কেন্দ্র দখল করে সিল মারার উৎসব by শরিফুল হাসান
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আইডিয়াল কলেজ কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন একের পর এক ব্যালটে সিল মেরেছেন। ছবি: শরিফুল হাসান |
ঢাকা
দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার মাসুম আল জাকী।
দুপুরে তিনি আইডিয়াল কলেজ কেন্দ্রে গেলেন ভোট দিতে। কিন্তু তাঁকে জানানো
হলো, কোনো ব্যালট নেই। ভোট দিতে পারবেন না। প্রিসাইডিং কর্মকর্তার সহায়তা
চাইলেন তিনি। কিন্তু প্রিসাইডিং কর্মকর্তার অনুরোধের পরেও তাঁকে দেওয়ার মতো
কোনো খালি ব্যালট ছিল না।
এই কেন্দ্রের একটি ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, ক্ষমতাসীন লোকজন একের পর এক ব্যালটে সিল মারছে।
কেন্দ্রের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা জানান, সকাল থেকেই ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা এখানকার ব্যালট ছিনিয়ে নিয়ে সিল মেরেছেন। দুপুরের পর তাঁরা আর কোনো ব্যালটই খালি রাখেননি। ফলে অনেককেই ভোট না দিয়ে ফিরে যেতে হয়েছে।
এই কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা একজন বৃদ্ধ নারী পোলিং কর্মকর্তা কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকালে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট শুরু হয়েছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর কিছু ছেলে এল। তারা সব ব্যালট জোর করে নিয়ে গেল। এরপর তারা ইলিশ প্রতীকের পক্ষে সিল মেরে যেতে থাকল। তবে ব্যালটের মুড়ির অংশেও ভোটের সিল থাকতে হয়। সেগুলোতে তারা সিল মারতে পারেনি। পরে তারা আমাদের বাধ্য করে সিল মারতে।’
বিকেল পৌনে চারটার দিকে ওই কেন্দ্রে থাকা মাসুদ রানা নামের এক পুলিশ কর্মকর্তাকে দেখা গেল ব্যালটে সিল মারতে। ওই দৃশ্য ভিডিও করতে গেলে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীর পক্ষের এক নেতা সামনে এসে দাঁড়ালেন। তাঁর নাম শহিদুল ইসলাম। তিনি বললেন, ‘ভাই কী ছবি তুলছেন দেখি।’ তাঁকে এই প্রতিবেদক বলেন, ‘না ভাই ছবি তো তুলতে পারিনি।’ এ সময় তিনি বলেন, ‘মান-সম্মান ডুবাইয়েন না।’
ওই কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, সকালের পর আওয়ামী লীগের লোকজন এই কেন্দ্র দখল করে নেয়। এরপর আর কারো কিছু করার ছিল না। তাঁরা বলেন, তাঁরা রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, র্যাবের এক মেজর, পুলিশ-সবার সাহায্য চেয়েছেন। কিন্তু কেউ কোনো সাহায্য করতে পারেনি।
এই কেন্দ্রের একটি ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, ক্ষমতাসীন লোকজন একের পর এক ব্যালটে সিল মারছে।
কেন্দ্রের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা জানান, সকাল থেকেই ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা এখানকার ব্যালট ছিনিয়ে নিয়ে সিল মেরেছেন। দুপুরের পর তাঁরা আর কোনো ব্যালটই খালি রাখেননি। ফলে অনেককেই ভোট না দিয়ে ফিরে যেতে হয়েছে।
এই কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা একজন বৃদ্ধ নারী পোলিং কর্মকর্তা কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকালে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট শুরু হয়েছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর কিছু ছেলে এল। তারা সব ব্যালট জোর করে নিয়ে গেল। এরপর তারা ইলিশ প্রতীকের পক্ষে সিল মেরে যেতে থাকল। তবে ব্যালটের মুড়ির অংশেও ভোটের সিল থাকতে হয়। সেগুলোতে তারা সিল মারতে পারেনি। পরে তারা আমাদের বাধ্য করে সিল মারতে।’
বিকেল পৌনে চারটার দিকে ওই কেন্দ্রে থাকা মাসুদ রানা নামের এক পুলিশ কর্মকর্তাকে দেখা গেল ব্যালটে সিল মারতে। ওই দৃশ্য ভিডিও করতে গেলে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীর পক্ষের এক নেতা সামনে এসে দাঁড়ালেন। তাঁর নাম শহিদুল ইসলাম। তিনি বললেন, ‘ভাই কী ছবি তুলছেন দেখি।’ তাঁকে এই প্রতিবেদক বলেন, ‘না ভাই ছবি তো তুলতে পারিনি।’ এ সময় তিনি বলেন, ‘মান-সম্মান ডুবাইয়েন না।’
ওই কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, সকালের পর আওয়ামী লীগের লোকজন এই কেন্দ্র দখল করে নেয়। এরপর আর কারো কিছু করার ছিল না। তাঁরা বলেন, তাঁরা রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, র্যাবের এক মেজর, পুলিশ-সবার সাহায্য চেয়েছেন। কিন্তু কেউ কোনো সাহায্য করতে পারেনি।
চারটার পরও সিল মারার মহোৎসব by টিপু সুলতান ও জাহাঙ্গীর শাহ
ঢাকা
উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আজ মঙ্গলবার সকাল
আটটায় ভোট নেওয়া শুরু হয়, চলে টানা বিকেল চারটা পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে
কেন্দ্র দখল করে সরকার-সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে ভোট দিতে দেখা গেছে।
কিন্তু বিকেল চারটায় ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পরও ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশন
নির্বাচনের একটি কেন্দ্রদখল করে ব্যালটে সিল মারতে দেখা গেছে।
উত্তরার নওয়াব হাবিবুল্লাহ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে বিকেল চারটা ২৫ মিনিট পর্যন্ত বিভিন্ন বুথে স্থানীয় আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের ব্যালটে সিল মারতে দেখা গেছে।
এ সময় ভোটকেন্দ্রের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। প্রথম আলোর ফটো সাংবাদিক ক্যামেরায় এ দৃশ্য ধারণ করতে গেলে তাঁকে জোরপূর্বক বুথ থেকে বের করে দেন সরকার দলীয় নেতা-কর্মীরা।
বিকেল চারটায় ভোট গ্রহণ শেষে কেন্দ্রের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন বুথে সরকার দলীয় স্থানীয় নেতা-কর্মীরা ব্যালটের বই নিয়ে একের পর এক পাতায় এক নাগাড়ে সিল মেরে তা বাক্সে ভরছিলেন। আরেক গ্রুপ ব্যালট বইয়ের মুড়ির অংশে টিপসই দিচ্ছিল। নেতা গোছের কয়েকজন পাইকারি হারে ব্যালটে সিল মারা ঠিকভাবে হচ্ছে কি না তা তদারকি করছিলেন।
এমনটা চলে বিকেল চারটা ২৫ মিনিট পর্যন্ত। এরপর প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কাছে সিলমারা ব্যালট বাক্সগুলো নেওয়া হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপস্থিত ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তারা কিছু বলতে রাজি হননি।
ভোট শেষ হওয়ার আগে থেকেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ভোটকেন্দ্রের ভেতরে অবস্থান নেন।
উল্লেখ্য, নওয়াব হাবিবুল্লাহ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে নারী-পুরুষের জন্য মোট চারটি ভোট কেন্দ্র। এসব ভোটকেন্দ্রে মোট বুথ সংখ্যা ২৮। দিনভর এ কেন্দ্রে সরকার-দল সমর্থিত প্রার্থীরা ছাড়া আর কোনো প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট ছিল না।
উত্তরার নওয়াব হাবিবুল্লাহ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে বিকেল চারটা ২৫ মিনিট পর্যন্ত বিভিন্ন বুথে স্থানীয় আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের ব্যালটে সিল মারতে দেখা গেছে।
এ সময় ভোটকেন্দ্রের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। প্রথম আলোর ফটো সাংবাদিক ক্যামেরায় এ দৃশ্য ধারণ করতে গেলে তাঁকে জোরপূর্বক বুথ থেকে বের করে দেন সরকার দলীয় নেতা-কর্মীরা।
বিকেল চারটায় ভোট গ্রহণ শেষে কেন্দ্রের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন বুথে সরকার দলীয় স্থানীয় নেতা-কর্মীরা ব্যালটের বই নিয়ে একের পর এক পাতায় এক নাগাড়ে সিল মেরে তা বাক্সে ভরছিলেন। আরেক গ্রুপ ব্যালট বইয়ের মুড়ির অংশে টিপসই দিচ্ছিল। নেতা গোছের কয়েকজন পাইকারি হারে ব্যালটে সিল মারা ঠিকভাবে হচ্ছে কি না তা তদারকি করছিলেন।
এমনটা চলে বিকেল চারটা ২৫ মিনিট পর্যন্ত। এরপর প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কাছে সিলমারা ব্যালট বাক্সগুলো নেওয়া হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপস্থিত ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তারা কিছু বলতে রাজি হননি।
ভোট শেষ হওয়ার আগে থেকেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ভোটকেন্দ্রের ভেতরে অবস্থান নেন।
উল্লেখ্য, নওয়াব হাবিবুল্লাহ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে নারী-পুরুষের জন্য মোট চারটি ভোট কেন্দ্র। এসব ভোটকেন্দ্রে মোট বুথ সংখ্যা ২৮। দিনভর এ কেন্দ্রে সরকার-দল সমর্থিত প্রার্থীরা ছাড়া আর কোনো প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট ছিল না।
No comments