছে। তবে এগুলো সিক্রেট বিষয়, দেখানো যাবে না।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রেসিডেন্ট তা নাকচ করে দিয়েছেন। শাস্তি মওকুফ
করার জন্য কিংবা একটা কৌশল বের করার জন্য সবরকম প্রচেষ্টাই তারা করেছেন।
তাদের দুইজনের প্রাণভিক্ষা চেয়ে আবেদনপত্র ঠিক আছে কি-না সে বিষয়ে আইন
মন্ত্রণালয় মতামত নিয়ে তা প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের কাছে
পাঠানো হয়।
হুম্মাম কাদের চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, বাবাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তুমি কি মার্সি পিটিশন করেছো? তিনি বলেছেন, এ রকম বাজে কথা কে বলেছে? তোমার ৬ ফুট ২ ইঞ্চি লম্বা বাবা বাঘ, মাথা নত করতে পারে না। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, না চাইলে আমরা যাবো কেন? কয়েক ঘণ্টা ধরে এ মন্ত্রণালয়, সে মন্ত্রণালয় গেলাম, না চাইলে যাবো কেন?
হুম্মাম কাদের চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, বাবাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তুমি কি মার্সি পিটিশন করেছো? তিনি বলেছেন, এ রকম বাজে কথা কে বলেছে? তোমার ৬ ফুট ২ ইঞ্চি লম্বা বাবা বাঘ, মাথা নত করতে পারে না। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, না চাইলে আমরা যাবো কেন? কয়েক ঘণ্টা ধরে এ মন্ত্রণালয়, সে মন্ত্রণালয় গেলাম, না চাইলে যাবো কেন?
No comments