প্যাটেলদের আন্দোলন সারা ভারতে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি
ভারতের
গুজরাটে প্যাটেল সম্প্রদায়ের জন্য কোটা সংরক্ষণের দাবিতে যে আন্দোলন শুরু
হয়েছে, তা গুজ্জর বা জাঠ সম্প্রদায়ের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সারা দেশে
ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে। গুজরাটের ওই আন্দোলনের নেতা, একুশ
বছরের যুবক হার্দিক প্যাটেল রোববার দিল্লিতে এসে সরকারকে শুধু এই
হুঁশিয়ারিই দেননি, তারা লম্বা লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত বলেও ঘোষণা করেছেন।
পাশাপাশি এদিন সকালেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার নিয়মিত রেডিও
ভাষণে বলেছেন, গুজরাটের ঘটনায় পুরো দেশই বিচলিত এবং উন্নয়নই এই সংকটের
একমাত্র সমাধান। হার্দিক প্যাটেল নিজেই বলে থাকেন, তিনি শুধু দেশলাইটা
ধরিয়েছেন; কিন্তু গুজরাটে প্যাটেলদের ক্ষোভের আগুন আপনা থেকেই দাবানলের
মতো ছড়িয়েছে। কারণ ‘সরকারি কলেজে বা চাকরিতে কোটার সুযোগ না-পাওয়ায়
একদা সম্পন্ন প্যাটেলদের ঘরে ঘরে এখন দারিদ্র্য, সন্ধ্যায় রুটি বানানোর
জন্য ঘরে চুলা পর্যন্ত জ্বলে না’। সেই ক্ষোভের আগুন গুজরাটের গন্ডি
ছাড়িয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে দিতেই প্যাটেল রোববার দিল্লিতে এসেছেন, বৈঠক
করেছেন রাজস্থানের গুজ্জর বা হরিয়ানার জাঠ নেতাদের সঙ্গে। দিল্লিতে জাতীয়
সংবাদমাধ্যমের সামনে দাঁড়িয়ে সরকারকে প্রচ্ছন্ন হুমকি দিতেও দ্বিধা
করেননি হার্দিক। একুশ বছরের ওই যুবক বলেন, “গুজ্জর বা কুর্মি গুজ্জর সমাজ
হলো প্যাটেলদের ভাইয়ের মতো। আমার দিল্লি আসার উদ্দেশ্য হলো তাদের সঙ্গে
একজোট হয়ে দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তোলা।” ‘খুব শিগগিরি আমরা লখনৌ-তে
মহাসমাবেশ করব, সারা দেশের প্যাটেল-জাঠ-গুজ্জররা রাজধানীর যন্তর মন্তরে
জড়ো হবে। আমি জানি, এটা একশো মিটার দৌড় নয় – লম্বা ম্যারাথন। দিল্লিতে
যখন আমাদের পেশিশক্তি দরকার হবে, আমাদের ভায়েরা এসে পাশে দাঁড়াবেন,
হাইওয়ে অবরোধ করবেন।” হার্দিক প্যাটেল যখন এ কথা বলছেন, প্রায় একই সময়ে
তখন প্রচারিত হচ্ছে জাতির উদ্দেশ দেয়া প্রধানমন্ত্রী মোদির বেতার ভাষণ মন
কি বাত। গুজরাতে যা ঘটেছে তা নিয়ে খেদ প্রকাশ করলেও প্রধানমন্ত্রী অবশ্য
দাবি করেন পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। মোদি তার ভাষণে বলেন, “গত
কদিন ধরে গুজরাটে হিংসার তাণ্ডব সারা দেশকেই বিচলিত করেছে, কারণ গান্ধী বা
সর্দার প্যাটেলের রাজ্যে এমন ঘটলে বিচলিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে খুব
দ্রুত ওই রাজ্যের নাগরিকরা যেভাবে শান্তি ফিরিয়ে এনেছেন ও পরিস্থতি হাতের
বাইরে যেতে দেননি তা প্রশংসনীয়। শান্তি আর উন্নয়নের পথেই একমাত্র আমাদের
সমস্যার সমাধান মিলবে।” কিন্তু ভারতের সমাজজীবনের পর্যবেক্ষকরা বলছেন,
সংরক্ষণের দাবি ভারতের বহুমাত্রিক সমাজে এমন জটিল আকার নিয়েছে যে স্রেফ
রুটিন উন্নয়নে তার সমাধান সম্ভব নয়। অবস্থা জটিল হয়েছে বলেই গুজরাটে
তুলনায় সচ্ছল প্যাটেলরাও এখন সামাজিকভাবে পিছিয়ে-পড়া জাতির মর্যাদা
চাইছেন। ভারতে যে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন কিছুকাল আগেই তোলপাড় ফেলেছিল,
তার অন্যতম পথিকৃৎ যোগেন্দ্র যাদবের মতে, দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থার কাছেও
এই সংকটের কোনো উত্তর নেই। প্রফেসর যাদব বলছেন, রাস্তায় নেমে ও আরো বেশি
সংখ্যায় লোক জমা করে দাবি জানালে সরকার মাথা নোয়াতেও পারে– কোটার দাবিতে
যারা আন্দোলন করছেন তাদের কাছে এত দিন এই সংকেতটাই কিন্তু গেছে। তার কথায়,
“রাজস্থানে গুজ্জররা, হরিয়ানায় জাঠরা, মহারাষ্ট্রে মারাঠারা বা আজ
গুজরাটে পাতিদাররা - সবাই এই একই রাস্তা নিয়েছে, কেউ কেউ সফলও হয়েছে। এখন
সমাজের তত পিছিয়ে না-পড়ারাও কোটার সুবিধা চাইছেন – কিন্তু মুশকিল হল
রাস্তায় নেমে তো এ প্রশ্নের নিষ্পত্তি হয় না।’ হার্দিক প্যাটেল বা তার
জাঠ-গুজ্জর সহমর্মীরা অবশ্য দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করছেন, দেশ জুড়ে আন্দোলন করে
রাস্তা অচল করলেই তাদের দাবি আদায় সম্ভব। আর এই দাবির সঙ্গে লক্ষ লক্ষ
মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা আর স্বপ্ন জুড়ে দেওয়া হচ্ছে বলেই তা দিল্লিতে
সরকারের নীতিনির্ধারকদের কপালেও দুশ্চিন্তার ভাঁজ ফেলছে।- বিবিসি।
No comments