আলো নিভে যাচ্ছে দুটি সংসারের by সামছুর রহমান
খাবার জোটে না, ঘরভাড়া বাকি। হাকিম আর ইয়াকুবের পরিবারে এখন শুধুই শোক আর অভাব
কুলায় কাঁঠালের কয়েকটি শুকনো বিচি, একটি কচুমুখী আর প্রায় পচে যাওয়া করলা। রাতে খাওয়ার জন্য কচুমুখীটা কাটছিলেন মনোয়ারা বেগম। দুপুরে খেয়েছেন শুকনো মরিচের ভর্তা, পাতলা ডাল। চার মাস ধরে এভাবেই চলছে সংসার।
ঈদের কথা তুলতেই চোখের পানি মুছে মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আমাগোর আর ঈদের কী আছে। বড় ছাওয়ালডা সংসার চালাইত। এখন সংসারই চলতে চায় না। ঠিকমতো খাইতেই পারি না। এক বেলা খাই, কোনো বেলা খাই না।’
মনোয়ারা বেগমের বড় ছেলে রিকশাচালক আবদুল হাকিম রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে ১৩ এপ্রিল গভীর রাতে সাংসদপুত্র বখতিয়ার আলম রনির গুলিতে নিহত হন। হাকিমের পেছনের অংশে গুলি ঢুকে নাভির নিচ দিয়ে বেরিয়ে যায়। হাকিম মারা যান ১৫ এপ্রিল বিকেলে।
মনোয়ারা বেগমের পরনের কাপড়টি কয়েক জায়গায় ছেঁড়া। একই অবস্থা হাকিমের বাবার পরনের শার্টটিরও। মনোয়ারা বলেন, ‘পেটের বেদনায় স্বামী রিকশা চালাইতে পারে না। ছোট ছাওয়ালডারে গ্যারেজে দিছি। নিজে মাইনষের বাসায় কাজ করি খাচ্ছি। বাড়ির জায়গা-জমি যা ছিল আগেই বিক্রি কইরা মাইয়ার বিয়া দিছি।’
মধুবাগের ঝিলপাড়ে একটি রিকশার গ্যারেজের দোতলায় ছোট খুপরিঘরে থাকে হাকিমের পরিবার। নিজের ঘরে বসে গতকাল মঙ্গলবার মনোয়ারা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কী তরতাজা ছাওয়াল ছিল আমার। জীবনে মাইনষের লগে ঝগড়াঝাটি করে নাই। ছাওয়ালডারে বাচাতি দেশের থিকা টাকা ধার করছিলাম। আমার বুকটা খালি করল কেন?’
ফুটোফাটা টিনের যে ঘরে হাকিমের পরিবার থাকে, সেই ঘরের ভাড়া মাসে ২৫০০ টাকা। চার মাস ধরে ঘরভাড়া বাকি। মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘চার মাস ধরি ঘরভাড়া দেইন্যা। বাড়িওয়ালা ভালো বইল্যা সহ্য কইরা আছে। সাত বছর ধইরা থাকতাছি, তা-ও কয়েক দিন ধইর্যান চইল্যা যাইতে কয়।’
ছোট ভাই মঞ্জুরুলের পড়ালেখার খরচ দিতেন হাকিম। ভাই মারা যাওয়ায় পড়া বন্ধ হয়ে গেছে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র মঞ্জুরুলের। ছোট কাঁধে উঠেছে সংসারের বড় দায়িত্ব। সে এখন বাসার সামনের রিকশার গ্যারেজে রঙের কাজ করে। মাসে বেতন পায় এক হাজার টাকা।
ছেলের হত্যাকারীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে তা জেনেছে হাকিমের পরিবার। মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘গতকাল একটার খবরে শুনছি। কেস কোর্টে দিছে। কী আর হইব। ট্যাকা-পয়সা দিয়া মীমাংসা হয়া যাব। আল্লার ওপর বিচার দিছি, এই বিচার যেন আল্লা করে।’
সাংসদপুত্রের ছোড়া গুলিতে আরও আহত হয়েছিলেন দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকার সিএনজি অটোরিকশাচালক ইয়াকুব আলী। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইয়াকুব মারা যান ২৩ এপ্রিল রাতে।
ইয়াকুব ছিলেন সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাঁর মৃত্যুতে একমাত্র মেয়ে রুনা আকতারকে নিয়ে অকুল পাথারে পড়েছেন ইয়াকুবের স্ত্রী সালমা বেগম। গতকাল মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভাত পাই না, কাপড় পাই না। আমাদের কেউ খোঁজ নেয় নাই। আমরা কী খাই, আমরা ক্যামনে বাইচা আছি।’
ইয়াকুবের মেয়ে রুনা পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে তার স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। নন্দীপাড়ার বড় বটতলায় সালমা বেগমেরা যে ঘরে থাকেন, সেটার চার মাসের ভাড়া বাকি পড়েছে।
সালমা বেগম ও তাঁর মেয়ের খাবার জোটে এখন এক প্রতিবেশীর ঘরে। সালমা বেগম বলেন, ‘৩০টা রোজা রাখছি মাইনষের ঘরে খাইয়া। আমারে কেন এমনে বিধবা করল, আমার মাইয়্যাটারে এতিম করল। আমগোর সুখ-আহ্লাদ সব কাইরা নিল।’
অভিযোগপত্র দাখিলের খবর শুনেছেন সালমা বেগম। কিন্তু সেটার মানে কী, তা বুঝতে পারছেন না। বললেন, ‘স্বামী হত্যার বিচার কোন পর্যায়ে আছে তা নিয়ে কেউ কিছু জানায়নি। আমার একটাই দাবি, আসামি যাতে কোনোমতেই পার না পায়।’
ঈদের কথা তুলতেই চোখের পানি মুছে মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আমাগোর আর ঈদের কী আছে। বড় ছাওয়ালডা সংসার চালাইত। এখন সংসারই চলতে চায় না। ঠিকমতো খাইতেই পারি না। এক বেলা খাই, কোনো বেলা খাই না।’
মনোয়ারা বেগমের বড় ছেলে রিকশাচালক আবদুল হাকিম রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে ১৩ এপ্রিল গভীর রাতে সাংসদপুত্র বখতিয়ার আলম রনির গুলিতে নিহত হন। হাকিমের পেছনের অংশে গুলি ঢুকে নাভির নিচ দিয়ে বেরিয়ে যায়। হাকিম মারা যান ১৫ এপ্রিল বিকেলে।
মনোয়ারা বেগমের পরনের কাপড়টি কয়েক জায়গায় ছেঁড়া। একই অবস্থা হাকিমের বাবার পরনের শার্টটিরও। মনোয়ারা বলেন, ‘পেটের বেদনায় স্বামী রিকশা চালাইতে পারে না। ছোট ছাওয়ালডারে গ্যারেজে দিছি। নিজে মাইনষের বাসায় কাজ করি খাচ্ছি। বাড়ির জায়গা-জমি যা ছিল আগেই বিক্রি কইরা মাইয়ার বিয়া দিছি।’
মধুবাগের ঝিলপাড়ে একটি রিকশার গ্যারেজের দোতলায় ছোট খুপরিঘরে থাকে হাকিমের পরিবার। নিজের ঘরে বসে গতকাল মঙ্গলবার মনোয়ারা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কী তরতাজা ছাওয়াল ছিল আমার। জীবনে মাইনষের লগে ঝগড়াঝাটি করে নাই। ছাওয়ালডারে বাচাতি দেশের থিকা টাকা ধার করছিলাম। আমার বুকটা খালি করল কেন?’
ফুটোফাটা টিনের যে ঘরে হাকিমের পরিবার থাকে, সেই ঘরের ভাড়া মাসে ২৫০০ টাকা। চার মাস ধরে ঘরভাড়া বাকি। মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘চার মাস ধরি ঘরভাড়া দেইন্যা। বাড়িওয়ালা ভালো বইল্যা সহ্য কইরা আছে। সাত বছর ধইরা থাকতাছি, তা-ও কয়েক দিন ধইর্যান চইল্যা যাইতে কয়।’
ছোট ভাই মঞ্জুরুলের পড়ালেখার খরচ দিতেন হাকিম। ভাই মারা যাওয়ায় পড়া বন্ধ হয়ে গেছে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র মঞ্জুরুলের। ছোট কাঁধে উঠেছে সংসারের বড় দায়িত্ব। সে এখন বাসার সামনের রিকশার গ্যারেজে রঙের কাজ করে। মাসে বেতন পায় এক হাজার টাকা।
ছেলের হত্যাকারীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে তা জেনেছে হাকিমের পরিবার। মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘গতকাল একটার খবরে শুনছি। কেস কোর্টে দিছে। কী আর হইব। ট্যাকা-পয়সা দিয়া মীমাংসা হয়া যাব। আল্লার ওপর বিচার দিছি, এই বিচার যেন আল্লা করে।’
সাংসদপুত্রের ছোড়া গুলিতে আরও আহত হয়েছিলেন দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকার সিএনজি অটোরিকশাচালক ইয়াকুব আলী। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইয়াকুব মারা যান ২৩ এপ্রিল রাতে।
ইয়াকুব ছিলেন সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাঁর মৃত্যুতে একমাত্র মেয়ে রুনা আকতারকে নিয়ে অকুল পাথারে পড়েছেন ইয়াকুবের স্ত্রী সালমা বেগম। গতকাল মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভাত পাই না, কাপড় পাই না। আমাদের কেউ খোঁজ নেয় নাই। আমরা কী খাই, আমরা ক্যামনে বাইচা আছি।’
ইয়াকুবের মেয়ে রুনা পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে তার স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। নন্দীপাড়ার বড় বটতলায় সালমা বেগমেরা যে ঘরে থাকেন, সেটার চার মাসের ভাড়া বাকি পড়েছে।
সালমা বেগম ও তাঁর মেয়ের খাবার জোটে এখন এক প্রতিবেশীর ঘরে। সালমা বেগম বলেন, ‘৩০টা রোজা রাখছি মাইনষের ঘরে খাইয়া। আমারে কেন এমনে বিধবা করল, আমার মাইয়্যাটারে এতিম করল। আমগোর সুখ-আহ্লাদ সব কাইরা নিল।’
অভিযোগপত্র দাখিলের খবর শুনেছেন সালমা বেগম। কিন্তু সেটার মানে কী, তা বুঝতে পারছেন না। বললেন, ‘স্বামী হত্যার বিচার কোন পর্যায়ে আছে তা নিয়ে কেউ কিছু জানায়নি। আমার একটাই দাবি, আসামি যাতে কোনোমতেই পার না পায়।’
No comments