ফাস্ট বোলিং আসলে পাগলামি
ফাস্ট বোলারদের ‘পাগল’ হতে হয়। আগ্রাসনই তার অস্ত্র। বক্তা শোয়েব আখতার। ক্রিকইনফোকে দেয়া দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে
এ কথা বলেছেন ‘রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেস’। সাক্ষাৎকারের প্রথম কিস্তি ছাপা হল আজ-
প্রশ্ন : আপনি ফাস্ট বোলার হতে চাইলেন কেন?
শোয়েব : আমি কাউকে না কাউকে অনুসরণ করতে চেয়েছিলাম। ওয়াকার, ইমরান, ওয়াসিম। তাদের চেয়ে বড় অনুপ্রেরণা আর কে হতে পারে? এরপর ক্রিকেট হয়ে গেল আমার ভালো লাগা। এরপর আমার পাগলামি। সেই পাগলামির মধ্যে আমি ফাস্ট বোলার হওয়ার উপায় খুঁজে পেলাম। সেই প্রক্রিয়ার মধ্যে আরেক প্রক্রিয়া, সেটি হল সপ্রতিভ হওয়ার। এরপর আরেকটি প্রক্রিয়া। সেখানে আমি সবচেয়ে আনফিট বোলার। আমি উপলব্ধি করি, যত দিন বোলিং করব, গতি কমাব না। যতটা সম্ভব জোরে বল করব। নিজেই উপায় খুঁজে বের করতাম আমার এই অনুরাগ আরও বাড়ানোর জন্য। জোরে বল করার পাগলামি পেয়ে বসেছিল আমাকে। মহল্লায়-গলিতে ওয়াকারের বোলিং অ্যাকশন নকল করে বল করতাম। দেখুন, অনুপ্রেরণা হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিভা আপনাকে হিরো বানায়। অনুপ্রেরণা এগিয়ে দেয় সামনের দিকে। এরপর সেটি পাগলামির রূপ নেয়। সেই পাগলামির মাঝে আপনি প্রক্রিয়া খুঁজে পান। আমি পেয়েছিলাম। প্রতিদিন জোরে বল করার উপায়। জোরে বল করার মূল কথা হল, সেটি উপভোগ করা। দর্শকদের গর্জন আমাকে উজ্জীবিত করত। সেটি দুয়োধ্বনি হলেও। বলতে পারেন, এই যে আমি এত জোরে বল করতাম, তার মূলে ছিল দর্শকদের চিৎকার-চেঁচামেচি। নিজেকে শুধাতাম, ‘আজ আমার ভালো লাগছে। আজ আমি ভালো মুডে আছি। খুব জোরে বল করব।’ এসব আর কী? অনুপ্রেরণাই মূল কথা। পাগলামি! পাগলামিটাই আসল!
প্রশ্ন : জোরে বল করা কতটা দুরূহ?
শোয়েব : খেলোয়াড়ি জীবনে প্রতিদিন বাথরুমে যেতাম হামাগুড়ি দিয়ে। ১৮ বছরে এমন একটি দিনও যায়নি, যেদিন হাঁটুতে ব্যথা অনুভব করিনি।
প্রশ্ন : ফাস্ট বোলার হওয়ার আনন্দটা কিসে?
শোয়েব : আপনি নিজেকে নিজে বিনোদিত করেন বেশিরভাগ সময়। ফাস্ট বোলার হওয়াটা ক্রিকেটে সবচেয়ে ভালো ব্যাপার। আপনি দৌড় শুরু করলেন। দর্শকরা চিৎকার করছে। আপনি উপভোগ করছেন। হৃৎপিণ্ড থেকে অনেক বেশি রক্ত সঞ্চালিত হচ্ছে। অনেক বেশি অক্সিজেন আপনি নিচ্ছেন শরীরে। আমি উপভোগ করেছি। প্রতিপক্ষ যখন শক্তিশালী হয়, গ্যালারি থাকে দর্শকে ভরা, তখন আপনি দ্বিগুণ উজ্জীবিত হন। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে খেলতে নেমে সবচেয়ে বেশি চাঙ্গা থাকতাম আমি। ভীষণ অনুপ্রাণিত হতাম। ফাস্ট বোলিংয়ে মূলমন্ত্র হচ্ছে সেটি উপভোগ করা।
প্রশ্ন : একজন ফাস্ট বোলারের জন্য তাহলে এটাই শেষ কথা?
শোয়েব : ব্যথাহীন দৌড়। অবিরাম বয়ে চলা নদীর মতো ছন্দ। সত্যি বলতে কী, এরকম অনুভূতি জীবনে খুব কমই হয়েছে আমার। আমি শুধু চেয়েছি সারা দিন বোলিং করে যেতে। যখন বেল ছিটকে পড়ত, স্টাম্পে বলের আঘাত করার শব্দ পেতাম, সে যে কী ভালো লাগত। বলে বোঝানো যাবে না। ইয়র্কারে স্টাম্প ছত্রখান হচ্ছে, সেই দৃশ্য দেখতে আমার দারুণ লাগত। ভীষণ আনন্দ পেতাম। আর কোনো কিছুতে কখনোই সেই আনন্দ পাব না। তখন আনন্দটা আসত ভেতর থেকে। নিজেকে মনে হতো, হাওয়ায় ভাসছি। আমি কখনও ব্যাটসম্যানকে আঘাত করতে চাইনি। কখনোই না। কিন্তু কী আর করা! এটা ফাস্ট বোলিংয়ের অংশ। ব্যাটসম্যানকে ভয় পাওয়াতেই হবে। আমি ভয়ের ঘ্রাণ পেতাম। বেশ বুঝতে পারতাম, ব্যাটসম্যান সন্ত্রস্ত। এরপরই স্লোয়ার দিতাম। বাউন্সার ছুড়তাম। আমার যাবতীয় আনন্দ ছিল ব্যাটসম্যানকে আউট করার মধ্যে। যখন সেটা পারতাম না, তখন ব্যাটসম্যানকে আঘাত করে আনন্দ পেতাম।
প্রশ্ন : যখন পারতেন না, কেমন যেত সেসব দিন?
শোয়েব : চূড়ান্ত হতাশার। তবে তা থেকে শিক্ষা নিতাম। সেহওয়াগকে একবার আউট করতে না পারলে, পরেরবার চেষ্টা করতাম। তাকে সাজঘরে ফেরানোর উপায় খুঁজে বের করতাম। বাড়ির পাশে পাহাড়ে পাথর ছুড়ে মারতাম। পাথর ছুড়ে পেশি বানিয়েছিলাম। এরপর পাথরকে বল মনে করে বোলিং করতাম।
প্রশ্ন : আপনি ইট দিয়ে বোলিং করতেন?
শোয়েব : আগেই বলেছি, বাড়ির পাশে পাহাড়ে পাথর ছুড়ে মারতাম।
প্রশ্ন : ২২ গজের দূরত্বে?
শোয়েব : হ্যাঁ, ২৪টা বিভিন্ন আকারের পাথর নিতাম। সেগুলো দিয়ে রাস্তায় বোলিং করতাম। অন্য ছেলেরা ভাবত, আমি পাগল। পুরনো বল নিয়ে অনুশীলন করতাম। এভাবেই রিভার্স সুইং শিখেছি। আপনাকে বাতাসের সঙ্গে খেলতে হবে। এখনকার বোলাররা জানেই না বাতাস যখন বয়, তখন কী করবে তারা।
প্রশ্ন : ম্যাচের আগে কীভাবে নিজেকে তৈরি করতেন?
শোয়েব : বিছানা ছেড়ে গরম পানি দিয়ে গোসল করতাম। এরপর ৩০ মিনিট সাইকেল চালাতাম। পায়ের ব্যায়াম হয়ে যেত। ৩০০ বার প্যাডেলে পা চালাতাম।
প্রশ্ন : তিনশ’বার?
শোয়েব : হ্যাঁ, প্রায় ৩০০ বার। প্রতিদিন। পা বাঁকানো যেত সাইকেল চালানোর সময়। এরপর আবার গরম পানিতে গোসল। ম্যাসাজ। এরপর সোজা মাঠে। তখন আমি চাঙ্গা। তরতাজা।
এ কথা বলেছেন ‘রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেস’। সাক্ষাৎকারের প্রথম কিস্তি ছাপা হল আজ-
প্রশ্ন : আপনি ফাস্ট বোলার হতে চাইলেন কেন?
শোয়েব : আমি কাউকে না কাউকে অনুসরণ করতে চেয়েছিলাম। ওয়াকার, ইমরান, ওয়াসিম। তাদের চেয়ে বড় অনুপ্রেরণা আর কে হতে পারে? এরপর ক্রিকেট হয়ে গেল আমার ভালো লাগা। এরপর আমার পাগলামি। সেই পাগলামির মধ্যে আমি ফাস্ট বোলার হওয়ার উপায় খুঁজে পেলাম। সেই প্রক্রিয়ার মধ্যে আরেক প্রক্রিয়া, সেটি হল সপ্রতিভ হওয়ার। এরপর আরেকটি প্রক্রিয়া। সেখানে আমি সবচেয়ে আনফিট বোলার। আমি উপলব্ধি করি, যত দিন বোলিং করব, গতি কমাব না। যতটা সম্ভব জোরে বল করব। নিজেই উপায় খুঁজে বের করতাম আমার এই অনুরাগ আরও বাড়ানোর জন্য। জোরে বল করার পাগলামি পেয়ে বসেছিল আমাকে। মহল্লায়-গলিতে ওয়াকারের বোলিং অ্যাকশন নকল করে বল করতাম। দেখুন, অনুপ্রেরণা হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিভা আপনাকে হিরো বানায়। অনুপ্রেরণা এগিয়ে দেয় সামনের দিকে। এরপর সেটি পাগলামির রূপ নেয়। সেই পাগলামির মাঝে আপনি প্রক্রিয়া খুঁজে পান। আমি পেয়েছিলাম। প্রতিদিন জোরে বল করার উপায়। জোরে বল করার মূল কথা হল, সেটি উপভোগ করা। দর্শকদের গর্জন আমাকে উজ্জীবিত করত। সেটি দুয়োধ্বনি হলেও। বলতে পারেন, এই যে আমি এত জোরে বল করতাম, তার মূলে ছিল দর্শকদের চিৎকার-চেঁচামেচি। নিজেকে শুধাতাম, ‘আজ আমার ভালো লাগছে। আজ আমি ভালো মুডে আছি। খুব জোরে বল করব।’ এসব আর কী? অনুপ্রেরণাই মূল কথা। পাগলামি! পাগলামিটাই আসল!
প্রশ্ন : জোরে বল করা কতটা দুরূহ?
শোয়েব : খেলোয়াড়ি জীবনে প্রতিদিন বাথরুমে যেতাম হামাগুড়ি দিয়ে। ১৮ বছরে এমন একটি দিনও যায়নি, যেদিন হাঁটুতে ব্যথা অনুভব করিনি।
প্রশ্ন : ফাস্ট বোলার হওয়ার আনন্দটা কিসে?
শোয়েব : আপনি নিজেকে নিজে বিনোদিত করেন বেশিরভাগ সময়। ফাস্ট বোলার হওয়াটা ক্রিকেটে সবচেয়ে ভালো ব্যাপার। আপনি দৌড় শুরু করলেন। দর্শকরা চিৎকার করছে। আপনি উপভোগ করছেন। হৃৎপিণ্ড থেকে অনেক বেশি রক্ত সঞ্চালিত হচ্ছে। অনেক বেশি অক্সিজেন আপনি নিচ্ছেন শরীরে। আমি উপভোগ করেছি। প্রতিপক্ষ যখন শক্তিশালী হয়, গ্যালারি থাকে দর্শকে ভরা, তখন আপনি দ্বিগুণ উজ্জীবিত হন। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে খেলতে নেমে সবচেয়ে বেশি চাঙ্গা থাকতাম আমি। ভীষণ অনুপ্রাণিত হতাম। ফাস্ট বোলিংয়ে মূলমন্ত্র হচ্ছে সেটি উপভোগ করা।
প্রশ্ন : একজন ফাস্ট বোলারের জন্য তাহলে এটাই শেষ কথা?
শোয়েব : ব্যথাহীন দৌড়। অবিরাম বয়ে চলা নদীর মতো ছন্দ। সত্যি বলতে কী, এরকম অনুভূতি জীবনে খুব কমই হয়েছে আমার। আমি শুধু চেয়েছি সারা দিন বোলিং করে যেতে। যখন বেল ছিটকে পড়ত, স্টাম্পে বলের আঘাত করার শব্দ পেতাম, সে যে কী ভালো লাগত। বলে বোঝানো যাবে না। ইয়র্কারে স্টাম্প ছত্রখান হচ্ছে, সেই দৃশ্য দেখতে আমার দারুণ লাগত। ভীষণ আনন্দ পেতাম। আর কোনো কিছুতে কখনোই সেই আনন্দ পাব না। তখন আনন্দটা আসত ভেতর থেকে। নিজেকে মনে হতো, হাওয়ায় ভাসছি। আমি কখনও ব্যাটসম্যানকে আঘাত করতে চাইনি। কখনোই না। কিন্তু কী আর করা! এটা ফাস্ট বোলিংয়ের অংশ। ব্যাটসম্যানকে ভয় পাওয়াতেই হবে। আমি ভয়ের ঘ্রাণ পেতাম। বেশ বুঝতে পারতাম, ব্যাটসম্যান সন্ত্রস্ত। এরপরই স্লোয়ার দিতাম। বাউন্সার ছুড়তাম। আমার যাবতীয় আনন্দ ছিল ব্যাটসম্যানকে আউট করার মধ্যে। যখন সেটা পারতাম না, তখন ব্যাটসম্যানকে আঘাত করে আনন্দ পেতাম।
প্রশ্ন : যখন পারতেন না, কেমন যেত সেসব দিন?
শোয়েব : চূড়ান্ত হতাশার। তবে তা থেকে শিক্ষা নিতাম। সেহওয়াগকে একবার আউট করতে না পারলে, পরেরবার চেষ্টা করতাম। তাকে সাজঘরে ফেরানোর উপায় খুঁজে বের করতাম। বাড়ির পাশে পাহাড়ে পাথর ছুড়ে মারতাম। পাথর ছুড়ে পেশি বানিয়েছিলাম। এরপর পাথরকে বল মনে করে বোলিং করতাম।
প্রশ্ন : আপনি ইট দিয়ে বোলিং করতেন?
শোয়েব : আগেই বলেছি, বাড়ির পাশে পাহাড়ে পাথর ছুড়ে মারতাম।
প্রশ্ন : ২২ গজের দূরত্বে?
শোয়েব : হ্যাঁ, ২৪টা বিভিন্ন আকারের পাথর নিতাম। সেগুলো দিয়ে রাস্তায় বোলিং করতাম। অন্য ছেলেরা ভাবত, আমি পাগল। পুরনো বল নিয়ে অনুশীলন করতাম। এভাবেই রিভার্স সুইং শিখেছি। আপনাকে বাতাসের সঙ্গে খেলতে হবে। এখনকার বোলাররা জানেই না বাতাস যখন বয়, তখন কী করবে তারা।
প্রশ্ন : ম্যাচের আগে কীভাবে নিজেকে তৈরি করতেন?
শোয়েব : বিছানা ছেড়ে গরম পানি দিয়ে গোসল করতাম। এরপর ৩০ মিনিট সাইকেল চালাতাম। পায়ের ব্যায়াম হয়ে যেত। ৩০০ বার প্যাডেলে পা চালাতাম।
প্রশ্ন : তিনশ’বার?
শোয়েব : হ্যাঁ, প্রায় ৩০০ বার। প্রতিদিন। পা বাঁকানো যেত সাইকেল চালানোর সময়। এরপর আবার গরম পানিতে গোসল। ম্যাসাজ। এরপর সোজা মাঠে। তখন আমি চাঙ্গা। তরতাজা।
No comments