র্যাবের সাবেক ৩ কর্মকর্তাকে পুলিশের খাতির by রাজু আহমেদ
নারায়ণগঞ্জে
সাত খুনের ঘটনায় আত্মস্বীকৃত তিন খুনি র্যাবের সাবেক কর্মকর্তা তারেক
সাঈদ মোহাম্মাদ, আরিফ হোসেন ও এমএম রানার জন্য যেন আইন আলাদা। ওই খুনের
ঘটনায় সন্দেহভাজন ও আসামিদের আদালতে হাজির করার সময় সবাইকে হাতকড়া পরানো
হলেও, কখনোই তা লাগে না ওই তিন কর্মকর্তার হাতে। মামলার শুনানির জন্য
বুধবার নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এইচএম শফিকুল ইসলামের
আদালতে ৩০ আসামিকে হাজির করা হয়। এদিনও যথারীতি সবার হাতেই হাতকড়া ছিল,
কোমরে লাগানো ছিল দড়ি; কিন্তু তা ছিল না তারেক, আরিফ ও রানার হাত-কোমরে। এ
নিয়ে শুনানি চলাকালে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন বাদীপক্ষের আইনজীবী এবং
অন্যান্য আসামি ও তাদের স্বজনরা। তারা অভিযোগ করেন, র্যাবের ওই ৩
কর্মকর্তাকে কখনোই আদালতে হাজির করার সময় হাতকড়া পরানো হয় না। তাদের হাতে
হাত রেখে পুলিশ সদস্যরা এমনভাবে আদালতে নিয়ে আসেন যেন তারা সরকারের কোনো
মন্ত্রী-এমপি। অথচ তারা এ নৃশংস হত্যার দায় স্বীকার করেছে। আইনজীবী ও
আসামির স্বজনরা প্রশ্ন করেন, আইনের দৃষ্টিতে যদি সবাই সমান হয় তবে অন্য
আসামিদের হাতে হ্যান্ডকাফ আর কোমরে রশি বাঁধা হয় কেন? র্যাবের কর্মকর্তা
ছিলেন বলেই কি তারা আইনের ঊর্ধ্বে? নাকি তাদের একজন মন্ত্রীর জামাতা বলে!
এ প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি মামুনুর রশীদ মণ্ডল জানান, এর উত্তর আমার কাছে নেই। এটা কোর্ট পরিদর্শক ভালো বলতে পারবেন।
নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পরিদর্শক হাবিবুর রহমান মিয়া যুগান্তরকে জানান, ওই ৩ কর্মকর্তাকে ঢাকা ও গাজীপুর কারাগার থেকে সরাসরি কোর্টে আনা হয়। যারা সেখান থেকে তাদের এসকর্ট করে নিয়ে আসেন বা যে কারা কর্তৃপক্ষ তাদের নারায়ণগঞ্জে প্রেরণ করেন তারাই বলতে পারবেন কেন হাতকড়া ছাড়া আসামি দেয়া হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, এ নিয়ে এজলাসের মধ্যেই অন্যান্য আসামি প্রতিবাদ করেন। তারা পুলিশের বিরুদ্ধে র্যাবের ৩ কর্মকর্তাকে খাতির করার অভিযোগ এনে বলেন, তাদের কারণে আজ আমরা আসামি। তারাই এ ঘটনার নাটের গুরু। অথচ আমাদের হাতকড়া পরিয়ে, কোমড়ে দড়ি বেঁধে আদালতে আনা হয়, দাঁড়িয়ে রাখা হয় কাঠগড়ায়, তাদের হয় না। তারা প্রশ্ন করেন, এ বৈষম্যের কারণ কী। এ সময় এজলাসের ভেতরে ও বাইরে থাকা আসামিদের স্বজনরাও হইচই শুরু করেন।
শুনানি শেষে তারা সাংবাদিকদের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিনা বিচারে সাত খুন মামলায় তাদের স্বজনরা জেল খাটছে। এটা অন্যায়। সাত খুনের ঘটনায় নিজেকে জড়িত না করায় র্যাবের এক এসআইকে বন্দুক নিয়ে খুঁজেছিল তারেক সাঈদ। সে সময় ওই এসআই টয়লেটে গিয়ে নিজেকে রক্ষা করে। মন্ত্রীর জামাতা বলেই র্যাব কর্মকর্তা তারেক সাঈদ এতটা বেপরোয়া ছিল।
নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান জানান, তিনজনকে হ্যান্ডকাফ না পরানোয় আমরা আদালতে ক্ষোভ জানিয়েছি। মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনকে এখনও ভারত থেকে না আনায় অসন্তোষ প্রকাশ করে তাকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছি। অবিলম্বে এ হত্যা মামলায় চার্জশিট প্রদানের জন্য আদালতকে তাগিদ দিয়ে তিনি আরও বলেন, ১১ মাসেও চার্জশিট না দেয়ার ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে।
বুধবার র্যাবের ৩ কর্মকর্তার ফাঁসির দাবিতে আদালত প্রাঙ্গণে মিছিল করেছে নিহতের স্বজনরা। আর ১১ মে মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেছেন আদালত। ওই দিন মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিলের জন্যও মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন।
সাত খুনের ঘটনায় এ পর্যন্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ মোহাম্মাদ, মেজর (অব.) আরিফ হোসেন ও লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) এমএম রানাসহ ১৯ র্যাব সদস্য ও অন্য ১১ জন মিলে ৩০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত র্যাব সদস্যরা সবাই হত্যার সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততার বয়ান করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
এ ছাড়া আরও ১২ জন র্যাব সদস্যসহ মোট ১৭ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। গত বছরের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্র্রাহীম অপহৃত হন। পরে ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ৬ জনের ও ১ মে ১ জনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি ও চন্দন সরকারের মেয়ে-জামাতা ডা. বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে দুটি মামলা করেন।
আইনজীবী ও পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, কোনো হত্যাকাণ্ডে কারও সম্পৃক্ততার প্রাথমিক প্রমাণ পেলেই তাকে যথাযথ নিরাপত্তা-ব্যবস্থায় আদালতে আনা-নেয়া করতে হবে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেমন হবে তদন্ত কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শক্রমে তা জেলকোড অনুযায়ী নির্ধারণ করবে সংশ্লিষ্ট কারা কর্তৃপক্ষ। আবার আসামি যদি দুর্ধর্ষ হয়, তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ থাকে বা অপরাধ যদি মত্যুদণ্ডের সাজা পাওয়ার উপযুক্ত হয়, তবে ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে আনা-নেয়া করতে হবে। এমনকি লাইফ জ্যাকেট ও হেলমেটও পরাতে হবে। আর আসামির সংখ্যা বেশি হলে সাধারণত কোমরে দড়ি বেঁধেই আসামিদের আনা-নেয়া করে থাকে পুলিশ ও কারা কর্তৃপক্ষ।
এ প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি মামুনুর রশীদ মণ্ডল জানান, এর উত্তর আমার কাছে নেই। এটা কোর্ট পরিদর্শক ভালো বলতে পারবেন।
নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পরিদর্শক হাবিবুর রহমান মিয়া যুগান্তরকে জানান, ওই ৩ কর্মকর্তাকে ঢাকা ও গাজীপুর কারাগার থেকে সরাসরি কোর্টে আনা হয়। যারা সেখান থেকে তাদের এসকর্ট করে নিয়ে আসেন বা যে কারা কর্তৃপক্ষ তাদের নারায়ণগঞ্জে প্রেরণ করেন তারাই বলতে পারবেন কেন হাতকড়া ছাড়া আসামি দেয়া হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, এ নিয়ে এজলাসের মধ্যেই অন্যান্য আসামি প্রতিবাদ করেন। তারা পুলিশের বিরুদ্ধে র্যাবের ৩ কর্মকর্তাকে খাতির করার অভিযোগ এনে বলেন, তাদের কারণে আজ আমরা আসামি। তারাই এ ঘটনার নাটের গুরু। অথচ আমাদের হাতকড়া পরিয়ে, কোমড়ে দড়ি বেঁধে আদালতে আনা হয়, দাঁড়িয়ে রাখা হয় কাঠগড়ায়, তাদের হয় না। তারা প্রশ্ন করেন, এ বৈষম্যের কারণ কী। এ সময় এজলাসের ভেতরে ও বাইরে থাকা আসামিদের স্বজনরাও হইচই শুরু করেন।
শুনানি শেষে তারা সাংবাদিকদের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিনা বিচারে সাত খুন মামলায় তাদের স্বজনরা জেল খাটছে। এটা অন্যায়। সাত খুনের ঘটনায় নিজেকে জড়িত না করায় র্যাবের এক এসআইকে বন্দুক নিয়ে খুঁজেছিল তারেক সাঈদ। সে সময় ওই এসআই টয়লেটে গিয়ে নিজেকে রক্ষা করে। মন্ত্রীর জামাতা বলেই র্যাব কর্মকর্তা তারেক সাঈদ এতটা বেপরোয়া ছিল।
নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান জানান, তিনজনকে হ্যান্ডকাফ না পরানোয় আমরা আদালতে ক্ষোভ জানিয়েছি। মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনকে এখনও ভারত থেকে না আনায় অসন্তোষ প্রকাশ করে তাকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছি। অবিলম্বে এ হত্যা মামলায় চার্জশিট প্রদানের জন্য আদালতকে তাগিদ দিয়ে তিনি আরও বলেন, ১১ মাসেও চার্জশিট না দেয়ার ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে।
বুধবার র্যাবের ৩ কর্মকর্তার ফাঁসির দাবিতে আদালত প্রাঙ্গণে মিছিল করেছে নিহতের স্বজনরা। আর ১১ মে মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেছেন আদালত। ওই দিন মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিলের জন্যও মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন।
সাত খুনের ঘটনায় এ পর্যন্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ মোহাম্মাদ, মেজর (অব.) আরিফ হোসেন ও লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) এমএম রানাসহ ১৯ র্যাব সদস্য ও অন্য ১১ জন মিলে ৩০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত র্যাব সদস্যরা সবাই হত্যার সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততার বয়ান করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
এ ছাড়া আরও ১২ জন র্যাব সদস্যসহ মোট ১৭ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। গত বছরের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্র্রাহীম অপহৃত হন। পরে ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ৬ জনের ও ১ মে ১ জনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি ও চন্দন সরকারের মেয়ে-জামাতা ডা. বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে দুটি মামলা করেন।
আইনজীবী ও পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, কোনো হত্যাকাণ্ডে কারও সম্পৃক্ততার প্রাথমিক প্রমাণ পেলেই তাকে যথাযথ নিরাপত্তা-ব্যবস্থায় আদালতে আনা-নেয়া করতে হবে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেমন হবে তদন্ত কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শক্রমে তা জেলকোড অনুযায়ী নির্ধারণ করবে সংশ্লিষ্ট কারা কর্তৃপক্ষ। আবার আসামি যদি দুর্ধর্ষ হয়, তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ থাকে বা অপরাধ যদি মত্যুদণ্ডের সাজা পাওয়ার উপযুক্ত হয়, তবে ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে আনা-নেয়া করতে হবে। এমনকি লাইফ জ্যাকেট ও হেলমেটও পরাতে হবে। আর আসামির সংখ্যা বেশি হলে সাধারণত কোমরে দড়ি বেঁধেই আসামিদের আনা-নেয়া করে থাকে পুলিশ ও কারা কর্তৃপক্ষ।
No comments