স্ত্রীর চোখ তুলে নিল পাষণ্ড স্বামী: যৌতুকই কারণ by মানসুরা হোসাইন ও অরূপ রায়
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মেয়ে সুখির শয্যাপাশে মা l ছবি: প্রথম আলো |
‘সুখীকে
যখন লোকজন হাসপাতালে নিয়া আসে, তখন তাঁর দুই চোখ দিয়া রক্ত গড়াইয়্যা
পড়ছিল। সুখীর সঙ্গে থাকা লোকজন কাগজে করে উপড়াইয়্যা ফেলা চোখ আনছিল। সেই
চোখ আমরা অনেকেই দেখছি। অনেকে মোবাইলে ছবিও তুলছে।’
রাজধানীর জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে কর্মরত আনসার কমান্ডার আবুল কাশেম সুখীকে হাসপাতালে আনার মুহূর্তটি এভাবে বর্ণনা করেন।
ঈদের আগের দিন শুক্রবার গৃহবধূ সুখীর এক চোখ উপড়ে ফেলে স্বামী ও তার স্বজনেরা। সুখীর মা লায়লা বেগম গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডাক্তাররা মাইয়্যার উপড়াইয়্যা ফেলা চোখ বোতলে ভইরা রাখছে। তা দেইখ্যা খুবই খারাপ লাগছে।’
ঘটনাটি ঘটে সাভারের জিঞ্জিরা এলাকায়। ভাড়া বাসায় সুখীর স্বামী রবিউল, তার দুই ভাই ও এক বোন মিলে ইলেকট্রিক টেস্টার দিয়ে মেয়েটির এক চোখ উপড়ে ফেলে। আরেক চোখেও প্রচণ্ড আঘাত করা হয়। সুখীর চিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে এসে তাঁকে উদ্ধার করেন এবং জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পঞ্চম তলায় ফিমেল ওয়ার্ডে ভর্তি করান। সুখী এখন চিকিৎসাধীন। এলাকাবাসী সুখীকে উদ্ধারের পর রবিউলকে তুলে দেন সাভার থানা-পুলিশের হাতে। সুখীর পরিবার বাদী হয়ে মেয়ের স্বামীসহ তিনজনকে আসামি করে মামলা করেছে। রবিউল এখন কারাগারে।
সুখী প্রথম আলোকে ক্ষীণ কণ্ঠে বলেন, ‘টাকা দেওনের লাইগ্যা আগে থেইকাই মারধর করত। রোজার দিন। আমার মেয়েরে দোকানে পাঠাইয়্যা দেয়। প্রথমে আমার হাত বান্ধে। প্রথম ভাবি, আজকেও মারব। কিন্তু ওর দুই ভাই ও এক বইনও যখন আমারে ধরে, তখন বুঝি অন্য কিছু করব। কিন্তু হাত ও মুখ বান্ধা থাকার কারণে কথা কইতে পারি নাই। টেস্টার হাতে নেয়। এক চোখ যখন তুইল্যা ফালাইছে তখন দিগ্বিদিক হইয়া অনেক জোরে চিৎকার দেই। ঘরের এক জানালা ভাঙা ছিল। পাশেই ছিল মসজিদ। জুমার নামাজ পড়তে আসা লোকেরা ও বাড়িওয়ালি আমারে উদ্ধার করছে বইল্যা শুনছি। চোখ তুইল্যা ফালানোর পরই আমি অজ্ঞান হইয়া পড়ি। এখন আরেক চোখের দুই পাতা একটু খুলতে পারি। কিন্তু কিছু দেহি না।’
এক যুগ আগে বিয়ে হয়েছে সুখী আক্তারের (২৪)। এ ঘটনার পর সাভার থানা-পুলিশের এক সদস্য ফোন করে সুখীর মাকে ঘটনার কথা জানান। তারপর থেকে পুরো পরিবারের দিশেহারা অবস্থা। তাদের ঈদ কেটেছে হাসপাতালে। সুখীর সাত বছর বয়সী মেয়েকেও প্রথমে সুখীর শ্বশুরবাড়ির লোকজন আটকে রেখেছিল। পরে তাকে আনা হয়েছে। সুখীর শ্বশুরবাড়ি ঢাকার সিঙ্গাইর থানায়। আর সুখীর বাবার বাড়ি নবাবগঞ্জ উপজেলায়।
সুখীর মা জানালেন, মাত্র মাস খানেক আগে মেয়ের স্বামী বিদেশ থেকে ফিরেছে। সুখীর বাবা-মা একবার তিন লাখ টাকা দেন বিদেশ যাওয়ার সময়। এবার বিদেশ থেকে একেবারে চলে এসেছে বলে জানায় মেয়ের স্বামী। আসার পর আবার স্ত্রীর কাছে দেড় লাখ টাকা দাবি করে। মেয়ে বেশির ভাগ সময় বাবার বাড়িতেই থাকত। এর আগেও মেয়েকে মারধর, ঘরে বন্দী করে রাখা, খাবার না দেওয়াসহ বিভিন্ন কারণে বিচার-সালিস হয়েছে। সুখীর বাবা-মা অনেকবার সিদ্ধান্তও নিয়েছিলেন, মেয়েকে আর শ্বশুরবাড়ি পাঠাবেন না।
সুখীর বাবা নূর মোহাম্মদ বিলাপ করে বললেন, ‘আমার চারটা ম্যায়া। এক পোলা। তাদের আমি কোনো দিন থাপড় দেই নাই। জানে খাইট্যা আমি মানুষ করছি। আর এহন এই ম্যায়ার যে অবস্থা করছে...। আমি এর বিচার চাই।’
এদিকে সাভার থানা-পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় রবিউল প্রথম আলোকে বলে, ‘স্ত্রীর অন্যের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার কারণে চোখ তুলে ফেলেছি। যাতে ও আর কাউকে দেখতে না পারে।’ তবে সুখীর বাবা ও পরিবারের অন্য সদস্যরা রবিউলের এই অভিযোগ অস্বীকার করেন।
জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক জালাল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, সুখীর ডান চোখ তুলে ফেলা হয়েছে। সুখীকে যাঁরা হাসপাতালে ভর্তি করাতে এসেছিলেন, তাঁরা তুলে ফেলা চোখটি সঙ্গে করে এনেছিলেন। তাঁরা ভেবেছিলেন, চিকিৎসকেরা যদি তা আবার লাগাতে পারেন। আসলে তা করা সম্ভব নয়। সুখীর বাঁ চোখেও প্রচণ্ড আঘাত করা হয়েছে। এ চোখ দিয়ে কিছুটা দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। দেখতে পাবেই—তা বলা যাচ্ছে না।
রাজধানীর জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে কর্মরত আনসার কমান্ডার আবুল কাশেম সুখীকে হাসপাতালে আনার মুহূর্তটি এভাবে বর্ণনা করেন।
ঈদের আগের দিন শুক্রবার গৃহবধূ সুখীর এক চোখ উপড়ে ফেলে স্বামী ও তার স্বজনেরা। সুখীর মা লায়লা বেগম গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডাক্তাররা মাইয়্যার উপড়াইয়্যা ফেলা চোখ বোতলে ভইরা রাখছে। তা দেইখ্যা খুবই খারাপ লাগছে।’
ঘটনাটি ঘটে সাভারের জিঞ্জিরা এলাকায়। ভাড়া বাসায় সুখীর স্বামী রবিউল, তার দুই ভাই ও এক বোন মিলে ইলেকট্রিক টেস্টার দিয়ে মেয়েটির এক চোখ উপড়ে ফেলে। আরেক চোখেও প্রচণ্ড আঘাত করা হয়। সুখীর চিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে এসে তাঁকে উদ্ধার করেন এবং জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পঞ্চম তলায় ফিমেল ওয়ার্ডে ভর্তি করান। সুখী এখন চিকিৎসাধীন। এলাকাবাসী সুখীকে উদ্ধারের পর রবিউলকে তুলে দেন সাভার থানা-পুলিশের হাতে। সুখীর পরিবার বাদী হয়ে মেয়ের স্বামীসহ তিনজনকে আসামি করে মামলা করেছে। রবিউল এখন কারাগারে।
সুখী প্রথম আলোকে ক্ষীণ কণ্ঠে বলেন, ‘টাকা দেওনের লাইগ্যা আগে থেইকাই মারধর করত। রোজার দিন। আমার মেয়েরে দোকানে পাঠাইয়্যা দেয়। প্রথমে আমার হাত বান্ধে। প্রথম ভাবি, আজকেও মারব। কিন্তু ওর দুই ভাই ও এক বইনও যখন আমারে ধরে, তখন বুঝি অন্য কিছু করব। কিন্তু হাত ও মুখ বান্ধা থাকার কারণে কথা কইতে পারি নাই। টেস্টার হাতে নেয়। এক চোখ যখন তুইল্যা ফালাইছে তখন দিগ্বিদিক হইয়া অনেক জোরে চিৎকার দেই। ঘরের এক জানালা ভাঙা ছিল। পাশেই ছিল মসজিদ। জুমার নামাজ পড়তে আসা লোকেরা ও বাড়িওয়ালি আমারে উদ্ধার করছে বইল্যা শুনছি। চোখ তুইল্যা ফালানোর পরই আমি অজ্ঞান হইয়া পড়ি। এখন আরেক চোখের দুই পাতা একটু খুলতে পারি। কিন্তু কিছু দেহি না।’
এক যুগ আগে বিয়ে হয়েছে সুখী আক্তারের (২৪)। এ ঘটনার পর সাভার থানা-পুলিশের এক সদস্য ফোন করে সুখীর মাকে ঘটনার কথা জানান। তারপর থেকে পুরো পরিবারের দিশেহারা অবস্থা। তাদের ঈদ কেটেছে হাসপাতালে। সুখীর সাত বছর বয়সী মেয়েকেও প্রথমে সুখীর শ্বশুরবাড়ির লোকজন আটকে রেখেছিল। পরে তাকে আনা হয়েছে। সুখীর শ্বশুরবাড়ি ঢাকার সিঙ্গাইর থানায়। আর সুখীর বাবার বাড়ি নবাবগঞ্জ উপজেলায়।
সুখীর মা জানালেন, মাত্র মাস খানেক আগে মেয়ের স্বামী বিদেশ থেকে ফিরেছে। সুখীর বাবা-মা একবার তিন লাখ টাকা দেন বিদেশ যাওয়ার সময়। এবার বিদেশ থেকে একেবারে চলে এসেছে বলে জানায় মেয়ের স্বামী। আসার পর আবার স্ত্রীর কাছে দেড় লাখ টাকা দাবি করে। মেয়ে বেশির ভাগ সময় বাবার বাড়িতেই থাকত। এর আগেও মেয়েকে মারধর, ঘরে বন্দী করে রাখা, খাবার না দেওয়াসহ বিভিন্ন কারণে বিচার-সালিস হয়েছে। সুখীর বাবা-মা অনেকবার সিদ্ধান্তও নিয়েছিলেন, মেয়েকে আর শ্বশুরবাড়ি পাঠাবেন না।
সুখীর বাবা নূর মোহাম্মদ বিলাপ করে বললেন, ‘আমার চারটা ম্যায়া। এক পোলা। তাদের আমি কোনো দিন থাপড় দেই নাই। জানে খাইট্যা আমি মানুষ করছি। আর এহন এই ম্যায়ার যে অবস্থা করছে...। আমি এর বিচার চাই।’
এদিকে সাভার থানা-পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় রবিউল প্রথম আলোকে বলে, ‘স্ত্রীর অন্যের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার কারণে চোখ তুলে ফেলেছি। যাতে ও আর কাউকে দেখতে না পারে।’ তবে সুখীর বাবা ও পরিবারের অন্য সদস্যরা রবিউলের এই অভিযোগ অস্বীকার করেন।
জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক জালাল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, সুখীর ডান চোখ তুলে ফেলা হয়েছে। সুখীকে যাঁরা হাসপাতালে ভর্তি করাতে এসেছিলেন, তাঁরা তুলে ফেলা চোখটি সঙ্গে করে এনেছিলেন। তাঁরা ভেবেছিলেন, চিকিৎসকেরা যদি তা আবার লাগাতে পারেন। আসলে তা করা সম্ভব নয়। সুখীর বাঁ চোখেও প্রচণ্ড আঘাত করা হয়েছে। এ চোখ দিয়ে কিছুটা দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। দেখতে পাবেই—তা বলা যাচ্ছে না।
No comments