নাজিবের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন বিক্ষোভ
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের পদত্যাগের দাবিতে নজিরবিহীন বিক্ষোভ সংঘটিত হয়েছে। শনিবার দেশটির মানবাধিকার সংগঠন ‘বেরসিহ’র ডাক দেয়া এ বিক্ষোভে রাজধানী কুয়ালালামপুরে অংশ নেয় প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। রোববারও বিক্ষোভ চলার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নাজিব ওয়ান মালয়েশিয়া ডেভেলপমেন্ট নামের একটি রাষ্ট্রীয় তহবিলের ৭০ কোটি মার্কিন ডলার আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ করছে বিক্ষোভকারীরা। নাজিব রাজাকের পদত্যাগের পাশাপাশি দেশটির নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কারেরও দাবি তাদের। খবর বিবিসি, এএফপি ও মালয়েশিয়ান ইনসাইডারের। কুয়ালালামপুরের স্বাধীনতা চত্বরে জড়ো হয় হাজার হাজার মানুষ।
এর আগে, কর্মসূচি ঘোষণার পর পরই পুলিশ এ বিক্ষোভকে অবৈধ ঘোষণা করে। বিক্ষোভ ঠেকাতে নানা কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে দেশটির সরকার। এর অংশ হিসেবে শুক্রবার রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয় এবং কুয়ালালামপুরের বেশকিছু এলাকা বন্ধ করে দেয়া হয়। এছাড়াও আয়োজক সংগঠন বেরসিহ’র একটি ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেয় মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষ। এ ওয়েবসাইটটি ব্যবহার করে বিক্ষোভ সংক্রান্ত তথ্য প্রচার করছিল বেরসিহ’র কর্মীরা। দেশজুড়ে বেরসিহ’র হলুদ টি-শার্ট নিষিদ্ধ করা হয়। বিক্ষোভের আগেই ১৬৩ তরুণকে আটক করা হয়। তবে সবকিছু উপেক্ষা করেই বিক্ষোভ কর্মসূচি এগিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে আয়োজকরা। মালয় শব্দ বেরসিহ’র অর্থ ‘পরিষ্কার’। নাজিবের আর্থিক কেলেঙ্কারি, মুদ্রা রিংগিতের দরপতন ও জনজীবনে এর বিরূপ প্রভাবসহ নানা কারণে এ বিক্ষোভের ডাক দেয় সরকারবিরোধীরা। সকাল থেকে হলুদ টি-শার্ট পরে দলে দলে আন্দোলনে যোগ দেয় বিক্ষোভকারীরা। এ সময় হর্ন বাজিয়ে, পতাকা উড়িয়ে, সোগো, পাসার সেনি ও পেতালিং স্ট্রিট প্রদক্ষিণ করে তারা।
দিনের কর্মসূচি অনুযায়ী দুপুর ২টায় সবচেয়ে বড় র্যালি অনুষ্ঠিত হয়। মূলত মালয়েশিয়ার পাঁচটি বিরোধী দলের ডাকে এ আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। এগুলো হল- ডেমোক্রেটিক অ্যাকশন পার্টি (ডিএপি), পার্টি ইসলাম সে-মালয়েশিয়া (পাস), পার্টি কেয়াদিলান রাকয়েত (পিকেআর), পার্টি সোসাইলিস মালয়েশিয়া (পিএসএম) ও সারাওয়াক ন্যাশনাল পার্টি (এসএনএপি)। এর আগে ‘বেরসিহ’ স্লোগানে ২০০৭, ২০১১ ও ২০১২ সালে আন্দোলন করে বিরোধী দলগুলো। বেরসিহ’র পক্ষ থেকে বলা হয়, মালয়েশিয়ার জনগণ যে এখন আর ভয় পায় না সরকার তা বুঝতে পারেনি। আমরা আলোচনার মাধ্যমে বিভিন্ন নীতিমালার পরিবর্তন চাই যার মধ্য দিয়ে একটি স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য ও দুর্নীতিমুক্ত সরকার ব্যবস্থা গঠিত হবে। ৫৮ বছর বয়সী স্কুলশিক্ষিকা শায়লা দেভারাজ বলেন, আমরা নাজিবকে দেখাতে চাই, জনগণ আর তাকে চায় না। এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি। আয়োজকরা বলেন, ‘বিক্ষোভকারীদের আমরা দেখতে পাচ্ছি বছরের শুরু থেকে প্রায় প্রতি মাসেই বিক্ষোভ করা হচ্ছে। তবে এবার আমরা বড় ধরনের বিক্ষোভ আয়োজন করেছি। সরকার যদি এবার সাড়া দিতে ব্যর্থ হয় তবে আমরা এ যুদ্ধ চালিয়ে যাব।’
No comments