সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য -১৭৫ by ড. একেএম শাহনাওয়াজ
চট্টগ্রামে সরকারি অস্ত্রাগার লুণ্ঠন ছিল
বিপ্লবীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযান। ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল এই সফল
আক্রমণের মধ্য দিয়ে বিপ্লবীরা প্রচুর অস্ত্র সংগ্রহ করেন। এই আক্রমণের নেতা
ছিলেন সূর্যসেন। স্থানীয় ন্যাশনাল ইন্সটিটিউটের শিক্ষক ছিলেন বলে সূর্যসেন
মাস্টারদা নামে সুপরিচিত। এর পর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আক্রমণ পরিচালিত হয়
১৯৩২ সালে। চট্টগ্রামের পাহাড়তলী রেলওয়ে ক্লাবে বিপ্লবী কর্মী প্রীতিলতা
ওয়াদ্দেদারের নেতৃত্বে আক্রমণ পরিচালিত হয়। চট্টগ্রামের পুলিশ ইন্সপেক্টর
খান বাহাদুর আহসানউল্লাহকেও হত্যা করে বিপ্লবীরা। চট্টগ্রামে অস্ত্রাগার
লুণ্ঠনের সঙ্গে যুক্ত অধিকাংশ বিপ্লবী পরে ধরা পড়েছিলেন। বিচারে সূর্যসেনের
ফাঁসি হয়। প্রচণ্ড দমন অভিযানের মধ্য দিয়ে ১৯৩০ সালে সশস্ত্র বিপ্লবী
আন্দোলনের অবসান ঘটে।
বাংলাদেশের সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার কারণগুলো পরীক্ষা করা যেতে পারে। আত্মগোপন করে আন্দোলন চালানো হতো বলে বিপ্লবী আন্দোলন জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। বিপ্লবের ব্যাপারে ধারণা স্বচ্ছ না থাকায় সাধারণ মানুষের সার্বিক সহযোগিতা লাভ করতে পারেননি বিপ্লবীরা। বাংলার বৃহত্তর মুসলিম জনগোষ্ঠীর কাছে এ আন্দোলন গণআন্দোলন না হয়ে হিন্দুর আন্দোলন হিসেবে চিহ্নিত হতে থাকে। বিপ্লবীদের বাধ্যতামূলকভাবে অনেক হিন্দু আচার-অনুষ্ঠান করতে হতো। ফলে এতে মুসলমানদের যোগ দেয়া খুব সহজ ছিল না। বিচ্ছিন্নভাবে নানা জেলায় গোপন সমিতি গঠিত হলেও এগুলোর মধ্যে সমন্বয় ছিল না। তাই তারা সুসংগঠিত তৎপরতা চালাতে পারেননি। এছাড়াও বিভিন্ন গোষ্ঠীর নেতাদের মধ্যে আদর্শগত ধারণা ও মতপার্থক্য ছিল। এ বিষয়গুলো আন্দোলনকে দুর্বল করে দেয়।
বিপ্লবীদের ওপর সরকারের কঠোর দমননীতি ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। এতে বিপ্লবীরা ধীরে ধীরে কোণঠাসা হয়ে পড়েন। এ সময়ে বাংলায় নতুন রাজনৈতিক মতবাদ সাম্যবাদ বা কম্যুনিজম প্রবেশ করে। অনেক বিপ্লবী নেতা বিকল্প হিসেবে এই নতুন মতাদর্শে নিজেদের জড়িয়ে ফেলতে থাকেন। এভাবেই ব্যর্থ হয়ে যায় সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন।
স্বরাজ ও বেঙ্গল প্যাক্ট : অসহযোগ আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পর কংগ্রেস নেতা চিত্তরঞ্জন দাস ও পণ্ডিত মতিলাল নেহেরুর নেতৃত্বে ভারতীয় কংগ্রেসের একাংশ আইনসভায় যোগদানের চিন্তাভাবনা করেন। ১৯২২ সালের ডিসেম্বরে গয়ায় কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। অধিবেশনের পর চিত্তরঞ্জন দাস কংগ্রেসের সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং কিছুসংখ্যক অনুসারী নিয়ে স্বরাজ্য পার্টি নামে একটি দল গঠন করেন। এ দলের উদ্যোগে পরবর্তী সময়ে হিন্দু-মুসলিম ঐক্য জোরদার করার জন্য বাংলায় একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়, যা বেঙ্গল প্যাক্ট নামে সুপরিচিত।
স্বরাজ্য পার্টি ও স্বরাজ : সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা নয়, দলীয় কর্মসূচির মধ্য দিয়ে একটি পরিবর্তন আনার লক্ষ্যেই স্বরাজ্য পার্টি গঠিত হয়েছিল। এ দলের লক্ষ্য ছিল বাঙালির স্বশাসন প্রতিষ্ঠা। তাই স্বরাজ্য পার্টির উদ্দেশ্য বিবেচনায় এর কর্মভূমিকা স্বরাজ নামে পরিচিত।
দল গঠিত হওয়ার পর ১৯২৩ সালের বঙ্গীয় আইনসভার নির্বাচনে স্বরাজ্য পার্টি অংশগ্রহণ করে উল্লেখযোগ্য সাফল্য লাভ করেছিল। এ নির্বাচনে প্রাদেশিক পরিষদের ১৩৯টি আসনের মধ্যে ৪৬টি আসন লাভ করে স্বরাজ্য দল। বাংলার গভর্নর লর্ড লিটন স্বরাজ্য পার্টিকে মন্ত্রিসভা গঠনের আহ্বান জানালে সিআর দাস তা প্রত্যাখ্যান করেন।
স্বরাজ্য পার্টি কতগুলো কর্মসূচি সামনে নিয়ে রাজনৈতিক তৎপরতা শুরু করে। এগুলো হচ্ছে- ১. আইনসভায় সরকারি কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করা এবং ১৯১৯ সালের সরকারি সংস্কার কার্যকর করতে না দেয়া; ২. দলীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার শক্তিতে বাজেট প্রত্যাখ্যান করা এবং মন্ত্রিসভার পতন ঘটানো; ৩. জাতীয়তাবাদী চেতনা স্পষ্ট করার লক্ষ্যে আইনসভায় বিভিন্ন প্রস্তাব ও বিল উত্থাপন করা; ৪. ইংরেজ শাসকদের জন্য এ দেশ শাসন করার পথ জটিল করে তোলা। এসব কর্মসূচির মধ্য দিয়ে স্বরাজ্য দল ১৯১৯ সালের সংস্কার কর্মসূচি অকার্যকর করে স্বায়ত্তশাসনের পথ প্রশস্ত করতে চেয়েছিল।
বাংলাদেশের সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার কারণগুলো পরীক্ষা করা যেতে পারে। আত্মগোপন করে আন্দোলন চালানো হতো বলে বিপ্লবী আন্দোলন জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। বিপ্লবের ব্যাপারে ধারণা স্বচ্ছ না থাকায় সাধারণ মানুষের সার্বিক সহযোগিতা লাভ করতে পারেননি বিপ্লবীরা। বাংলার বৃহত্তর মুসলিম জনগোষ্ঠীর কাছে এ আন্দোলন গণআন্দোলন না হয়ে হিন্দুর আন্দোলন হিসেবে চিহ্নিত হতে থাকে। বিপ্লবীদের বাধ্যতামূলকভাবে অনেক হিন্দু আচার-অনুষ্ঠান করতে হতো। ফলে এতে মুসলমানদের যোগ দেয়া খুব সহজ ছিল না। বিচ্ছিন্নভাবে নানা জেলায় গোপন সমিতি গঠিত হলেও এগুলোর মধ্যে সমন্বয় ছিল না। তাই তারা সুসংগঠিত তৎপরতা চালাতে পারেননি। এছাড়াও বিভিন্ন গোষ্ঠীর নেতাদের মধ্যে আদর্শগত ধারণা ও মতপার্থক্য ছিল। এ বিষয়গুলো আন্দোলনকে দুর্বল করে দেয়।
বিপ্লবীদের ওপর সরকারের কঠোর দমননীতি ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। এতে বিপ্লবীরা ধীরে ধীরে কোণঠাসা হয়ে পড়েন। এ সময়ে বাংলায় নতুন রাজনৈতিক মতবাদ সাম্যবাদ বা কম্যুনিজম প্রবেশ করে। অনেক বিপ্লবী নেতা বিকল্প হিসেবে এই নতুন মতাদর্শে নিজেদের জড়িয়ে ফেলতে থাকেন। এভাবেই ব্যর্থ হয়ে যায় সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন।
স্বরাজ ও বেঙ্গল প্যাক্ট : অসহযোগ আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পর কংগ্রেস নেতা চিত্তরঞ্জন দাস ও পণ্ডিত মতিলাল নেহেরুর নেতৃত্বে ভারতীয় কংগ্রেসের একাংশ আইনসভায় যোগদানের চিন্তাভাবনা করেন। ১৯২২ সালের ডিসেম্বরে গয়ায় কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। অধিবেশনের পর চিত্তরঞ্জন দাস কংগ্রেসের সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং কিছুসংখ্যক অনুসারী নিয়ে স্বরাজ্য পার্টি নামে একটি দল গঠন করেন। এ দলের উদ্যোগে পরবর্তী সময়ে হিন্দু-মুসলিম ঐক্য জোরদার করার জন্য বাংলায় একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়, যা বেঙ্গল প্যাক্ট নামে সুপরিচিত।
স্বরাজ্য পার্টি ও স্বরাজ : সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা নয়, দলীয় কর্মসূচির মধ্য দিয়ে একটি পরিবর্তন আনার লক্ষ্যেই স্বরাজ্য পার্টি গঠিত হয়েছিল। এ দলের লক্ষ্য ছিল বাঙালির স্বশাসন প্রতিষ্ঠা। তাই স্বরাজ্য পার্টির উদ্দেশ্য বিবেচনায় এর কর্মভূমিকা স্বরাজ নামে পরিচিত।
দল গঠিত হওয়ার পর ১৯২৩ সালের বঙ্গীয় আইনসভার নির্বাচনে স্বরাজ্য পার্টি অংশগ্রহণ করে উল্লেখযোগ্য সাফল্য লাভ করেছিল। এ নির্বাচনে প্রাদেশিক পরিষদের ১৩৯টি আসনের মধ্যে ৪৬টি আসন লাভ করে স্বরাজ্য দল। বাংলার গভর্নর লর্ড লিটন স্বরাজ্য পার্টিকে মন্ত্রিসভা গঠনের আহ্বান জানালে সিআর দাস তা প্রত্যাখ্যান করেন।
স্বরাজ্য পার্টি কতগুলো কর্মসূচি সামনে নিয়ে রাজনৈতিক তৎপরতা শুরু করে। এগুলো হচ্ছে- ১. আইনসভায় সরকারি কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করা এবং ১৯১৯ সালের সরকারি সংস্কার কার্যকর করতে না দেয়া; ২. দলীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার শক্তিতে বাজেট প্রত্যাখ্যান করা এবং মন্ত্রিসভার পতন ঘটানো; ৩. জাতীয়তাবাদী চেতনা স্পষ্ট করার লক্ষ্যে আইনসভায় বিভিন্ন প্রস্তাব ও বিল উত্থাপন করা; ৪. ইংরেজ শাসকদের জন্য এ দেশ শাসন করার পথ জটিল করে তোলা। এসব কর্মসূচির মধ্য দিয়ে স্বরাজ্য দল ১৯১৯ সালের সংস্কার কর্মসূচি অকার্যকর করে স্বায়ত্তশাসনের পথ প্রশস্ত করতে চেয়েছিল।
No comments