১১ নম্বর প্রেমে বাঁধা পড়লেন জর্জ ক্লুনি
প্রেমের শহর ভেনিসে আগামীকাল বিবাহ বন্ধনে
আবদ্ধ হচ্ছেন হলিউডের হার্টথ্রব নায়ক জর্জ ক্লুনি ও লেবানিজ বংশোদ্ভূত
বৃটিশ আইনজীবী আমাল আমালুদ্দিনের। এ জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
ভেনিস শহর ভরে গেছে হলিউডের নামকরা তারকায়। তাদের মধ্যে আছেন কেট ব্লাশেট
থেকে ব্র্যাঞ্জেলিনা, সান্দ্রা বুলক থেকে ম্যাট ডেমন। গত ২০ বছরে জর্জ
ক্লুনি প্রেম করেছেন ১০টি। এবার ১১ নম্বর প্রেমে এসে বাঁধা পড়ছেন। তাই
বিয়ের অনুষ্ঠানকে স্মরণীয় করে রাখতে ভেনিসে নেয়া হয়েছে রাজকীয় আয়োজন। একটি ৫
তারকা হোটেল পুরোটা ভাড়া নেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ওই হোটেলকে খামারবাড়ির
চেহারা দিতে হবে। তা সম্পন্ন হয়েছে এরই মধ্যে। প্রস্তুত ড্যান্স ফ্লোর।
সেখানে হলিউডের নামীদামি সেলিব্রেটিরা নাচের ধোঁয়া ছোটাবেন। এ এক ভিন্ন রকম
আয়োজন। পাত্রী আমালের বিয়ের পোশাক বানিয়েছেন সারাহ বার্টনের নকশার পোশাক।
এই সারাহ বার্টনের ডিজাইন করা পোশাক পরে বিয়ে হয়েছিল বৃটিশ রাজবধূ কেট
মিডলটনের। এ বিয়েতে কে কি পরবেন, কিভাবে সাজবেন, কিভাবে ক্যামেরায় ধরা
দেবেন যেন শেষ মুহূর্তে চলছে সেই প্রস্তুতি। কারণ, যে সে বিয়ে তো নয়! বিয়ের
বাঁধনে বাঁধা পড়ছে সামপ্রতিক কালে হলিউডের সব চেয়ে আলোচিত প্রেম। জর্জ
ক্লুনি ও আমাল আলামুদ্দিন। সাম্প্রতিক সময়ে তাদেরকে প্রায়শই একসঙ্গে দেখা
গিয়েছে। কখনও কোন পাঁচতারা হোটেলের লবিতে চুম্বনরত অবস্থায়। কখনও বা রেড
কার্পেটে হাত ধরাধরি করে দাঁড়িয়ে। গুঞ্জনও ছিল, খুব শিগগিরই গাঁটছড়া
বাঁধছেন তারা। তাই আগামীকাল সোমবার ভেনিসের গ্র্যান্ড ক্যানালের ধার ঘেঁষে
চৌদ্দ শতকের একটি প্রাসাদে বিয়ে করছেন ৫৩ বছরের ক্লুনি ও তার চেয়ে সতেরো
বছরের ছোট বৃটিশ লেবানিজ তরুণী আমালে। গত এপ্রিল মাসে এই ইতালিতেই ক্লুনির
সঙ্গে প্রথম দেখা তার। আইনজীবী হিসেবে যথেষ্টই সুনাম রয়েছে তার।
উইকিলিকস-এর প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের মতো মানুষ আমালের মক্কেল।
মানবাধিকার কর্মী হিসেবেও কাজ করেন তিনি। কাজের সূত্রেই আমালের আলাপ হয়েছিল
জাতিসংঘের দূত জর্জ ক্লুনির সঙ্গে। প্রথম পরিচয়েই দানা বেঁধেছিল প্রেম।
ক্লুনিও তখন ‘সিঙ্গেল’। টালিয়া বালসামের সঙ্গে তার বিয়ে ভেঙে গিয়েছিল সেই
১৯৯৩ সালে। তার পর গত কুড়ি বছরে অন্তত খান দশেক সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন
ক্লুনি। কখনও তার পাশে বৃটিশ মডেল, কখনও আবার ইতালীয় অভিনেত্রী। এক সময়
আবার তার প্রেমিকা ফরাসি টিভি তারকা সেলিন বালিট্রান। কিন্তু কোন সম্পর্কই
বিয়ে পর্যন্ত গড়ায় নি। মাঝে এমনও শোনা গিয়েছিল, কোন দিনই বিয়ে করবেন না
তিনি। বিয়েতে আপত্তি রয়েছে ক্লুনির। তবে আমালের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হওয়ার
পর, ক্লুনি নিজেই স্বীকার করে নিয়েছিলেন সে কথা। বিয়ের ইচ্ছেও প্রকাশ করেন।
কিছু দিন আগেই এক অনুষ্ঠানে ক্লুনি বলেছিলেন- ‘আমাল, জীবনের শেষ দিন
পর্যন্ত আমি তোমায় ভালবাসব। কবে তোমাকে স্ত্রী হিসেবে পাব। অপেক্ষায় দিন
গুনছি।’
সোমবার বিয়ের অনুষ্ঠান। তার আগেই গন্ডোলা নগরীতে সাজ সাজ রব। গ্র্যান্ড ক্যানালের আশেপাশে পাঁচতারা হোটেলগুলোয় শুরু হয়ে গেছে প্রি-পার্টি। নিমন্ত্রিত অতিথি ১৩৬ জন। কিন্তু তাতে কি? উত্তেজনায় টগবগ করে ফুটছেন ভেনিসের বাসিন্দারাও। নিজেরাই বলছেন, বছরের সেরা পার্টির জন্য সাজছে তাদের শহর। স্থানীয় ওয়াটার-ট্যাক্সির চালক ব্রুনো বার্তোলিনি’র মুখেই শোনা গেল সে কথা। বললেন, এখানে সবার মুখে একটাই নাম ক্লুনি। বিশেষ করে মেয়েরা। যদি এক ঝলকও দেখা যায়, সেই আশায় তারা ভিড় করছেন ক্যানালের দু’ধারে। শুক্র থেকে সোম, অনুষ্ঠান হবে টানা চার দিন। সে জন্য একাধিক পাঁচতারা হোটেল বুক করেছেন হবু দম্পতি। হলিউড থেকে আসা অতিথিরা উঠেছেন গিডেকা দ্বীপপুঞ্জের একটি হোটেলে। ক্লুনিদের প্রস্তাব মতো ৭৯টি ঘরের ওই হোটেলটিকে আগামী কয়েক দিনের জন্য খামারবাড়ির চেহারা দেয়া হয়েছে। সুবিশাল হল ঘরটিতে লাগানো হয়েছে বড় বড় ঝাড়বাতি। শনিবারের পরিকল্পনাটা একেবারে আলাদা। ক্যানালের ধার ঘেঁষে অন্য একটি হোটেলে রিসেপশন পার্টি। অতিথিদের পুলিশ- বোটে করে নিয়ে যাওয়া হবে সেখানে। দুপুরে ওই হোটেলের বাগানেই চাঁদোয়া টাঙিয়ে ভোজের আয়োজন করা হয়েছে। খানাপিনার দায়িত্বে রয়েছেন ইতালীয় শেফ। পাঁচ ধরনের খাবার থাকছে ভোজের তালিকায়। তবে পদের সংখ্যা কত, জানা যায়নি সে সব। সন্ধ্যা নামলেই বদলে যাবে পার্টির চেহারা। পাঁচতারা হোটেলের রেস্তরাঁ তখন হবে নাইটক্লাব। ডান্স ফ্লোরে ঝড় তুলবেন সেলিব্রেটিরা। তবে আকর্ষণের কেন্দ্র সোমবার। ওই দিনই টাউন হলে বিয়ে। শোনা যাচ্ছে, ক্লুনি পরবেন আরমানি স্যুট। আর আমালের পরনে থাকবে সারা বার্টনের নকশা করা গাউন। এই সারাই বৃটিশ রাজবধূ কেটের বিয়ের পোশাক তৈরি করেছিলেন। দুপুর বারোটা নাগাদ শুরু হবে বিয়ের অনুষ্ঠান। চলবে দু’ঘণ্টা ধরে। ইতিমধ্যেই হবু দম্পতি পৌঁছে গিয়েছেন ভেনিসে। ছবি-শিকারি ও ভক্তদের হাত থেকে বাঁচতে এখন থেকেই আঁটোসাঁটো প্রহরা। গোপনীয়তা রাখতে চুক্তি হয়েছে হোটেলগুলোর সঙ্গে। সেই সব হোটেলের ধার দিয়ে এখন স্পিড বোট বা নৌকো নিয়ে যাওয়াও নিষিদ্ধ। পোজও দিলেন হাসিমুখে। তবু ভক্তদের কাছে তো অধরাই তারা। অগত্যা দূর থেকেই অনেকে ছবি তুলে রাখছেন টাউন হলের। এখানেই যে বিয়ে হবে তাদের স্বপ্নের নায়কের!
No comments