রিতুর আত্মহনন বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী
রাজধানীর খিলগাঁও এলাকার নন্দীপাড়ার
স্কুলছাত্রী রিতুর আত্মহননের ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রধান আসামি শিমুল চন্দ্র
মণ্ডলসহ চারজনকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতার অভিযোগ পাওয়া গেছে পুলিশের
বিরুদ্ধে। তবে গতকাল জিহাদ নামে এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ। পুলিশ
জানিয়েছে, এই ঘটনার সঙ্গে সে জড়িত। রিতুর আত্মহননের ঘটনায় বিক্ষুব্ধ হয়ে
উঠেছেন এলাকাবাসী। তাদের দাবি, রিতুকে মানসিক যন্ত্রণা দিয়ে হত্যা করা
হয়েছে। বখাটে ওই চার যুবককের শাস্তি দাবি করে গতকাল বিকালে জাতীয়
প্রেসক্লাবে রিতুর সহপাঠী ও এলাকাবাসী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।
তারা অবিলম্বে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেছেন। অন্যথায় কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা
করবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী শিমুলের বাড়িতে যে
কোন সময় হামলা চালাতে পারে এই আশঙ্কায় সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ
ঘটনায় খিলগাঁও থানায় রিতুর মা বাদী হয়ে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে মামলা
করলেও কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশ বলছে, জড়িতদের গ্রেপ্তার করার
জন্য বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে। শনিবার সন্ধ্যায় খিলগাঁও থানাধীন
মধ্য নন্দীপাড়ার এক নম্বর স্কুল রোডের ১৪৬৮, বরিশাল হাউসের বাড়ি থেকে
বখাটে শিমুলসহ তার চার বন্ধু মিলে স্থানীয় নবব শ্রেণীর ছাত্রী উম্মে কুলসুম
রিতুকে তুলে নেয়ার চেষ্টা করে। এসময় এলাকাবাসী এগিয়ে গেলে তারা পালিয়ে
যায়। পরে কীটনাশক পান করে রিতু আত্মহত্যা করে। পরিবারের পক্ষ থেকে বলা
হয়েছে, তিন মাস ধরে শিমুল তাকে উত্যক্ত করে আসছিল। এই যন্ত্রণা সহ্য করতে
না পেরে রিতু আত্মহনন করেছে। সরজমিনে গতকাল দুপুরে মধ্য ও পশ্চিম নন্দীপাড়া
এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রিতুর আত্মহননের ঘটনায় এলাকাবাসী বিক্ষুব্ধ। এর
আগেও শিমুল এলাকার বিভিন্ন স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া ছাত্রীছাত্রীদের উত্যক্ত
করেছে। রিতুর আত্মহননের পরেই পশ্চিম নন্দীপাড়ার ছোট বটতলা ১১২৬ নম্বর
বাড়িটি ছেড়ে শিমুলসহ তার পরিবার সেখান থেকে উধাও হয়ে গেছে। এলাকাবাসী ওই
বাড়িটির সামনে রিতু হত্যার বিচারের দাবি করে একটি কালো ব্যানার টাঙিয়েছে।
বাড়িটির সামনে স্থানীয় এলাকাবাসীর ভিড়। মনের ক্ষোভে যে যা পারছেন তা বলে
শিমুল ও তার পরিবারকে ধিক্কার দিচ্ছেন। পুলিশের হয়রানির ভয়ে শিমুলের বাড়ির
ভাড়াটিয়ারাও সেখান থেকে চলে গেছে। ওই ভাড়াটিয়ারা সেখান থেকে যাওয়ার সময়
শিমুলের বাড়ির কিছু মালামাল নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিমুলের
বাড়ির পাশের ঘেরে স্থানীয় লোকজন মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। খিলগাঁও থানার এএসআই
বশিরের নেতৃত্বে ১০ জন পুলিশের সদস্য বাড়িটি পাহারা দিচ্ছেন। এদিকে, নিহতের
লাশের ময়নাতদন্তের পর রিতুকে গ্রামের বাড়ি জয়পুরহাটের আক্কেলপুর ভিকনি
এলাকায় দাফন করা হয়েছে। রিতুর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইস্ট পয়েন্ট এডুকেশন হোমের
সাবেক শিক্ষার্থী ও বনশ্রীর পিস ফুল স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণীর
ছাত্র স্থানীয় বাসিন্দা জাহিদ হোসেন জানান, রিতু সন্ধ্যার সময় আত্মহনন করে।
তখন শিমুলসহ তার চার বন্ধু নিজ বাসায় ছিল। পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়েছিল।
এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিলও করেছে। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে। এলাকাবাসী তাদের
গ্রেপ্তারের দাবি জানায়। পুলিশও শিমুলদের বাসায় যায়। কিন্তু, তারা দু’টি
মোটর সাইকেল দিয়ে চলে যায়। এদিকে, গতকাল দুপুরে মধ্য নন্দীপাড়ার ১ নম্বর
স্কুল রোডের ১৪৬৮, বরিশাল হাউসের রিতুদের টিনশেডের বাড়িটিতে গিয়ে দেখা যায়,
স্থানীয় লোকজন ওই বাড়িটিতে ভিড় করছেন। পরিবারের লোকজন রিতুকে গ্রামের
বাড়িতে দাফনের জন্য নিয়ে গেছেন। রিতুর নানী ফাতেমা বেগম অসুস্থ হওয়ায় তিনি
যেতে পারেননি। গতকাল বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে সহপাঠী ও এলাকাবাসী মানবন্ধন
করেছে। ওই মানববন্ধনে রিতুর অনেক সহপাঠী কান্নায় ভেঙে পড়েন। মানববন্ধনে ওই
প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ জহিরুল ইসলাম অবিলম্বে রিতুর মৃত্যুর জন্য দায়ী
বখাটে শিমুল, রফিকসহ যারা জড়িত তাদের গ্রেপ্তার ও উপযুক্ত শাস্তি দাবি
করেন। যোগাযোগ করা হলে খিলগাঁও থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, রিতুর
মৃত্যুর ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। জড়িত শিমুলসহ তার অন্য সহপাঠীদের
পালাতে পুলিশ সহযোগিতা করার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,
প্রশ্নই আসে না। পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করার জন্য বিভিন্ন স্থানে অভিযান
চালাচ্ছে।
No comments