গণতন্ত্রের লক্ষ্য বিঘ্নিত হবে by মাহফুজ আনাম
মুক্ত মিডিয়া ও সরকারের মধ্যে যে কোন
দ্বন্দ্বে স্বল্প সময়ের জন্য বিজয়ী হয় সরকার। পরিশেষে বিজয়ী হয় মুক্ত
মিডিয়া। কিন্তু জাতি গঠনের মূল্যবান অনেক সময় নষ্ট হয় হস্তক্ষেপ করার
সময়টাতে। প্রাথমিকভাবে সরকার বিজয়ী হয়। এর কারণ, তাদের কাছে থাকে সব রকম
তহবিল ও কাউকে জোর করে কিছু করানো, ঘুষ, ভয়ভীতি, হুমকি ও রাজনৈতিক
উদ্দেশ্যে জনগণকে জেলে নেয়ার মতো সব রাষ্ট্রযন্ত্র। চূড়ান্ত জয় হয়
স্বাধীনতা ও মুক্ত মিডিয়ার। এর কারণ, তাদের পক্ষে থাকে জনগণ, তবে তা এক
সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। ইতিহাসের এ শিক্ষা থেকে আমাদের সরকার দৃশ্যত কোন
শিক্ষা নেয় নি। আমরা যদি তুলনামূলক উন্নয়নশীল দেশগুলোর দিকে তাকাই তাহলে
দেখতে পাবো মুক্ত মিডিয়া ও সমৃদ্ধি এসেছে অঙ্গাঙ্গিভাবে। পক্ষান্তরে এর
উল্টো সম্পর্ক যেখানে বিদ্যমান, যে দেশগুলো মুক্ত মিডিয়ার অনুমোদন দেয় না
তারা তাদের জাতীয় প্রয়োজনের অনেক নিচে অবস্থান করে। বর্তমানের পুরো আফ্রিকা
ও ১৯৭০-এর দশকের লাতিন আমেরিকার অনেক দেশ এর পক্ষে সাক্ষ্য দেয়। আফ্রিকান
দেশগুলোর মধ্যে ঘানা, বতসোয়ানা, বুরুন্ডি, অ্যাঙ্গোলা, তাঞ্জানিয়া, দক্ষিণ
আফ্রিকায় এখন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। এসব দেশের গণমাধ্যমের চিত্র স্বাধীনতার
ক্রমব্যাপ্তিরই বহিঃপ্রকাশ। এমনকি কমিউনিস্ট পার্টির কর্মকর্তাদের সহ পুরো
দুর্নীতির বিরুদ্ধে চায়না ডেইলিতে রিপোর্ট করা নিকট অতীতেও ছিল অকল্পনীয়।
সোভিয়েত ইউনিয়ন কেন ব্যর্থ হয়েছে তার পেছনে অবশ্যই অনেকগুলো কারণ আছে।
আমাদের দৃষ্টিতে তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি হলো- সেখানে মুক্ত মিডিয়ার
উপস্থিতি ছিল না। সাইবেরিয়া (উদাহরণ হিসেবে) পাঠিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হতো
সাংবাদিকদের। ফলে তোষামোদি সাংবাদিকতার কারণে শাব্দিক অর্থে আকাশ ভেঙে পড়ে
নেতাদের মাথার ওপর। এর আগে তারা বুঝতেই পারেন নি যে, কখন তাদের পায়ের নিচ
থেকে মাটি সরে যেতে শুরু করেছিল। এক পর্যায়ে এ বিশাল রাজত্ব তার নিজস্ব
জনগণ ও বিশ্বকে বিস্ময়ের মধ্যে রেখেই পতিত হয়। তারা কি করতে পারতেন ও এসব
ক্ষমতালিপ্সু নেতা কি করেছেন তা নিয়েই এ বিস্ময়। সুতরাং যখন চারদিকে এসব
ঐতিহাসিক শিক্ষা রয়েছে তার পরও কেন শেখ হাসিনার সরকার মুক্ত মিডিয়ার পেছনে
লেগেছে? জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালার খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পরপরই তা
বৃহস্পতিবার গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়েছে। এটিও সেই একই কাজ করছে।
কি কারণে নতুন জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা এত অগ্রাধিকার পেলো?
প্রতি বছর আমাদের দেশে লঞ্চ দুর্ঘটনায় হাজার হাজার প্রাণহানি হচ্ছে। যদি আমাদের সর্বশেষ এ ট্র্যাজেডি থেকে শুরু করি তাহলে দেখতে পাবো এখনও এ ক্ষেত্রে যথাযথ নীতি, যা লঞ্চ নির্মাণের সময় যথাযথভাবে মানতে হবে, এর রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার ক্ষেত্রে কোন উদ্যোগ এখনও নেয়া হয়নি। কিচেন মার্কেট থেকে খাদ্যে যে প্রিজার্ভেটিভের নামে বিষ মেশানো হচ্ছে তাতে জনগণ আতঙ্কে বসবাস করছে। এখনও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য কোন নীতি নেই। ভেজাল ওষুধে সয়লাব হচ্ছে বাজার। কিন্তু এখনও ভাল ওষুধ কোম্পানিগুলোকে পুরস্কৃত করা ও ত্রুটিপূর্ণ কোম্পানিগুলোকে শাস্তির কোন নীতি গ্রহণ করা হয় নি। যখন ভেজাল প্যারাসিটামল ব্যবহার করে গত ১০ বছরে কমপক্ষে ২০০০ শিশু মারা গেছে তখন মান্ধাতা আমলের আইন কার্যকর হতে ১৫ বছর সময় নিয়েছে, যার ফলে শাস্তি হয়েছে নাম কা ওয়াস্তে। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা যে আবার ঘটবে না তা ঠেকানোর কোন কিছুই নেই। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে আমাদের দেশের সড়কগুলোতে। কিন্তু জনগণের জীবনরক্ষা বা প্রতিকারের কোন নীতি নেই। ঢাকাকে ঘিরে আছে যে নদীগুলো তা ভীষণভাবে দূষিত। এতে এখন আর কোন জলজ প্রাণী বেঁচে নেই। দূষণ এখন ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে। এতে মিঠাপানির মাছের অস্তিত্ব হুমকিতে পড়েছে। দশকের পর দশক ধরে ট্যানারির বিষাক্ত বর্জ্য ছেড়ে দেয়া হচ্ছে নদীতে। এ ক্ষেত্রে সরকার হয় নির্লিপ্ত ভূমিকা পালন করেছে নয়তো লোকদেখানো পদক্ষেপে সীমাবদ্ধ থেকেছে। এসব দূষণকারী ও ভূমিগ্রাসীর কোন জবাবদিহি নেই। সুতরাং যখন কোন সরকার তার অত্যন্ত মৌলিক দায়িত্বগুলো, নিরাপদ খাদ্য, ওষুধ, পানি ও নাগরিকদের পরিবহন দিতে ব্যর্থ হয় এবং মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণে নেয় তখন আমাদের আর কি বলার আছে? তাহলে কি বলতে হবে কোনটা সত্য তা জানতে চায় না সরকার?
বিড়ম্বনা হলো তথাকথিত ‘খারাপ’ খবরগুলো জনগণের কাছে পৌঁছানো রোধ করা হলে প্রতিকারের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের জন্য তা কোন কাজে আসবে না। এটা আসবে আইনভঙ্গকারীদের উপকারে। ফলে তারা জনগণ ও সরকারকে ধোঁকা দিয়ে চলবে। ক্ষতি করবে উভয়েরই। এখানে প্রকাশিত গেজেটের ‘ধারা’গুলোর কিছু উদাহরণ তুলে ধরা হলো আমাদের মন্তব্যসহ।
১. সেনাবাহিনী, বেসামরিক ও জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যু, যা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে পারে তা সম্প্রচার করা যাবে না।
এ ধারাটি এমনিতেই বিতর্কিত ও অযৌক্তিক। যদি কোন কিছু হয় ‘পাবলিক ইনফরমেশন’ তাহলে কেন তা সম্প্রচার করা যাবে না? এরপর, কিভাবে বেসামরিক বিভাগের কোন কিছু রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার সঙ্গে সমঝোতা করবে? সেনাবাহিনীর ক্ষেত্রে, মিডিয়া স্বাভাবিকভাবেই অত্যন্ত সচেতন। সাধারণত সেনাবাহিনীর কোন গোপনীয় বিষয় কখনও প্রকাশ করা বা সম্প্র্রচার করা হয় না।
২. সেনাবাহিনী, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও সরকারি কর্মকর্তা যারা অপরাধীদের অপরাধের জন্য শাস্তি দিতে পারেন তাদের অবমাননা হয় এমন কোন কিছু সম্প্রচার করা যাবে না।
এ নীতির অযৌক্তিকতা কল্পনা করুন। এ নীতি যদি কার্যকর থাকতো তাহলে তো আমরা ১০০ ট্রাক অস্ত্র উদ্ঘাটনের বিষয়ে কিছু লিখতে পারতাম না। যেখানে (অভিযুক্তদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী) এনএসআই ও ডিজিএফআই-এর কর্মকর্তারা সরাসরি যুক্ত ছিলেন। এমনকি আমরা ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিষয়েও কিছু লিখতে পারতাম না। ওই হামলা চালানো হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে, এতে জড়িত সাবেক তিন আইজিপি, এনএসআই-এর সাবেক দুই কর্মকর্তা, সিআইডির সাবেক তিন কর্মকর্তা, সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জড়িত ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনও করা হয়েছে। অনুমোদিত নীতি অনুযায়ী, পুলিশ হেফাজতে বা নির্যাতনে মৃত্যু, সেনাবাহিনী, র্যাব, ডিজিএফআই, গোয়েন্দা সংস্থা ও সরকারি কর্মকর্তা, যারা শাস্তি দিতে পারেন, তাদের ক্ষমতার অপব্যবহারের বিষয়ে কোন রিপোর্ট লিখতে বা সম্প্রচার করতে পারব না। এ নীতি কার্যকর হলে আমরা নারায়ণগঞ্জে সাম্প্রতিক ৭ খুন অথবা সাম্প্রতিক গার্মেন্টের ঝুট ব্যবসায়ীকে হত্যা (তাকে মিরপুর থানার সাব-ইন্সপেক্টর নির্যাতন করে হত্যা করেছে)- এমন সব ঘটনার খবর লিখতে পারবো না, যেখানে জড়িত র্যাব কর্মকর্তা বা পুলিশ। ক্রসফায়ার, রিমান্ডে নির্যাতন ইত্যাদি এসব নিয়ে আমরা কোন রিপোর্ট লিখতে পারবো না। সম্প্রতি লিমন নামে যে নিরপরাধ ছাত্রটিকে র্যাব বুলেটবিদ্ধ করেছিল, পরে তাকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে। যদি মিডিয়া র্যাবের কর্মকাণ্ড প্রকাশ না করতো তাহলে কি লিমন ন্যায়বিচার কোন দিনও পেতো?
৩. বিদ্রোহ, বিশৃঙ্খলা, সহিংস ঘটনা... প্রচার করা যাবে না?
আমরা জানি বিদ্রোহ কি এবং এটা কিভাবে প্রচার করা যায় তা নিয়ে আমরা আলোচনা করতে পারি। (এক্ষেত্রে আমরা মেনে নেবো যে, বিডিআর বিদোহের ঘটনা যেভাবে সম্প্রচার করা হয়েছে তাতে সম্প্রচার মিডিয়া পুরোপুরি পেশাদারিত্বের প্রমাণ দিয়েছে)। কিন্তু বিশৃঙ্খলা ও সহিংস ঘটনা বলতে কি বোঝানো হয়েছে? এই নীতি অনুযায়ী আমরা সহিংস কোন অস্থিরতা ও এর ফুটেজ দেখতে পারবো না। এই নীতি দেখে মনে হচ্ছে, যখন দুষ্কৃতকারীরা রেললাইন উপড়ে ফেলে, আমাদের কলকারখানায় আগুন দেয় তখন টেলিভিশন স্টেশনগুলো নাচ আর গান সম্প্রচার করবে বলে আশা করা হচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপি-জামায়াত যেভাবে চলন্ত বাসে পেট্রোল বোমা ছুড়েছে তা তুলে ধরা হয়েছে ব্যাপক আকারে ফুটেজে। ওই সহিংসতা ছিল অন্যায়। এর অর্থ হলো ভবিষ্যতে এমন দৃশ্য সম্প্রচার করা যাবে না? আমাদের কাছে এই নীতির অর্থ হলো- ভিন্নমতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে সরকার পুলিশি সহিংসতা ব্যবহার করবে আর মিডিয়া তা প্রচার করতে পারবে না, কারণ এতে বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতা হবে। তোবা গার্মেন্টের শ্রমিকদের ওপর বৃহস্পতিবার যেভাবে পুলিশ অভিযান চালিয়েছে তা কি বর্তমান নীতির অধীনে সম্প্রচার করা অনুমোদিত?।
৪. বিদেশী কোন রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমন কোন কিছু সম্প্রচার করা নিষিদ্ধ।
২০০৭-০৮ সালে যখন আমাদের নৌসীমা প্রহরায় ছিল আমাদের নৌবাহিনী তখন মিয়ানমার আমাদের নৌবাহিনীকে হুমকি দিয়ে সমুদ্রে যুদ্ধজাহাজ পাঠায়। বিদ্যমান আইনে আমরা এ কথা লিখতে বা সম্প্রচার করতে পারবো না। আমরা লিখতে পারবো না ‘ফেলানি’ হত্যাকাণ্ড অথবা বিএসএফের হাতে সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের কথা? তিস্তায় আমাদের ন্যায্য পাওনা নিয়ে লেখা এবং ভারত তাতে সাড়া না দেয়ায় তাদের সমালোচনা কি অনুমোদন পাবে? নাকি আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নষ্টের নামে তা নিষিদ্ধ? সৌদি আরব, কুয়েত, মালয়েশিয়া অথবা অন্য কোন দেশে আমাদের প্রবাসী শ্রমিকদের হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ অথবা অবৈধভাবে আটক করার বিষয়টিও বিদ্যমান একই আইনে প্রচার করা যাবে না। ওই সব দেশে তারা কাজ করেন ‘বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে’র নামে। তাহলে আমাদের যে সব প্রবাসীর পাঠানো রেমিটেন্সে আমাদের বিশাল রিজার্ভের গল্প বলি তাদেরকে কি স্বাগতিক দেশের করুণা এবং আমাদের ভীরু ও দুর্নীতিগ্রস্ত বানিজ্যিক অ্যাটাচিদের ওপর ছেড়ে দেবো?
৫. পরিবেশবান্ধব নয় এমন কোন দৃশ্য প্রকাশ করা যাবে না বিজ্ঞাপনে।
কিন্তু একটি দূষিত নদী, যত্রতত্র পড়ে থাকা ময়লা-আবর্জনা, গাছ কাটা যদি বিজ্ঞাপনে দেখানো হয় এবং জনগণকে যদি এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয় তাহলে তাতে অন্যায় কি?
৬. ভুলভাবে ও অসত্য তথ্য এড়িয়ে চলতে হবে অবশ্যই।
অসত্য তথ্য অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে। যদি ঘটনাক্রমে যাচাই ছাড়াই তথ্য সম্প্রচার করা হয় তাহলে দীর্ঘদিন ধরে তা অবিলম্বে সংশোধনের প্রক্রিয়া চালু রয়েছে এবং এ জন্য যথাযথ ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়। ‘ভুল তথ্যের সঙ্গে কি আমরা পার্লামেন্টে বিতর্কের নামে যা চলে তার তুলনা করতে পারি? বেশির ভাগ সময়ই পারি না। সম্প্রচারকারীরা নয়, সরকারই অর্ধসত্য তথ্য ও একেবারেই ভুল তথ্য দিয়ে থাকে। তবে সত্য কথা হলো, এই সম্প্রচার নীতিমালা পাস করেছে মন্ত্রীপরিষদ। এর পিছনে দু’টি লক্ষ্য কাজ করেছে। একটি হলো, আমলাতন্ত্র, যারা কখনই অবাধ মিডিয়ায় স্বস্তি পান না। এখন তারা আগের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি দলীয় হয়ে পড়েছেন এবং নিজেদের ভবিষ্যৎ বেশি দেখছেন যোগ্যতায় নয় খোসামুদিতে। তারা দমিয়ে রাখা মিডিয়াকেই বেশি পছন্দ করেন। তাদের এই প্রবণতায় আসবে কম অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা। অন্যপক্ষ হলো রাজনৈতিক দল, যারা প্রশ্নবিদ্ধ পদ্ধতিতে ক্ষমতায় এসেছে, তারা সবাই সমালোচক সব কণ্ঠকেই শত্রু মনে করে। মুক্ত মিডিয়ার সংস্কৃতিতে নিজেদের তারা সবচেয়ে বেশি বিপন্ন মনে করে। তাই তারা বোকামি করে মিডিয়ার কণ্ঠরোধের চেষ্টা করে।
নীতিমালায় বর্ণিত মুক্ত গণমাধ্যমের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি ইতিহাস ও সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার ক্লান্তিহীন মানব উদ্যমের বিপরীত যেটা শুধুমাত্র স্বাধীনতা পূরণ করতে পারে। গণতন্ত্রের অধীনে বিগত তিন দশকে মুক্ত গণমাধ্যম বাংলাদেশের অগ্রগতিতে কি অবদান রেখেছে প্রধানমন্ত্রী সেটা সম্পূর্ণরূপে ভুল বিচার করছেন আর খাটো করে দেখছেন। আমি এখানে অমর্ত্য সেনের লেখার প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। যাকে তিনি অনেক পছন্দ করেন। বারবার তাকে আমন্ত্রণ জানানোটাই এর প্রমাণ। স্বাধীনতা (গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত) কিভাবে উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করে- সে ব্যপারে তিনি লিখেছেন। ‘স্বাধীনতা ও উন্নয়ন’ (‘ফ্রিডম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’) শীর্ষক তার ক্লাসিক লেখাটি এই নীতিমালা প্রণয়নকারীদের চোখ খুলে দেয়া উচিত।
আমরা এটা বলে শেষ করতে চাই যে, আমরা একটি সম্প্রচার নীতিমালার বিপক্ষে নই। আমরা যেটা চাই সেটা হলো, এমন একটি আইন যা স্বাধীনতাকে লালন করবে। আর আমাদেরকে আরও পরিণত একটি শিল্পে উন্নত হতে সহায়তা করবে যেখানে নৈতিক ও মুক্ত একটি গণমাধ্যমের সর্বোচ্চ নৈতিক মানদণ্ড সমুন্নত রেখে সর্বোচ্চ জনসেবা দেয়া যাবে।
এমন একটি আইন পেতে হলে আমরা মনে করি সর্বপ্রথম আমাদের একটি স্বতস্ত্র সম্প্রচার কমিশন থাকতে হবে যারা নতুন একটি আইনি কাঠামো দাড় করাবে। যেখানে স্টেকহোল্ডাররা থাকবে অংশীদার হিসেবে, ভিকটিম হিসেবে নয়। এসোসিয়েশন অব ব্রডকাস্টার্স (অ্যাকটো)-ও সেটা মনে করে।
অবিলম্বে স্বতন্ত্র কমিশন গঠন করুন আর নীতিমালা তাদের প্রণয়ন করতে দিন। সরকার ঘোড়ার আগে গাড়ি যুতে দিয়েছে। যে কথা দিয়ে শুরু করেছিলাম সেভাবেই শেষ করছি। সরকার এখনকার মতো মিডিয়ার কণ্ঠরোধ করতে পারে কিন্তু শেষ পর্যন্ত জয়ী হবে মুক্ত গণমাধ্যম।
কি কারণে নতুন জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা এত অগ্রাধিকার পেলো?
প্রতি বছর আমাদের দেশে লঞ্চ দুর্ঘটনায় হাজার হাজার প্রাণহানি হচ্ছে। যদি আমাদের সর্বশেষ এ ট্র্যাজেডি থেকে শুরু করি তাহলে দেখতে পাবো এখনও এ ক্ষেত্রে যথাযথ নীতি, যা লঞ্চ নির্মাণের সময় যথাযথভাবে মানতে হবে, এর রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার ক্ষেত্রে কোন উদ্যোগ এখনও নেয়া হয়নি। কিচেন মার্কেট থেকে খাদ্যে যে প্রিজার্ভেটিভের নামে বিষ মেশানো হচ্ছে তাতে জনগণ আতঙ্কে বসবাস করছে। এখনও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য কোন নীতি নেই। ভেজাল ওষুধে সয়লাব হচ্ছে বাজার। কিন্তু এখনও ভাল ওষুধ কোম্পানিগুলোকে পুরস্কৃত করা ও ত্রুটিপূর্ণ কোম্পানিগুলোকে শাস্তির কোন নীতি গ্রহণ করা হয় নি। যখন ভেজাল প্যারাসিটামল ব্যবহার করে গত ১০ বছরে কমপক্ষে ২০০০ শিশু মারা গেছে তখন মান্ধাতা আমলের আইন কার্যকর হতে ১৫ বছর সময় নিয়েছে, যার ফলে শাস্তি হয়েছে নাম কা ওয়াস্তে। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা যে আবার ঘটবে না তা ঠেকানোর কোন কিছুই নেই। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে আমাদের দেশের সড়কগুলোতে। কিন্তু জনগণের জীবনরক্ষা বা প্রতিকারের কোন নীতি নেই। ঢাকাকে ঘিরে আছে যে নদীগুলো তা ভীষণভাবে দূষিত। এতে এখন আর কোন জলজ প্রাণী বেঁচে নেই। দূষণ এখন ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে। এতে মিঠাপানির মাছের অস্তিত্ব হুমকিতে পড়েছে। দশকের পর দশক ধরে ট্যানারির বিষাক্ত বর্জ্য ছেড়ে দেয়া হচ্ছে নদীতে। এ ক্ষেত্রে সরকার হয় নির্লিপ্ত ভূমিকা পালন করেছে নয়তো লোকদেখানো পদক্ষেপে সীমাবদ্ধ থেকেছে। এসব দূষণকারী ও ভূমিগ্রাসীর কোন জবাবদিহি নেই। সুতরাং যখন কোন সরকার তার অত্যন্ত মৌলিক দায়িত্বগুলো, নিরাপদ খাদ্য, ওষুধ, পানি ও নাগরিকদের পরিবহন দিতে ব্যর্থ হয় এবং মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণে নেয় তখন আমাদের আর কি বলার আছে? তাহলে কি বলতে হবে কোনটা সত্য তা জানতে চায় না সরকার?
বিড়ম্বনা হলো তথাকথিত ‘খারাপ’ খবরগুলো জনগণের কাছে পৌঁছানো রোধ করা হলে প্রতিকারের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের জন্য তা কোন কাজে আসবে না। এটা আসবে আইনভঙ্গকারীদের উপকারে। ফলে তারা জনগণ ও সরকারকে ধোঁকা দিয়ে চলবে। ক্ষতি করবে উভয়েরই। এখানে প্রকাশিত গেজেটের ‘ধারা’গুলোর কিছু উদাহরণ তুলে ধরা হলো আমাদের মন্তব্যসহ।
১. সেনাবাহিনী, বেসামরিক ও জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যু, যা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে পারে তা সম্প্রচার করা যাবে না।
এ ধারাটি এমনিতেই বিতর্কিত ও অযৌক্তিক। যদি কোন কিছু হয় ‘পাবলিক ইনফরমেশন’ তাহলে কেন তা সম্প্রচার করা যাবে না? এরপর, কিভাবে বেসামরিক বিভাগের কোন কিছু রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার সঙ্গে সমঝোতা করবে? সেনাবাহিনীর ক্ষেত্রে, মিডিয়া স্বাভাবিকভাবেই অত্যন্ত সচেতন। সাধারণত সেনাবাহিনীর কোন গোপনীয় বিষয় কখনও প্রকাশ করা বা সম্প্র্রচার করা হয় না।
২. সেনাবাহিনী, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও সরকারি কর্মকর্তা যারা অপরাধীদের অপরাধের জন্য শাস্তি দিতে পারেন তাদের অবমাননা হয় এমন কোন কিছু সম্প্রচার করা যাবে না।
এ নীতির অযৌক্তিকতা কল্পনা করুন। এ নীতি যদি কার্যকর থাকতো তাহলে তো আমরা ১০০ ট্রাক অস্ত্র উদ্ঘাটনের বিষয়ে কিছু লিখতে পারতাম না। যেখানে (অভিযুক্তদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী) এনএসআই ও ডিজিএফআই-এর কর্মকর্তারা সরাসরি যুক্ত ছিলেন। এমনকি আমরা ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিষয়েও কিছু লিখতে পারতাম না। ওই হামলা চালানো হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে, এতে জড়িত সাবেক তিন আইজিপি, এনএসআই-এর সাবেক দুই কর্মকর্তা, সিআইডির সাবেক তিন কর্মকর্তা, সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জড়িত ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনও করা হয়েছে। অনুমোদিত নীতি অনুযায়ী, পুলিশ হেফাজতে বা নির্যাতনে মৃত্যু, সেনাবাহিনী, র্যাব, ডিজিএফআই, গোয়েন্দা সংস্থা ও সরকারি কর্মকর্তা, যারা শাস্তি দিতে পারেন, তাদের ক্ষমতার অপব্যবহারের বিষয়ে কোন রিপোর্ট লিখতে বা সম্প্রচার করতে পারব না। এ নীতি কার্যকর হলে আমরা নারায়ণগঞ্জে সাম্প্রতিক ৭ খুন অথবা সাম্প্রতিক গার্মেন্টের ঝুট ব্যবসায়ীকে হত্যা (তাকে মিরপুর থানার সাব-ইন্সপেক্টর নির্যাতন করে হত্যা করেছে)- এমন সব ঘটনার খবর লিখতে পারবো না, যেখানে জড়িত র্যাব কর্মকর্তা বা পুলিশ। ক্রসফায়ার, রিমান্ডে নির্যাতন ইত্যাদি এসব নিয়ে আমরা কোন রিপোর্ট লিখতে পারবো না। সম্প্রতি লিমন নামে যে নিরপরাধ ছাত্রটিকে র্যাব বুলেটবিদ্ধ করেছিল, পরে তাকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে। যদি মিডিয়া র্যাবের কর্মকাণ্ড প্রকাশ না করতো তাহলে কি লিমন ন্যায়বিচার কোন দিনও পেতো?
৩. বিদ্রোহ, বিশৃঙ্খলা, সহিংস ঘটনা... প্রচার করা যাবে না?
আমরা জানি বিদ্রোহ কি এবং এটা কিভাবে প্রচার করা যায় তা নিয়ে আমরা আলোচনা করতে পারি। (এক্ষেত্রে আমরা মেনে নেবো যে, বিডিআর বিদোহের ঘটনা যেভাবে সম্প্রচার করা হয়েছে তাতে সম্প্রচার মিডিয়া পুরোপুরি পেশাদারিত্বের প্রমাণ দিয়েছে)। কিন্তু বিশৃঙ্খলা ও সহিংস ঘটনা বলতে কি বোঝানো হয়েছে? এই নীতি অনুযায়ী আমরা সহিংস কোন অস্থিরতা ও এর ফুটেজ দেখতে পারবো না। এই নীতি দেখে মনে হচ্ছে, যখন দুষ্কৃতকারীরা রেললাইন উপড়ে ফেলে, আমাদের কলকারখানায় আগুন দেয় তখন টেলিভিশন স্টেশনগুলো নাচ আর গান সম্প্রচার করবে বলে আশা করা হচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপি-জামায়াত যেভাবে চলন্ত বাসে পেট্রোল বোমা ছুড়েছে তা তুলে ধরা হয়েছে ব্যাপক আকারে ফুটেজে। ওই সহিংসতা ছিল অন্যায়। এর অর্থ হলো ভবিষ্যতে এমন দৃশ্য সম্প্রচার করা যাবে না? আমাদের কাছে এই নীতির অর্থ হলো- ভিন্নমতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে সরকার পুলিশি সহিংসতা ব্যবহার করবে আর মিডিয়া তা প্রচার করতে পারবে না, কারণ এতে বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতা হবে। তোবা গার্মেন্টের শ্রমিকদের ওপর বৃহস্পতিবার যেভাবে পুলিশ অভিযান চালিয়েছে তা কি বর্তমান নীতির অধীনে সম্প্রচার করা অনুমোদিত?।
৪. বিদেশী কোন রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমন কোন কিছু সম্প্রচার করা নিষিদ্ধ।
২০০৭-০৮ সালে যখন আমাদের নৌসীমা প্রহরায় ছিল আমাদের নৌবাহিনী তখন মিয়ানমার আমাদের নৌবাহিনীকে হুমকি দিয়ে সমুদ্রে যুদ্ধজাহাজ পাঠায়। বিদ্যমান আইনে আমরা এ কথা লিখতে বা সম্প্রচার করতে পারবো না। আমরা লিখতে পারবো না ‘ফেলানি’ হত্যাকাণ্ড অথবা বিএসএফের হাতে সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের কথা? তিস্তায় আমাদের ন্যায্য পাওনা নিয়ে লেখা এবং ভারত তাতে সাড়া না দেয়ায় তাদের সমালোচনা কি অনুমোদন পাবে? নাকি আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নষ্টের নামে তা নিষিদ্ধ? সৌদি আরব, কুয়েত, মালয়েশিয়া অথবা অন্য কোন দেশে আমাদের প্রবাসী শ্রমিকদের হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ অথবা অবৈধভাবে আটক করার বিষয়টিও বিদ্যমান একই আইনে প্রচার করা যাবে না। ওই সব দেশে তারা কাজ করেন ‘বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে’র নামে। তাহলে আমাদের যে সব প্রবাসীর পাঠানো রেমিটেন্সে আমাদের বিশাল রিজার্ভের গল্প বলি তাদেরকে কি স্বাগতিক দেশের করুণা এবং আমাদের ভীরু ও দুর্নীতিগ্রস্ত বানিজ্যিক অ্যাটাচিদের ওপর ছেড়ে দেবো?
৫. পরিবেশবান্ধব নয় এমন কোন দৃশ্য প্রকাশ করা যাবে না বিজ্ঞাপনে।
কিন্তু একটি দূষিত নদী, যত্রতত্র পড়ে থাকা ময়লা-আবর্জনা, গাছ কাটা যদি বিজ্ঞাপনে দেখানো হয় এবং জনগণকে যদি এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয় তাহলে তাতে অন্যায় কি?
৬. ভুলভাবে ও অসত্য তথ্য এড়িয়ে চলতে হবে অবশ্যই।
অসত্য তথ্য অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে। যদি ঘটনাক্রমে যাচাই ছাড়াই তথ্য সম্প্রচার করা হয় তাহলে দীর্ঘদিন ধরে তা অবিলম্বে সংশোধনের প্রক্রিয়া চালু রয়েছে এবং এ জন্য যথাযথ ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়। ‘ভুল তথ্যের সঙ্গে কি আমরা পার্লামেন্টে বিতর্কের নামে যা চলে তার তুলনা করতে পারি? বেশির ভাগ সময়ই পারি না। সম্প্রচারকারীরা নয়, সরকারই অর্ধসত্য তথ্য ও একেবারেই ভুল তথ্য দিয়ে থাকে। তবে সত্য কথা হলো, এই সম্প্রচার নীতিমালা পাস করেছে মন্ত্রীপরিষদ। এর পিছনে দু’টি লক্ষ্য কাজ করেছে। একটি হলো, আমলাতন্ত্র, যারা কখনই অবাধ মিডিয়ায় স্বস্তি পান না। এখন তারা আগের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি দলীয় হয়ে পড়েছেন এবং নিজেদের ভবিষ্যৎ বেশি দেখছেন যোগ্যতায় নয় খোসামুদিতে। তারা দমিয়ে রাখা মিডিয়াকেই বেশি পছন্দ করেন। তাদের এই প্রবণতায় আসবে কম অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা। অন্যপক্ষ হলো রাজনৈতিক দল, যারা প্রশ্নবিদ্ধ পদ্ধতিতে ক্ষমতায় এসেছে, তারা সবাই সমালোচক সব কণ্ঠকেই শত্রু মনে করে। মুক্ত মিডিয়ার সংস্কৃতিতে নিজেদের তারা সবচেয়ে বেশি বিপন্ন মনে করে। তাই তারা বোকামি করে মিডিয়ার কণ্ঠরোধের চেষ্টা করে।
নীতিমালায় বর্ণিত মুক্ত গণমাধ্যমের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি ইতিহাস ও সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার ক্লান্তিহীন মানব উদ্যমের বিপরীত যেটা শুধুমাত্র স্বাধীনতা পূরণ করতে পারে। গণতন্ত্রের অধীনে বিগত তিন দশকে মুক্ত গণমাধ্যম বাংলাদেশের অগ্রগতিতে কি অবদান রেখেছে প্রধানমন্ত্রী সেটা সম্পূর্ণরূপে ভুল বিচার করছেন আর খাটো করে দেখছেন। আমি এখানে অমর্ত্য সেনের লেখার প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। যাকে তিনি অনেক পছন্দ করেন। বারবার তাকে আমন্ত্রণ জানানোটাই এর প্রমাণ। স্বাধীনতা (গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত) কিভাবে উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করে- সে ব্যপারে তিনি লিখেছেন। ‘স্বাধীনতা ও উন্নয়ন’ (‘ফ্রিডম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’) শীর্ষক তার ক্লাসিক লেখাটি এই নীতিমালা প্রণয়নকারীদের চোখ খুলে দেয়া উচিত।
আমরা এটা বলে শেষ করতে চাই যে, আমরা একটি সম্প্রচার নীতিমালার বিপক্ষে নই। আমরা যেটা চাই সেটা হলো, এমন একটি আইন যা স্বাধীনতাকে লালন করবে। আর আমাদেরকে আরও পরিণত একটি শিল্পে উন্নত হতে সহায়তা করবে যেখানে নৈতিক ও মুক্ত একটি গণমাধ্যমের সর্বোচ্চ নৈতিক মানদণ্ড সমুন্নত রেখে সর্বোচ্চ জনসেবা দেয়া যাবে।
এমন একটি আইন পেতে হলে আমরা মনে করি সর্বপ্রথম আমাদের একটি স্বতস্ত্র সম্প্রচার কমিশন থাকতে হবে যারা নতুন একটি আইনি কাঠামো দাড় করাবে। যেখানে স্টেকহোল্ডাররা থাকবে অংশীদার হিসেবে, ভিকটিম হিসেবে নয়। এসোসিয়েশন অব ব্রডকাস্টার্স (অ্যাকটো)-ও সেটা মনে করে।
অবিলম্বে স্বতন্ত্র কমিশন গঠন করুন আর নীতিমালা তাদের প্রণয়ন করতে দিন। সরকার ঘোড়ার আগে গাড়ি যুতে দিয়েছে। যে কথা দিয়ে শুরু করেছিলাম সেভাবেই শেষ করছি। সরকার এখনকার মতো মিডিয়ার কণ্ঠরোধ করতে পারে কিন্তু শেষ পর্যন্ত জয়ী হবে মুক্ত গণমাধ্যম।
No comments