দুই পক্ষই অনড় : কাজে আসছে না উদ্যোগ by ইমরান আলম
নির্বাচনকে
কেন্দ্র করে সরকার ও বিরোধী দলগুলো নিজ নিজ অবস্থানে অনড় থাকায় বিদেশী
কূটনীতিক ও উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজের উদ্যোগে তাৎপর্যপূর্ণ কোনো অগ্রগতি
হচ্ছে না। পশ্চিমা দেশগুলোর নেতৃত্বে আলোচিত ১৬ বিদেশী কূটনীতিক দুই পক্ষের
কাছে দৌড়ঝাঁপ করেও এখন পর্যন্ত কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন করতে পারেননি।
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ড. এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বে
‘উদ্বিগ্ন নাগরিক’রা আলোচনা শুরুর জন্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সাক্ষাৎ
চেয়েও ইতিবাচক কোনো সাড়া পায়নি। তবে শিগগিরই সঙ্কট নিরসনে তারা একটি
রূপরেখা প্রকাশ করবেন। আর বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে বিশেষ দায়িত্ব পাওয়া
জাতিসঙ্ঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো বিবদমান রাজনৈতিক
দলগুলোর মধ্যে সমঝোতায় সফলতার কোনো ইঙ্গিত না পেলে দ্বিতীয়বার ব্যর্থতার
দায় নিতে ঢাকা আসতে চাইবেন না।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ চেয়ে ১৬ দেশের মিশনপ্রধানরা চিঠি দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপের ১৪টি পশ্চিমা দেশের সাথে এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া। একই ধরনের চিঠি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কাছেও দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ১ মার্চ রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ১৬ দেশের মিশনপ্রধানদের ব্রিফিং দেন। এতে দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তিনি সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন এবং তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। আর ৩ মার্চ বেগম খালেদা জিয়া কূটনীতিকদের সাথে সরাসরি কথা বলেন।
কূটনীতিকদের দেয়া ব্রিফিংয়ে সংলাপের জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরকারের দুইটি পূর্বশর্ত তুলে ধরেন। প্রথমত, সহিংসতার পথ থেকে বিএনপিকে সরে আসতে হবে। দ্বিতীয়ত, জামায়াতের সাথে দলটির সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে।
এরই প্রেক্ষাপটে কূটনীতিকেরা ৩ মার্চ রাতে বেগম খালেদা জিয়ার সাথে তার গুলশান কার্যালয়ে দেখা করেন। তারা বেগম জিয়াকে অন্তত এক সপ্তাহের জন্য রাজনৈতিক কর্মসূচি স্থগিত রাখার অনুরোধ জানান, যাতে করে সংলাপের একটি পরিবেশ সৃষ্টি করা যায়। কিন্তু আন্দোলনের গতি নষ্ট হবে- এ আশঙ্কায় বিএনপি চেয়ারপারসন কূটনীতিকদের দেয়া প্রস্তাবে সম্মত হননি।
এ দিকে ড. এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বে ১২ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি সহিংসতা বন্ধ এবং রাজনৈতিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে ৯ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে চিঠি দেন। এর পর তারা সাক্ষাতের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সময় চান।
কিন্তু আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে উদ্বিগ্ন নাগরিকদের এ উদ্যোগের ব্যাপক সমালোচনা করা হয়। তারা এসব বিশিষ্ট ব্যক্তির নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম কেবল ড. শামসুল হুদা ছাড়া আর কারো গ্রহণযোগ্যতা নেই বলে মন্তব্য করেন।
এ ব্যাপারে নয়া দিগন্তের সাথে আলাপকালে শামসুল হুদা বলেন, আমাদের উদ্যোগে অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর মতো অনেকেই আছেন যারা কারো সাতেপাঁচে নেই। রাষ্ট্রপতির কাছে সাক্ষাৎকারের সময় চাওয়া হয়েছে। তার সাথে আলাপ হলে অন্য পক্ষগুলোর কাছে অগ্রসর হওয়া যাবে।
এ দিকে উদ্বিগ্ন নাগরিকেরা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অচলাবস্থা দূর করতে একটি স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। এর একটি রূপরেখা প্রণয়নের জন্য তারা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করছেন। আগামী কিছু দিনের মধ্যে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে রূপরেখাটি জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে।
২০১৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের কাছ থেকে বিশেষ দায়িত্ব পেয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন। নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য এ সময় পশ্চিমা কূটনীতিকেরা তারানকোর উদ্যোগকে সর্বতোভাবে সমর্থন দিয়েছিলেন। নানামুখী প্রচেষ্টার পর তারানকো আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতৃবৃন্দকে সংলাপে বসাতে সক্ষমও হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার পর সংলাপ ভণ্ডুল হয়ে যায় এবং বিএনপির নেতৃত্বে প্রধান বিরোধী জোটকে বাইরে রেখেই ৫ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। এর পর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা সুসংহত করে আওয়ামী লীগ জানিয়ে দেয়, ২০১৯ সালের আগে কোনো নির্বাচন হবে না। বিএনপির সাথে এ ইস্যুতে কোনো সংলাপের প্রশ্নই আসে না।
এরই প্রেক্ষাপটে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট গত ৫ জানুয়ারি থেকে লাগাতার অবরোধ ও দফায় দফায় হরতাল করে আসছে। রাজনৈতিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে এবং জনজীবনে অচলাবস্থা দেখা দিলে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব বাংলাদেশ পরিস্থিতির উন্নয়নে নতুন করে তারানকোকে দায়িত্ব দেন। তবে রাজনৈতিক বিরোধ নিষ্পত্তিতে প্রধান দুই দলের মধ্যে ছাড় দেয়ার মানসিকতার কোনো ইঙ্গিত না পেলে দ্বিতীয় দফায় ব্যর্থতার দায় নিতে তারানকো ঢাকা আসবেন না বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
সরকারের সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা : রাজনৈতিক বিরোধ নিষ্পত্তি প্রচেষ্টার সাথে জড়িত সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সাথে আলাপ করে জানা গেছে, সরকার সুনির্দিষ্ট কিছু এজেন্ডা সামনে রেখে অগ্রসর হচ্ছে। পরিস্থিতি যাই হোক না কেন- এসব এজেন্ডা বাস্তবায়নের আগে নতুন নির্বাচন দেয়া বা ক্ষমতা ছাড়ার কোনো চিন্তাভাবনাই তাদের মধ্যে নেই। এসব এজেন্ডার মধ্যে রয়েছে যুদ্ধাপরাধের বিচারের রায় কার্যকর করা, খালেদা জিয়াকে দুর্নীতির অভিযোগে আদালতের মাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত করা এবং বিভিন্ন মামলায় তারেক রহমানকে পলাতক হিসেবে রেখে দেয়া।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষপর্যায়ের প্রায় সব নেতাকেই যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত ও দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নিষ্পত্তির পর আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে। কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ডাদেশ রিভিউ শুনানির অপেক্ষায় আছে। আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ নিয়েই অধ্যাপক গোলাম আযম মৃত্যুবরণ করেছেন। মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী আমৃত্যু কারাদণ্ড ভোগ করছেন।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বর্তমানে দুর্নীতির পাঁচটি মামলা রয়েছে। এগুলো হলো জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা, বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা, গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা ও নাইকো দুর্নীতি মামলা। এসবের মধ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় নিম্ন আদালতে স্যাগ্রহণ শুরু হয়েছে। মামলা দুইটির বিচারিক আদালত পরিবর্তনের জন্য হাইকোর্টে দাখিল করা খালেদা জিয়ার আবেদন আগামী ১২ মার্চ শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। অন্য তিনটি মামলা নিম্ন আদালতে বিচারের জন্য প্রস্তুত করতে রুল নিষ্পত্তির জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) হাইকোর্টে আবেদন করেছে। এর মধ্যে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলায় রুলের ওপর শুনানি হবে ১৫ মার্চ। গ্যাটকো ও নাইকো মামলায় রুলের ওপর শুনানির জন্য হাইকোর্টের কার্যতালিকাভুক্ত হয়েছে।
অন্য দিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও সর্বশেষ বঙ্গবন্ধুকে কটুক্তি করার মামলায় তারেক রহমানকে আসামি করা হয়েছে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা তার অনুপস্থিতিতে আইনজীবীদের মাধ্যমে পরিচালনার অনুমোদন রয়েছে। অপর মামলাগুলোতে তাকে পলাতক দেখানো হয়েছে।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ চেয়ে ১৬ দেশের মিশনপ্রধানরা চিঠি দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপের ১৪টি পশ্চিমা দেশের সাথে এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া। একই ধরনের চিঠি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কাছেও দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ১ মার্চ রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ১৬ দেশের মিশনপ্রধানদের ব্রিফিং দেন। এতে দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তিনি সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন এবং তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। আর ৩ মার্চ বেগম খালেদা জিয়া কূটনীতিকদের সাথে সরাসরি কথা বলেন।
কূটনীতিকদের দেয়া ব্রিফিংয়ে সংলাপের জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরকারের দুইটি পূর্বশর্ত তুলে ধরেন। প্রথমত, সহিংসতার পথ থেকে বিএনপিকে সরে আসতে হবে। দ্বিতীয়ত, জামায়াতের সাথে দলটির সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে।
এরই প্রেক্ষাপটে কূটনীতিকেরা ৩ মার্চ রাতে বেগম খালেদা জিয়ার সাথে তার গুলশান কার্যালয়ে দেখা করেন। তারা বেগম জিয়াকে অন্তত এক সপ্তাহের জন্য রাজনৈতিক কর্মসূচি স্থগিত রাখার অনুরোধ জানান, যাতে করে সংলাপের একটি পরিবেশ সৃষ্টি করা যায়। কিন্তু আন্দোলনের গতি নষ্ট হবে- এ আশঙ্কায় বিএনপি চেয়ারপারসন কূটনীতিকদের দেয়া প্রস্তাবে সম্মত হননি।
এ দিকে ড. এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বে ১২ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি সহিংসতা বন্ধ এবং রাজনৈতিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে ৯ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে চিঠি দেন। এর পর তারা সাক্ষাতের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সময় চান।
কিন্তু আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে উদ্বিগ্ন নাগরিকদের এ উদ্যোগের ব্যাপক সমালোচনা করা হয়। তারা এসব বিশিষ্ট ব্যক্তির নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম কেবল ড. শামসুল হুদা ছাড়া আর কারো গ্রহণযোগ্যতা নেই বলে মন্তব্য করেন।
এ ব্যাপারে নয়া দিগন্তের সাথে আলাপকালে শামসুল হুদা বলেন, আমাদের উদ্যোগে অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর মতো অনেকেই আছেন যারা কারো সাতেপাঁচে নেই। রাষ্ট্রপতির কাছে সাক্ষাৎকারের সময় চাওয়া হয়েছে। তার সাথে আলাপ হলে অন্য পক্ষগুলোর কাছে অগ্রসর হওয়া যাবে।
এ দিকে উদ্বিগ্ন নাগরিকেরা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অচলাবস্থা দূর করতে একটি স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। এর একটি রূপরেখা প্রণয়নের জন্য তারা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করছেন। আগামী কিছু দিনের মধ্যে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে রূপরেখাটি জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে।
২০১৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের কাছ থেকে বিশেষ দায়িত্ব পেয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন। নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য এ সময় পশ্চিমা কূটনীতিকেরা তারানকোর উদ্যোগকে সর্বতোভাবে সমর্থন দিয়েছিলেন। নানামুখী প্রচেষ্টার পর তারানকো আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতৃবৃন্দকে সংলাপে বসাতে সক্ষমও হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার পর সংলাপ ভণ্ডুল হয়ে যায় এবং বিএনপির নেতৃত্বে প্রধান বিরোধী জোটকে বাইরে রেখেই ৫ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। এর পর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা সুসংহত করে আওয়ামী লীগ জানিয়ে দেয়, ২০১৯ সালের আগে কোনো নির্বাচন হবে না। বিএনপির সাথে এ ইস্যুতে কোনো সংলাপের প্রশ্নই আসে না।
এরই প্রেক্ষাপটে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট গত ৫ জানুয়ারি থেকে লাগাতার অবরোধ ও দফায় দফায় হরতাল করে আসছে। রাজনৈতিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে এবং জনজীবনে অচলাবস্থা দেখা দিলে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব বাংলাদেশ পরিস্থিতির উন্নয়নে নতুন করে তারানকোকে দায়িত্ব দেন। তবে রাজনৈতিক বিরোধ নিষ্পত্তিতে প্রধান দুই দলের মধ্যে ছাড় দেয়ার মানসিকতার কোনো ইঙ্গিত না পেলে দ্বিতীয় দফায় ব্যর্থতার দায় নিতে তারানকো ঢাকা আসবেন না বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
সরকারের সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা : রাজনৈতিক বিরোধ নিষ্পত্তি প্রচেষ্টার সাথে জড়িত সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সাথে আলাপ করে জানা গেছে, সরকার সুনির্দিষ্ট কিছু এজেন্ডা সামনে রেখে অগ্রসর হচ্ছে। পরিস্থিতি যাই হোক না কেন- এসব এজেন্ডা বাস্তবায়নের আগে নতুন নির্বাচন দেয়া বা ক্ষমতা ছাড়ার কোনো চিন্তাভাবনাই তাদের মধ্যে নেই। এসব এজেন্ডার মধ্যে রয়েছে যুদ্ধাপরাধের বিচারের রায় কার্যকর করা, খালেদা জিয়াকে দুর্নীতির অভিযোগে আদালতের মাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত করা এবং বিভিন্ন মামলায় তারেক রহমানকে পলাতক হিসেবে রেখে দেয়া।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষপর্যায়ের প্রায় সব নেতাকেই যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত ও দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নিষ্পত্তির পর আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে। কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ডাদেশ রিভিউ শুনানির অপেক্ষায় আছে। আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ নিয়েই অধ্যাপক গোলাম আযম মৃত্যুবরণ করেছেন। মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী আমৃত্যু কারাদণ্ড ভোগ করছেন।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বর্তমানে দুর্নীতির পাঁচটি মামলা রয়েছে। এগুলো হলো জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা, বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা, গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা ও নাইকো দুর্নীতি মামলা। এসবের মধ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় নিম্ন আদালতে স্যাগ্রহণ শুরু হয়েছে। মামলা দুইটির বিচারিক আদালত পরিবর্তনের জন্য হাইকোর্টে দাখিল করা খালেদা জিয়ার আবেদন আগামী ১২ মার্চ শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। অন্য তিনটি মামলা নিম্ন আদালতে বিচারের জন্য প্রস্তুত করতে রুল নিষ্পত্তির জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) হাইকোর্টে আবেদন করেছে। এর মধ্যে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলায় রুলের ওপর শুনানি হবে ১৫ মার্চ। গ্যাটকো ও নাইকো মামলায় রুলের ওপর শুনানির জন্য হাইকোর্টের কার্যতালিকাভুক্ত হয়েছে।
অন্য দিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও সর্বশেষ বঙ্গবন্ধুকে কটুক্তি করার মামলায় তারেক রহমানকে আসামি করা হয়েছে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা তার অনুপস্থিতিতে আইনজীবীদের মাধ্যমে পরিচালনার অনুমোদন রয়েছে। অপর মামলাগুলোতে তাকে পলাতক দেখানো হয়েছে।
No comments