এখন দরকার একটি দৃঢ়প্রত্যয়- ‘নেভার এগেইন’ by মিনার রশীদ
প্রত্যেক
কারবালা বা হলোকাস্টের পরে নতুন একটি অধ্যায় শুরু হয়। যেখানে কারবালা হয়,
যেখানে হলোকাস্ট হয় সেখানে একটি নতুন সম্ভাবনা বা নতুন অধ্যায় অবধারিত হয়ে
পড়ে।
আমাদের দেশে যা হচ্ছে তারও একটা পরিণতি বা সিকোয়েন্সিয়াল কনসিকোয়েন্স স্পষ্ট হয়ে পড়েছে। বিরোধী দলের আন্দোলনের সবচেয়ে বড় সাফল্য সরকারের শতমুখী কার্যকলাপ এবং বলদ, খাসি ও খোজা বানানো মিডিয়ার একতরফা প্রচারণার পরেও দুই মাস যাবৎ এই আন্দোলনকে অব্যাহত রাখতে পারা।
এই আন্দোলনের মুখে সরকার বাইরে থেকে একটা শক্ত ভাব প্রদর্শন করলেও ভেতরে য়ের লণটি স্পষ্ট হয়ে পড়েছে। কারণ এই শক্ত ভাবটির মধ্যেই সরকারের স্থায়িত্ব নির্ভর করছে। হজরত সুলাইমান আ: মৃত্যুর পরেও আল্লাহ ঠায় দাঁড় করিয়ে রেখেছিলেন জিন শ্রমিকদের দিয়ে হাতের কাজটি শেষ করানোর জন্য। পোকারা তার হাতের লাঠিটি খেয়ে ফেললে তিনি মাটিতে পড়ে যান এবং জিন শ্রমিকেরা বুঝতে পেরে কাজ বন্ধ করে দেয়। তত দিনে অবশ্য নির্মাণের কাজটি শেষ হয়ে গেছে।
সুলাইমান আ:-এর জিনদের দিয়ে মহৎ কাজ করানো হয়েছিল। এই সরকারের জন্য যে বদজিনরা কাজ করছে, তারাও টের পাচ্ছে না যে সরকারের কিনিক্যাল মৃত্যু হয়ে গেছে। এই সরকার মরে গেলেও একটা অপশক্তি দাঁড় করিয়ে রেখেছে প্রশাসনের মেধা, প্রজ্ঞা ও বিবেকহীন জিনদের দেখানোর জন্য। সবপর্যায়ে সেট করা মেধাহীন জিনরা আমাদের ধ্বংসের শেষ প্রান্তে নিয়ে এসেছে।
তবে যে খুঁটির ওপর ভর দিয়ে এই মরা সরকার দাঁড়িয়ে রয়েছে, তা যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। আমার মনে হচ্ছে, জাতিকে পরবর্তী প্রস্তুতি এখনই নেয়া দরকার। এটা শুধু মতায় যাওয়ার জন্য পাঞ্জাবি ইস্ত্রি করা নয় বা তার জন্য গোঁফে তেল দেয়া নয়। গত সাত-আট বছরে আমাদের রাজনীতি, অর্থনীতি, গণমাধ্যম, শিা, বিচারব্যবস্থা ও প্রশাসনসহ সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের যে ভয়াবহ তি সাধন করা হয়েছে, তার রিপিটেশন কিংবা প্রতিশোধস্পৃহা থেকে জাতিকে রা করার প্রত্যয় ঘোষণা করতে হবে।
এ জন্যই আজকের লেখার শিরোনামটি নিয়েছি নিচের বাক্যগুলো থেকে। আমি একজন চরম আশাবাদী মানুষ। আগামী কয়েকটি সংখ্যায় এই আশা ও প্রত্যয়টি নিয়ে লেখার ইচ্ছে রাখছি।
After the Holocaust, the world united behind two simple words : Never Again. These words represent a promise to past and future generations that we will do everything we can to ensure the horrors of the Holocaust are not repeated.
অর্থাৎ হলোকাস্টের পর সারা পৃথিবী দু’টি শব্দের পেছনে একত্রিত হয়েছিল- আর কখনোই নয়। এই দু’টি শব্দ অতীত এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি প্রত্যয়ের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়- হলোকাস্টের নির্মমতা যেন আবারো পুনরাবৃত্তি হতে না পারে সে জন্য সম্ভব সব কিছু করতে হবে।
আমার এই পরামর্শটি শুধু ২০ দলীয় জোটের জন্য নয়। সরকারের ভেতরে গণতান্ত্রিক শক্তির জন্যও (যারা অগণতান্ত্রিক জিন বা ইলেমেন্টের কারণে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন) এই প্রত্যয়টি ঘোষণার আহ্বান রয়েছে। পুরো জাতিকেই আজ এগিয়ে আসতে হবে। এই সরকারকে যে ভূতেরা বাঘের পিঠে চড়িয়ে দিয়েছে, জাতির সম্মিলিত প্রজ্ঞায় সেখান থেকেও নিরাপদে নামানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
শান্তির জন্য ব্রিটিশ সরকার আয়ারল্যান্ডের সশস্ত্র সংগ্রামীদের সাথে আলোচনায় বসেছে। দণি আফ্রিকার বর্ণবাদী সরকার তাদের চরম শত্রু নেলসন ম্যান্ডেলার সাথেও আলোচনায় বসেছে । যুক্তরাষ্ট্র তার পরম শত্রু তালেবানের সাথেও আলোচনায় বসেছে। এমনকি ইসরাইল সরকার পিএলওর সাথে আলোচনায় বসেছে। কিন্তু শেখ হাসিনা তার প্রতিপ তিন-তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও দুই-দুইবারের বিরোধীদলীয় নেত্রীর সাথে আলোচনায় বসতে পারছেন না।
কারণ খালেদা জিয়া জঙ্গি নেত্রী হয়ে পড়েছেন। অথচ এই তিনি নিজে শান্তিবাহিনী প্রধানের সাথেও সংলাপ করেছেন। তিনি সর্বহারাদের সাথেও সংলাপ করেছেন। যেকোনো সামরিক বা আধা সামরিক বাহিনীর বিদ্রোহের প্রথম ও একমাত্র নির্দেশটি হলোÑ সাথে সাথে পাল্টা আক্রমণ। সামরিক বিজ্ঞানের এই অলঙ্ঘনীয় নিয়মটি লঙ্ঘন করে তিনি (বিডিআরের ডিজিসহ অনেক অফিসারের নিহত হওয়ার সংবাদটি প্রকাশিত হওয়ার পরেও) বিডিআরের সেসব খুনিকে পাঁচতারা হোটেলে খানাপিনা করিয়ে সংলাপ করেছেন। সেই মারাত্মক সংলাপী শেখ হাসিনা পুরো বিশ্ব চাইলেও আজ খালেদা জিয়ার সাথে সংলাপে বসতে পারছেন না।
শেখ হাসিনা আজ যাকে জঙ্গি নেত্রী ঠাওড়াচ্ছেন, সেই জঙ্গি নেত্রীকে দেখতে গিয়েছেন বর্তমান দুনিয়ার সুপার পাওয়ারদের ষোলোজন রাষ্ট্রদূত ও কূটনৈতিক প্রতিনিধি। ক্রিকেট জগতে যেমন অনেক কিছিমের রেকর্ড থাকে, এটিও কূটনৈতিক জগতে একটি নতুন রেকর্ড। মাত্র দু’টি গাড়িতে চড়ে ষোলোজন এমন হেভিওয়েট কূটনীতিকের একজন নেত্রীর আবাসস্থলে গমন চাট্টিখানি কথা নয়। বর্তমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্বসম্প্রদায়কে এভাবে সম্পৃক্ত করতে পারাটাও ব্যক্তি বেগম জিয়ার গণতান্ত্রিক আন্দোলনের একটি বড় সাফল্য।
সেখানে গিয়ে এই কূটনীতিকেরা যে বিবৃতি দিয়েছেন, তার মর্মার্থ উপলব্ধি করতেও দেশের বলদ ও খোজামার্কা মিডিয়াগুলো ব্যর্থ হয়েছে। বিষকে যেকোনো মধুর নামেই অভিহিত করা হোক না কেন, এর ক্রিয়া বা সিকোয়েন্সিয়াল কনসিকোয়েন্স থেকে পানকারী রা পাবে না।
কূটনৈতিক ভাষায় সব সময় একটি বৈশিষ্ট্য থাকে। পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনায় নিয়ে সেই ভাষার সঠিক অর্থটি বের করতে হয়। সরকারের লাঠি অথবা গাজর (Stick or carrot) পলিসির মাধ্যমে পোষ মানানো বা নিস্তেজ করা মিডিয়া সেই মেসেজটিও ঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারেনি বা করেনি। বিশ্বসংস্থা ও বিশ্বশক্তির প্রতিনিধিরা যে স্পষ্ট বিবৃতি দিয়েছেন, তাকেও False equalization করে তার গুরুত্বকে হালকা করে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে।
দু’টি পকে আস্থা ও পারস্পরিক বিশ্বাস ফিরিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। এখন এই পারস্পরিক বিশ্বাস ও আস্থার জায়গা থেকে কোন দল কতটুকু দূরে তা স্পষ্ট করতে দ্বিধায় পড়ে গেছে আমাদের মিডিয়া। অর্থাৎ এই ষোলোজন কূটনীতিক যে তীরটি ছুড়েছেন, তা সরকারকেই বেশি ঘায়েল করেছে এই কথাটি বলতে আমাদের মিডিয়া সঙ্কোচ বোধ করছে।
আমাদের দেশের জ্ঞানীগুণী মানুষ দু’টি দলের মধ্যে এই পার্থক্যটি টানতে ভয় পেলেও গ্রামের এক অশিতি মহিলা চমৎকারভাবে তা বিশ্লেষণ করেছেন, ‘খালেদাকে তাও হিডিহাডি সরানো যায়, হাছিনাকে তাও করা যায় না।’ এই চরম সত্যটি গ্রামের সেই অশিতি মহিলাসহ (তার বক্তব্য ইউ টিউবে ছড়িয়ে আছে) বিশ্বশক্তি জেনে গেছে। আমাদের মিডিয়া জেনেও তা না জানার ভান করছে।
আমরা যদি প্রধান দু’টি দলের দিকে নির্মোহ দৃষ্টিতে তাকাই, তবে দেখতে পাবো বিএনপি মতায় থাকতে কখনোই সুধা সদনের সামনে বালু বা ময়লার ট্রাক ফেলে রাখেনি। ১৯৯৪-১৯৯৬ সালে জামায়াতকে পাশে নিয়ে তুমুল আন্দোলনের সময়েও শেখ হাসিনার বিদ্যুৎ, পানি ও টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেনি। তার বাসা বা অফিসের গেটে তালা মারেনি। তার খাবার সরবরাহ বন্ধন করা হয়নি। শেখ হাসিনা কখন কোথায় থাকবেন সেই নির্দেশও কখনোই সংসদে দাঁড়িয়ে বা অন্য কোথাও দাঁড়িয়ে খালেদা জিয়া দেননি বা তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ অন্য কোনো বড় মাপের নেতাকে রাজনৈতিক কারণে দিনের পর দিন বন্দী করে রাখা হয়নি। গাজার জন্য প্রসিদ্ধ নড়াইলের বাসিন্দা আবদুল জলীল দীর্ঘ দিন ট্রাম্পকার্ডের ভয় দেখালেও সেই ট্রাম্পকার্ড হস্তগত করার জন্য তাকে রিমান্ডে নেয়া হয়নি।
বিরোধী দলের কোনো রাজনৈতিক নেতার পায়ে কোনো দিন ডাণ্ডাবেড়ি পরানো হয়নি। রাজনৈতিক প্রতিপকে গুম বা হত্যা করা হয়নি। বাপের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য ছেলে বা মেয়েকে হত্যা করা হয়নি। পুলিশ, র্যাব, বিডিআর প্রধান বিরোধী দলের নেতাকর্মীকে কখনোই গুলির হুমকি দেয়নি। পুলিশনেতা রাজনৈতিক নেতার মতো ভাষণ দেয়নি। ক্রিমিনালদের ছেড়ে দিয়ে রাজনৈতিক প্রতিপ দিয়ে জেলখানা ভরে ফেলা হয়নি।
মিডিয়ার গলা কখনোই চেপে ধরা হয়নি। বিএনপি নেতৃত্ব বিশেষ করে তারেক রহমানের ওপর মিডিয়া নির্মম সমালোচনা করেছে। অনেক তিলকে তাল বানিয়েছে (প্রশাসনে যে জিনদের বসানো হয়েছে তাদের দিয়েও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে উত্থাপিত একটি অভিযোগও প্রমাণ করতে পারেনি)। তার পরেও প্রতিহিংসাবশত কোনো পত্রিকা বা টিভি চ্যানেল বন্ধ করা হয়নি বা মিডিয়ার জন্য বিশেষ নির্দেশনা জারি করা হয়নি। টকশোওয়ালাদের ‘টকমারানী’ বলে গালি দেয়া হয়নি। তাদের বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়নি। টকশো থেকে বের হওয়া মাত্র আক্রমণ করা হয়নি বা গ্রেফতার করা হয়নি। কাদের কাদের টকশোতে ডাকা হবে এবং টকশোর সেট কেমন হবে সেই নির্দেশ টিভি চ্যানেলগুলোকে কখনোই দেয়া হয়নি।
বিএনপির সময়ে একটি টিভি চ্যানেল বন্ধ করা হয়েছিল, তা-ও সুনির্দিষ্ট কিছু অনিয়মের কারণে। কিন্তু কোনো ভিন্নমতাবলম্বী পত্রিকার সম্পাদককে বছরের পর বছর বিনা বিচারে আটক রাখা হয়নি। কোনো টিভি চ্যানেলের মালিককে (অতীতে পর্নোগ্রাফি প্রচারের অজুহাতে) গ্রেফতার করা হয়নি।
ওপরের এই কথাগুলো যদি সত্যি মনে করেন তবে সবার মুখ খুলতে হবে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রা, প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় স্কেলটির কোন জায়গায় কার অবস্থান নির্মোহভাবে তা বলে দিতে হবে। দুই দলই খারাপ বললে চলবে না, কে কতটুকু খারাপ তা বলতে হবে।
সাদাকে সাদা কালোকে কালো বলার সাহস রাখতে হবে। তা না হলে যে খাদে এসে পড়েছি, সেই খাদ থেকে বের হতে পারব না।
বিএনপি নিজের দলের সন্ত্রাসীকে র্যাব দিয়ে ক্রসফায়ারে দিয়েছে কিন্তু কখনোই বিরোধী দলের কোনো নেতা বা কর্মীকে শুধু রাজনৈতিক বিশ্বাসের কারণে ক্রসফায়ারে দেয়নি। বিএনপির সময়ে র্যাব এ কারণেই দেশের মানুষের আস্থা অর্জন করেছিল। যদিও এভাবে বিনাবিচারে মানুষ মারার মূল ভাবনাটি (অপরাধী হলেও) কখনোই বিতর্কের ঊর্ধ্বে ছিল না।
কাজেই সেই বিএনপি নেতৃত্ব যদি বলেন যে, আমরা প্রতিহিংসাবশত এই সরকারের কাজগুলোর পুনরাবৃত্তি করব না, তবে সহজেই এ দেশের জনগণ ও বিশ্বসংস্থাগুলো তাদের কথায় আস্থা স্থাপন করতে পারবে।
আজ এই কথাগুলো আরো স্পষ্ট করে বিএনপি নেতৃত্বকে বলে যেতে হবে। গতবার রাষ্ট্র পরিচালনায় তাদের যে ভুলত্রুটি হয়েছিল, তারও একটি সঠিক ও পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা করতে হবে এবং বিএনপি নেতৃত্বের এই উপলব্ধি জনগণের গোচরে বা অনুভবে আনতে হবে। কারেক্টিভ অ্যাকশনগুলোও স্পষ্ট করতে হবে। ইতোমধ্যে এ জাতির অনেক সময় ও শক্তি নষ্ট হয়েছে। আর সময় নষ্ট করা যাবে না।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও বর্তমান সরকার বিএনপির বেশ কয়েকটি উপকার করে দিয়েছে। এখন কে সুহৃদ আর কে সুযোগসন্ধানী সেটা নির্ণয়ের ফর্মুলা বের করা বিএনপির জন্য অনেক সহজ হয়েছে। স্বাধীনতার পরে অনেকটা সময় ধরে মতায় থাকায় এই কাজটি বিএনপির জন্য কঠিন হয়ে পড়েছিল।
আরেকটি উপকার বিএনপির করেছে, তা হয়তো আওয়ামী লীগ কল্পনাতেও টানতে পারবে না। আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এক ডজন (বিনা মেহনতি) ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এই এক ডজন ডক্টরেট ডিগ্রিলব্ধ আত্মবিশ্বাস তাকে নোবেল প্রাইজের দিকে দৃষ্টি ফেলতে প্রলুব্ধ করে। মনে হয় অনেক চেষ্টা তদবির করা হয়েছে। তার জন্য সৈয়দ আশরাফরা যে অনেক কিছু খেয়েছেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ ডক্টর ইউনূস নাকি একই জিনিস খেয়ে এই পুরস্কারটি কব্জা করেছেন। নোবেল প্রাইজের এই গোপন রহস্যটিও সৈয়দ বংশের সন্তান ও ব্রাহ্মণ ঘরের জামাই ঠিক সময়ে জেনে গিয়েছিলেন; কিন্তু কাজ হয়নি।
শেষমেশ আঙুর ফল টক বলে নিজেরা সান্ত্বনা নিলেও দেশের একমাত্র নোবেল লরিয়েটকে শান্তিতে থাকতে দেননি।
নিজের জন্য যা পারেননি, আমার কেন যেন মনে হচ্ছে তা চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর জন্য অনেকটাই ব্যবস্থা করে ফেলেছেন। কারণ ভাই এরশাদের নয় বছর, পিসতুত ভাই উদ্দীনদের দুই বছর আর নিজের ছয় বছরের ওপরে স্বৈরশাসন একজন নেত্রীকে গণতন্ত্রের সংগ্রামে বিশ্বের প্রথম কাতারে ঠেলে দিয়েছে। অং সান সু চির চেয়েও তার এই সংগ্রাম কোনো ক্রমেই কম সমস্যাসঙ্কুল নয় । ব্যক্তিগত ত্যাগ ও ট্র্যাজেডিও কম নয়।
গণতান্ত্রিক ও শান্তিকামী বিশ্বের মনোযোগটি তার ওপর কেমন পড়েছে তাও বিশ্বসংস্থা ও বিশ্বশক্তির ইদানীংকালের নড়াচড়ায় তা স্পষ্ট হয়েছে। তার সব কিছুই রেকর্ড হচ্ছে। চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট থেকে সাংবাদিক হওয়া শফিক রেহমান একজন স্থপতির চেয়েও দ হাতে গণতন্ত্রের জন্য বেগম জিয়ার কষ্টের ম্যাপ তুলে ধরেছেন। তার সেই লেখায় কোনো মেদ বা তেল নেই। আছে শুধু মাপজোখ আর পরিসংখ্যান। যে মাপজোখ আর পরিসংখ্যান বিশ্বনেতাদের খুব প্রিয়।
কাজেই এক ইউনূসের নোবেল যতটুকু মনোকষ্টে ফেলেছে, সেখানে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী অগত্যা আরেকটি পেয়ে গেলে সৈয়দ আশরাফদের বাকি জীবন ঘোরের ওপরই কাটাতে হবে।
পুরো লেখাটি যদি এদের চোখ না খোলে, তবে নিচের চুটকিটি খুলতে পারে। ঢাকার মিরপুরের এক সাবেক এমপি। খুব ছোট পজিশন থেকে আজ এত বড় হয়েছেন। তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের উদ্দেশ করে একটি কথা প্রায়ই বলেন, ‘আবি দেখ, আল্লাহ যদি চুলে ধইরা আমাকে উপরে টাইন্যা তুলতে চায়, তোরা আমারে পায়ে ধইরা টাইন্যা নিচে নামাইতে পারবি না।’
minarrashid@yahoo.com
আমাদের দেশে যা হচ্ছে তারও একটা পরিণতি বা সিকোয়েন্সিয়াল কনসিকোয়েন্স স্পষ্ট হয়ে পড়েছে। বিরোধী দলের আন্দোলনের সবচেয়ে বড় সাফল্য সরকারের শতমুখী কার্যকলাপ এবং বলদ, খাসি ও খোজা বানানো মিডিয়ার একতরফা প্রচারণার পরেও দুই মাস যাবৎ এই আন্দোলনকে অব্যাহত রাখতে পারা।
এই আন্দোলনের মুখে সরকার বাইরে থেকে একটা শক্ত ভাব প্রদর্শন করলেও ভেতরে য়ের লণটি স্পষ্ট হয়ে পড়েছে। কারণ এই শক্ত ভাবটির মধ্যেই সরকারের স্থায়িত্ব নির্ভর করছে। হজরত সুলাইমান আ: মৃত্যুর পরেও আল্লাহ ঠায় দাঁড় করিয়ে রেখেছিলেন জিন শ্রমিকদের দিয়ে হাতের কাজটি শেষ করানোর জন্য। পোকারা তার হাতের লাঠিটি খেয়ে ফেললে তিনি মাটিতে পড়ে যান এবং জিন শ্রমিকেরা বুঝতে পেরে কাজ বন্ধ করে দেয়। তত দিনে অবশ্য নির্মাণের কাজটি শেষ হয়ে গেছে।
সুলাইমান আ:-এর জিনদের দিয়ে মহৎ কাজ করানো হয়েছিল। এই সরকারের জন্য যে বদজিনরা কাজ করছে, তারাও টের পাচ্ছে না যে সরকারের কিনিক্যাল মৃত্যু হয়ে গেছে। এই সরকার মরে গেলেও একটা অপশক্তি দাঁড় করিয়ে রেখেছে প্রশাসনের মেধা, প্রজ্ঞা ও বিবেকহীন জিনদের দেখানোর জন্য। সবপর্যায়ে সেট করা মেধাহীন জিনরা আমাদের ধ্বংসের শেষ প্রান্তে নিয়ে এসেছে।
তবে যে খুঁটির ওপর ভর দিয়ে এই মরা সরকার দাঁড়িয়ে রয়েছে, তা যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। আমার মনে হচ্ছে, জাতিকে পরবর্তী প্রস্তুতি এখনই নেয়া দরকার। এটা শুধু মতায় যাওয়ার জন্য পাঞ্জাবি ইস্ত্রি করা নয় বা তার জন্য গোঁফে তেল দেয়া নয়। গত সাত-আট বছরে আমাদের রাজনীতি, অর্থনীতি, গণমাধ্যম, শিা, বিচারব্যবস্থা ও প্রশাসনসহ সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের যে ভয়াবহ তি সাধন করা হয়েছে, তার রিপিটেশন কিংবা প্রতিশোধস্পৃহা থেকে জাতিকে রা করার প্রত্যয় ঘোষণা করতে হবে।
এ জন্যই আজকের লেখার শিরোনামটি নিয়েছি নিচের বাক্যগুলো থেকে। আমি একজন চরম আশাবাদী মানুষ। আগামী কয়েকটি সংখ্যায় এই আশা ও প্রত্যয়টি নিয়ে লেখার ইচ্ছে রাখছি।
After the Holocaust, the world united behind two simple words : Never Again. These words represent a promise to past and future generations that we will do everything we can to ensure the horrors of the Holocaust are not repeated.
অর্থাৎ হলোকাস্টের পর সারা পৃথিবী দু’টি শব্দের পেছনে একত্রিত হয়েছিল- আর কখনোই নয়। এই দু’টি শব্দ অতীত এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি প্রত্যয়ের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়- হলোকাস্টের নির্মমতা যেন আবারো পুনরাবৃত্তি হতে না পারে সে জন্য সম্ভব সব কিছু করতে হবে।
আমার এই পরামর্শটি শুধু ২০ দলীয় জোটের জন্য নয়। সরকারের ভেতরে গণতান্ত্রিক শক্তির জন্যও (যারা অগণতান্ত্রিক জিন বা ইলেমেন্টের কারণে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন) এই প্রত্যয়টি ঘোষণার আহ্বান রয়েছে। পুরো জাতিকেই আজ এগিয়ে আসতে হবে। এই সরকারকে যে ভূতেরা বাঘের পিঠে চড়িয়ে দিয়েছে, জাতির সম্মিলিত প্রজ্ঞায় সেখান থেকেও নিরাপদে নামানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
শান্তির জন্য ব্রিটিশ সরকার আয়ারল্যান্ডের সশস্ত্র সংগ্রামীদের সাথে আলোচনায় বসেছে। দণি আফ্রিকার বর্ণবাদী সরকার তাদের চরম শত্রু নেলসন ম্যান্ডেলার সাথেও আলোচনায় বসেছে । যুক্তরাষ্ট্র তার পরম শত্রু তালেবানের সাথেও আলোচনায় বসেছে। এমনকি ইসরাইল সরকার পিএলওর সাথে আলোচনায় বসেছে। কিন্তু শেখ হাসিনা তার প্রতিপ তিন-তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও দুই-দুইবারের বিরোধীদলীয় নেত্রীর সাথে আলোচনায় বসতে পারছেন না।
কারণ খালেদা জিয়া জঙ্গি নেত্রী হয়ে পড়েছেন। অথচ এই তিনি নিজে শান্তিবাহিনী প্রধানের সাথেও সংলাপ করেছেন। তিনি সর্বহারাদের সাথেও সংলাপ করেছেন। যেকোনো সামরিক বা আধা সামরিক বাহিনীর বিদ্রোহের প্রথম ও একমাত্র নির্দেশটি হলোÑ সাথে সাথে পাল্টা আক্রমণ। সামরিক বিজ্ঞানের এই অলঙ্ঘনীয় নিয়মটি লঙ্ঘন করে তিনি (বিডিআরের ডিজিসহ অনেক অফিসারের নিহত হওয়ার সংবাদটি প্রকাশিত হওয়ার পরেও) বিডিআরের সেসব খুনিকে পাঁচতারা হোটেলে খানাপিনা করিয়ে সংলাপ করেছেন। সেই মারাত্মক সংলাপী শেখ হাসিনা পুরো বিশ্ব চাইলেও আজ খালেদা জিয়ার সাথে সংলাপে বসতে পারছেন না।
শেখ হাসিনা আজ যাকে জঙ্গি নেত্রী ঠাওড়াচ্ছেন, সেই জঙ্গি নেত্রীকে দেখতে গিয়েছেন বর্তমান দুনিয়ার সুপার পাওয়ারদের ষোলোজন রাষ্ট্রদূত ও কূটনৈতিক প্রতিনিধি। ক্রিকেট জগতে যেমন অনেক কিছিমের রেকর্ড থাকে, এটিও কূটনৈতিক জগতে একটি নতুন রেকর্ড। মাত্র দু’টি গাড়িতে চড়ে ষোলোজন এমন হেভিওয়েট কূটনীতিকের একজন নেত্রীর আবাসস্থলে গমন চাট্টিখানি কথা নয়। বর্তমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্বসম্প্রদায়কে এভাবে সম্পৃক্ত করতে পারাটাও ব্যক্তি বেগম জিয়ার গণতান্ত্রিক আন্দোলনের একটি বড় সাফল্য।
সেখানে গিয়ে এই কূটনীতিকেরা যে বিবৃতি দিয়েছেন, তার মর্মার্থ উপলব্ধি করতেও দেশের বলদ ও খোজামার্কা মিডিয়াগুলো ব্যর্থ হয়েছে। বিষকে যেকোনো মধুর নামেই অভিহিত করা হোক না কেন, এর ক্রিয়া বা সিকোয়েন্সিয়াল কনসিকোয়েন্স থেকে পানকারী রা পাবে না।
কূটনৈতিক ভাষায় সব সময় একটি বৈশিষ্ট্য থাকে। পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনায় নিয়ে সেই ভাষার সঠিক অর্থটি বের করতে হয়। সরকারের লাঠি অথবা গাজর (Stick or carrot) পলিসির মাধ্যমে পোষ মানানো বা নিস্তেজ করা মিডিয়া সেই মেসেজটিও ঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারেনি বা করেনি। বিশ্বসংস্থা ও বিশ্বশক্তির প্রতিনিধিরা যে স্পষ্ট বিবৃতি দিয়েছেন, তাকেও False equalization করে তার গুরুত্বকে হালকা করে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে।
দু’টি পকে আস্থা ও পারস্পরিক বিশ্বাস ফিরিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। এখন এই পারস্পরিক বিশ্বাস ও আস্থার জায়গা থেকে কোন দল কতটুকু দূরে তা স্পষ্ট করতে দ্বিধায় পড়ে গেছে আমাদের মিডিয়া। অর্থাৎ এই ষোলোজন কূটনীতিক যে তীরটি ছুড়েছেন, তা সরকারকেই বেশি ঘায়েল করেছে এই কথাটি বলতে আমাদের মিডিয়া সঙ্কোচ বোধ করছে।
আমাদের দেশের জ্ঞানীগুণী মানুষ দু’টি দলের মধ্যে এই পার্থক্যটি টানতে ভয় পেলেও গ্রামের এক অশিতি মহিলা চমৎকারভাবে তা বিশ্লেষণ করেছেন, ‘খালেদাকে তাও হিডিহাডি সরানো যায়, হাছিনাকে তাও করা যায় না।’ এই চরম সত্যটি গ্রামের সেই অশিতি মহিলাসহ (তার বক্তব্য ইউ টিউবে ছড়িয়ে আছে) বিশ্বশক্তি জেনে গেছে। আমাদের মিডিয়া জেনেও তা না জানার ভান করছে।
আমরা যদি প্রধান দু’টি দলের দিকে নির্মোহ দৃষ্টিতে তাকাই, তবে দেখতে পাবো বিএনপি মতায় থাকতে কখনোই সুধা সদনের সামনে বালু বা ময়লার ট্রাক ফেলে রাখেনি। ১৯৯৪-১৯৯৬ সালে জামায়াতকে পাশে নিয়ে তুমুল আন্দোলনের সময়েও শেখ হাসিনার বিদ্যুৎ, পানি ও টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেনি। তার বাসা বা অফিসের গেটে তালা মারেনি। তার খাবার সরবরাহ বন্ধন করা হয়নি। শেখ হাসিনা কখন কোথায় থাকবেন সেই নির্দেশও কখনোই সংসদে দাঁড়িয়ে বা অন্য কোথাও দাঁড়িয়ে খালেদা জিয়া দেননি বা তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ অন্য কোনো বড় মাপের নেতাকে রাজনৈতিক কারণে দিনের পর দিন বন্দী করে রাখা হয়নি। গাজার জন্য প্রসিদ্ধ নড়াইলের বাসিন্দা আবদুল জলীল দীর্ঘ দিন ট্রাম্পকার্ডের ভয় দেখালেও সেই ট্রাম্পকার্ড হস্তগত করার জন্য তাকে রিমান্ডে নেয়া হয়নি।
বিরোধী দলের কোনো রাজনৈতিক নেতার পায়ে কোনো দিন ডাণ্ডাবেড়ি পরানো হয়নি। রাজনৈতিক প্রতিপকে গুম বা হত্যা করা হয়নি। বাপের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য ছেলে বা মেয়েকে হত্যা করা হয়নি। পুলিশ, র্যাব, বিডিআর প্রধান বিরোধী দলের নেতাকর্মীকে কখনোই গুলির হুমকি দেয়নি। পুলিশনেতা রাজনৈতিক নেতার মতো ভাষণ দেয়নি। ক্রিমিনালদের ছেড়ে দিয়ে রাজনৈতিক প্রতিপ দিয়ে জেলখানা ভরে ফেলা হয়নি।
মিডিয়ার গলা কখনোই চেপে ধরা হয়নি। বিএনপি নেতৃত্ব বিশেষ করে তারেক রহমানের ওপর মিডিয়া নির্মম সমালোচনা করেছে। অনেক তিলকে তাল বানিয়েছে (প্রশাসনে যে জিনদের বসানো হয়েছে তাদের দিয়েও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে উত্থাপিত একটি অভিযোগও প্রমাণ করতে পারেনি)। তার পরেও প্রতিহিংসাবশত কোনো পত্রিকা বা টিভি চ্যানেল বন্ধ করা হয়নি বা মিডিয়ার জন্য বিশেষ নির্দেশনা জারি করা হয়নি। টকশোওয়ালাদের ‘টকমারানী’ বলে গালি দেয়া হয়নি। তাদের বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়নি। টকশো থেকে বের হওয়া মাত্র আক্রমণ করা হয়নি বা গ্রেফতার করা হয়নি। কাদের কাদের টকশোতে ডাকা হবে এবং টকশোর সেট কেমন হবে সেই নির্দেশ টিভি চ্যানেলগুলোকে কখনোই দেয়া হয়নি।
বিএনপির সময়ে একটি টিভি চ্যানেল বন্ধ করা হয়েছিল, তা-ও সুনির্দিষ্ট কিছু অনিয়মের কারণে। কিন্তু কোনো ভিন্নমতাবলম্বী পত্রিকার সম্পাদককে বছরের পর বছর বিনা বিচারে আটক রাখা হয়নি। কোনো টিভি চ্যানেলের মালিককে (অতীতে পর্নোগ্রাফি প্রচারের অজুহাতে) গ্রেফতার করা হয়নি।
ওপরের এই কথাগুলো যদি সত্যি মনে করেন তবে সবার মুখ খুলতে হবে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রা, প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় স্কেলটির কোন জায়গায় কার অবস্থান নির্মোহভাবে তা বলে দিতে হবে। দুই দলই খারাপ বললে চলবে না, কে কতটুকু খারাপ তা বলতে হবে।
সাদাকে সাদা কালোকে কালো বলার সাহস রাখতে হবে। তা না হলে যে খাদে এসে পড়েছি, সেই খাদ থেকে বের হতে পারব না।
বিএনপি নিজের দলের সন্ত্রাসীকে র্যাব দিয়ে ক্রসফায়ারে দিয়েছে কিন্তু কখনোই বিরোধী দলের কোনো নেতা বা কর্মীকে শুধু রাজনৈতিক বিশ্বাসের কারণে ক্রসফায়ারে দেয়নি। বিএনপির সময়ে র্যাব এ কারণেই দেশের মানুষের আস্থা অর্জন করেছিল। যদিও এভাবে বিনাবিচারে মানুষ মারার মূল ভাবনাটি (অপরাধী হলেও) কখনোই বিতর্কের ঊর্ধ্বে ছিল না।
কাজেই সেই বিএনপি নেতৃত্ব যদি বলেন যে, আমরা প্রতিহিংসাবশত এই সরকারের কাজগুলোর পুনরাবৃত্তি করব না, তবে সহজেই এ দেশের জনগণ ও বিশ্বসংস্থাগুলো তাদের কথায় আস্থা স্থাপন করতে পারবে।
আজ এই কথাগুলো আরো স্পষ্ট করে বিএনপি নেতৃত্বকে বলে যেতে হবে। গতবার রাষ্ট্র পরিচালনায় তাদের যে ভুলত্রুটি হয়েছিল, তারও একটি সঠিক ও পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা করতে হবে এবং বিএনপি নেতৃত্বের এই উপলব্ধি জনগণের গোচরে বা অনুভবে আনতে হবে। কারেক্টিভ অ্যাকশনগুলোও স্পষ্ট করতে হবে। ইতোমধ্যে এ জাতির অনেক সময় ও শক্তি নষ্ট হয়েছে। আর সময় নষ্ট করা যাবে না।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও বর্তমান সরকার বিএনপির বেশ কয়েকটি উপকার করে দিয়েছে। এখন কে সুহৃদ আর কে সুযোগসন্ধানী সেটা নির্ণয়ের ফর্মুলা বের করা বিএনপির জন্য অনেক সহজ হয়েছে। স্বাধীনতার পরে অনেকটা সময় ধরে মতায় থাকায় এই কাজটি বিএনপির জন্য কঠিন হয়ে পড়েছিল।
আরেকটি উপকার বিএনপির করেছে, তা হয়তো আওয়ামী লীগ কল্পনাতেও টানতে পারবে না। আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এক ডজন (বিনা মেহনতি) ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এই এক ডজন ডক্টরেট ডিগ্রিলব্ধ আত্মবিশ্বাস তাকে নোবেল প্রাইজের দিকে দৃষ্টি ফেলতে প্রলুব্ধ করে। মনে হয় অনেক চেষ্টা তদবির করা হয়েছে। তার জন্য সৈয়দ আশরাফরা যে অনেক কিছু খেয়েছেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ ডক্টর ইউনূস নাকি একই জিনিস খেয়ে এই পুরস্কারটি কব্জা করেছেন। নোবেল প্রাইজের এই গোপন রহস্যটিও সৈয়দ বংশের সন্তান ও ব্রাহ্মণ ঘরের জামাই ঠিক সময়ে জেনে গিয়েছিলেন; কিন্তু কাজ হয়নি।
শেষমেশ আঙুর ফল টক বলে নিজেরা সান্ত্বনা নিলেও দেশের একমাত্র নোবেল লরিয়েটকে শান্তিতে থাকতে দেননি।
নিজের জন্য যা পারেননি, আমার কেন যেন মনে হচ্ছে তা চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর জন্য অনেকটাই ব্যবস্থা করে ফেলেছেন। কারণ ভাই এরশাদের নয় বছর, পিসতুত ভাই উদ্দীনদের দুই বছর আর নিজের ছয় বছরের ওপরে স্বৈরশাসন একজন নেত্রীকে গণতন্ত্রের সংগ্রামে বিশ্বের প্রথম কাতারে ঠেলে দিয়েছে। অং সান সু চির চেয়েও তার এই সংগ্রাম কোনো ক্রমেই কম সমস্যাসঙ্কুল নয় । ব্যক্তিগত ত্যাগ ও ট্র্যাজেডিও কম নয়।
গণতান্ত্রিক ও শান্তিকামী বিশ্বের মনোযোগটি তার ওপর কেমন পড়েছে তাও বিশ্বসংস্থা ও বিশ্বশক্তির ইদানীংকালের নড়াচড়ায় তা স্পষ্ট হয়েছে। তার সব কিছুই রেকর্ড হচ্ছে। চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট থেকে সাংবাদিক হওয়া শফিক রেহমান একজন স্থপতির চেয়েও দ হাতে গণতন্ত্রের জন্য বেগম জিয়ার কষ্টের ম্যাপ তুলে ধরেছেন। তার সেই লেখায় কোনো মেদ বা তেল নেই। আছে শুধু মাপজোখ আর পরিসংখ্যান। যে মাপজোখ আর পরিসংখ্যান বিশ্বনেতাদের খুব প্রিয়।
কাজেই এক ইউনূসের নোবেল যতটুকু মনোকষ্টে ফেলেছে, সেখানে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী অগত্যা আরেকটি পেয়ে গেলে সৈয়দ আশরাফদের বাকি জীবন ঘোরের ওপরই কাটাতে হবে।
পুরো লেখাটি যদি এদের চোখ না খোলে, তবে নিচের চুটকিটি খুলতে পারে। ঢাকার মিরপুরের এক সাবেক এমপি। খুব ছোট পজিশন থেকে আজ এত বড় হয়েছেন। তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের উদ্দেশ করে একটি কথা প্রায়ই বলেন, ‘আবি দেখ, আল্লাহ যদি চুলে ধইরা আমাকে উপরে টাইন্যা তুলতে চায়, তোরা আমারে পায়ে ধইরা টাইন্যা নিচে নামাইতে পারবি না।’
minarrashid@yahoo.com
No comments