উপেক্ষিত পেশাজীবী বুদ্ধিজীবীগণ by অনন্ত হক
বিএনপিতে সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত, অবহেলিত ও
অসম্মানজনক স্থানে রয়েছেন পেশাজীবী ও বুদ্ধিজীবীরা। দলের বিভিন্ন অফিসে ও
সভা-সমাবেশে চেয়ার দখলের এত উগ্র প্রতিযোগিতা যে, সেখানে নিরীহ
পেশাজীবী-বুদ্ধিজীবীরা টিকতেও পারছেন না। এত বড় ও পুরাতন দলের কোন থিঙ্ক
ট্যাঙ্ক আছে বলে মনে হয় না। দলের এত এত পদে ও উপদেষ্টা আসনে সাবেক
সামরিক-বেসামরিক আমলা, ব্যবসায়ী বসে থাকলেও প্রকৃত পেশাজীবী-বুদ্ধিজীবীর
স্থান নেই। অথচ বিগত আন্দোলনে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ দেশের সর্বত্র
মাঠে-ময়দানে সরব ছিলেন পেশাজীবী-শিক্ষাবিদ-সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবীরা। এখনও
বিএনপির বিভিন্ন কেন্দ্রীয় নেতা পেশাজীবীদের নানা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে
নিজেদেরকে রাজনৈতিকভাবে জীবিত রাখছেন।
বিএনপির মধ্যে পেশাজীবীভিত্তিক রাজনীতির জোয়ার এনেছিলেন আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। জেলে নিদারুণ অবস্থায় দল তাকে প্রয়োজনীয় সাপোর্ট দিচ্ছে না বলে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। স্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে যে, মাহমুদুর রহমানের রাজনৈতিক উত্থান ও জনপ্রিয়তা বিএনপি রাজনীতির বহু নেতাই মেনে নেন নি। সে সব নেতা মাহমুদুর রহমান ও আমার দেশ-এর যাবতীয় সাহায্য-সহযোগিতা নিলেও তাকে যোগ্য স্থান দিতে নারাজ।
একজন প্রবীণ সাংবাদিক ক্ষোভের সঙ্গে এ প্রতিবেদককে জানান, বহু বছর ধরে বিএনপির পক্ষে লিখলেও তারা একটি ইফতার পার্টিতে দাওয়াত পর্যন্ত দেন নি। তারা জানারও প্রয়োজন বোধ করে না যে, কে বিএনপিপন্থি আর কে বিএনপি বিরোধী। এর কারণ হলো, একদল কোটারি বিএনপির শীর্ষ নেতাকে ঘিরে রেখেছে। তারা সকলের সঙ্গে দলের সংযোগ হোক, সেটা চায় না। এক বা দুইজন মাত্র ব্যক্তি সাংবাদিক সমাজ বা পেশাজীবী সমাজের নেতৃত্বের সোল-এজেন্সি নিয়ে বিএনপিতে বসে আছেন। এ কোটারির কবল থেকে বের হতে পারছে না বিএনপির বর্তমান নেতৃত্ব।
প্রকৃত অর্থেই বিএনপিতে পেশাজীবী-বুদ্ধিজীবীদের কাজ করা দুরূহ। ত্যাগী বা একনিষ্ঠ বিএনপিপন্থি হলেই হবে না, বিশেষ কোন সাংবাদিক বা চিকিৎসক নেতার লোক তাকে হতে হবে। নইলে বিএনপিতে তার দরজা বন্ধ। এছাড়া সম্মানজনক মনোভাবও নেই দলের অফিস কর্মচারীদের মধ্যে। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সাবেক উপাচার্যকেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা গুলশান অফিসে বসিয়ে রাখা হয়েছে। অর্থ বা অন্যান্য সুবিধা দিয়ে ব্যবসায়ীরা যত দ্রুত গুলশান অফিসে বেগম জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন, পেশাজীবী-শিক্ষাবিদ-বুদ্ধিজীবীরা সেটা পারেন না। বেশির ভাগ সময়েই তাদেরকে গুলশান অফিসের ফটক থেকেই ফিরে আসতে হয়।
ক্ষমতায় থাকাকালেও বিএনপির অনুসারী পেশাজীবী-বুদ্ধিজীবীদের যোগ্য সম্মান দেয়া হয় নি। আওয়ামী লীগ যেখানে হাজারখানেক দলীয়পন্থি শিক্ষক-সাংবাদিককে বিভিন্ন সম্মানজনক পদে অধিষ্ঠিত করেছে, বিএনপি সেখানে মুষ্টিমেয়কে সুযোগ দিয়েছিল। তার মধ্যে অনেককেই টাকা খরচও করতে হয়। বিএনপি দেশের সর্বজনশ্রদ্ধেয় একজন শিক্ষাবিদকে মাঝারি মর্যাদাসম্পন্ন একটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান করে। বিরক্ত ও অসম্মানিক শিক্ষাবিদ যখন রাগে-দুঃখে-অপমানে পদত্যাগ পত্র জমা দিতে যান, তখন কোন দায়িত্বশীল ব্যক্তির বদলে পিয়ন দিয়ে সেটা রিসিভ করানো হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক নূরুল হুদা মুসা দলের পক্ষে কাজ করতে গিয়ে প্রতিপক্ষের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন। তার পিতা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. ইনাম-উল-হক বিএনপি রাজনীতির একজন প্রবীণ, বিশ্বস্ত ও নিবেদিতপ্রাণ সমর্থক। চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি পূর্ণকালীনভাবে বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হন। কিন্তু অল্প দিন পরেই তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয় এবং তারপক্ষে বিএনপির রাজনীতি করাই অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। দলের জন্য প্রিয় সন্তান হারিয়েও দলে তার যোগ্য স্থান হয় নি।
এখন বিএনপির পেশাজীবী-বুদ্ধিজীবীরা আশাহত। অনেকেই ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, দলের জন্য সভা-সমাবেশ, সেমিনার, মানববন্ধনসহ প্রতিনিয়ত কর্মসূচি পালন করেছি। কিন্তু দল সেটা জানে বলেও মনে হয় না। দল আমাদেরকে চিনেও না।
এমন অবস্থায় এক বা একাধিক ব্যক্তিই পুরো দেশের পেশাজীবী-বুদ্ধিজীবী রাজনীতির সোল-এজেন্সি নিয়ে বসে আছেন। এদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন বিগত বিএনপি আমলে সুবিধাভোগী কিছু বিতর্কিত বুদ্ধিজীবী, যারা দল আবার ক্ষমতায় এলে বিভিন্ন লাভজনক সরকারি পদের জন্য ঝাঁপ দেবেন। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তরুণ ও মাঝবয়সী যেসব পেশাজীবী-শিক্ষাবিদ ত্যাগী ও পরিশ্রমী ভূমিকা পালন করছেন, তাদেরকে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। সুযোগ না পেয়ে অনেকেই হতোদ্যম। এমন কি, হাওয়া ভবনে তারেক রহমানের সঙ্গে দল গঠনে, দলের বিভিন্ন কর্মসূচি পালনে এবং লেখালেখির মাধ্যমে নিয়োজিতদেরকে দূরে ঠেলে দেয়া হয়েছে। এখন যারা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সরকারের বিরুদ্ধে ও বিএনপির পক্ষে লেখালেখি করছেন বা নানা রকমের বুদ্ধিবৃত্তিক তৎপরতা চালাচ্ছেন, তাদেরকেও বিএনপি স্বীকৃতি দেয় বলে মনে হয় না। কেন্দ্রীয় নেতারা সে সব লেখা পড়েন বা লেখকদের চিনেন বলেও মনে হয় না। অথচ আওয়ামী লীগের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো- দলপ্রধান শেখ হাসিনা ব্যক্তিগতভাবে তার পক্ষের লেখক-কবি-সাহিত্যিক-সাংবাদিক-শিক্ষাবিদ-বুদ্ধিজীবীদের চেনেন এবং খোঁজখবর নেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানও তার পক্ষের লেখক-গবেষকদের সম্পর্কে স্পষ্ট খোঁজখবর রাখতেন। বিএনপি এখন নিজের লোকদের খবর নেয়ার সংস্কৃতি থেকে বহুদূরে সরে গেছে।
বিএনপির মধ্যে পেশাজীবীভিত্তিক রাজনীতির জোয়ার এনেছিলেন আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। জেলে নিদারুণ অবস্থায় দল তাকে প্রয়োজনীয় সাপোর্ট দিচ্ছে না বলে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। স্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে যে, মাহমুদুর রহমানের রাজনৈতিক উত্থান ও জনপ্রিয়তা বিএনপি রাজনীতির বহু নেতাই মেনে নেন নি। সে সব নেতা মাহমুদুর রহমান ও আমার দেশ-এর যাবতীয় সাহায্য-সহযোগিতা নিলেও তাকে যোগ্য স্থান দিতে নারাজ।
একজন প্রবীণ সাংবাদিক ক্ষোভের সঙ্গে এ প্রতিবেদককে জানান, বহু বছর ধরে বিএনপির পক্ষে লিখলেও তারা একটি ইফতার পার্টিতে দাওয়াত পর্যন্ত দেন নি। তারা জানারও প্রয়োজন বোধ করে না যে, কে বিএনপিপন্থি আর কে বিএনপি বিরোধী। এর কারণ হলো, একদল কোটারি বিএনপির শীর্ষ নেতাকে ঘিরে রেখেছে। তারা সকলের সঙ্গে দলের সংযোগ হোক, সেটা চায় না। এক বা দুইজন মাত্র ব্যক্তি সাংবাদিক সমাজ বা পেশাজীবী সমাজের নেতৃত্বের সোল-এজেন্সি নিয়ে বিএনপিতে বসে আছেন। এ কোটারির কবল থেকে বের হতে পারছে না বিএনপির বর্তমান নেতৃত্ব।
প্রকৃত অর্থেই বিএনপিতে পেশাজীবী-বুদ্ধিজীবীদের কাজ করা দুরূহ। ত্যাগী বা একনিষ্ঠ বিএনপিপন্থি হলেই হবে না, বিশেষ কোন সাংবাদিক বা চিকিৎসক নেতার লোক তাকে হতে হবে। নইলে বিএনপিতে তার দরজা বন্ধ। এছাড়া সম্মানজনক মনোভাবও নেই দলের অফিস কর্মচারীদের মধ্যে। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সাবেক উপাচার্যকেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা গুলশান অফিসে বসিয়ে রাখা হয়েছে। অর্থ বা অন্যান্য সুবিধা দিয়ে ব্যবসায়ীরা যত দ্রুত গুলশান অফিসে বেগম জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন, পেশাজীবী-শিক্ষাবিদ-বুদ্ধিজীবীরা সেটা পারেন না। বেশির ভাগ সময়েই তাদেরকে গুলশান অফিসের ফটক থেকেই ফিরে আসতে হয়।
ক্ষমতায় থাকাকালেও বিএনপির অনুসারী পেশাজীবী-বুদ্ধিজীবীদের যোগ্য সম্মান দেয়া হয় নি। আওয়ামী লীগ যেখানে হাজারখানেক দলীয়পন্থি শিক্ষক-সাংবাদিককে বিভিন্ন সম্মানজনক পদে অধিষ্ঠিত করেছে, বিএনপি সেখানে মুষ্টিমেয়কে সুযোগ দিয়েছিল। তার মধ্যে অনেককেই টাকা খরচও করতে হয়। বিএনপি দেশের সর্বজনশ্রদ্ধেয় একজন শিক্ষাবিদকে মাঝারি মর্যাদাসম্পন্ন একটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান করে। বিরক্ত ও অসম্মানিক শিক্ষাবিদ যখন রাগে-দুঃখে-অপমানে পদত্যাগ পত্র জমা দিতে যান, তখন কোন দায়িত্বশীল ব্যক্তির বদলে পিয়ন দিয়ে সেটা রিসিভ করানো হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক নূরুল হুদা মুসা দলের পক্ষে কাজ করতে গিয়ে প্রতিপক্ষের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন। তার পিতা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. ইনাম-উল-হক বিএনপি রাজনীতির একজন প্রবীণ, বিশ্বস্ত ও নিবেদিতপ্রাণ সমর্থক। চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি পূর্ণকালীনভাবে বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হন। কিন্তু অল্প দিন পরেই তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয় এবং তারপক্ষে বিএনপির রাজনীতি করাই অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। দলের জন্য প্রিয় সন্তান হারিয়েও দলে তার যোগ্য স্থান হয় নি।
এখন বিএনপির পেশাজীবী-বুদ্ধিজীবীরা আশাহত। অনেকেই ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, দলের জন্য সভা-সমাবেশ, সেমিনার, মানববন্ধনসহ প্রতিনিয়ত কর্মসূচি পালন করেছি। কিন্তু দল সেটা জানে বলেও মনে হয় না। দল আমাদেরকে চিনেও না।
এমন অবস্থায় এক বা একাধিক ব্যক্তিই পুরো দেশের পেশাজীবী-বুদ্ধিজীবী রাজনীতির সোল-এজেন্সি নিয়ে বসে আছেন। এদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন বিগত বিএনপি আমলে সুবিধাভোগী কিছু বিতর্কিত বুদ্ধিজীবী, যারা দল আবার ক্ষমতায় এলে বিভিন্ন লাভজনক সরকারি পদের জন্য ঝাঁপ দেবেন। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তরুণ ও মাঝবয়সী যেসব পেশাজীবী-শিক্ষাবিদ ত্যাগী ও পরিশ্রমী ভূমিকা পালন করছেন, তাদেরকে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। সুযোগ না পেয়ে অনেকেই হতোদ্যম। এমন কি, হাওয়া ভবনে তারেক রহমানের সঙ্গে দল গঠনে, দলের বিভিন্ন কর্মসূচি পালনে এবং লেখালেখির মাধ্যমে নিয়োজিতদেরকে দূরে ঠেলে দেয়া হয়েছে। এখন যারা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সরকারের বিরুদ্ধে ও বিএনপির পক্ষে লেখালেখি করছেন বা নানা রকমের বুদ্ধিবৃত্তিক তৎপরতা চালাচ্ছেন, তাদেরকেও বিএনপি স্বীকৃতি দেয় বলে মনে হয় না। কেন্দ্রীয় নেতারা সে সব লেখা পড়েন বা লেখকদের চিনেন বলেও মনে হয় না। অথচ আওয়ামী লীগের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো- দলপ্রধান শেখ হাসিনা ব্যক্তিগতভাবে তার পক্ষের লেখক-কবি-সাহিত্যিক-সাংবাদিক-শিক্ষাবিদ-বুদ্ধিজীবীদের চেনেন এবং খোঁজখবর নেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানও তার পক্ষের লেখক-গবেষকদের সম্পর্কে স্পষ্ট খোঁজখবর রাখতেন। বিএনপি এখন নিজের লোকদের খবর নেয়ার সংস্কৃতি থেকে বহুদূরে সরে গেছে।
No comments