গুজব গ্রেপ্তার আতঙ্ক
ভোটের
আগের রাত। চলছে ধরপাকড়। ভোট কেনার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কয়েক জনকে।
বাড়ি বাড়ি অভিযান। লাপাত্তা অনেক বিরোধী সমর্থক। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হু
হু করে বাড়ছে নানা গুজব। পাওয়া গেছে ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের অভিযোগ। ১৭
নম্বর ওয়ার্ডের শুক্রবাদের নিউ মডেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ কেন্দ্র ও ২০ নম্বর
ওয়ার্ডের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ভবন কার্জন হল কেন্দ্রের ব্যালট
পেপার ছিনতাইয়ের অভিযোগ অবশ্য গুজব বলে উদিয়ে দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ১৭
নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ফয়সল কাদের এসব
ঘটনাকে গুজব বলে অভিহিত করে বলেন, গণমাধ্যমে মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করা হচ্ছে।
কোন কিছু ঘটলে অবশ্যই আমাদের জানা থাকত। ২০ নম্বর ওয়ার্ডের মাহবুবা মমতা
হেনা জানান, তার এলাকায় এ ধরনের কিছু ঘটেনি।
অন্য পরিবেশ সেগুন বাগিচায়: ভোটের আগের রাতে অন্য রকম পরিবেশের দেখা মিলল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধীন সেগুন বাগিচা হাইস্কুল কেন্দ্রে। গতকাল রাতে সরজমিনে কেন্দ্রটিতে গিয়ে দেখা যায়, নির্বাচনের জন্য আসা আনসার কর্মীরা ছাড়া বাকিদের পরিচয় আন্দাজ করা মুশকিল। তবে মনে হয়েছে, পুলিশ, প্রিজাইডিং অফিসার, স্কুল কর্মচারী আর স্থানীয় প্রভাশালীরা মিলিত হয়েছেন এক মোহনায়। সন্ধ্যা সাতটার দিকে দেখা যায়, সেগুনবাগিচা স্কুল কেন্দ্রের প্রায় পুরো এলাকাই সাজানো হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী সাঈদ খোকনের ইলিশ প্রতীক সংবলিত পোস্টার-স্টিকারে। স্কুলের মূল ফটকের পুরোটাজুড়েই নতুন করে সাঁটানো হয়েছে সাঈদ খোকনের স্টিকার দিয়ে। কর্তব্যরত আনসার সদস্যের অনুমতি নিয়ে স্কুল ফটক পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখা গেছে প্রায় ২৫-৩০ জন সাধারণ মানুষ একাধিক ভাগে জটলা করে খোশগল্পে মত্ত আছেন। কাছে এগুতেই অনুমান করা গেল ওই সাধারণ মানুষদের মধ্যে অনেকের হাতেই ওয়াকিটকি এবং কারো কোমরে পিস্তল রয়েছে। এমন একজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, এখানে উপস্থিত সবাই শাহবাগ থানার অন্তর্ভুক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। এই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসারের সঙ্গে আলাপ করতে চাইলে পুলিশের ওই সদস্য প্রথমে বলেন, আজ সম্ভব না। স্যার খুব ব্যস্ত। সব কিছু গুছাচ্ছেন। কাল আসুন। এরপর অবশ্য সিভিল ড্রেসের ওই পুলিশ কর্মকর্তা নিজেই প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে নিয়ে যান। প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রিজাইডিং অফিসার অলিউল হক বলেন, সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। কোন সমস্যা নেই। এমন জবাবের বিপরীতে পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যালট পেপার নিয়ে যাওয়ার গুঞ্জনের বিষয়টি জানতে চাইলে প্রিজাইডিং অফিসার বলেন, এসব আজব কথা কে বলে? এমন জবাবের পরই ওই পুলিশ কর্মকর্তা প্রিজাইডিং অফিসারকে তাগিদ দিয়ে নিয়ে যান অন্য দিকে। এ সময় কর্তব্যরত প্রিজাইডিং অফিসারকে পুলিশের কাছে এক রকম অসহায়ই মনে হয়। প্রসঙ্গত, গতকাল বিকাল ভর বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে এই কেন্দ্রের দায়িত্মপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং কর্মকর্তার কাছ থেকে ব্যালট পেপার চেয়েছে পুলিশ। সূত্র জানায়, পুলিশ প্রিজাইডিং অফিসারকে বলেছে রাতের (গতরাত) মধ্যে ব্যালট পেপারগুলো আমাদের দিয়ে দিন কাল সকালে সেগুলো ফেরত দেয়া হবে। এদিকে কেন্দ্রের ভেতর সিভিল ড্রেসের সবাই কি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য? এমন প্রশ্নের জবাবে ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বেশির ভাগই শাহবাগ থানার। তবে এর মধ্যে স্কুল কর্মচারী আর প্রিজাইডিং কর্মকর্তার সহযোগীরাও আছেন। তিনি আরও বলেন, আমরা আজ (গতকাল) সকাল ছয়টা থেকে এখানে আছি। কাল (আজ) ভোর ছয়টা পর্যন্ত থাকবো। আশা করছি কাল উৎসবমুখর পরিবেশে এই কেন্দ্রের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে গতকাল একই সময়ে ওই কেন্দ্রে একটি টিভি চ্যানেলের ক্যামেরা ও প্রতিবেদক হাজির হলে স্কুল মাঠে উপস্থিত কয়েকজনকে উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলতে শোনা যায়, এই তো আমাদের চ্যানেল চলে এসেছে। আসেন আমাদের ছবি তোলেন। এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় সরজমিনে দেখা যায় কেন্দ্রের ঠিক বাইরে, মেয়র প্রার্থী সাঈদ খোকন ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত স্থানীয় কাউন্সিলর সমর্থিত কর্মীদের সরব উপস্থিতি। স্কুল কেন্দ্রের পাশের এক দোকানির সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, গতকাল সকাল থেকেই স্কুল প্রাঙ্গণে সাধারণদের প্রবেশ নিষেধ। তবে পুলিশ আর স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের জন্য প্রবেশে কোন বাধা নেই।
রোববার রাত থেকে ধর-পাকড়: ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী হামিদুল হকের বাড়িতে রোববার রাতে গুলি করেছে দুর্বৃত্তরা। তিনি অভিযোগ করেন, রাত ৩টার দিকে তার বাড়ি লক্ষ্য করে চার রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়। ওই সময় হ্যান্ডমাইকে হামিদুল হককে বলা হয়, নির্বাচনের দিন সে যেন বাড়ির বাইরে বের না হয়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫০ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ফকরুল ইসলাম মুরাদ। তিনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। তাকে গত শনিবার গভীর রাতে তুলে নিয়ে ১২ নম্বর গলিতে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। জখম করা শেষে একই গলির একটি বৈদ্যুতিক খাম্বার সঙ্গে বেঁধে রেখে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। এ বিষয়ে আবদুর রহমান নামের একজন স্থানীয় ভোটার প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে জানান, খবর পেয়ে দ্রুত মুরাদকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। রোববার প্রচারণার শেষ দিন হওয়ায় অ্যাম্বুলেন্সে করে প্রচারে অংশ নেয় আওয়ামী লীগের এই বিদ্রোহী প্রার্থী। ৫৩ নং ওয়ার্ডে ২০ দলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আহমদ হাসান নামের একজন কাউন্সিলর প্রার্থী। তিনি অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় এমপি অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম বসে যেতে বলেছেন। বসে না গেলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে বলে হুঁশিয়ারি করে দেন। এ ঘোষণার পরদিনই তার পরিচালিত স্কুলে তালা দেয়া হয়। দুজন কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। আরও বেশ কিছু প্রচারকর্মীর ওপর হামলা করে জখম করার অভিযোগ করেন তিনি। ১৩ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর খন্দকার আবদুর রব জানান, এবার তার স্ত্রী আঞ্জুমান আরা বেগম ২০ দলের শক্তিশালী প্রার্থী। তার মিছিলে ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা ও পুলিশ একযোগে হামলা এবং গুলি চালিয়েছে। কিন্তু উল্টো তাদের বিরুদ্ধে এখন মামলা করা হয়েছে। ওই মামলার আসামি ধরার নামে দলীয় লোকজনকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। বাসায় যদি কাউকে না পায় ভোট কেন্দ্রে পাওয়া গেলে দেখে নেয়ার হুমকির অভিযোগ করেন সাবেক এই কাউন্সিলর। এদিকে গতকাল এক বিবৃতিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর-দক্ষিণে ২০ দলের ৭৯ পোলিং এজেন্ট ও নেতাকর্মী আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর মধ্যে উত্তরে ৬৯ ও দক্ষিণে ১০ জন নেতাকর্মী রয়েছেন। আটকরা হলেন- ঢাকা সিটি করপোরেশন উত্তরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন দুলুর স্ত্রী, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী বাবুল শিকদার, ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আকতার হোসেন, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জুয়েল গাজীসহ তিনজন, ২৭ নম্বর ওয়াডের কাউন্সিলর প্রার্থী ও বিএনপি তেজগাঁও থানার সাধারণ সম্পাদকের বাড়ি থেকে নাছির উদ্দিনসহ ১৭ জন, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের তেজগাঁও থানার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর, মোহাম্মদপুর থানার স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সোহাগ, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত হোসেন, আমিনুল, হানিফ, আবদুল মজিদ, লম্বা আরিফ, মাস্টার কামালসহ নয়জন। এছাড়া ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মহিলা দলের আটজন, একই ওয়ার্ডের উত্তরা থেকে ছাত্রদলের ৪ জন, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশরাফুর রহমান, ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী রুনু আক্তারের কন্যা এবং ছেলে, কারওয়ান বাজার থেকে ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহসভাপতি হায়দার আলী খান লেলিন ও যুবদল নেতা গোলাম কিবরিয়া, ২৪ নং ওয়ার্ড থেকে ৭ জন পোলিং এজেন্টসহ ৬৯ জন ২০ দল নেতাকর্মী উত্তর সিটি থেকে আটক করা হয়েছে। অন্যদিকে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকা থেকে ২০ দলের ১০ জন নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। ১৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল খায়ের বাবলু, ওলামা দলের মতিঝিল থানার সভাপতি শফিকুল ইসলাম, ৩ নং ওয়ার্ডের বিএনপির সহসভাপতি আবদুল কুদ্দুস, বিএনপি সমর্থিত পারভেজসহ সাতজনকে আটক করেছে পুলিশ। এছাড়া বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদের ছোট ভাই কামরুল হাসান রাজু বগুড়া ইনসেপ্টা ফার্মাসিটিক্যাল নামে একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন। ঢাকা আসলে মিরপুর থানার পুলিশ তাকে আটক করে।
ভোট কেনার অভিযোগে আটক ১২, জেল-জরিমানা: এদিকে সিটি নির্বাচন উপলক্ষে অর্থের বিনিময়ে ভোট ক্রয়ের অভিযোগে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বিএনপির ১২ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। তাৎক্ষণিকভাবে আটককৃতদের মধ্যে চারজনকে দণ্ড প্রদান করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। রোববার রাতে ও সোমবার তাদের আটক করে পুলিশ। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপি। বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ও সমর্থকদের হয়রানি এবং সাধারণ ভোটারদের বিভ্রান্ত করতে পুলিশ এই নাটক সাজিয়েছে বলে বিএনপি অভিযোগ করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, গতকাল দুপুরে উত্তর সিটি করপোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী রুনু আক্তারের মেয়ে শারফিন আক্তারসহ ছয়জনকে আটক করে পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে নদগ ৩ লাখ ৫শ’ টাকা উদ্ধার করা হয়। মিরপুর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রফিক জানান, রুনু আক্তারের জন্য ভোট কেনার সময় পাইকপাড়া থেকে তাদের আটক করা হয়। ভোট প্রতি তারা ৫শ’ টাকা করে দিচ্ছিলেন। এ ঘটনায় আটক হওয়া অন্যরা হলেন, শামসুদ্দিন আহমেদ, সামিরুল ইসলাম, রাফি আহমেদ, নজরুল ইসলাম ও জনি। রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে তাদের জেল-জরিমানা করার প্রক্রিয়া চলছিল বলে জানান এসআই রফিক। এদিকে প্রায় একই সময়ে কামরাঙ্গীরচর থানার বড়গ্রাম মুজিবুর ঘাট থেকে তিন জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পুলিশ দাবি করেছে, এ সময় তাদের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা ও নির্বাচনী লিফলেট উদ্ধার করা হয়। কামরাঙ্গীরচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মহসিন আলম বলেন, আটককৃতরা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থী নাঈমের পক্ষে টাকার বিনিময়ে ভোট কেনার চেষ্টা করেছিলেন। খবর পেয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেপ্তারকৃত সেতারা বেগমকে সাত দিন, শিল্পী বেগম ও হোসনে আরাকে তিন দিনের কারাদণ্ড প্রদান করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এর আগে সোমবার রাতে হাজারীবাগ থানার যুবদলের সহসভাপতি মো. আলাউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। হাজারীবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মাঈনুল ইসলাম জানান, হাজারীবাগ থানার গণকতলী এলাকায় রাতে নগদ টাকা দিয়ে ভোট ক্রয় করছিলেন আলাউদ্দিন। সংবাদ পেয়ে অভিযান চালিয়ে নগদ টাকাসহ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে ২৫ হাজার ৫শ’ টাকা উদ্ধার করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। একইভাবে রমনা থানার চল্লিশঘর বস্তি এলাকা থেকে মাসুদুর রহমান মাসুদ নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার কাছ থেকে ১২ হাজার ৫শ’ টাকা উদ্ধার করা হয় বলে পুলিশ দাবি করেছে। রমনা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জুয়েল মিয়া জানান, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের রমনা থানার কাউন্সিলর প্রার্থী শেখ আমির হোসেনের পক্ষে ভোট ক্রয়ের সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে দুই মাসের কারাদন্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া খিলক্ষেত থানার মধ্যপাড়া এলাকা থেকে মঙ্গলবার ভোরে ফিরোজ মিয়া নামে বিএনপির এক কর্মীকে আটক করে পুলিশ। খিলক্ষেত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম জানান, নগদ টাকা দিয়ে ভোট ক্রয়ের চেষ্টাকালে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। এ সময় তার কাছ থেকে ১৫ হাজার ৫শ’ টাকা উদ্ধার করা হয়। এদিকে এসব ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপি। এদিকে আরেক প্রতিবাদ লিপিতে ঢাকা উত্তর সিটিতে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বলেছেন, মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সালাউদ্দিনের বরাতে বিভিন্ন মোবাইলে ‘মেয়র পদপ্রার্থী তাবিথ আউয়ালের বিরুদ্ধে ভোট ক্রয়ের অভিযোগ ও গ্রেপ্তার’ সংক্রান্ত যে খুদে বার্তা পাঠানো হয়েছে, তা আদৌ সত্য নয়। প্রকৃতপক্ষে, খুদে বার্তায় উল্লেখকৃত শারফিন আক্তারসহ তার সহযোগীরা তাবিথ আউয়ালের নির্বাচনী প্রচারণাকর্মী, আত্মীয়স্বজন বা পোলিং এজেন্টদের কেউ নন। কোন গোষ্ঠী তাদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করতেই প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের বিরুদ্ধে ওই ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত করছে। এ ধরনের মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন তথ্য প্রচারকারীদের বিরুদ্ধে তরিত্ব ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। একই সঙ্গে গণমাধ্যমের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, তারা যেন তথ্য যাচাই-বাচাই করে সঠিক খবর প্রচার করেন। গতকাল এক বিফ্রিংয়ে দলের মুখপাত্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, বিএনপির প্রার্থীদের হয়রানি ও ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য বিএনপির নেতাকর্মীদের নানাভাবে হয়রানি করছে পুলিশ। মিথ্যা নাটক সাজিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
পাল্টে গেল দৃশ্যপট: রোববার রাত ১২টা পর্যন্ত ছিল প্রচার-প্রচারণার শেষ সময়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের পর ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে শুরু হলো তৎপরতা। রাত ১টার দিকে ব্যানার, পোস্টার ও মই নিয়ে রাস্তায় দেখা গেল সরকার সমর্থিত প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের। তাদের একদল বিএনপি সমর্থিত ও নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের পোস্টার ছিঁড়ছেন। আরেক দল ঝুলিয়ে দিচ্ছেন সরকার সমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর ব্যানার পোস্টার। প্রতিটি গলির মুখে ঝুলানো হচ্ছে মেয়র প্রার্থীর ব্যানার। ভোট কেন্দ্রেগুলোর সামনেই এসব তৎপরতা দেখা গেছে সবচেয়ে বেশি। কেন্দ্রের সামনে তো বটেই, ভেতরে মাঠ কিংবা একচিলতে উঠোনগুলো ছেয়ে ফেলা হয় নির্দিষ্ট প্রার্থীর পোস্টারে। রীতিমতো হাঁকডাক ও আয়োজন করে। এতে মধ্যরাতেই পাল্টে যায় দৃশ্যপট। সরকার সমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর ব্যানার পোস্টারে সুশোভিত হয়ে উঠলো বেশির ভাগ এলাকা। গতকাল ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড ঘুরে এমন দৃশ্য চোখে পড়েছে। বেশির ভাগ ভোট কেন্দ্রের ছোট্ট মাঠটি পোস্টারে এমনভাবে ছেয়ে ফেলা হয়েছে যেন এটি কোন বিয়েবাড়ি। এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটিকে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাসের নির্বাচনী প্রচার থেকে ব্যানার ও পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ করা হয়েছে। প্রচার সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত মাহমুদ হাসান জানান, ঢাকা দক্ষিণের যাত্রাবাড়ী, কামরাঙ্গীরচর, হাজারীবাগ, ফকিরাপুল ও শাহবাগ এলাকায় মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাসের সব ব্যানার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন এমন ঘটনা ঘটলেও রোববার রাতে ব্যাপকভাবে এ ব্যানার-পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। তিনি বলেন, এখন নতুন করে পোস্টার টাঙানোর সুযোগ নেই। ফলে নির্বাচনী বেশির ভাগ এলাকায় ভোটাররা ভোটের দিন বিএনপি সমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের পোস্টার দেখতে পাবেন না। তিনি বলেন, খিলগাঁওয়ের গোড়ান আলী আহমেদ স্কুলসহ বহু কেন্দ্রে সরকার সমর্থিত প্রার্থীর লোকজনকে পোস্টার ছিঁড়তে দেখা গেছে। স্বেচ্ছাসেবক দলের দপ্তর সম্পাদক আক্তারুজ্জামান বাচ্চু জানান, ঢাকা উত্তর ২২ নম্বর ওয়ার্ডের বনশ্রী ডি ব্লকে আইডিয়াল স্কুল ও হলিক্রিসেন্ট ইন্টারন্যাশনাল স্কুল দুটি কেন্দ্রের অবস্থান। রোববার মধ্যরাতে ওই দুই কেন্দ্রের সামনে ও আশপাশে টাঙানো বিএনপি সমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের ব্যানার-পোস্টারগুলো ছিঁড়ে ফেলা হয়। ওদিকে বিকল্পধারা সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মাহী বি চৌধুরীর পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ করেছে তার নির্বাচন পরিচালনা সেল। মাহীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট সারোয়ার মোর্শেদ গতকাল এক বিবৃতিতে এ অভিযোগ করে বলেন, কে বা কারা রোববার রাতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বারিধারা, শাহজাদপুর, গুলশান-১, গুলশান-২, বনানীবাজার, বনানী ১১ নম্বর রোড, মিরপুর ১০ গোলচক্কর, রোকেয়া সরণি, আগারগাঁও ও কালশীর বিভিন্ন স্থানে ঈগল প্রতীকের পোস্টার ও ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেছে। ওদিকে সোমবার সকাল থেকে ঢাকা উত্তরের বিভিন্ন এলাকায় কিছু রঙিন পোস্টার সাটানো দেখা গেছে। পোস্টারে ঢাকা উত্তরের বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালকে ভোট না দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। গতকাল ওই রঙিন পোস্টারের মাধ্যমে অপপ্রচারের প্রতিবাদ জানিয়েছেন তাবিথ আউয়াল। প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়েছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদপ্রার্থী তাবিথ আউয়ালের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। রাজধানীর বিভিন্ন দেয়ালে আজ ‘এটা কি ভোটের লিফলেট নাকি মৃত্যু পরোয়ানা?’ এমন পোস্টার দেখা গেছে। তবে ওই অপপ্রচারকারী কে বা কারা, সে পরিচয় পোস্টারে নেই। এমন ষড়যন্ত্রমূলক অপপ্রচারের বিষয়টি আমাদের নজরে আসছে। নির্বাচনের পূর্বমুহূর্তে তাবিথ আউয়ালের জনপ্রিয়তার ভয়ে প্রতিপক্ষ প্রার্থী, রাজনৈতিক দল ও মতের লোকেরা তার বিরুদ্ধে গভীর ও হীন ষড়যন্ত্র লিপ্ত রয়েছে। পোস্টারে শুধু তাবিথ আউয়ালকেই নয়, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকেও খাটো করা হয়েছে। কেবল নিম্নরুচির, হীনম্মন্য ব্যক্তি, দল, গোষ্ঠীর পক্ষেই ওই ধরনের অপপ্রচার রটানো সম্ভব। বিবৃতিতে বলা হয়, তাবিথ আউয়ালের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে কোন কলঙ্কের আছর নেই। কিন্তু শুধু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তাকে হেয় করার জন্যই অসভ্য ও ঘৃন সংস্কৃতির চর্চাকারীরা পিছু লেগেছে। কুরুচির নরকীটরা তাদের গোষ্ঠী স্বার্থ উদ্ধার করতেই ওই মিথ্যা ও বানোয়াট প্রপাগান্ডায় লিপ্ত। নির্বাচন কমিশনের কাছে আমরা ওই অপপ্রচার বন্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ করছি। সংশ্লিষ্ট সবাইকে সুস্থ সংস্কৃতি চর্চা, অন্যের মত ও পথকে শ্রদ্ধা করার আহ্বান জানাচ্ছি। এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৩৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের প্রার্থী মাওলানা সালেহ সিদ্দিকীর নির্বাচনী মাইকিং ভাঙচুর, কর্মীদের ওপর নির্যাতন, পুলিশী হয়রানি ও গ্রেপ্তার অভিযান চলে। গতকাল ২৬শে এপ্রিল নির্বাচনী প্রচারণা শেষ সময়ে আওয়ামী লীগের কর্মীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নাকের ডগায় মগবাজারের বিভিন্ন এলাকায় লাটিমের সাঁটানো সকল পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন একযোগে কেটে ফেলে দেয়। আজ ২৭শে এপ্রিল লাটিমের নির্বাচনী এজেন্টদের হুমকি প্রদান করে। এমনকি ২০ দলের নেতাকর্মীদের কেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করে জনগণকে তার ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ দানের জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।
অন্য পরিবেশ সেগুন বাগিচায়: ভোটের আগের রাতে অন্য রকম পরিবেশের দেখা মিলল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধীন সেগুন বাগিচা হাইস্কুল কেন্দ্রে। গতকাল রাতে সরজমিনে কেন্দ্রটিতে গিয়ে দেখা যায়, নির্বাচনের জন্য আসা আনসার কর্মীরা ছাড়া বাকিদের পরিচয় আন্দাজ করা মুশকিল। তবে মনে হয়েছে, পুলিশ, প্রিজাইডিং অফিসার, স্কুল কর্মচারী আর স্থানীয় প্রভাশালীরা মিলিত হয়েছেন এক মোহনায়। সন্ধ্যা সাতটার দিকে দেখা যায়, সেগুনবাগিচা স্কুল কেন্দ্রের প্রায় পুরো এলাকাই সাজানো হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী সাঈদ খোকনের ইলিশ প্রতীক সংবলিত পোস্টার-স্টিকারে। স্কুলের মূল ফটকের পুরোটাজুড়েই নতুন করে সাঁটানো হয়েছে সাঈদ খোকনের স্টিকার দিয়ে। কর্তব্যরত আনসার সদস্যের অনুমতি নিয়ে স্কুল ফটক পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখা গেছে প্রায় ২৫-৩০ জন সাধারণ মানুষ একাধিক ভাগে জটলা করে খোশগল্পে মত্ত আছেন। কাছে এগুতেই অনুমান করা গেল ওই সাধারণ মানুষদের মধ্যে অনেকের হাতেই ওয়াকিটকি এবং কারো কোমরে পিস্তল রয়েছে। এমন একজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, এখানে উপস্থিত সবাই শাহবাগ থানার অন্তর্ভুক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। এই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসারের সঙ্গে আলাপ করতে চাইলে পুলিশের ওই সদস্য প্রথমে বলেন, আজ সম্ভব না। স্যার খুব ব্যস্ত। সব কিছু গুছাচ্ছেন। কাল আসুন। এরপর অবশ্য সিভিল ড্রেসের ওই পুলিশ কর্মকর্তা নিজেই প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে নিয়ে যান। প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রিজাইডিং অফিসার অলিউল হক বলেন, সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। কোন সমস্যা নেই। এমন জবাবের বিপরীতে পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যালট পেপার নিয়ে যাওয়ার গুঞ্জনের বিষয়টি জানতে চাইলে প্রিজাইডিং অফিসার বলেন, এসব আজব কথা কে বলে? এমন জবাবের পরই ওই পুলিশ কর্মকর্তা প্রিজাইডিং অফিসারকে তাগিদ দিয়ে নিয়ে যান অন্য দিকে। এ সময় কর্তব্যরত প্রিজাইডিং অফিসারকে পুলিশের কাছে এক রকম অসহায়ই মনে হয়। প্রসঙ্গত, গতকাল বিকাল ভর বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে এই কেন্দ্রের দায়িত্মপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং কর্মকর্তার কাছ থেকে ব্যালট পেপার চেয়েছে পুলিশ। সূত্র জানায়, পুলিশ প্রিজাইডিং অফিসারকে বলেছে রাতের (গতরাত) মধ্যে ব্যালট পেপারগুলো আমাদের দিয়ে দিন কাল সকালে সেগুলো ফেরত দেয়া হবে। এদিকে কেন্দ্রের ভেতর সিভিল ড্রেসের সবাই কি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য? এমন প্রশ্নের জবাবে ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বেশির ভাগই শাহবাগ থানার। তবে এর মধ্যে স্কুল কর্মচারী আর প্রিজাইডিং কর্মকর্তার সহযোগীরাও আছেন। তিনি আরও বলেন, আমরা আজ (গতকাল) সকাল ছয়টা থেকে এখানে আছি। কাল (আজ) ভোর ছয়টা পর্যন্ত থাকবো। আশা করছি কাল উৎসবমুখর পরিবেশে এই কেন্দ্রের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে গতকাল একই সময়ে ওই কেন্দ্রে একটি টিভি চ্যানেলের ক্যামেরা ও প্রতিবেদক হাজির হলে স্কুল মাঠে উপস্থিত কয়েকজনকে উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলতে শোনা যায়, এই তো আমাদের চ্যানেল চলে এসেছে। আসেন আমাদের ছবি তোলেন। এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় সরজমিনে দেখা যায় কেন্দ্রের ঠিক বাইরে, মেয়র প্রার্থী সাঈদ খোকন ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত স্থানীয় কাউন্সিলর সমর্থিত কর্মীদের সরব উপস্থিতি। স্কুল কেন্দ্রের পাশের এক দোকানির সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, গতকাল সকাল থেকেই স্কুল প্রাঙ্গণে সাধারণদের প্রবেশ নিষেধ। তবে পুলিশ আর স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের জন্য প্রবেশে কোন বাধা নেই।
রোববার রাত থেকে ধর-পাকড়: ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী হামিদুল হকের বাড়িতে রোববার রাতে গুলি করেছে দুর্বৃত্তরা। তিনি অভিযোগ করেন, রাত ৩টার দিকে তার বাড়ি লক্ষ্য করে চার রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়। ওই সময় হ্যান্ডমাইকে হামিদুল হককে বলা হয়, নির্বাচনের দিন সে যেন বাড়ির বাইরে বের না হয়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫০ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ফকরুল ইসলাম মুরাদ। তিনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। তাকে গত শনিবার গভীর রাতে তুলে নিয়ে ১২ নম্বর গলিতে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। জখম করা শেষে একই গলির একটি বৈদ্যুতিক খাম্বার সঙ্গে বেঁধে রেখে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। এ বিষয়ে আবদুর রহমান নামের একজন স্থানীয় ভোটার প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে জানান, খবর পেয়ে দ্রুত মুরাদকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। রোববার প্রচারণার শেষ দিন হওয়ায় অ্যাম্বুলেন্সে করে প্রচারে অংশ নেয় আওয়ামী লীগের এই বিদ্রোহী প্রার্থী। ৫৩ নং ওয়ার্ডে ২০ দলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আহমদ হাসান নামের একজন কাউন্সিলর প্রার্থী। তিনি অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় এমপি অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম বসে যেতে বলেছেন। বসে না গেলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে বলে হুঁশিয়ারি করে দেন। এ ঘোষণার পরদিনই তার পরিচালিত স্কুলে তালা দেয়া হয়। দুজন কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। আরও বেশ কিছু প্রচারকর্মীর ওপর হামলা করে জখম করার অভিযোগ করেন তিনি। ১৩ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর খন্দকার আবদুর রব জানান, এবার তার স্ত্রী আঞ্জুমান আরা বেগম ২০ দলের শক্তিশালী প্রার্থী। তার মিছিলে ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা ও পুলিশ একযোগে হামলা এবং গুলি চালিয়েছে। কিন্তু উল্টো তাদের বিরুদ্ধে এখন মামলা করা হয়েছে। ওই মামলার আসামি ধরার নামে দলীয় লোকজনকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। বাসায় যদি কাউকে না পায় ভোট কেন্দ্রে পাওয়া গেলে দেখে নেয়ার হুমকির অভিযোগ করেন সাবেক এই কাউন্সিলর। এদিকে গতকাল এক বিবৃতিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর-দক্ষিণে ২০ দলের ৭৯ পোলিং এজেন্ট ও নেতাকর্মী আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর মধ্যে উত্তরে ৬৯ ও দক্ষিণে ১০ জন নেতাকর্মী রয়েছেন। আটকরা হলেন- ঢাকা সিটি করপোরেশন উত্তরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন দুলুর স্ত্রী, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী বাবুল শিকদার, ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আকতার হোসেন, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জুয়েল গাজীসহ তিনজন, ২৭ নম্বর ওয়াডের কাউন্সিলর প্রার্থী ও বিএনপি তেজগাঁও থানার সাধারণ সম্পাদকের বাড়ি থেকে নাছির উদ্দিনসহ ১৭ জন, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের তেজগাঁও থানার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর, মোহাম্মদপুর থানার স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সোহাগ, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত হোসেন, আমিনুল, হানিফ, আবদুল মজিদ, লম্বা আরিফ, মাস্টার কামালসহ নয়জন। এছাড়া ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মহিলা দলের আটজন, একই ওয়ার্ডের উত্তরা থেকে ছাত্রদলের ৪ জন, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশরাফুর রহমান, ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী রুনু আক্তারের কন্যা এবং ছেলে, কারওয়ান বাজার থেকে ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহসভাপতি হায়দার আলী খান লেলিন ও যুবদল নেতা গোলাম কিবরিয়া, ২৪ নং ওয়ার্ড থেকে ৭ জন পোলিং এজেন্টসহ ৬৯ জন ২০ দল নেতাকর্মী উত্তর সিটি থেকে আটক করা হয়েছে। অন্যদিকে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকা থেকে ২০ দলের ১০ জন নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। ১৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল খায়ের বাবলু, ওলামা দলের মতিঝিল থানার সভাপতি শফিকুল ইসলাম, ৩ নং ওয়ার্ডের বিএনপির সহসভাপতি আবদুল কুদ্দুস, বিএনপি সমর্থিত পারভেজসহ সাতজনকে আটক করেছে পুলিশ। এছাড়া বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদের ছোট ভাই কামরুল হাসান রাজু বগুড়া ইনসেপ্টা ফার্মাসিটিক্যাল নামে একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন। ঢাকা আসলে মিরপুর থানার পুলিশ তাকে আটক করে।
ভোট কেনার অভিযোগে আটক ১২, জেল-জরিমানা: এদিকে সিটি নির্বাচন উপলক্ষে অর্থের বিনিময়ে ভোট ক্রয়ের অভিযোগে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বিএনপির ১২ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। তাৎক্ষণিকভাবে আটককৃতদের মধ্যে চারজনকে দণ্ড প্রদান করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। রোববার রাতে ও সোমবার তাদের আটক করে পুলিশ। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপি। বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ও সমর্থকদের হয়রানি এবং সাধারণ ভোটারদের বিভ্রান্ত করতে পুলিশ এই নাটক সাজিয়েছে বলে বিএনপি অভিযোগ করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, গতকাল দুপুরে উত্তর সিটি করপোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী রুনু আক্তারের মেয়ে শারফিন আক্তারসহ ছয়জনকে আটক করে পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে নদগ ৩ লাখ ৫শ’ টাকা উদ্ধার করা হয়। মিরপুর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রফিক জানান, রুনু আক্তারের জন্য ভোট কেনার সময় পাইকপাড়া থেকে তাদের আটক করা হয়। ভোট প্রতি তারা ৫শ’ টাকা করে দিচ্ছিলেন। এ ঘটনায় আটক হওয়া অন্যরা হলেন, শামসুদ্দিন আহমেদ, সামিরুল ইসলাম, রাফি আহমেদ, নজরুল ইসলাম ও জনি। রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে তাদের জেল-জরিমানা করার প্রক্রিয়া চলছিল বলে জানান এসআই রফিক। এদিকে প্রায় একই সময়ে কামরাঙ্গীরচর থানার বড়গ্রাম মুজিবুর ঘাট থেকে তিন জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পুলিশ দাবি করেছে, এ সময় তাদের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা ও নির্বাচনী লিফলেট উদ্ধার করা হয়। কামরাঙ্গীরচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মহসিন আলম বলেন, আটককৃতরা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থী নাঈমের পক্ষে টাকার বিনিময়ে ভোট কেনার চেষ্টা করেছিলেন। খবর পেয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেপ্তারকৃত সেতারা বেগমকে সাত দিন, শিল্পী বেগম ও হোসনে আরাকে তিন দিনের কারাদণ্ড প্রদান করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এর আগে সোমবার রাতে হাজারীবাগ থানার যুবদলের সহসভাপতি মো. আলাউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। হাজারীবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মাঈনুল ইসলাম জানান, হাজারীবাগ থানার গণকতলী এলাকায় রাতে নগদ টাকা দিয়ে ভোট ক্রয় করছিলেন আলাউদ্দিন। সংবাদ পেয়ে অভিযান চালিয়ে নগদ টাকাসহ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে ২৫ হাজার ৫শ’ টাকা উদ্ধার করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। একইভাবে রমনা থানার চল্লিশঘর বস্তি এলাকা থেকে মাসুদুর রহমান মাসুদ নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার কাছ থেকে ১২ হাজার ৫শ’ টাকা উদ্ধার করা হয় বলে পুলিশ দাবি করেছে। রমনা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জুয়েল মিয়া জানান, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের রমনা থানার কাউন্সিলর প্রার্থী শেখ আমির হোসেনের পক্ষে ভোট ক্রয়ের সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে দুই মাসের কারাদন্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া খিলক্ষেত থানার মধ্যপাড়া এলাকা থেকে মঙ্গলবার ভোরে ফিরোজ মিয়া নামে বিএনপির এক কর্মীকে আটক করে পুলিশ। খিলক্ষেত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম জানান, নগদ টাকা দিয়ে ভোট ক্রয়ের চেষ্টাকালে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। এ সময় তার কাছ থেকে ১৫ হাজার ৫শ’ টাকা উদ্ধার করা হয়। এদিকে এসব ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপি। এদিকে আরেক প্রতিবাদ লিপিতে ঢাকা উত্তর সিটিতে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বলেছেন, মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সালাউদ্দিনের বরাতে বিভিন্ন মোবাইলে ‘মেয়র পদপ্রার্থী তাবিথ আউয়ালের বিরুদ্ধে ভোট ক্রয়ের অভিযোগ ও গ্রেপ্তার’ সংক্রান্ত যে খুদে বার্তা পাঠানো হয়েছে, তা আদৌ সত্য নয়। প্রকৃতপক্ষে, খুদে বার্তায় উল্লেখকৃত শারফিন আক্তারসহ তার সহযোগীরা তাবিথ আউয়ালের নির্বাচনী প্রচারণাকর্মী, আত্মীয়স্বজন বা পোলিং এজেন্টদের কেউ নন। কোন গোষ্ঠী তাদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করতেই প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের বিরুদ্ধে ওই ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত করছে। এ ধরনের মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন তথ্য প্রচারকারীদের বিরুদ্ধে তরিত্ব ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। একই সঙ্গে গণমাধ্যমের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, তারা যেন তথ্য যাচাই-বাচাই করে সঠিক খবর প্রচার করেন। গতকাল এক বিফ্রিংয়ে দলের মুখপাত্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, বিএনপির প্রার্থীদের হয়রানি ও ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য বিএনপির নেতাকর্মীদের নানাভাবে হয়রানি করছে পুলিশ। মিথ্যা নাটক সাজিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
পাল্টে গেল দৃশ্যপট: রোববার রাত ১২টা পর্যন্ত ছিল প্রচার-প্রচারণার শেষ সময়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের পর ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে শুরু হলো তৎপরতা। রাত ১টার দিকে ব্যানার, পোস্টার ও মই নিয়ে রাস্তায় দেখা গেল সরকার সমর্থিত প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের। তাদের একদল বিএনপি সমর্থিত ও নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের পোস্টার ছিঁড়ছেন। আরেক দল ঝুলিয়ে দিচ্ছেন সরকার সমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর ব্যানার পোস্টার। প্রতিটি গলির মুখে ঝুলানো হচ্ছে মেয়র প্রার্থীর ব্যানার। ভোট কেন্দ্রেগুলোর সামনেই এসব তৎপরতা দেখা গেছে সবচেয়ে বেশি। কেন্দ্রের সামনে তো বটেই, ভেতরে মাঠ কিংবা একচিলতে উঠোনগুলো ছেয়ে ফেলা হয় নির্দিষ্ট প্রার্থীর পোস্টারে। রীতিমতো হাঁকডাক ও আয়োজন করে। এতে মধ্যরাতেই পাল্টে যায় দৃশ্যপট। সরকার সমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর ব্যানার পোস্টারে সুশোভিত হয়ে উঠলো বেশির ভাগ এলাকা। গতকাল ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড ঘুরে এমন দৃশ্য চোখে পড়েছে। বেশির ভাগ ভোট কেন্দ্রের ছোট্ট মাঠটি পোস্টারে এমনভাবে ছেয়ে ফেলা হয়েছে যেন এটি কোন বিয়েবাড়ি। এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটিকে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাসের নির্বাচনী প্রচার থেকে ব্যানার ও পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ করা হয়েছে। প্রচার সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত মাহমুদ হাসান জানান, ঢাকা দক্ষিণের যাত্রাবাড়ী, কামরাঙ্গীরচর, হাজারীবাগ, ফকিরাপুল ও শাহবাগ এলাকায় মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাসের সব ব্যানার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন এমন ঘটনা ঘটলেও রোববার রাতে ব্যাপকভাবে এ ব্যানার-পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। তিনি বলেন, এখন নতুন করে পোস্টার টাঙানোর সুযোগ নেই। ফলে নির্বাচনী বেশির ভাগ এলাকায় ভোটাররা ভোটের দিন বিএনপি সমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের পোস্টার দেখতে পাবেন না। তিনি বলেন, খিলগাঁওয়ের গোড়ান আলী আহমেদ স্কুলসহ বহু কেন্দ্রে সরকার সমর্থিত প্রার্থীর লোকজনকে পোস্টার ছিঁড়তে দেখা গেছে। স্বেচ্ছাসেবক দলের দপ্তর সম্পাদক আক্তারুজ্জামান বাচ্চু জানান, ঢাকা উত্তর ২২ নম্বর ওয়ার্ডের বনশ্রী ডি ব্লকে আইডিয়াল স্কুল ও হলিক্রিসেন্ট ইন্টারন্যাশনাল স্কুল দুটি কেন্দ্রের অবস্থান। রোববার মধ্যরাতে ওই দুই কেন্দ্রের সামনে ও আশপাশে টাঙানো বিএনপি সমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের ব্যানার-পোস্টারগুলো ছিঁড়ে ফেলা হয়। ওদিকে বিকল্পধারা সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মাহী বি চৌধুরীর পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ করেছে তার নির্বাচন পরিচালনা সেল। মাহীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট সারোয়ার মোর্শেদ গতকাল এক বিবৃতিতে এ অভিযোগ করে বলেন, কে বা কারা রোববার রাতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বারিধারা, শাহজাদপুর, গুলশান-১, গুলশান-২, বনানীবাজার, বনানী ১১ নম্বর রোড, মিরপুর ১০ গোলচক্কর, রোকেয়া সরণি, আগারগাঁও ও কালশীর বিভিন্ন স্থানে ঈগল প্রতীকের পোস্টার ও ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেছে। ওদিকে সোমবার সকাল থেকে ঢাকা উত্তরের বিভিন্ন এলাকায় কিছু রঙিন পোস্টার সাটানো দেখা গেছে। পোস্টারে ঢাকা উত্তরের বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালকে ভোট না দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। গতকাল ওই রঙিন পোস্টারের মাধ্যমে অপপ্রচারের প্রতিবাদ জানিয়েছেন তাবিথ আউয়াল। প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়েছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদপ্রার্থী তাবিথ আউয়ালের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। রাজধানীর বিভিন্ন দেয়ালে আজ ‘এটা কি ভোটের লিফলেট নাকি মৃত্যু পরোয়ানা?’ এমন পোস্টার দেখা গেছে। তবে ওই অপপ্রচারকারী কে বা কারা, সে পরিচয় পোস্টারে নেই। এমন ষড়যন্ত্রমূলক অপপ্রচারের বিষয়টি আমাদের নজরে আসছে। নির্বাচনের পূর্বমুহূর্তে তাবিথ আউয়ালের জনপ্রিয়তার ভয়ে প্রতিপক্ষ প্রার্থী, রাজনৈতিক দল ও মতের লোকেরা তার বিরুদ্ধে গভীর ও হীন ষড়যন্ত্র লিপ্ত রয়েছে। পোস্টারে শুধু তাবিথ আউয়ালকেই নয়, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকেও খাটো করা হয়েছে। কেবল নিম্নরুচির, হীনম্মন্য ব্যক্তি, দল, গোষ্ঠীর পক্ষেই ওই ধরনের অপপ্রচার রটানো সম্ভব। বিবৃতিতে বলা হয়, তাবিথ আউয়ালের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে কোন কলঙ্কের আছর নেই। কিন্তু শুধু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তাকে হেয় করার জন্যই অসভ্য ও ঘৃন সংস্কৃতির চর্চাকারীরা পিছু লেগেছে। কুরুচির নরকীটরা তাদের গোষ্ঠী স্বার্থ উদ্ধার করতেই ওই মিথ্যা ও বানোয়াট প্রপাগান্ডায় লিপ্ত। নির্বাচন কমিশনের কাছে আমরা ওই অপপ্রচার বন্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ করছি। সংশ্লিষ্ট সবাইকে সুস্থ সংস্কৃতি চর্চা, অন্যের মত ও পথকে শ্রদ্ধা করার আহ্বান জানাচ্ছি। এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৩৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের প্রার্থী মাওলানা সালেহ সিদ্দিকীর নির্বাচনী মাইকিং ভাঙচুর, কর্মীদের ওপর নির্যাতন, পুলিশী হয়রানি ও গ্রেপ্তার অভিযান চলে। গতকাল ২৬শে এপ্রিল নির্বাচনী প্রচারণা শেষ সময়ে আওয়ামী লীগের কর্মীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নাকের ডগায় মগবাজারের বিভিন্ন এলাকায় লাটিমের সাঁটানো সকল পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন একযোগে কেটে ফেলে দেয়। আজ ২৭শে এপ্রিল লাটিমের নির্বাচনী এজেন্টদের হুমকি প্রদান করে। এমনকি ২০ দলের নেতাকর্মীদের কেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করে জনগণকে তার ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ দানের জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।
No comments